মাফাতিহুল গাইব (আরবি: مفاتيح الغيب, অনুবাদ 'Keys to the Unknown'), বা সাধারণত আত-তাফসিরুল কাবির (আরবি: التفسير الكبير, অনুবাদ 'The Large Commentary'),নামেও পরিচিত, সংক্ষেপে তাফসিরে কাবির নামেও প্রসিদ্ধ, একটি ধ্রুপদী ইসলামিক তাফসির বই, যা দ্বাদশ শতাব্দীর পার্শিয়ান ইসলাম ধর্মতত্ত্ববিদ ও দার্শনিক, ফখরুদ্দীন আল রাযি (মৃত্যু ১২১০) দ্বারা লিখিত ।[১] গ্রন্থটি আল কুরআনের একটি ব্যাখ্যা ও তাফসির গ্রন্থ । এটি ৩২ খণ্ডে সমাপ্ত । এই তাফসির গ্রন্থটি ২৮ খণ্ডের তাফসির আল-তাবারি-এর চেয়েও বড়। স্বভাবতই আধুনিক কাজের জন্য এটি একটি রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহারযোগ্য এবং তাফসির অধ্যায়নকারীদের কাছে সবিশেষ সমাদৃত । রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহারযোগ্য যেমন :
[তার] প্রধান উদ্বেগের মধ্যে একটি ছিল বুদ্ধির স্বয়ংসম্পূর্ণতা।[....] তিনি বিশ্বাস করতেন যে ঐতিহ্যের (হাদিস) উপর ভিত্তি করে প্রমাণগুলি কখনই নিশ্চিততা (ইয়াকিন) হতে পারে না, তবে শুধুমাত্র অনুমান (জান) হতে পারে, যা ইসলামী চিন্তাধারার একটি প্রধান পার্থক্য। [... ] [যাইহোক] কুরআনের প্রাধান্য সম্পর্কে তার স্বীকৃতি তার বছরের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়। [...] [আল-রাজির যুক্তিবাদ] নিঃসন্দেহে ইসলামি ঐতিহ্যে যুক্তি ও প্রকাশের সমন্বয়ের বিতর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রাখে। তার পরবর্তী বছরগুলিতে, তিনি রহস্যবাদের প্রতিও আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, যদিও এটি কখনই তার চিন্তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তৈরি করেনি।[২]
যেমন তাফসীর ইবনে কাসীর বর্ণনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং অতুলনীয় ব্যাখ্যা, তেমনি যুক্তি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও তাফসীর কবিরের কোন সমান্তরাল নেই। কিছু লোক এই ব্যাখ্যাটির উপর একটি মজার মন্তব্য করেছে (এটিতে, ব্যাখ্যা ছাড়া সবকিছু রয়েছে)। কিন্তু বাস্তবতা হল এই মন্তব্যটি এই বইটির প্রতি নিষ্ঠুরভাবে অন্যায় কারণ এই বইটি কোরানের অর্থের ব্যাখ্যায় কোন সমান নেই। এই বইয়ের বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য হল:
ইমাম রাজী মারা যাওয়ার সময় সূরা আল-ফাতহ পর্যন্ত এই ব্যাখ্যাটি লিখেছিলেন। তাই এই সূরার পরে আরেকজন আলেম কাদি শাহাব-উদ্দীন বিন খলিল আল-খাউলি, আল-দামাশকি (মৃত্যু ৬৩৯ হি:) বা শাইখ নাজমুদ্দিন আহমদ বিন আল-কামুলি (মৃত্যু ৭৭ হিজরি) এটি সম্পূর্ণ করেন। এটি এতই আশ্চর্যজনকভাবে করা হয়েছে এবং ইমাম রাজির রচনাশৈলী এত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে যে, এই সত্যটি সম্পর্কে অবগত নয় এমন কেউ কখনই সন্দেহ করবে না যে এটি ইমাম রাজি ছাড়া অন্য কেউ লিখেছেন।
ব্যাখ্যা, ব্যাকরণগত রচনা এবং ওহীর পটভূমি এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত বর্ণনা ইমাম রাজী সুসংগঠিতভাবে স্পষ্টতা ও বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং, একটি নির্দিষ্ট আয়াত-এর ব্যাখ্যায় বাণীগুলির সংখ্যা একসাথে পুনরুত্পাদন করা হয় এবং সহজেই লক্ষ্য করা যায়। অন্যান্য ব্যাখ্যাগুলিতে এই আলোচনাগুলি সাধারণত বিক্ষিপ্ত বা অসংগঠিত হয়, যার কারণে এটি সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে ; কিন্তু তাফসিরে কবিরে এগুলো এক জায়গায় পাওয়া যায় এবং খুব সুসংগঠিতভাবে।
