সন্দেশ (বাংলা পত্রিকা)
সম্পাদক | উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, সুবিনয় রায়, সুধাবিন্দু বিশ্বাস, সত্যজিৎ রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, লীলা মজুমদার, নলিনী দাশ, বিজয়া রায়, সন্দীপ রায়, সুজয় সোম |
---|---|
বিভাগ | ছোটদের বাংলা পত্রিকা |
প্রকাশনা সময়-দূরত্ব | মাসিক |
প্রতিষ্ঠার বছর | ১৯১৩ |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
সন্দেশ হল কিশোরদের জন্য কলকাতা থেকে বাংলায় প্রকাশিত একটি মাসিক পত্রিকা। ১৯১৩ সালে এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশ করেনউপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তারপর থেকে এই পত্রিকা এখনও পর্যন্ত সগৌরবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে।[১] বর্তমান সম্পাদক সন্দীপ রায়।
প্রকাশনার ইতিহাস
[সম্পাদনা]উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ১৯১৩ সালে শিশু-কিশোরদের জন্য এই পত্রিকার প্রকাশ শুরু করেন তাঁর মেজার্স ইউ রায় অ্যান্ড সন্স (M/s U. Roy & Sons) কোম্পানী প্রকাশনের মাধ্যমে। ১৯১৫ সালে উপেন্দ্রকিশোর মারা যাবার পর এর সম্পাদনার ভার নেন তাঁর পুত্র সুকুমার রায়। সুকুমার রায়ের সম্পাদনার সময়েই সন্দেশ একটি অনন্য পত্রিকা হয়ে ওঠে যাতে সাহিত্য রসের সঙ্গে হাস্য ও কৌতুক রস, এবং বিজ্ঞান ও জগৎ সম্বন্ধে তথ্যাদির সমাবেশ ঘটে। তবে সুকুমার পত্রিকাটিতে শিশুদের উদ্দেশ্যেই বেশি লিখতেন।
১৯২৩ সালে সুকুমারের অকালমৃত্যুর পর তাঁর ভাই সুবিনয় সন্দেশের সম্পাদনা দেখাশোনা শুরু করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৯২৫ সালে পত্রিকাটি সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে নতুন মালিকানার অধীনে পত্রিকা পুনরায় প্রকাশিত হয় এবং এবারে সুবিনয়ই একজন সম্পাদক হিসাবে থেকে যান। কিন্তু ১৯৩৩-৩৪ সালে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স কোম্পানী উঠে গেলে পত্রিকাটি আবার বহুদিনের (প্রায় তিন দশকের) জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় ও কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় সন্দেশ পত্রিকা আবার নতুন করে প্রকাশিত হয়। সত্যজিৎ রায়ের অনেক রচনাই এখানে প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৬৩ সালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বদলে সত্যজিতের পিসি স্বনামধন্যা লেখিকা লীলা মজুমদার সত্যজিতের সঙ্গে সন্দেশের সাম্মানিক সহসম্পাদকত্ব অধিগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালেই সত্যজিৎ রায় সুকুমার সাহিত্য সমবায় সমিতি নামে একটি অলাভজনক সাহিত্য সমবায়-সমিতি (কো-অপারেটিভ) গঠন করেন যা এখনো অবধি সন্দেশ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৪ সাল থেকে সত্যজিতের মাসতুতো বোন নলিনী দাস এর আরেকজন সহসম্পাদক হন, এবং বস্তুতপক্ষে হন এর কার্যনির্বাহী (এক্সিকিউটিভ) সম্পাদক, এবং তাঁর স্বামী অশোকানন্দ দাস হন এর সাম্মানিক প্রকাশক। সত্যজিৎও এঁদের সঙ্গেই কাজ করতে থাকেন। তিনি তাঁর অনেক মূল রচনা ছাড়াও সন্দেশে অনেক জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা লিখতেন। যেমন কিছুদিন তিনি প্রতিটি সংখ্যায় একটি করে স্বল্প পরিচিত প্রাণীর ছবি ও তার সম্বন্ধে নানা মজার তথ্য লিখতেন। চিত্রবিচিত্র ধাঁধা, কমিক স্ট্রিপ, লিমেরিক, ছোট গল্প, ধারাবাহিক উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনী ইত্যাদির সুসমন্বয়ে পত্রিকাটি সেই সময় অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এর একটি অংশে ১৬ বছরের থেকে ছোটদের নিজেদের লেখা ও আঁকা ছাপা হত, যার নাম ছিল হাত পাকাবার আসর। তার মানও ছিল যথেষ্ট উন্নত। সুকুমার রায়ের সন্দেশ ছিল শিশু ও কিশোরদের মনোরঞ্জনের জন্য, এই সম্পাদকমণ্ডলী এটিকে তরুণদের কাছেও আকর্ষণীয় করে তোলেন।
১৯৯২-৯৩ সালে পত্রিকাটি আবার দুর্গতির সম্মুখীন হয় কারণ মাত্র ১৪ মাসের মধ্যে সত্যজিৎ রায়, নলিনী দাশ (লেখিকা) ও অশোকানন্দ দাস পরলোক গমন করেন। ১৯৯৪ সালে লীলা মজুমদারও এত অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তার পক্ষেও এর প্রকাশের কাজ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
১৯৯৩-৯৪ থেকে সত্যজিতের পুত্র সন্দীপ রায় এর সহ সম্পাদক হন এবং লেখিকা নলিনী দাশের পুত্র অমিতানন্দ দাস এর প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু এই অনভিজ্ঞ জুটির পক্ষে দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ছিল - কারণ কমিক্স, দূরদর্শন, কেবল টিভি, এবং রংবেরঙের ছবিওয়ালা পত্রিকাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগীতায় শিশু ও কিশোর পত্রিকাগুলি পিছিয়ে পড়তে থাকে। সন্দেশ ছিল একটি সাদা কালো পত্রিকা এবং তখন ধুঁকতে ধুঁকতে লড়ে চলেছে, লোকসান হচ্ছে, মাঝে মাঝে দুএকটা সংখ্যা বাদ পড়ছে।
২০০৩ সালে ফোর্ড ফাউন্ডেশন সন্দেশকে পুনর্জীবিত করার উদ্দেশ্যে কিছু অর্থসাহায্য দেয়। কিন্তু তখন অনেক রঙীন পাতা ও দৃষ্টিনন্দন চেহারা সত্ত্বেও সমবায় সমিতির মতানৈক্যের কারণে সন্দেশ আর্থিক ভাবে অচল হয়ে পড়ে। ২০০৫-এর জুলাই থেকে ২০০৬-এর এপ্রিলের মধ্যে এর বেশ কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশ হতে পারেনি।
২০০৬ এর আগষ্ট মাস থেকে আবার নতুন উদ্যমে সাহিত্যের উন্নতমান ও সুসংহত পরিচালনার মাধ্যমে পত্রিকাটিকে পুনরায় জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে। চারটি অপ্রকাশিত সংখ্যার পর শারদীয়া সন্দেশ আবার বার হয়। পত্রিকাটি যাতে আবার ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং এর মান বজায় থাকে ও পাঠকমণ্ডলী বৃদ্ধি পায় তার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
লেখক মণ্ডলী
[সম্পাদনা]এই পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ের জনপ্রিয় লেখক লেখিকারা লিখেছেন। সেকালের কবি ও সাহিত্যিকদের মধ্যে
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
- সুকুমার রায়
- নলিনী দাশ (লেখিকা)
- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
- নারায়ণ সান্যাল
- সত্যজিৎ রায়
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
- বিমল কর
- লীলা মজুমদার
- শিবরাম চক্রবর্তী
- প্রেমেন্দ্র মিত্র
- সুখলতা রাও
- পুণ্যলতা চক্রবর্তী
- নরেন্দ্র দেব
- ময়ূখ চৌধুরী
- সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
- গৌরী ধর্মপাল
- অমিতানন্দ দাশ
- শঙ্খ ঘোষ
- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ
এবং একালের কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে
- হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
- দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
- অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
- সৈকত মুখোপাধ্যায়
- শিশির বিশ্বাস
- অভীক মজুমদার
- রতনতনু ঘাটী
- দীপান্বিতা রায়
- অনন্যা দাশ প্রমুখ এই পত্রিকায় লিখেছেন।
জনপ্রিয় রচনা ও সিরিজ
[সম্পাদনা]- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রচিত টুনটুনির গল্প ও গুপী গাইন বাঘা বাইন ও অন্যান্য গল্প
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত কবিতা এবং উপন্যাস সে এবং আরও কয়েকটি রচনা
- কুলদারঞ্জন রায়চৌধুরীর অনুবাদ করা রবিনহুড সিরিজ
- সুকুমার রায় সৃষ্ট হ-য-ব-র-ল, আবোল তাবোল, খাই খাই ও পাগলা দাশু
- নলিনী দাশ ও অমিতানন্দ দাশের গন্ডালু সিরিজ
- সত্যজিৎ রায় রচিত ফেলুদা, তারিণীখুড়ো ও প্রফেসর শঙ্কু
- বুদ্ধদেব গুহ রচিত ঋজুদা সিরিজের কাহিনী
- মতি নন্দী রচিত কলাবতী সিরিজের উপন্যাস কলাবতীর ময়দান রিপোর্টিং
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "বাংলা পত্রিকার ২০০ বছর"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৪।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Sandesh: Reborn on May, 1931
- একশো বছরে সন্দেশ, চর্যাপদ ২০১৩ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে