নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট
পরিচালকঅ্যালফ্রেড হিচকক
প্রযোজকঅ্যালফ্রেড হিচকক
রচয়িতাআর্নেস্ট লেহম্যান
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারবার্নার্ড হেরমান
চিত্রগ্রাহকরবার্ট বার্কস
সম্পাদকজর্জ তোমাসিনি
প্রযোজনা
কোম্পানি
মুক্তি
  • ২৮ জুলাই ১৯৫৯ (1959-07-28) (ইউএস)
[১]
স্থিতিকাল১৩৬ মিনিট
ভাষাইংরেজি
নির্মাণব্যয়$৪,৩২৬,০০০[২]
আয়$৯,৮৪০,০০০[২]

নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট ১৯৫৯ সালের মার্কিন গোয়েন্দা থ্রিলার চলচ্চিত্র। মার্কিন পরিচালক অ্যালফ্রেড হিচকক পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ে ছিলেন ক্যারি গ্র্যান্ট, ইভা মারি সেন্ট, জেমস ম্যাসন এবং জেসি রয়েস ল্যান্ডিস। প্রযোজনা করেছে মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন আর্নেস্ট লেহম্যান[৩] এর আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল স্যান সেবাস্টিয়ান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে

নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট মূলত একজন পরিচয়বিহীন মানুষের গল্প। নিউ ইয়র্কের বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ী এক ব্যক্তিকে দেশের মূল্যবান মাইক্রোফিল্ম পাচারকারী একটি দল ভুল করে মার্কিন প্রশাসনের গোয়েন্দা বলে চিহ্নিত করে। আসলে তারা যে নামের এজেন্টকে খুঁজছে সে নামে কারও অস্তিত্ব নেই। পাচারকারী দলের উদ্দেশ্য ছিল এই এজেন্টকে খুন করে তাদের পরিকল্পনা সচল রাখা।

চলচ্চিত্রের স্কোর করেছেন বার্নার্ড হেরমান এবং শিরোনাম সিকুয়েন্স তৈরি করেছেন গ্রাফিক নকশাকারী সল ব্যাস

কাহিনীসংক্ষেপ[সম্পাদনা]

রজার থর্নহিল ম্যানহাটনের ম্যাডিসন এভিনিউয়ের এক বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ী যাকে ভুল করে জর্জ ক্যাপলান নামক সরকারি এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এক মাইক্রোফিল্ম পাচারকারী দল। দলের দুই এজেন্ট তাকে আটক করে নিউ ইয়র্ক সিটির এক প্লাজা হোটেল থেকে লেস্টার টাউনসেন্ডের বাড়িতে ধরে নিয়ে আসে। টাউনসেন্ড পরিচয় দানকারী এক লোক সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু সে বারবার ক্যাপলান নয় বলে দাবী করতে থাকে। টাউনসেন্ড নামে পরিচয় দানকারী এই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে "ফিলিপ ভ্যানডেম" যে পাচারকারী দলের প্রধান। ভ্যানডেম ক্যাপলান মনে করেই বোধ হয় থর্নহিলকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। এজেন্টরা তাকে জোর করে প্রচুর পরিমাণ বৌরবন হুইস্কি খাইয়ে চুরি করা গাড়িতে উঠিয়ে দুর্গম রাস্তায় ছেড়ে দেয় যাতে মাতাল অবস্থায় দুর্ঘটনা মৃত্যু বলে চালিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু মারা না গিয়ে সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।

নিউ ইয়র্কের গ্লেন কোভ এলাকার পুলিশ বিচারালয়ে তার বিচারের সময় তার মা উপস্থিত হয়। সে প্রকৃত কাহিনী ব্যাখ্যা করায় দুজন গোয়েন্দা দিয়ে তাকে টাউনসেন্ডের বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে আসল টাউনসেন্ডের স্ত্রীর (পাচারকারী দলের সাজানো) সাথে কথা হয়। জানা যায় টাউনসেন্ড জাতিসংঘের কূটনীতিক। পুলিশ তাকেই দোষী সাব্যস্ত করে। দুই ডলার জরিমানা দিয়ে সে আসল ঘটনা অনুসন্ধানে নামে, জর্জ ক্যাপলানকে খুঁজে বের করলেই এর সমাধান হবে। সে ক্যাপলানের হোটেল কক্ষে অনধিকার প্রবেশ করে একটি ছবি পায় যাতে টাউনসেন্ড পরিচয় দানকারী ব্যক্তিটির ছবি পায়। জাতিসংঘ দপ্তরে গিয়ে টাউনসেন্ডকে খুঁজে বের করে। কিন্তু ছবির যে ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল টাউনসেন্ডের সাথে তার কোন মিলই নেই। টাউনসেন্ডই সে বাড়ির প্রকৃত মালিক যা অনেকদিন থেকে তালাবদ্ধ আছে। ছবিটি দেখিয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই পিছন থেকে ছুরিকাহত হয়ে টাউনসেন্ডের মৃত্যু হয়। কিছু চিন্তা না করেই ছুরিটি বের করতে গিয়ে সে-ই খুনী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। পালিয়ে গেলেও পত্রিকায় খুনের আসামী হিসেবে তার ছবি বেরোয়।

পলাতক থর্নহিল জানতে পারে এ হোটেল থেকে ক্যাপলান শিকাগোর একটি হোটেলের উদ্দেশ্যে চলে গেছে। প্লেন না নিয়ে ট্রেনে শিকাগো যাবার সিদ্ধান্ত নেয় সে। বিনা টিকিটে ভ্রমণ তার উপর পলাতক আসামী হিসেবে সন্দেহে, অনেক কষ্টে টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি লিমিটেডের একটি ট্রেনে উঠলেও পুলিশের তাড়া খেয়ে একটি মেয়ের সাথে তার দেখা হয়। ইভ কেন্ডাল নামক মেয়েটি তাকে তখনকার মত রক্ষা করে। রাতের খাবারের সময় আবার মেয়েটির সাথে দেখা হয়। কথায় কথায় থর্নহিল তার নিজস্ব ম্যাচবক্সটি কেন্ডালকে দেখায় যাতে "ROT" লিখা; R-তে রজার, T-তে থর্নহিল, O-এর কোন অর্থ নেই। তখনই ট্রেন স্টেশন ছাড়া অন্য এক স্থানে থেমে যায় আর পুলিশ তল্লাশির জন্য উঠে। মেয়েটি নিজ ঘরে থর্নহিলকে লুকিয়ে রাখে। তারা একসাথে রাত্রিযাপন করে এবং খানিকটা প্রেমে পড়ে যায়। মেয়েটি আসলে ভ্যানডেমের প্রেমিকা যে পুলিশের হাত থেকে তাকে বাঁচিয়ে ভ্যানডেমের কাছে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এসব করছে। ট্রেন শিকাগো পৌঁছার পর মেয়েটি থর্নহিলের হয়ে ক্যাপলানকে ফোন করে তার সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে। আসলে কেন্ডাল কথা বলে ভ্যানডেমের সহযোগী ব্যবসায়ী লিওনার্দের সাথে। কেন্ডালের ঠিকানা অনুযায়ী যে স্থানে থর্নহিল যায় সেখানে তাকে প্লেন দিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়। সেখান থেকে বেঁচে ক্যাপলানের হোটেলে এসে জানতে পারে ক্যাপলান সকাল ৭:৩০-এ হোটেল ছেড়ে দক্ষিণ ডাকোটার র‌্যাপিড সিটিতে গেছে। অথচ কেন্ডাল তাকে ফোন করেছিল ৯:০০ টায়।

কেন্ডালের চাল কিছুটা বুঝতে পারে থর্নহিল। সে হোটেলেই কেন্ডালকে দেখে তার রুমে গিয়ে একটি ঠিকানা উদ্ধার করে, কেন্ডালকে কিছু বুঝতে না দিয়েই। কিছুক্ষণ পর সে ঠিকানায় গিয়ে এক নিলাম ভ্যানডেম, লিওনার্দ ও কেন্ডালকে একসাথে দেখতে পায়। একটি নিলাম কেন্দ্রে থর্নহিল ও ভ্যানডেম আবার মুখোমুখি হয়। কেন্ডালকে ধিক্কার এবং ভ্যানডেমের উদ্দেশ্য জানতে চাইলেও সে বুঝতে পারে এখান থেকে পালানোর কোন উপায় নেই। পাগল এবং দুষ্কৃতিকারীর অভিনয় করে অগত্যা সে নিলাম কেন্দ্রের পুলিশের হাতে ধরা দেয়। পুলিশ পলাতক আসামী পেয়েও তাকে পুলিশ দপ্তরে না নিয়ে শিকাগো মিডওয়ে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নর্থওয়েস্ট এয়ারলাইন্‌স-এর কাউন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে প্রফেসরের হাতে সোপর্দ করা হয়। এই প্রফেনরটি মার্কিন ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সিনিয়র গোয়েন্দা যে ভ্যানডেমকে দেশের গোপন মাইক্রোফিল্ম পাচার থেকে নিরস্ত করার চেষ্টা করছে। সে জানায় জর্জ ক্যাপলান নামে বাস্তবে কেউ নেই। সরকারের প্রকৃত গোয়েন্দা এজেন্ট থেকে ভ্যানডেমের দৃষ্টি সরিয়ে অন্য স্থানে নিবদ্ধ করার জন্য গোয়েন্দা বিভাগ এই কাল্পনিক গোয়েন্দার সৃষ্টি করেছে। আর সরকারের প্রকৃত এজেন্ট হচ্ছে ভ্যানডেমের প্রেমিকা ইভ কেন্ডাল। থর্নহিল হস্তক্ষেপ করার কারণে এই কেন্ডালের জীবন এখন হুমকির সম্মুখীন।

