মহা গ্রস্ত উপত্যকা
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/0/01/MapGreatRiftValley.png/220px-MapGreatRiftValley.png)
মহা গ্রস্ত উপত্যকা বা মহা স্রংস উপত্যকা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার জর্দান থেকে শুরু হয়ে পূর্ব আফ্রিকা তথা আফ্রিকার শৃঙ্গ অঞ্চলকে অতিক্রম করে দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার মোজাম্বিক পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ধারবাহিক ও পরস্পর-সংলগ্ন ভৌগোলিকভাবে অবনমিত কতগুলি অঞ্চলের সমষ্টি।[১] এটির দৈর্ঘ্য ৬০০০ কিলোমিটারের বেশি, প্রশস্ততা গড়ে ৪৮ থেকে ৬৪ কিলোমিটার এবং গভীরতা অবস্থানভেদে কয়েকশত থেকে কয়েক হাজার মিটার।
বিবরণ
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/55/Great_Rift_Valley.png/220px-Great_Rift_Valley.png)
একটি স্রংস উপত্যকা হল এমন একটি নিম্নভূমি অঞ্চল যেটি পৃথিবীর ভূত্বকীয় পাতগুলি একে অপরের কাছ থেকে সরে যেতে থাকলে ভূপৃষ্ঠে ফাটলের ফলে সৃষ্টি হয়। স্রংস উপত্যকাগুলি স্থলভাগ ও মহাসমুদ্র উভয় স্থানেই পরিলক্ষিত হয়। স্রংস উপত্যকাগুলির সাথে নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকাগুলির পার্থক্য আছে, কেননা শেষোক্ত দুইটি ভূমিক্ষয়ের কারণে সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে স্রংস উপত্যকা ভূত্বকীয় পাতগুলির কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্টি হয়।
মহা গ্রস্ত উপত্যকাটি প্রকৃতপক্ষে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটিমাত্র স্রংস উপত্যকা নয়, বরং একটি প্রচলিত নামমাত্র। এটি আসলে অনেকগুলি স্রংস উপত্যকার সংযোগে গঠিত একটি জটিল ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাটি ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয়। এখানে অনেক আগ্নেয়গিরি, উষ্ণ প্রস্রবণ ও গেইজার রয়েছে এবং এখানে প্রায়শই ভূমিকম্প হয়।
মহা গ্রস্ত উপত্যকার উত্তর অংশটিকে জর্দান স্রংস উপত্যকা বলে; এটি সিরিয়া ও লেবাননের সাথে ইসরায়েলের সীমান্তের কাছে গোলান উচ্চভূমি থেকে শুরু হয়ে মৃত সাগর হয়ে লোহিত সাগরের আকাবা উপসাগর পর্যন্ত চলে গেছে। জর্দান স্রংস উপতকাটির মধ্যে জর্দান নদীটি সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্ত: নদীটির উৎস থেকে হুলা উপত্যকা, কোরাজিম ভূখণ্ড, গালীল সাগর, নিম্ন জর্দান উপত্যকা হয়ে একেবারে মৃত সাগর (যার তলদেশ পৃথিবীর স্থলভাগের সর্বনিম্ন অঞ্চল) পর্যন্ত পুরোটাই স্রংসের মধ্যে অবস্থিত। স্রংসটি অতঃপর আরাবাহ অবনমিত ভূমির ভেতর দিয়ে গিয়ে আকাবা উপসাগর হয়ে লোহিত সাগর গিয়ে পৌঁছেছে।
জর্দান স্রংস উপত্যকার সাথে দক্ষিণে লোহিত সাগর স্রংসটি সংযুক্ত। বহু লক্ষ বছর আগে আরব উপদ্বীপ আফ্রিকা মহাদেশের সাথে সংযুক্ত ছিল। আরবীয় পাত ও আফ্রিকান পাতের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলে এই দুইটির মধ্যবর্তী ভূ-ত্বক দেবে গেলে সেখানে ভারত মহাসাগর থেকে জল এসে প্লাবিত হয়ে লোহিত সাগরের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে আফ্রিকা ও আরব উপদ্বীপ কেবলমাত্রা ত্রিভুজাকৃতি সিনাই উপদ্বীপের সাথে সংযুক্ত। এই দুই পাতের একে অপর থেকে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে দূরবর্তী ভবিষ্যতে লোহিত সাগর স্রংসটি আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেবে এবং লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগর যুক্ত হয়ে যাবে।
লোহিত সাগর স্রংসটির দক্ষিণে আফ্রিকা মহাদেশের ভেতরে বিশাল ও জটিল পূর্ব আফ্রিকান স্রংসটি অবস্থিত। এটি ইথিওপিয়ার দেনকালি সমভূমি থেকে শুরু হয়ে কেনিয়ার তুর্কানা হ্রদ, নাইভাশা হ্রদ ও মাগাদি হ্রদ হয়ে তানজানিয়ার মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়ে শায়ার নদীর উপত্যকা ও মোজাম্বিক সমভূমি হয়ে ভারত মহাসাগরের উপকূলের কাছে মোজাম্বিকের বেইরা শহর পর্যন্ত চলে গেছে। এই পূর্ব আফ্রিকান স্রংসটিকে কেন্দ্র করে আফ্রিকা মহাদেশটি ধীরে ধীরে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। বৃহত্তর ভাগটিকে নুবীয় পাত নাম দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে আফ্রিকার শৃঙ্গ অঞ্চলটিকে বহনকারী পাতটিকে সোমালি পাত নাম দেওয়া হয়েছে। পূর্ব আফ্রিকান স্রংসটি গ্রেগরি স্রংস (ব্রিটিশ পর্যটক জন গ্রেগরি-র নামে) ও পশ্চিমা স্রংস নামক দুইটি স্রংস ব্যবস্থা নিয়ে গঠিত। এই দুইটি ব্যবস্থাই আগ্নেয়গিরি দিয়ে পূর্ণ (প্রায় ৩০টি), যাদের মধ্যে আছে ইথিওপিয়ার এর্তা আলে, কেনিয়ার কেনিয়া পর্বত (বিলুপ্ত স্ট্রাটো আগ্নেয়গিরি), তানজানিয়ার ওল দোইনিও লেঙ্গাই, তানজানিয়ার সুপ্ত আগ্নেয়গিরি কিলিমানজারো পর্বত এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের নিরাগোংগো পর্বত।
গ্রেগরি স্রংসটি লোহিত সাগর ও আরব সাগর থেকে কিলিমানজারো পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত। এটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যটি হল আফার ত্রি-সংযোগস্থল, যেখানে আরবীয় পাত, নুবীয় পাত ও সোমালি পাত তিনটি এক অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এর ফলে দূর ভবিষ্যতে আফ্রিকার শৃঙ্গ অঞ্চলটি আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং মাদাগাস্কারের মতো একটি মহাদেশীয় দ্বীপে পরিণত হবে। আরব সাগর থেকে আগত জলরাশি স্রংসের নিম্নভূমি ভরাট করে একটি প্রণালীর সৃষ্টি করবে।
পশ্চিমা স্রংসটি আলবার্টীয় স্রংস নামেও পরিচিত। এটি নিয়াসা হ্রদ তথা মালাউই হ্রদের উত্তর প্রান্ত থেকে উত্তরদিকে একটি বিশাল বৃত্তচাপের আকারে প্রসারিত হয়েছে, যার মধ্যে আফ্রিকার মহাহ্রদগুলির অনেকগুলি (যেমন রুকওয়া, তাংগানিকা, কিভু, এডওয়ার্ড ও আলবার্ট হ্রদ) অবস্থিত। বেশিরভাগ হ্রদই খুবই গভীর ও ফিয়র্ডের মতো, এগুলির তলদেশে সমুদ্র সমতল থেকে অনেক নিচুতে অবস্থিত। তাংগানিকা হ্রদটি পৃথিবীর দ্বিতীয় গভীরতম হ্রদ। এই স্রংসটি আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যময় অঞ্চলগুলির একটি; এখানে উচ্চভূমি অরণ্যের একটি সরু ফালি, তুষারাবৃত পর্বত, সাভানা তৃণভূমি এবং হ্রদ ও জলাভূমির শৃঙ্খল অবস্থিত।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Merriam-Webster, Inc 편집부 (১৯৯৭)। MERRIAM WEBSTER'S GEOGRAPHICAL DICTIONARY 3/E(H)। Merriam-Webster। পৃষ্ঠা 444। আইএসবিএন 978-0-87779-546-9।
- মহা গ্রস্ত উপত্যকা
- গ্রস্ত উপত্যকা প্রদেশের ভূগোল
- স্রংস ও গ্রাবেন
- আফ্রিকার ভূমিরূপ
- মধ্যপ্রাচ্যের ভূমিরূপ
- ইসরায়েলের ভূমিরূপ
- সিরিয়ার ভূমিরূপ
- মিশরের ভূমিরূপ
- লেবাননের ভূমিরূপ
- ইথিওপিয়ার ভূমিরূপ
- কেনিয়ার ভূমিরূপ
- সৌদি আরবের ভূমিরূপ
- ইয়েমেনের ভূমিরূপ
- তানজানিয়ার ভূমিরূপ
- কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ভূমিরূপ
- উগান্ডার ভূমিরূপ
- বুরুন্দির ভূমিরূপ
- ইসরায়েলের ভূতত্ত্ব
- সিরিয়ার ভূতত্ত্ব
- মিশরের ভূতত্ত্ব
- লেবাননের ভূতত্ত্ব
- ইথিওপিয়ার ভূতত্ত্ব
- কেনিয়ার ভূতত্ত্ব
- সৌদি আরবের ভূতত্ত্ব
- ইয়েমেনের ভূতত্ত্ব
- তানজানিয়ার ভূতত্ত্ব
- কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ভূতত্ত্ব
- উগান্ডার ভূতত্ত্ব
- বুরুন্দির ভূতত্ত্ব
- আফ্রিকার ভূতত্ত্ব
- প্রাকৃতিক ভৌগোলিক প্রদেশ
- বুরুন্ডির ভূমিরূপ