স্টেগোসরিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

স্টেগোসরিয়া অধোবর্গ
সময়গত পরিসীমা: মধ্য জুরাসিক যুগ থেকে আদি ক্রিটেশিয়াস যুগ, ১৬.৫–১৩.৬কোটি
স্টেগোসরাস স্টেনপ্‌স্‌ - যেমন দেখতে ছিল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
উপপর্ব: ভার্টিব্রাটা
শ্রেণী: সরীসৃপ
মহাবর্গ: ডাইনোসরিয়া
বর্গ: অর্নিথিস্কিয়া
উপবর্গ: থাইরিওফোরা
অধোবর্গ: স্টেগোসরিয়া
অধীনস্থ বিভিন্ন গোত্র
  • ক্রেটারোসরাস
  • জিয়াঙ্গুনোসরাস
  • রেগানোসরাস
  • হুয়ায়াঙ্গোসরাইডি
  • স্টেগোসরাইডি
  • স্টেগোপোডাস

স্টেগোসরিয়া (রোমান লিপি: Stegosauria) হল অর্নিথিস্কিয়া বর্গের একদল তৃণভোজী চতুষ্পদ বর্মধারী ডাইনোসর। এই অধোবর্গের অন্তর্গত বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসররা মূলত জুরাসিক যুগক্রিটেশিয়াস যুগের প্রথম দিকে পৃথিবীর বুকে বিচরণ করত। মূলত উত্তর গোলার্ধের বাসিন্দা এই ডাইনোসরদের বহু নিদর্শন ও জীবাশ্ম বিভিন্ন জায়গায় আবিষ্কৃত হয়েছে। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, চীন, এমনকী আফ্রিকাতেও এদের নিদর্শন মিলেছে।এদের পূর্বপুরুষ হিসেবে একাধিক প্রজাতি আবিষ্কৃত হলেও, তাদের থেকে এই অধোবর্গের উৎপত্তির সঠিক ধারা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত বিশেষ কিছু জানা যায়নি।

এই অধোবর্গের সবচেয়ে বিখ্যাত গণ স্টেগোসরাস থেকেই এই অধোবর্গের নামকরণ করা হয়েছে স্টেগোসরিয়া। মূলত উত্তর আমেরিকায় ও ইউরোপের পর্তুগালে স্টেগোসরাস গণের মোট ৮০টিরও বেশি নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।[১][২] অন্যদিকে হুয়ায়াঙ্গোসরাস তাইবাইই হল এখনও পর্যন্ত জানা এই অধোবর্গের প্রাচীনতম প্রজাতি। ১৬.৫ কোটি বছর আগে এরা পৃথিবীতে বাস করত। চীনে এদের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।[৩]

ডাইনোসরদের অর্নিথিস্কিয়া (পাখির মতো পশ্চাদদেশবিশিষ্ট ডাইনোসর) বর্গের অন্তর্গত থাইরিওফোরা (বর্মধারী ডাইনোসর) উপবর্গের অন্যতম শাখা স্টেগোসরিয়ানরা ছিল মূলত শ্লথগতির প্রাণী। এদের অন্যতম শণাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য ছিল দেহবর্ম ও পিঠের উপর বড় বড় অস্থিগঠিত পাতের উপস্থিতি, চওড়া শ্রোণীদেশ, বড় পিছনের পা এবং লেজের দিকে আত্মরক্ষামূলক অস্ত্র হিসেবে বেশ কয়েকটি বড় বড় কাঁটার অবস্থান। প্রথমদিকের স্টেগোসরিয়ানরা থাইরিওফোরা অধোবর্গের অন্যান্য প্রাণীদের মতোই ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট; তাদের দেহ ছিল কঠিন বহিঃস্ত্বকীয় আঁশ বা কুমীর সদৃশ অনুচ্চ 'স্কুট'এ আবৃত; তাদের গতিও ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি। কিন্তু বিবর্তনের ধারায় তাদের পরবর্তী প্রজাতিগুলি, বিশেষ করে স্টেগোসরাইডি গোত্রের অন্তর্গত প্রজাতিগুলি আকারে অনেক বড় হয়ে ওঠে, তাদের পিছনের পা গুলি বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে তাদের গতি কমে আসে ও পিঠের উপর বড় বড় পাত ও কাঁটার আবির্ভাব ঘটে। তাদের ঘাড়ও লম্বায় বৃদ্ধি পায়, মাথা আরও সরু হয়ে আসে। এর ফলে তাদের পক্ষে মাটির কাছাকাছি থাকা সাইকাড জাতীয় উদ্ভিদের পাতা ছিঁড়ে খাওয়ার সুবিধে হয়। এই সাইকাড জাতীয় উদ্ভিদের পাতাই ছিল এদের প্রধান খাদ্য। পরবর্তী সময়ে সাইকাড জাতীয় উদ্ভিদের বৈচিত্র ও সংখ্যায় হ্রাস ঘটলে এদের সংখ্যাতেও তার প্রভাব পড়ে ও ক্রিটেশিয়াস যুগের প্রথমার্ধে এরা শেষপর্যন্ত অবলুপ্ত হয়।

শণাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

কিছু কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যর উপর ভিত্তি করেই এই অধোবর্গের ডাইনোসরদের বিশিষ্টতা নির্ণিত হয়েছে। সেগুলি হল -

সাধারণ দৈহিক গড়ন[সম্পাদনা]

