পঠনবিকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পঠনবিকার
প্রতিশব্দশব্দান্ধতা
গ্রিক ভাষার পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তির হাতের লেখা
বিশেষত্বস্নায়ুরোগবিজ্ঞান, শিশুরোগবিজ্ঞান
লক্ষণপড়তে সমস্যা[১]
রোগের সূত্রপাতবিদ্যালয়গামী বয়সে[২]
প্রকারভেদপৃষ্ঠদেশীয় পঠনবিকার
কারণবংশাণুগত ও পরিবেশত উপাদানের আন্তঃক্রিয়া[২]
ঝুঁকির কারণপারিবারিক ইতিহাস, মনোযোগের অভাবজনিত অতিসক্রিয়তা বিকার[৩]
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিস্মৃতি, দৃষ্টিশক্তি, বানান ও পঠনদক্ষতার উপরে ধারাবাহিক কিছু পরীক্ষা[৪]
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয়শ্রুতি বা দৃষ্টি সমস্যা, অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ[২]
চিকিৎসাশিক্ষণ পদ্ধতির অভিযোজন[১]
সংঘটনের হার৩–৭%[২][৫]

পঠনবিকার একটি দীর্ঘস্থায়ী স্নায়বিক বিকার যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কোনও কিছু পড়তে বা বানান করতে অক্ষম হয় বা এসব কাজ করতে বড় ধরনের ঝামেলার শিকার হয়।[১][৬] একে ইংরেজি পরিভাষায় ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) বা রিডিং ডিজর্ডার (Reading disorder) বলে। পঠনবিকারের মাত্রা একেকজন আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য একেক রকম হয়[৩] এতে আক্রান্ত ব্যক্তি চিত্রলৈখিক প্রতীক, বিশেষ ভাষিক প্রতীক যেমন বর্ণ, অক্ষর, ইত্যাদি শনাক্ত করতে ও মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াজাত করতে বাধাগ্রস্ত হয়। অত্যন্ত নিম্নমানের পঠন দক্ষতা, শব্দের বানান করতে সমস্যা, স্বাভাবিক দ্রুতিতে পঠনে অক্ষমতা, লেখার সময় শব্দ ও বর্ণের ক্রম উলটে ফেলা, অপাঠ্য হাতের লেখা, মনে মনে শব্দ উচ্চারণ করায় অপারগতা, উচ্চস্বরে পড়ার সময় উচ্চারণে সমস্যা, পঠিত বিষয়বস্তুর অর্থ না বোঝা, ইত্যাদি এই বিকারের কিছু লক্ষণ,[৩][৭] যেগুলি সাধারণত প্রাথমিক শৈশবকালীন বছরগুলিতে বিদ্যালয়ে প্রকাশ পায়।[২]

পঠনবিকার অনৈচ্ছিক, এই বিকারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শেখার স্বাভাবিক আগ্রহ থাকে।[৩] পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চহারে মনোযোগের অভাবজনিত অতিসক্রিয়তা বিকার (Attention deficit hyperactivity disorder, সংক্ষেপে ADHD), বিকাশমূলক ভাষাবিকার (Developmental language disorder), ও সংখ্যা গণনায় সমস্যা (Dyscalculia) পরিলক্ষিত হয়।[২][৮][৯]

বংশাণুগত ও পরিবেশগত উপাদানসমূহের মধ্যকার আন্তঃক্রিয়ার কারণে পঠনবিকার ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়।[২] কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বিকারটি বংশানুক্রমে উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত হতে পারে।[৩] এর বিপরীতে যদি কোনও চোটজনিত মস্তিষ্ক জখম (traumatic brain injury), সন্ন্যাসরোগ (stroke), বা চিত্তভ্রংশের (dementia) কারণে পঠনবিকার ঘটে, তাহলে সেটিকে "অর্জিত পঠনবিকার" (Acquired dyslexia) বলে।[১] পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের পঠন-সংক্রান্ত ও ভাষিক প্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত স্নায়ুপথগুলিতে অস্বাভাবিকতার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।[৩] স্মৃতি, দৃষ্টিশক্তি, বানান ও পঠনদক্ষতার উপরে ধারাবাহিক কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে পঠনবিকার নির্ণয় করা হয়।[৪] শ্রুতি সমস্যা বা দৃষ্টি সমস্যা, অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বা সুযোগের অভাবের কারণে সৃষ্ট পঠনে অসুবিধা থেকে পঠনবিকার পৃথক একটি বৈকল্য।[২]

