ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্ব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার উত্তরসূরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে শপথ গ্রহণ করেন। ট্রাম্প একজন রিপাবলিকান প্রার্থী ছিলেন। তিনি পেশায় নিউ ইয়র্ক এর একজন ব্যবসায়ী এবং টেলিভিশন রিয়েলিটি অনুষ্ঠানের একজন ব্যক্তি ছিলেন। নির্বাচনের সময় তিনি হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে জয় লাভ করেন। ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক শহরের স্থানীয় বাসিন্দা ফ্রেড ট্রাম্পের ছেলে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে নিজের কর্মজীবন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার পিতার যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ছিল। ট্রাম্প পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অধীন হোয়ারটন স্কুলে অধ্যয়নের সময় তার পিতার 'এলিজাবেথ ট্রাম্প এন্ড সান' প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। ১৯৭১ সালে ট্রাম্প তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে ''দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশ্যান'' রাখেন। ট্রাম্প বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল স্টেট ব্যবসা এবং মিডিয়া তারকাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। ট্রাম্প জুন ১৬, ২০১৫ তারিখে রিপাবলিকান পার্টির অধীনে ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার মনোনয়ন প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। ট্রাম্প তার পূর্বের প্রচারণা কর্মকাণ্ড দিয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং জনসমর্থন অর্জনে সক্ষম হন। জুলাই ২০১৫ থেকে রিপাবলিকান পার্টির জনমত নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে পছন্দের দিক থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে প্রথম সারিতে অবস্থান করছেন। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ৩০৬টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।[১]

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারকার্য ২০১৬[সম্পাদনা]

ট্রাম্প এবং তার সমর্থক জানুয়ারীর ২০১৬ সালে মাসকাটিন, আইওয়ার একটি র‍্যালিতে। অসংখ্য সমর্থকদের হাতে সাইনবোর্ড, যেখানে লেখা আছে "দ্য সাইলেন্ট ম্যাজোরিটি স্ট্যাণ্ডস্‌ উইদ ট্রাম্প".

ট্রাম্প ১৯শে অগাস্ট ২০১৫ সালে নিউ হ্যাম্পশায়ারের একটি প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে

ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী রাজনীতি তাকে তার শ্রমিক-শ্রেণীর সমর্থকদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তার প্রস্তাবিত নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাজ্যসমূহ নিয়ে তার বিবৃতি তাকে জনমত বিচারে রিপাবলিকান ফ্রন্ট-রানারে তাকে এগিয়ে রেখেছে। তার কিছু বক্তব্য বেশ কিছু রাজনীতিবিদ এবং মূলধারার সংবাদ-মাধ্যম কর্তৃক বিতর্কিত বলে বিবেচিত হয়েছিল। রাজনৈতিক শুদ্ধতা (পলিটিক্যাল কারেক্টন্যাস) থেকে নিবৃত্তিই হলো তার প্রচারকার্যের মূল বিষয়। ট্রাম্পের বেশিরভাগ বক্তব্যই হলো অভিবাসন এবং সীমান্ত রক্ষা, অবৈধ অভিবাসীদের নির্বাসন, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকান সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ এবং অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে। অধিকাংশ অবৈধ অভিবাসীরা মেক্সিকান-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে বলে তার অভিমত। রিপাবলিক পার্টিতে তার প্রার্থিতা নিয়ে অনেক বিরোধিতা ও মতবিরোধ থাকলেও ট্রাম্পের মনোনয়ন প্রার্থিতা সফল হয়েছে মূলত ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজে ও প্রচারের দরুন। তিনি বেশ অনেকবার উদ্ধত এবং বিতর্কিতমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন যা মূলত তার শ্রমিক-শ্রেণীর সমর্থকদের আকর্ষিত করেছিল। ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে "বিভেদ সৃষ্টিকারী", "দায়িত্বজ্ঞানহীন" এবং "উৎপীড়ক" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

ট্রাম্প অনেক গণ্যমান্য সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং মনোনয়নপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের বক্তব্যের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। যারা ট্রাম্পকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন কিংবা ট্রাম্প যাদের সাথে মতানৈক্যে পৌঁছাতে পারেন না, তাদের নিয়ে ট্রাম্পকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে বাগাড়ম্বরপূর্ণ টুইট করতে দেখা যায়।

