মণ্ডিয়ালী ভাষা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মণ্ডিয়ালী
𑚢𑚘𑚶𑚖𑚮𑚣𑚭𑚥𑚯, मण्डियाली
টাকরী লিপিতে লেখা "মণ্ডিয়ালী"
দেশোদ্ভবভারত
অঞ্চলহিমাচল প্রদেশ
জাতিমণ্ডিয়াল জনজাতি
মাতৃভাষী
৬,২২,৫৯০ (২০১১ জনগণনা)
টাকরী লিপি(পুরাতন)
দেবনাগরী লিপি
ভাষা কোডসমূহ
আইএসও ৬৩৯-৩
mjl – মণ্ডিয়ালী
গ্লোটোলগmand1409  (মণ্ডিয়ালী)[১]

মণ্ডিয়ালী ভাষা (টাকরী: 𑚢𑚘𑚶𑚖𑚮𑚣𑚭𑚥𑚯) পশ্চিমা পাহাড়ী ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি ভাষা, যা মূলত উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের মণ্ডী জেলার মণ্ডী উপত্যকা তথা মণ্ডী শহরকে কেন্দ্র করে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ভাষা৷ ইউনেস্কো এই ভাষাটিকে ভারতের অধিকতর বিপন্ন ভাষাগুলির তালিকাভুক্ত করেছে৷[২] তথ্য অনুসারে ১৯৬১ থেকে ২০০১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মণ্ডিয়ালী ভাষাভাষীর সংখ্যা ২১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে৷

এই ভাষাটির কাংড়া জেলার কথ্য ভাষা কাংড়ির যথেষ্ট মিল রয়েছে৷ পাহাড়ি ভাষাগুলির চম্বিয়ালী প্রকারটি পৃথক ভাষা হিসাবে পরিগণিত হলেও মণ্ডিয়ালীর সাফে ৯০-৯৫% মিল পাওয়া যায়৷ উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পারস্পরিক বোধগম্যতা রয়েছে৷[৩]

উপভাষা[সম্পাদনা]

প্রাথমিক সার্ভে অনুসারে এটা স্পষ্ট হয় যে এই ভাষার সাথে কাংড়ি ভাষার যথেষ্ট মিল রয়েছে। মণ্ডী জেলারদক্ষিণ-পূর্ব দিকে বসবাসরত লোকজন ব্যতীত প্রায় সকলেই কাংড়ি ভাষা বুঝতে পারেন। প্রমিত মণ্ডিয়ালী ভাষা বলা হয় মণ্ডী উপত্যকার উত্তরে যোগীন্দরনগর থেকে দক্ষিণে সুন্দরনগর অবধি। পাহাড়ি মণ্ডিয়ালী উত্তরে রাবোত থেকে পূর্ব দিকে উহ্ল নদী উপত্যকা পর্যন্ত৷ এই উপভাষাটি প্রমিত মণ্ডিয়ালী থেকে সামান্য ভিন্ন এবং মণ্ডিয়ালী কুলুবী ভাষার মধ্যবর্তী৷ দক্ষিণ-পূর্ব দিকের মণ্ডিয়ালীর সাথে মিল রয়েছে মহাসু পাহাড়ী ভাষার৷ পশ্চিম দিকে সর্কাঘাট অঞ্চলের মণ্ডিয়ালীও প্রমিত থেকে সামান্য পৃথক এবং বিলাসপুরী ভাষার সাথে কিছুটা মিল রয়েছে৷ মণ্ডিয়ালীর সাথে আভিধানিকভাবে কাংড়ির পালমপুরি উপভাষার ৮৯% ও চম্বিয়ালী ভাষার ৮৩% মিল রয়েছে৷[৪]

লিপি[সম্পাদনা]

মণ্ডিয়ালী ভাষার জন্য ব্যবহৃত মূল লিপি হলো টাকরী লিপির একটি বিশেষ স্থানীয় প্রকার, যা মণ্ডিয়ালী লিপি নামে পরিচিত৷

মণ্ডিয়ালী লিপিতে লেখা একটি নমুনা

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

মণ্ডিয়ালী ভাষাভাষী লোক মূলত মণ্ডিয়ালী উপত্যকায় সীমাবদ্ধ৷ ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে মণ্ডিয়ালী ভাষাভাষীর সংখ্যা ৬,২২,৫৯০ জন, যেখানে ২০০১ খ্রিস্টাব্দে এই জনসংখ্যা ছিলো ৬,১১,৯৩০ জন৷ জন সচেতনতার অভাবে যথেষ্ট সংখ্যক লোক নিজেদের হিন্দি এবং পাহাড়ী ভাষা (পাহাড়ি মূলত হিমাচলের ভাষাগুলিকে একত্রিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রবর্তিত নাম) বলে উল্লেখ করেছেন৷

ভারত - ৬,২২,৫৯০
  • হিমাচল প্রদেশ - ৬,২১,৪০০ (৯.০৫%)
    • মণ্ডী জেলা - ৫,৯০,৯৭৪ (৫৯.১১%)
      • পাধার ব্লক - ২৫,৯০৯ (৫২.৪৯%)
      • যোগীন্দরনগর ব্লক - ৪০,৩৪৩ (৪৭.৭৬%)
      • লাড় ভরোল ব্লক - ১৩,১৬৭ (৫০.৯৭%)
      • সন্ধোল ব্লক - ১৫,৮৩৩ (৯৩.৫৫%)
      • ধর্মপুর ব্লক - ৩৩,১৬৫ (৯৫.৩৬%)
      • কোটলি ব্লক - ২৫,৭৭৭ (৯৯.৬৮%)
      • সর্কাঘাট ব্লক - ৬১,০১৬ (৯৪.৯৪%)
      • ভাদরোটা ব্লক - ২০,৩৯৮ (৯৪.৬৯%)
      • বলদুয়ারা ব্লক - ৪০,৫৯৩ (৯৪.৮২%)
      • সুন্দরনগর ব্লক - ৯৫,২৪৭ (৮৫.৫৪%)
      • মণ্ডী ব্লক - ১,৮১,৪২৭ (৮৩.৯৭%)
      • আউৎ ব্লক - ২,২৯৫ (৭.২৯%)
      • চাচ্যোত ব্লক - ২৯,৯৩০ (৫১.৮৫%)
      • নিহরি ব্লক - ৪,১২৫ (১১.৬০%)
      • কারসোগ ব্লক - ১,৪২৭ (১.৫৩%)
    • কুলু জেলা - ১৪,১৬০ (৩.২৩%)
      • কুলু ব্লক - ১১,২৮৪ (৪.৪৩%)
      • মানালি ব্লক - ২,১৪৪ (২.৯৫%)

বর্তমান অবস্থা[সম্পাদনা]

মণ্ডিয়ালী ভাষাটি সাধারণভাবে পাহাড়ি অথবা হিমাচলি ভাষা নামে পরিচিত। তবে কারো কারো মতে বৃহত্তর পাঞ্জাবির ডোগরি ভাষার একটি উপভাষা। এই ভাষাটি কোন সরকারি পদমর্যাদা নেই এবং এটি বর্তমানে হিন্দি ভাষার একটি উপভাষা হিসেবে পরিগণিত হয়।[৫] ইউনেস্কোর তথ্য অনুসারে এই ভাষাটি বিপন্ন ভাষার তালিকাভুক্ত, অর্থ অধিকাংশ মণ্ডিয়ালী ভাষাভাষী শিশুরা নিজের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষালাভে অক্ষম।[৬]

ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলে পাহাড়ী হিমাচলি ভাষাগুলির অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০১০ খ্রিস্টাব্দে সিংহভাগ সম্মতিতে বিষয়টি রাজ্য বিধানসভায় উপস্থাপিত হয়৷[৭] ছোটো ছোট সংস্থাগুলির দাবীকে বাদ দিতে সরকারীভাবে বিশেষ ঐই ভাষাগুলি সংরক্ষণ ও মান্যতা দানের কোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি৷[৮] রাজনৈতিক প্রভাবে ভাষাগুলির অধিকাংশের সাথেই হিন্দি ভাষাগোষ্ঠীর কোনরূপ পারস্পরিক সম্পর্ক না থাকলেও পাহাড়ি এই ভাষাগুলি হিন্দি ভাষার অন্তর্গত একেকটি উপভাষা হয়ে রয়েছে৷[৯] সরকারী মান্যতা প্রাপ্ত ডোগরি ভাষার সহিত এর মিল রয়েছে৷

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "মণ্ডিয়ালী"গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট। 
  2. "UNESCO Atlas of the World's Languages in danger"। Unesco.org। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১২ 
  3. এথ্‌নোলগে মণ্ডিয়ালী ভাষা (১৮তম সংস্করণ, ২০১৫)
  4. http://www.ethnologue.com/language/mjl
  5. "India Language Census" (পিডিএফ) 
  6. "Endangered languages" 
  7. "Pahari Inclusion"Zee News 
  8. "Pahari Inclusion"The Statesman। ১৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০২০ 
  9. "Indian Language Census" (পিডিএফ)