তিনি কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন।
আইনী আদেশ সম্পর্কিত একটি আয়াতকে এর বিশদ কারণ সহ বর্ণনা করা হয়েছে।
যেকোন আয়াতের অর্থে ভ্রান্ত সম্প্রদায় ও বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা প্রবর্তিত যেকোন ব্যাখ্যা সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তারপর বিশদ যুক্তি সহ খণ্ডন করা হয়েছে। এইভাবে এতে জাহমিয়া, মুতাজিলা, মুজাসসিমা [আর], ইবাহিয়্যাহ প্রভৃতি তার সময়ের সমস্ত ভ্রান্ত সম্প্রদায়ের জোরালো খণ্ডন রয়েছে।
তাফসির কবিরের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যার প্রতি খুব কমই মনোযোগ দেওয়া হয়েছে তা হল কুরআনের আয়াতের মধ্যে সংযোগের বর্ণনা। এটি একটি সত্য যে তাঁর বর্ণিত আয়াতগুলির মধ্যে একটি সংযোগ এবং সখ্যতার কারণটি এতটাই নৈমিত্তিক, আবেদনময় এবং যুক্তিসঙ্গত যে এটি কেবল সন্তুষ্টির অনুভূতিই দেয় না বরং কুরআনের কমনীয়তা এবং মহিমার একটি আনন্দদায়ক অনুভূতিও দেয়।
কুরআনের আদেশ-নিষেধ এবং তাদের রহস্য ও অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
“
সংক্ষেপে, তাফসীর কবীর একটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হল যে যখনই আমি কোন অসুবিধা পেয়েছি, এটি আমাকে সঠিক উত্তরের দিকে পরিচালিত করেছে। [...] যাইহোক, এই ব্যাখ্যার সাথে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে:
”
তাফসিরে কাবিরের বর্ণনা, অন্যান্য তাফসিরের মত, শক্তিশালী ও দুর্বল একত্রিত।
মাঝে মাঝে ইমাম রাজী অন্যান্য ভাষ্যকারদের থেকে ভিন্ন মত গ্রহণ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি প্রামাণিক রেওয়ায়েতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন [...] (তিনটি ঘটনা ছাড়া ইব্রাহিম মিথ্যা বলেননি)।
বাস্তবতা হলো ইমাম রাজী (রহ.) যে পদ্ধতিগতভাবে তাফসীর-সম্পর্কিত বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন তা অন্য কোনো তাফসিরে অতুলনীয়। এটা সত্য যে তিনি কালাম-সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে বিশদ বিবরণে ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু তিনি তাফসীর-সম্পর্কিত আলোচনাগুলি পরিষ্কার করার পরে তা করেছেন এবং এটি তাঁর সময়ের প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু এটিকে কোনোভাবেই তাঁর তাফসিরের মূল্য কমানোর জন্য ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ করে নোবেল কোরানের বিন্যাস এবং এর আয়াতগুলির মধ্যে পারস্পরিক সংযোগের বিষয়ে, তার ব্যাখ্যাগুলি বেশিরভাগ সময় বরং সন্তোষজনক।
”
মাওলানা সাইয়্যিদ মুহাম্মাদ ইউসুফ বিন্নোরী তার ইয়াতিমাতু-ল-বায়ান[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] প্রবন্ধে লিখেছেন যে তার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী বলতেন।:
“
কুরআনের সমস্ত কঠিন বিষয়ের মধ্যে আমি এমন কোন অসুবিধা পাইনি যা ইমাম রাজী মোকাবেলা করেননি। তবে উল্লেখ্য যে, কখনও কখনও তিনি মনকে সন্তুষ্ট করার মতো সমস্যার সমাধান উপস্থাপন করতে পারেননি।