ট্রাম্প তার অভিবাসন নীতির মাধ্যমে আনুমানিক ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত করা এবং মেক্সিকান-যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে একটি সু-দৃঢ় দেওয়াল নির্মাণের প্রস্তাবনা রাখেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফেলিপ কালডেরন বলেন যে, "এরকম গো-মূর্খ দেওয়াল নির্মাণের জন্য আমরা এক পয়সাও খরচ করতে আগ্রহী নয়। এবং এই ধরনের প্রস্তাবনা সম্পূর্ণই অর্থহীন।"

ট্রাম্প মধ্য-প্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইসিসের উপর আক্রমণাত্মক বোমাবর্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মসজিদে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির উপর পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন।

ধর্ম নিয়ে ট্রাম্পের বহু দৃঢ় বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। সন্ত্রাস এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে একাত্ম করে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এমনকি বেন কার্সন এবং টেড ক্রুজের খ্রিস্টধর্মে তাদের বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়াও তিনি যুদ্ধরত মার্কিন সেনা সদস্যদের দেখাশোনা, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে সুদৃঢ়করণ এবং বাণিজ্যিক চুক্তিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের অনুকূলে আনার বিষয় নিয়েও বক্তব্য রেখেছিলেন।[২]

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবনা[সম্পাদনা]

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প বলেন, "যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দেশের প্রতিনিধিরা উপলব্ধি করতে পারছে আসলেই কি হচ্ছে, ততদিন অব্দি মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে"। তার এই ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তেও সমালোচনা কুড়িয়েছিল। তার এই বক্তব্যে প্রতিবাদে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস্‌, সৌদি রাজপুত্র আল-ওয়ালিদ বিন তালাল এবং কানাডার বিদেশ মন্ত্রী স্টিফেনি ডিয়ন এবং পাশাপাশি রিপাবলিকান পার্টির সভাপতি রেইন্স প্রিবাস, রিপাবলিকান হাউস স্পিকার পল রায়ান, রিপাবলিকান সিনেট মেজরিটি নেতা মিচ ম্যাককোনেল প্রমুখ আরো অন্যান্য নেতারা নিন্দা জানিয়েছিল। যুক্তরাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য একটি পিটিশনের আয়োজন করা হয় যেখানে ৫,৪০,০০০ মানুষ স্বাক্ষর করেন। খোদ ট্রাম্পের দল রিপাবলিক পার্টির অনেক সদস্যরা এই বলে ট্রাম্পের বিরোধিতা করেছিল যে, মুসলিমদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবনা রিপাবলিকান পার্টির রক্ষণশীল মূল্যবোধ, মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সু-প্রাচীন অভিবাসী ঐতিহ্য নীতির পরিপন্থী। ট্রাম্পের সমালোচকরা তার বিরোধিতা করে কিছু জিনিস নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, তার প্রস্তাবনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম জোটভুক্ত দেশগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং তার এই বক্তব্য বরং আইসিসকে সহায়তা করতে পারে মুসলিম বিশ্বাসকে পুঁজি করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের অপপ্রচার চালানোর জন্য।

২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকেই ট্রাম্প ইসরায়েলে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। ইসরায়েলেও তার কিছু জমি রয়েছে। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও উন্মোচন করেছিলেন যেখানে ট্রাম্পকে ২০১৩ সালে ইসরায়েলের নির্বাচনে বেনজামিন নেতানিয়াহুর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করতে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু মুসলিমদের নিয়ে ট্রাম্পের ঐ বিতর্কিত বক্তব্যে নেতানিয়াহুসহ বহু ইহুদি নেতাও এর বিরোধিতা করেছিলেন। ৮৪ জন নেসেট (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট)সদস্য যাদের অনেকেরই মুসলিম ছিল, তারা একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করে নেতানিয়াহুকে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎ না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। নেতানিয়াহুর উপর রাজনৈতিক চাপ বেড়ে যাবে ভেবে পরবর্তীতে ট্রাম্প নিজেই ইসরায়েলে ভ্রমণ এবং নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাৎ মুলতবি করেন।

ফক্স নিউজের এক বিতর্কানুষ্ঠানে যখন ট্রাম্পকে তার মুসলিম প্রবেশ বিরোধী প্রস্তাবনার সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় (আনুমানিক ১,০০,০০০ মুসলিম অভিবাসী প্রতি বছর প্রবেশানুমতি দেওয়া হয়), ট্রাম্প তখন উল্লেখ করেন, বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সের অবনতির জন্য তাদের মুসলিম অভিবাসন দায়ী। ট্রাম্প আরো বলেছেন যে, ব্রাসেলসে বাস করা "নরকে" বাস করার সমতুল্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের এই ভয়ানক অবস্থার জন্য মুসলিম অভিবাসন অন্যতম কারণ।[২]

প্রার্থিতা[সম্পাদনা]

মিঃ ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দাঁড়ানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন ১৯৮৭ সালে। এমনকী রিফর্ম পার্টির প্রার্থী হিসাবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতাও নামেন ২০০০ সালে।

২০০৮ সালের পর থেকে তিনি একটি আন্দোলন শুরু করেন যার মূল বিষয় ছিল বারাক ওবামার জন্ম আমেরিকায় কীনা এবং ফলে দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্মগত অধিকার তার আছে কিনা। পরে অবশ্য এই আন্দোলন থিতিয়ে পড়ে, যখন প্রমাণিত হয় যে বারাক ওবামার জন্ম আমেরিকার হাওয়াইয়ে। মিঃ ট্রাম্প বিষয়টা মেনে নেন- কিন্তু স্বভাবগতভাবে কখনই তিনি এই প্রসঙ্গ নিয়ে আন্দোলনের জন্য দু:খপ্রকাশ করেন নি।

মিঃ ট্রাম্প ২০১৫ সালের জুন মাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

"আমরা এমন একজনকে ক্ষমতায় চাই যে আক্ষরিক অর্থে এই দেশকে আবার মহান করে তুলবে। আমরাই তা করতে পারব," প্রার্থী হবার ঘোষণা দিয়ে বলেন মিঃ ট্রাম্প।

"মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন" "আমেরিকাকে আবার মহান করুন" এই স্লোগান দিয়ে তিনি প্রচারে নামেন। তার প্রচারে আমেরিকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি যেমন তিনি দিয়েছেন, তেমনি পাশাপাশি মেক্সিকো আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দেওয়াল তুলে এবং মুসলমানদের অভিবাসন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মিঃ ট্রাম্প।

তার প্রচারণা সভায় ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভের মুখে এবং তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজ ও মার্কো রুবিও-র সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকে হারিয়ে দিয়ে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন জয়ের দৌড়ে নেমেছিলেন আমেরিকার বিশিষ্ট ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এখন প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হবার মধ্যে দিয়ে তার উত্তাল ও চিত্তাকর্ষক প্রচারণা পর্বের সমাপ্তি ঘটল।[৩]

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের কয়েকটি কারণ[সম্পাদনা]

এক বছর আগে প্রেসিডেন্সিয়াল পদের প্রচারণা শুরুর পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প সব দিক দিয়েই বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আসলে খুব কম মানুষই ধারণা করেছিল যে, তিনি নির্বাচনী দৌড়ে টিকে থাকবেন। তবে তিনি সেই দৌড়ে টিকে যান।

তারা ভেবেছিলেন, তিনি জরিপে নাকচ হয়ে যাবেন। তাও তিনি জরিপগুলোয় ভালোভাবেই টিকে রইলেন। তারা ভাবলেন, তিনি প্রাইমারিতে টিকতে পারবেন না। সেটাও তিনি টিকে দেখালেন। তারা ভাবলো, তিনি রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাবেন না। তিনি মনোনয়নও পেলেন।

সবশেষে তারা বললেন, যত যাই হোক, নির্বাচনে জিতে আসার মতো ক্ষমতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেই।

কিন্তু তিনিই এখন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। অনেকে ভাবেননি, এমন পাঁচটি কারণ তার এই বিজয়ের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

শ্বেতাঙ্গ সমর্থন[সম্পাদনা]

ওহাইও, ফ্লোরিডা, এবং নর্থ ক্যারোলিনার শ্বেতাঙ্গ প্রধান রাজ্যগুলো একের পর এক ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। এসব রাজ্যের বেশিরভাগ ভোট ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে গিয়েছে। কারণ এসব রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা মনে করছেন, এতদিন তারা যাদের ভোট দিয়েছেন, সেখানে তারা উপেক্ষিত হয়েছেন। তাই তারা এবার বিকল্প কিছুর সন্ধান করেছেন।

নির্বিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প[সম্পাদনা]

পুরো নির্বাচনী প্রচারণার সময় বেশ কয়েকজন তারকার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধ ফেরত জন ম্যাককেইনকে বিদ্রূপ করেছেন। ফক্স নিউজের প্রেজেন্টার মেগান কেলির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন। নারীদের বিষয়ে তার যৌন আচরণ নিয়ে তার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিও ছিলো দায়সারা গোছের। এমনকি তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে তিনি হেরে গেছেন বলেই মনে করা হয়। কিন্তু তারপরেও, তিনি যেন বার বার আলোচনায় ফিরে এসেছেন। এমনকি এসব বিতর্কও যেন পাত্তা না পেয়ে ফিরে গেছে।

একার লড়াই[সম্পাদনা]

শুধু ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প লড়াই করেছেন তার নিজের দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং সবাইকে পরাজিত করেছেন। এমনকি পার্টির নেতা, হাউজ স্পিকার পল রায়ানের কোনও সাহায্যই তাদের দরকার হয়নি। হয়তো তার জয়ের পিছনে এটাও একটি ভূমিকা রেখেছে যে, তিনি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তার পুরো প্রচারণার সময় তিনি নিজেকে এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে, তার কারো দরকার নেই, জয়ের জন্য তিনি নিজেই যথেষ্ট।

কোমির আবির্ভাব[সম্পাদনা]

হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল নিয়ে নতুন করে তদন্তের কথা ঘোষণা করে, এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। নির্বাচনের শেষের দিকে তার ওই ঘোষণা অনেক দোদুল্যমান রাজ্যের ভোটারদের মত পরিবর্তন করে দিয়েছে।

ট্রাম্পের আলাদা প্রচারণা কৌশল[সম্পাদনা]

নির্বাচনী প্রচারণার প্রচলিত ধ্যান ধারণার বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু সেটি প্রমাণ করে দিয়েছে যে, তিনি অনেক বিশেষজ্ঞের চেয়ে ভালো প্রচারণা বোঝেন। তিনি উইসকনসিন আর মিশিগানের মতো রাজ্যগুলোয় প্রচারণা চালিয়েছেন, যা বিশেষজ্ঞরা ধারণা করতেন যে, তার পক্ষে নেয়া সম্ভব না। এমনকি দরজায় দরজায় প্রচারণার বদলে তিনি বিশাল বিশাল র‍্যালি আর সমাবেশ করেছেন। তার অনেক প্রচারণার কৌশল বিশেষজ্ঞদের কাছে ঠিক মনে হয়নি, কিন্তু সেগুলোই শেষ পর্যন্ত কাজে দিয়েছে।[৪]

এক বছরে ট্রাম্পের নেয়া কয়েকটি সিদ্ধান্ত[সম্পাদনা]

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেয়ার এক বছর পূর্তি হচ্ছে শনিবার৷ এই এক বছরে নেয়া তার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনার জন্ম দিয়েছে৷

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য[সম্পাদনা]

বহুজাতিকের চেয়ে দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে বাণিজ্য চুক্তির পক্ষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ তাই ‘ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ’ (টিপিপি) আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে টিটিপ চুক্তির আলোচনা বন্ধ রেখেছেন৷ ‘নর্থ অ্যামেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বা নাফটা চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়ে মেক্সিকো ও ক্যানাডাকে চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে পুনরায় আলোচনায় বসতেও বাধ্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷

ব্যবসা ও অর্থনীতি[সম্পাদনা]

শেয়ার ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ট্রাম্পের প্রথম বছরটা ভালো ছিল৷ ট্রাম্পের জয়ের পরদিন ‘ডাও জোনস ইনডেক্স’ ছিল ১৮,৫৮৯৷ সেটি মধ্য জানুয়ারিতে এসে হয়েছে ২৫,৮০০৷ গত এক বছরে বেকারের সংখ্যাও কমেছে৷ বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৮ থেকে কমে ৪ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে৷ তবে ট্রাম্পের অন্যতম সাফল্য হচ্ছে কর সংস্কার৷ গতমাসেই তিনি সেটা করেছেন৷ ফলে কর্পোরেট কর ৩৫ থেকে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে৷