কেন্ডালকে রক্ষার খাতিরে থর্নহিল প্রফেসরকে সহায়তা করতে রাজি হয়। সে প্রকৃত জর্জ ক্যাপলান সেজে মাউন্ট রাশমোরের নিচে একটি রেস্তোরাঁয় ভ্যানডেম ও কেন্ডালের সাথে দেখা করতে যায়। কেন্ডালকে আগেই এই দেখা করার বিষয়ে জানানো হয়। পরিস্থিতির সৃষ্টি করে থর্নহিল কেন্ডালকে ঠেকাতে গেলে কেন্ডাল তাকে গুলি করে। থর্নহিল আহত অবস্থা পড়ে গেলে কেন্ডাল চলে যায় আর থর্নহিলকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিয়ে যায় প্রফেসর। বনের ভিতরে এক জায়গায় কেন্ডালের সাথে থর্নহিলের দেখাকরিয়ে দেয় প্রফেসর; কেন্ডালের পিস্তলে আসলে কোন গুলি ছিলনা। কিন্তু কেন্ডালকে আবার ভ্যানডেমের কাছে ফিরে যেতে হবে। ভ্যানডেম আজই মাইক্রোফিল্ম নিয়ে মাউন্ট রাশমোরের কাছে এক জায়গা থেকে ব্যক্তিগত প্লেনে করে দেশ ছাড়ছে। তার সাথে কেন্ডালকেও যেতে হবে সব তথ্য বের করার জন্য। থর্নহিল রাজি না হলেও কেন্ডাল চলে যায়, থর্নহিলকে আহত হিসেবে নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রফেসর থর্নহিলকেও হাসপাতল থেকে বেরোতে দেয়না। কিন্তু থর্নহিল পালিয়ে যায়, মাউন্ট রাশমারোর নিচে যে হোটেলে ভ্যানডেম থাকে সেখানে। এখানে একই সাথে তিনটি দৃশ্যের সমন্বয় ঘটানো হয়। এক ঘরে লিওনার্দ ও ভ্যানডেম কথা বলছে, আরেকটি ঘরে কেন্ডাল যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর জানালা দিয়ে এই দুটি দৃশ্যই দেখছে থর্নহিল। লিওনার্দ কেন্ডাল যে পিস্তল দিয়ে থর্নহিলকে গুলি করেছিল তা দেখায় ভ্যানডেমকে, তাতে কোন গুলি ভর্তি নেই। তারা সিদ্ধান্ত নেয় ঠিকভাবেই কেন্ডালকে প্লেনে করে নিয়ে যাওয়া হবে, দেশ ছেড়ে তারপরেই তার একটা ব্যবস্থা করা যাবে। থর্নহিল যখন কেন্ডালের রুমে যায় ততক্ষণে কেন্ডাল নেমে গেছে। এখানে থর্নহিল তার আরওটি লেখা ম্যাচ বক্স ব্যবহার করে। তাতে লিখে দেয়, "I am in your room"। ছুড়ে দেয়া ম্যাচ বাক্স দেখে কেন্ডাল ফিরে এসে সব জানতে পারে। কেন্ডাল প্লেনে উঠার প্রস্তুতি নিয়ে ভ্যানডেম ও লিওনার্দের সাথে যেতে থাকে। পেছনে থর্নহিল বেরোতে গিয়ে আবার বাবুর্চি মহিলার কাছে ধরা খায়। কিন্তু বাবুর্চির পিস্তলটি ছিল কেন্ডালের গুলিবিহীনটি। বেরিয়ে আসে থর্নহিল, মাইক্রোফিল্ম সহ কেন্ডাল গাড়িতে উঠে। মাউন্ট রাশমোরের উপরে এ পর্যায়ে একটি একশন দৃশ্য সাজানো হয়। শেষে কেন্ডাল ও থর্নহিল যখন পড়ে যাচ্ছিল তখনই প্রফেসর এসে তাদের রক্ষা করেন। শেষ দৃশ্যে আবার কেন্ডাল ও থর্নহিল ট্রেনে করে শিকাগো থেকে ট্রেনে করে নিউ ইয়র্কে যাচ্ছে দেখানো হয়। রাশমোরের উপরেই থর্নহিল বলেছিল যে, এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারলে এ ট্রেন জার্নিই হবে তাদের তাৎক্ষণিক কাজ।

অভিনয়ে[সম্পাদনা]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

জুন ২০০৮ সালে, সৃজনশীল সম্প্রদায়ের ১,৫০০ জনের ভোট দানের উপর ভিত্তি করে এএফআই প্রকাশিত "টেন টপ টেন" – শ্রেষ্ঠ দশ "ক্লাসিক" মার্কিন চলচ্চিত্রের তালিকায় চলচ্চিত্রটি যুক্ত করা হয়েছে। নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট রহস্য চলচ্চিত্র তালিকায় সতেরোতম চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।[৪]

আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট-এর স্বীকৃতি[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Chicago [Picture Grosses]"Variety। জুলাই ১, ১৯৫৯। পৃষ্ঠা 10। সংগ্রহের তারিখ মে ২০, ২০১৯Internet Archive-এর মাধ্যমে। 
  2. The Eddie Mannix Ledger, Los Angeles: Margaret Herrick Library, Center for Motion Picture Study .
  3. Jaynes, Barbara Grant; Trachtenberg, Robert (২০০৪)। "Cary Grant: A Class Apart"। Burbank, California: Turner Classic Movies 
  4. "AFI's 10 Top 10"American Film Institute। ২০০৮-০৬-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]