আগেভাগে শনাক্ত হলে এবং পঠন শিক্ষণে বিশেষায়িত দৃষ্টিভঙ্গির সহায়তা নিলে বেশিরভাগ পঠনবিকারগ্রস্ত শিশুকেই পঠন শেখানো সম্ভব। এজন্য পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তিটির চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষণ পদ্ধতিতে অভিযোজন ঘটাতে হয় (খাপ খাইয়ে নিতে হয়)।[১] যদিও এতে পঠনবিকারের মূলগত কারণের সমাধা হয় না, তা সত্ত্বেও এর ফলে এ-সংক্রান্ত উপসর্গগুলির মাত্রা বা ক্ষতি হ্রাস পেতে পারে।[১০] দৃষ্টিকে লক্ষ্য করে প্রদত্ত চিকিৎসাগুলি কার্যকর হয় না।[১১] পঠনবিকার অতিসাধারণ একটি শিখন প্রতিবন্ধিতা (learning disability) যা বিশ্বের সর্বত্র বিরাজমান।[১২] যেকোনও জনসমষ্টির ৩-৭% ব্যক্তি এর শিকার হয়ে থাকে।[২][৫] তবে কোনও জনসম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ২০% (প্রতি ৫ জনে ১ জন) কোনও না কোনও মাত্রায় পঠনবিকারজনিত লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশ করতে পারে।[১৩] পুরুষদের মধ্যে পঠনবিকার বেশী ধরা পড়লেও[২] বিশেষজ্ঞদের মতে এটি পুরুষ ও নারী উভয়কেই সমভাবে আক্রান্ত করে।[১২] কারও কারও মতে পঠনবিকারকে বৈকল্য বা বিকার হিসেবে গণ্য না করে একটি ভিন্ন উপায়ে শিখন হিসেবে গণ্য করাই শ্রেয়, যার সুবিধা-অসুবিধা দুই=ই বিদ্যমান।[১৪][১৫]

যখন কোনও অতীতে স্বাভাবিকভাবে পঠনক্ষম ব্যক্তি পঠনক্ষমতা হারায়, তখন তাকে "শব্দান্ধতা" বা "শব্দবোধহীনতা" (ইংরেজি: Alexia অ্যালেক্সিয়া) বলে।[৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Dyslexia Information Page"National Institute of Neurological Disorders and Stroke। ২ নভেম্বর ২০১৮। 
  2. Peterson, Robin L.; Pennington, Bruce F. (মে ২০১২)। "Developmental dyslexia"Lancet379 (9830): 1997–2007। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(12)60198-6পিএমআইডি 22513218পিএমসি 3465717অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  3. "What are reading disorders?"। National Institutes of Health। ১ ডিসেম্বর ২০১৬। 
  4. "How are reading disorders diagnosed?"। National Institutes of Health। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৫ 
  5. Kooij, J. J. Sandra (২০১৩)। Adult ADHD diagnostic assessment and treatment (3rd সংস্করণ)। London: Springer। পৃষ্ঠা 83। আইএসবিএন 9781447141389। ৩০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. Siegel LS (নভেম্বর ২০০৬)। "Perspectives on dyslexia"Paediatrics & Child Health11 (9): 581–7। ডিওআই:10.1093/pch/11.9.581পিএমআইডি 19030329পিএমসি 2528651অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  7. "What are the symptoms of reading disorders?"। National Institutes of Health। ১ ডিসেম্বর ২০১৬। 
  8. Sexton, Chris C.; Gelhorn, Heather L.; Bell, Jill A.; Classi, Peter M. (নভেম্বর ২০১২)। "The Co-occurrence of Reading Disorder and ADHD: Epidemiology, Treatment, Psychosocial Impact, and Economic Burden"। Journal of Learning Disabilities45 (6): 538–564। এসটুসিআইডি 385238ডিওআই:10.1177/0022219411407772পিএমআইডি 21757683 
  9. Bishop, DV; Snowling, MJ; Thompson, PA; Greenhalgh, T; CATALISE, consortium. (২০১৬)। "CATALISE: A Multinational and Multidisciplinary Delphi Consensus Study. Identifying Language Impairments in Children."PLOS ONE11 (7): e0158753। ডিওআই:10.1371/journal.pone.0158753পিএমআইডি 27392128পিএমসি 4938414অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2016PLoSO..1158753BLanguage impairment frequently co-occurs with other neurodevelopmental difficulties, including... reading difficulties 
  10. "What are common treatments for reading disorders?"। National Institutes of Health। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৫ 
  11. Handler, SM; Fierson, WM; Section on, Ophthalmology; Council on Children with, Disabilities; American Academy of, Ophthalmology; American Association for Pediatric Ophthalmology and, Strabismus; American Association of Certified, Orthoptists (মার্চ ২০১১)। "Learning disabilities, dyslexia, and vision."। Pediatrics127 (3): e818–56। ডিওআই:10.1542/peds.2010-3670অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 21357342 
  12. Umphred, Darcy Ann; Lazaro, Rolando T.; Roller, Margaret; Burton, Gordon (২০১৩)। Neurological Rehabilitation। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 383। আইএসবিএন 978-0-323-26649-9। ৯ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  13. "How many people are affected by/at risk for reading disorders?"। National Institutes of Health। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৫ 
  14. Venton, Danielle (সেপ্টেম্বর ২০১১)। "The Unappreciated Benefits of Dyslexia"Wired। ৫ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৬ 
  15. Mathew, Schneps (আগস্ট ২০১৪)। "The Advantages of Dyslexia"ScientificAmerican.com। Scientific American। ৪ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৬ 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

শ্রেণীবিন্যাস
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান