শ্রেণি (পর্যায় সারণি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(শ্রেণী (পর্যায় সারণী) থেকে পুনর্নির্দেশিত)
পর্যায় সারণিতে প্রতিটি সংখ্যা চিহ্নিত উল্লম্ব সারণি হল শ্রেণি বা গ্রুপ।

রসায়নে পর্যায় সারণিতে শ্রেণি (গ্রুপ) হল কয়েকটি মৌলের সমষ্টি যা পর্যায় সারণিতে উপর থেকে নীচে অবস্থান করে। বর্তমানে ১৮টি শ্রেণি পর্যায় সারণিতে আছে। এটি পরিবার বা ফ্যামিলি নামেও পরিচিত।[১] একটি শ্রেণিতে অবস্থিত মৌলগুলির ধর্ম একই প্রকৃতির হয়ে থাকে, যেহেতু সর্ববহিঃস্থ কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা একই থাকে, কিন্তু ইলেকট্রনের কক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

এফ-ব্লক মৌলগুলিকে কোনো আলাদা শ্রেণিতে রাখা হয়নি। কোনো কোনো মত অনুযায়ী, উহাদের প্রত্যেকেই তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্গত আবার মতান্তরে উহারা কোনো শ্রেণিরই অংশ নয়।

পদ্ধতি[সম্পাদনা]

IUPAC পদ্ধতি (বর্তমানে গৃহীত)[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক বিশুদ্ধ ও ফলিত রসায়ন সংস্থা কর্তৃক এটি প্রচলিত। ১৯৯০ সালে দীর্ঘ পর্যায় সারণির ব্যবহার সূচিত হলে এই পদ্ধতি গৃহীত হয়। এতে ১ থেকে ১৮ পর্যন্ত শ্রেণি রয়েছে। নিম্নলিখিত পুরোনো দুটি পদ্ধতিতে মৌলের অবস্থানগত পার্থক্য ও মতের ঐক্য না হবার জন্য, এই পদ্ধতি চালু হয় ও সর্বত্র গৃহীত হয়।

CAS পদ্ধতি[সম্পাদনা]

কেমিক্যাল অ্যাবস্ট্রাক্টস সার্ভিস কর্তৃক এটি প্রচলিত হয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে এটি প্রচলিত ছিল। এতে রোমান সংখ্যা দ্বারা শ্রেণি চিহ্নিত করা হত ও প্রতিটি শ্রেণিতে ২টি করে উপশ্রেণি (A ও B) ছিল। মূল গ্রুপ মৌলগুলি A-তে এবং B-তে সন্ধিগত মৌলগুলি থাকত। কোনো মৌলের সর্বোচ্চ জারণ সংখ্যাটিই ঐ মৌলের শ্রেণির সংখ্যা নির্দিষ্ট করত। যেমন, ক্যালসিয়ামের সর্ববহিঃস্থ কক্ষে ২ টি ইলেকট্রন আছে, তাই জারণ সংখ্যা +২, ২নং শ্রেণিতে তাই ক্যালসিয়াম থাকবে।

পুরোনো ইউরোপীয় পদ্ধতি[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক বিশুদ্ধ ও ফলিত রসায়ন সংস্থা কর্তৃক এটি পূর্বে প্রচলিত হয়েছিল। এটি মূলত ইউরোপে প্রচলিত ছিল। এতে রোমান সংখ্যা দ্বারা শ্রেণি চিহ্নিত করা হত ও প্রতিটি শ্রেণিতে ২টি করে উপশ্রেণি (A ও B) ছিল। বামদিকে A ও ডানদিকে B থাকে।

শ্রেণির নাম[সম্পাদনা]

IUPAC শ্রেণি a নেই b ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
মেন্ডেলিভ (I–VIII) IA IIA IIIB IVB VB VIB VIIB VIIIB IB IIB IIIB IVB VB VIB VIIB c
CAS (যুক্তরাষ্ট্র, A-B-A) IA IIA IIIB IVB VB VIB VIIB VIIIB IB IIB IIIA IVA VA VIA VIIA VIIIA
পুরোনো IUPAC (ইউরোপ, A-B) IA IIA IIIA IVA VA VIA VIIA VIIIB IB IIB IIIB IVB VB VIB VIIB 0
ট্রিভিয়াল নাম Hক্ষার ধাতুr মৃৎ ক্ষার ধাতুr মুদ্রা­ ধাতুd ট্রাইয়েলস টেট্রেলস নিক্টো­জেনr চ্যাল­কো­জেনr হ্যালো­জেনr নিষ্ক্রিয় গ্যাসr
মৌলভিত্তিক নামr লিথিয়াম গ্রুপ বেরিলি­য়াম গ্রুপ স্ক্যান্ডিয়াম গ্রুপ টাইটে­নিয়াম গ্রুপ ভ্যানাডিয়াম গ্রুপ ক্রোমিয়াম গ্রুপ ম্যাঙ্গানিজ গ্রুপ লোহা গ্রুপ কোবাল্ট গ্রুপ নিকেল গ্রুপ তামা গ্রুপ জিঙ্ক গ্রুপ বোরন গ্রুপ কার্বন গ্রুপ নাইট্রো­জেন গ্রুপ অক্সি­জেন গ্রুপ ফ্লুরিন গ্রুপ হিলিয়াম বা নিয়ন গ্রুপ
পর্যায় ১  H  He
Period 2 Li Be B C N O F Ne
Period 3 Na Mg Al Si P S Cl Ar
Period 4 K Ca Sc Ti V Cr Mn Fe Co Ni Cu Zn Ga Ge As Se Br Kr
Period 5 Rb Sr Y Zr Nb Mo Tc Ru Rh Pd Ag Cd In Sn Sb Te I Xe
Period 6 Cs Ba La–Yb Lu Hf Ta W Re Os Ir Pt Au Hg Tl Pb Bi Po At Rn
Period 7 Fr Ra Ac–No Lr Rf Db Sg Bh Hs Mt Ds Rg Cn Nh Fl Mc Lv Ts Og
a গ্রুপ ১ হাইড্রোজেন (H) এবং অ্যালকালি ধাতু দিয়ে গঠিত। গ্রুপের মৌলগুলির বাইরের ইলেকট্রন শেলে একটি s-ইলেকট্রন আছে। হাইড্রোজেনকে অ্যালকালি ধাতু হিসাবে বিবেচনা করা হয় না কারণ এটি ধাতু নয়, তবে এটি অন্য যেকোনো গ্রুপের চেয়ে এদের সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। এটি গ্রুপটিকে কিছুটা ব্যতিক্রমী করে তোলে।
n/a গ্রুপ নম্বর নেই
b গ্রুপ ৩ এর উপাদান নিয়ে সব উৎস একমত নয়। (আরও জানতে পিরিয়ডিক টেবিল#গ্রুপ ৩: https://en.wikipedia.org/wiki/Group_3_element এবং গ্রুপ ৩ উপাদান: https://en.wikipedia.org/wiki/Group_3_element লিংকগুলি দেখতে পারেন)। সাধারণ অজৈব রসায়নের লেখাপড়ায় সাধারণত গ্রুপ ৩ এ স্ক্যান্ডিয়াম (Sc), ইট্রিয়াম (Y), ল্যান্থানাম (La), এবং অ্যাক্টিনিয়াম (Ac) আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এর ফলে গ্রুপ ৩ এবং ৪ এর মধ্যে Ce-Lu এবং Th-Lr f-ব্লক হিসেবে অবস্থান করে। তবে, যেসব উৎস এই বিষয় নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করে তারা সাধারণত স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম, লুটেটিয়াম (Lu), এবং লরেনসিয়াম (Lr) কে গ্রুপ ৩ এর অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন এখানে দেখানো হয়েছে। IUPAC-সহ কিছু উৎস বর্তমানে একটি আপোষ অনুসরণ করে যা La-Lu এবং Ac-Lr কে f-ব্লক সারি হিসাবে রাখে, গ্রুপ ৩ এর ভারী সদস্যদের দ্ব্যর্থক রেখে। গ্রুপ ৩ এ Sc, Y, Lu, এবং Lr রাখার এই বিন্যাসটি ২০২১ সালের একটি IUPAC প্রাথমিক প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
c মেন্ডেলিফের মূল পর্যায় সারণি তৈরী করার সময় গ্রুপ ১৮, বা নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলি, আবিষ্কৃত হয়নি। পরে (১৯০২ সালে), মেন্ডেলিফ তাদের উপস্থিতির প্রমাণ গ্রহণ করেন। ফলে এগুলিকে পর্যায় সারণির মূলনীতির ব্যাঘাত না ঘটিয়ে একটি নতুন "গ্রুপ ০"-এ রাখা যায়।
d রোয়েন্টজেনিয়াম (Rg) কে একটি কয়নেজ ধাতু হিসাবে বিবেচনা করা হবে কিনা সে বিষয়ে লেখকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এটি গ্রুপ ১১ এ অবস্থিত, অন্যান্য কয়নেজ ধাতুর মতোই, এবং রাসায়নিকভাবে সোনার অনুরূপ বলে আশা করা হয়। তবে অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় এবং স্বল্পস্থায়ী হওয়ার কারণে, মুদ্রার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে না বলেই এর নাম থেকে বোঝা যায়। এই কারণেই কখনও কখনও এটিকে কয়নেজ ধাতুর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।[২][৩]
r IUPAC দ্বারা সুপারিশকৃত গ্রুপগুলোর নাম তালিকায় r দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নতুন
IUPAC
নাম
পুরোনো
IUPAC
(ইউরোপ)
CAS
নাম
(যুক্তরাষ্ট্র)
মৌলভিত্তিক
নাম
IUPAC
অনুমোদিত
ট্রিভিয়াল নাম
অন্যান্য নাম
শ্রেণি ১ IA IA  
লিথিয়াম পরিবার
হাইড্রোজেন
ক্ষার ধাতু
শ্রেণি ২ IIA IIA বেরিলিয়াম পরিবার ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু
শ্রেণি ৩ IIIA IIIB স্ক্যান্ডিয়াম পরিবার
শ্রেণি ৪ IIA IVB টাইটেনিয়াম পরিবার
শ্রেণি ৫ VA VB ভ্যানাডিয়াম পরিবার
শ্রেণি ৬ VIA VIB ক্রোমিয়াম পরিবার
শ্রেণি ৭ VIIA VIIB ম্যাঙ্গানিজ পরিবার
শ্রেণি ৮ VIII VIIIB লোহা পরিবার
শ্রেণি ৯ কোবাল্ট পরিবার
শ্রেণি ১০ নিকেল পরিবার
শ্রেণি ১১ IB IB তামা পরিবার মুদ্রা ধাতু
শ্রেণি ১২ IIB IIB জিঙ্ক পরিবার
শ্রেণি ১৩ IIIB IIIA বোরন পরিবার ট্রাইয়েলস (গ্রিক: ট্রাই মানে তিন)
শ্রেণি ১৪ IVB IVA কার্বন পরিবার টেট্রেলস (গ্রিক: টেট্রা মানে চার)
শ্রেণি ১৫ VB VA নাইট্রোজেন পরিবার নিক্টোজেন মৌল পেন্টেলস (গ্রিক: পেন্ট মানে পাঁচ)
শ্রেণি ১৬ VIB VIA অক্সিজেন পরিবার চ্যালকোজেন মৌল
শ্রেণি ১৭ VIIB VIIA ফ্লুরিন পরিবার হ্যালোজেন মৌল
শ্রেণি ১৮ 0 VIIIA হিলিয়াম পরিবার বা নিয়ন পরিবার নিষ্ক্রিয় গ্যাস

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Periodic Table Terms"www.shmoop.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৪-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৫ 
  2. Conradie, Jeanet; Ghosh, Abhik (২০১৯)। "Theoretical Search for the Highest Valence States of the Coinage Metals: Roentgenium Heptafluoride May Exist"। Inorganic Chemistry58 (13): 8735–8738। ডিওআই:10.1021/acs.inorgchem.9b01139 
  3. Grochala, Wojciech; Mazej, Zoran (২০১৫)। "Chemistry of silver(II): a cornucopia of peculiarities"Philosophical Transactions of the Royal Society A373ডিওআই:10.1098/rsta.2014.0179। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]