এই অধোবর্গের ডাইনোসরদের সকল প্রজাতিই এক সাধারণ দৈহিক গড়নের অধিকারী। এদের আকার মাঝারি; দৈর্ঘ্যে এরা মোটামুটি ৩ থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত হত। এদের সামনের পা দু'টি হত অপেক্ষাকৃত ছোট ও শক্তিশালী। পিছনের পা দু'টি ছিল সে' তুলনায় বড় ও পিলারসদৃশ। সবক'টি পায়ের আঙুলই একেবারে আগার দিকে পৌঁছে শক্ত ও একটু ছড়ানো খুরাকৃতি ধারণ করত। একেবারে প্রথম দিকের স্টেগোসরিয়ান হুয়ায়াঙ্গোসরাসদের বাদ দিলে, এই পিছনের পা সামনের পা'র থেকে লক্ষণীয়রকম বড় হওয়া ছিল সমস্ত স্টেগোসরিয়ানদেরই এক সাধারণ বৈশিষ্ট্য। এর ফলে তাদের দেহ স্বাভাবিক অবস্থায় সামনের দিকে খানিকটা ঝুঁকে অবস্থান করত, তাদের মাথাও মাটির বেশ কাছাকাছি থাকত। আবার এদের পিছনের পায়ের নিচের অংশ ছিল উপরের অংশের তুলনায় কিছুটা ছোট। এর থেকে বোঝা যায়, বিপুল দেহের অধিকারী এই জন্তুগুলি ছিল বেশ ধীরগতির। অন্যদিকে এদের লেজটি ছিল লম্বা; মূলত আনুভূমিকভাবেই সেটি অবস্থান করত। দেহের ভারসাম্যরক্ষায় এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

পিঠের উপর শক্ত অস্থিগঠিত পাত[সম্পাদনা]

স্টেগোসরিয়া অধোবর্গের সমস্ত প্রাণীরই এক অতি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল পিঠের উপর দিয়ে লেজ পর্যন্ত দুই সারিতে বিন্যস্ত এলোমেলো কিন্তু বেশ বড় বড় ও শক্ত কিছু অস্থিগঠিত (ওস্টেওডার্ম) পাতের অবস্থান। এই পাতগুলি আকারে ও আয়তনে প্রজাতিসাপেক্ষে হত বিভিন্ন প্রকার। কিছু কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে (যেমন স্টেগোসরাস বা লেক্সোভিসরাস) এই পাতগুলি হত বেশ বড়, পাতলা ও কিছুটা পাতার আকৃতির। আবার অন্য কিছু প্রজাতি, যেমন তুওজিয়াঙ্গোসরাসদের ক্ষেত্রে এগুলির আকৃতি ছিল কিছুটা কৌণিক বা শাঙ্কবাকার; আবার কেন্ট্রোসরাস প্রভৃতি কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে এগুলি প্রায় ছুঁচালো কাঁটার আকারই ধারণ করেছিল।

তবে স্টেগোসরিয়ানদের এই পাতগুলি অস্থিগঠিত হলেও দেহের মূল কঙ্কালকাঠামোর সাথে তাদের যোগ ছিল না, বরং এগুলি ছিল তাদের ত্বকের নিচের দিকে জড়ো হওয়া হাড়ের মতো অংশ। এদের সঠিক গঠন এখনও পর্যন্ত আমাদের ভালোভাবে জানা নেই। প্রথমদিকে পুরাজীববিদদের ধারণা ছিল, এই পাতগুলি ট্যাঙ্কের বর্মের মতোই দেহত্বকের সমান্তরালে শায়িত অবস্থায় অবস্থান করত। কিন্তু পরবর্তী গবেষণায় জানতে পারা গেছে, এগুলি পিঠ ও লেজের উপর বরং খাড়াভাবে এবং দু'টি এলোমেলো সারিতে অবস্থান করত। ফলে এদের সঠিক সজ্জারীতি ও কাজ নিয়ে বিতর্ক এখনও বর্তমান। থাইরিওফোরা উপবর্গের সমস্ত প্রাণীরই মতো এদেরও দেহ ছিল শক্ত দেহবর্মে ঢাকা।

কাঁধ ও লেজের কাঁটা[সম্পাদনা]

স্টেগোসরিয়া অধোবর্গের সমস্ত প্রাণীরই আরেকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল লেজের একেবারে আগার দিকে কতগুলি বড় বড় কাঁটার অবস্থিতি। তবে এই কাঁটাগুলি তাদের পিঠের উপরের পাতগুলির বিপরীতে সরাসরি কঙ্কালতন্ত্রেরই অংশ ছিল। এই কাঁটাগুলি ছিল সুনিশ্চিতভাবেই তাদের আত্মরক্ষার অস্ত্র।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Turner, C.E. and Peterson, F., (1999). "Biostratigraphy of dinosaurs in the Upper Jurassic Morrison Formation of the Western Interior, U.S.A." Pp. 77–114 in Gillette, D.D. (ed.), Vertebrate Paleontology in Utah. Utah Geological Survey Miscellaneous Publication 99-1.
  2. Fernando Escaso, Francisco Ortega, Pedro Dantas, Elisabete Malafaia, Nuno L. Pimentel, Xabier Pereda-Suberbiola, José Luis Sanz, José Carlos Kullberg, María Carla Kullberg, Fernando Barriga: "New Evidence of Shared Dinosaur Across Upper Jurassic Proto-North Atlantic: Stegosaurus From Portugal". In: Die Naturwissenschaften. Bd. 94, Nr. 5, 2007, S. 367–374
  3. Benton, Michael J. (২০১২)। Prehistoric Life। Edinburgh, Scotland: Dorling Kindersley। পৃষ্ঠা 274–275আইএসবিএন 978-0-7566-9910-9