স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা[সম্পাদনা]

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্বাস্থ্যনীতি, যেটি ‘ওবামাকেয়ার’ নামে পরিচিত, সেটি বাতিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে ওবামাকেয়ারে সব মার্কিন নাগরিকের স্বাস্থ্যবিমার অধীনে থাকার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা বাতিল করতে সমর্থ হয়েছেন তিনি৷ এর ফলে দেশটিতে বিমাহীনের সংখ্যা বেড়ে ১৩ মিলিয়ন হতে পারে বলে মনে করছে ‘কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস'৷

পাবলিক ডিসকোর্স[সম্পাদনা]

ওয়াশিংটন পোস্টের হিসেবে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত এক বছরে দুই হাজারের বেশি মিথ্যা অথবা বিভ্রান্তিকর তথ্য সংবলিত মন্তব্য করেছেন৷ শুরুটা হয়েছিল তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে জনগণের উপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে৷ গণমাধ্যমে উপস্থিতির হার কম বলা হলেও তাঁর প্রশাসনের দাবি ছিল, তা ঠিক নয়৷ এছাড়া সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে কিছু শব্দ হয় বাদ বা সংশোধন করে ব্যবহার করা হয়েছে৷ যেমন ‘ক্লাইমেট' বা জলবায়ু শব্দটি ‘পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা’ বা ইপিএসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিকল্প উপায়ে ব্যবহার করা হয়েছে৷

সরকারের কর্মী সংখ্যা[সম্পাদনা]

সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ১৬ হাজার কম ছিল৷ এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদ এখনও শূন্য আছে৷ ‘পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিস’ নামের একটি নির্দলীয় সংস্থা এসব তথ্যের দিকে নজর রাখে৷ তারা বলছে, যেসব চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সেনেটের অনুমোদন লাগে সেরকম ৬৩৩টি পদের মধ্যে ২৪৫টি পদ এখনও খালি আছে৷

বিচারক নিয়োগ[সম্পাদনা]

সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আদালতে প্রায় ২০ জন বিচারকের নিয়োগ সিনেট থেকে নিশ্চিত করাতে পেরেছেন ট্রাম্প৷ অর্থাৎ আগামী বেশ কয়েক বছর মার্কিন বিচার ব্যবস্থায় ছাপ রাখতে পারবেন ট্রাম্পের বিচারকেরা৷

পররাষ্ট্রনীতি[সম্পাদনা]

ন্যাটোর কিছু সদস্যরাষ্ট্র পর্যাপ্ত চাঁদা না দেয়ায় প্রায়ই তাদের সমালোচনা করেন ট্রাম্প৷ গত এক বছরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে নিয়মিতই বিবাদে জড়াতে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে৷ জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মুসলিম বিশ্বসহ সারা বিশ্বের সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ কিউবা ও ইরানের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে ট্রাম্পকে৷

অভিবাসন[সম্পাদনা]

ট্রাম্পের প্রথম বছরে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ির হার প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী নিবন্ধনহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ কয়েকটি মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে দেয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আদালতে বিবেচনাধীন আছে৷ ডিভি লটারি কার্যক্রমেরও সমালোচনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তিনি এটি বাতিল করতে চান৷ অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সংখ্যা কমলেও ট্রাম্প এখনও যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তৈরি করতে চান৷

পরিবেশ[সম্পাদনা]

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম নেয়া কয়েকটি সিদ্ধান্তের একটি ছিল পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার প্রধান হিসেবে স্কট প্রুইটকে নিয়োগ দেয়া৷ গত এক বছরে তিনি কার্বন নির্গমনকারী বিভিন্ন প্রকল্প, যেমন কয়লা ও গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পরিবহন, মাইনিং, তেল ও গ্যাস ড্রিলিং ইত্যাদির জন্য নিয়মনীতি শিথিল করেছেন৷ এছাড়া প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প৷

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Presidency of Donald Trump" 
  2. "ডোনাল্ড ট্রাম্প" 
  3. কে এই (২০১৬-১১-০৯)। "কে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প?"BBC News বাংলা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-১০ 
  4. "ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পেছনে পাঁচটি কারণ" 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

U.S. Presidential Administrations
পূর্বসূরী
Obama
Trump Presidency
2017–2021
উত্তরসূরী
Biden