লাউডগা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পাতি লাউডগা সাপ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: সরীসৃপ
বর্গ: স্কোয়ামাটা
উপবর্গ: সাপ
পরিবার: কলুব্রিডি
গণ: লতা সাপ
প্রজাতি: A. nasuta
দ্বিপদী নাম
Ahaetulla nasuta
(Lacépède, 1789)
প্রতিশব্দ

Dryophis nasuta
Dryophis mycterizans

পাতি লাউডগা সাপ, (ইংরেজি: common vine snake), (বৈজ্ঞানিক নাম: Ahaetulla nasuta) সবুজ কচি লতার মত দেখতে, কলুব্রিডি পরিবারের খুবই মৃদু বিষযুক্ত (মানুষের জন্য প্রকৃতপক্ষে নির্বিষ) সাপ। পূর্ব গবেষণা মতে, দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, লাওস, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন এবং পূর্ব এশিয়ার চীনে এ প্রজাতিটি দেখা যায়।[১] ইংরেজি নাম কমন ভাইন স্নেক (common vine snake, ভাইন মানে লতা)[২]

বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]

বিন্যাস[সম্পাদনা]

A. nasuta এর প্রজাতিগত শ্রেণী-বিন্যাস নিয়ে দীর্ঘকালীন জটিলতার কারণে ধারণা করা হত, এই প্রজাতির জনসংখ্যা শ্রীলঙ্কা থেকে বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশ (পশ্চিমঘাট পর্বতমালা সহ) পর্যন্ত বাস করে। A. nasuta এর ভৌগোলিকভাবে দূর সম্পর্কীয় ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তে বসবাসকারী একটি গোত্রকে এই জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হত। তবে ২০২০ সালের একটি জাতিগত গবেষণার তথ্য মতে, A. nasuta একটি জটিল প্রজাতির প্রাণী জটিল প্রজাতি বলতে ঐসব প্রজাতিকে বোঝানো হয় যাতে অন্তর্ভুক্ত প্রাণীদের মধ্যে কিছু অস্পষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যা দ্বারা ঐ প্রজাতির প্রাণীগুলোকে কয়েকটি দলে ভাগ করা যায়। আর এই জটিল প্রজাতির আদি/আসল প্রাণী, যাদের থেকে বর্তমান A. nasuta প্রজাতির উদ্ভব, তাদের বাসস্থান শ্রীলঙ্কান আর্দ্র ভূমি, শ্রীলঙ্কান নিম্ন অঞ্চলীয় চিরসবুজ বনভূমি ও পার্বত্য চিরসবুজ বনভূমিতেই সীমাবদ্ধ। ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা তে বসবাসরত যে ৪টি দলকে পূর্বে A. nasuta প্রজাতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হত তাদের পরবর্তীতে A. borealis, A. farnsworthi, A. isabellinaA. malabarica প্রজাতিতে ভাগ করা হয়। ভারতীয় নিম্ন-উপদ্বীপের (এবং সম্ভবত শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলীয় শুষ্ক ভূমির) লম্বাকৃতির যে প্রজাতিকে পূর্বে Ahaetulla nasuta এর সাথে প্রজাতিভুক্ত করা হত, তা মূলত A. oxyrhyncha যা A. nasuta অপেক্ষা A. pulverulenta এবং A. sahyadrensis প্রজাতির সাথে ঘনিষ্ঠ। সবশেষে, উপরে উল্লিখিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তে বসবাসরত ভৌগোলিক জনসংখ্যাকে বর্তমানে আনুষ্ঠানিকভাবে অ-শ্রেণিবিন্যাসকৃত অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং পরীক্ষামূলক ভাবে Ahaetulla cf. fusca নামকরণ করা হয়েছে। এই প্রজাতিটি Ahaetulla laudankia এর সমগোত্রীয়।[৪]

সিনহারাজা চিরসবুজ বনভূমিতে

বিবরণ[সম্পাদনা]

লাউডগা সাপের দেহ মসৃণ, লম্বাটে ও নলাকার এবং নাক লম্বা ও সুচালো। প্রাপ্তবয়স্ক সাপের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ সেমি, লেজের দৈর্ঘ্য দেহের মোট দৈর্ঘ্যের ৩৪%। সদ্যোজাত সাপের দৈর্ঘ্য ৫সেমি হতে পারে। দেহের পৃষ্ঠীয় ভাগ উজ্জ্বল সবুজ রঙের; কখনও কখনও বাদামি-ধূসর রঙের হতে পারে। অঙ্কীয়ভাগ উজ্জ্বল এবং হলুদ বা সাদা রেখার মাধ্যমে দেহের পৃষ্ঠীয়ভাগ থেকে পৃথক থাকে। দেহের পিছনের অংশে কালো ও সাদা আন্তঃত্বকীয় রেখা থাকে।[৫]

সাধারণ পাতি লাউডগা সাপ দিবাচর, বৃক্ষচারী ও মৃদু প্রাণীজ বিষ যুক্ত। দ্বিনেত্র দৃষ্টি ব্যবহার করে ব্যাঙসরীসৃপ জাতীয় প্রাণী শিকার করে খায়। এরা ধীর গতিসম্পন্ন ও "বৃক্ষপত্রের উপর লতানো উদ্ভিদের ডগার" ন্যায় ছদ্মবেশ ধারণ করে চলাচল করে। এদের বিরক্ত করা হলে, দেহ প্রসারিত করে সাদাকালো আঁইশ এর ন্যায় দাগ প্রদর্শন করে। এছাড়াও বিপদের/শিকারির দিকে মুখ খুলে ভীতি প্রদর্শন করে। সাপের অন্য প্রজাতিগুলোর মধ্যে উলম্ব-চির পিউপিল দেখা গেলেও কেবল এই প্রজাতির সাপের চোখেই অনুভূমিক পিউপিল পাওয়া যায়। [৬] এ প্রজাতিটি ভিভিপ্যারাস, অর্থাৎ শিশুর জন্ম মাতৃ-দেহের অভ্যন্তরে দিম্ব-ঝিল্লির মধ্যে হয়ে থাকে। এরা বিলম্ব নিষেক করতে সক্ষম। সাপের প্রজনন মাধ্যম গুলোর মধ্যে অপুংজনি বিরল হলেও অজানা কোন বিষয় নয়। কেননা, লন্ডন চিড়িয়াখানা তে এই প্রজাতির একটি স্ত্রী-সাপ আগস্ট, ১৮৮৫ থেকে একাকী রাখা হলেও আগস্ট, ১৮৮৮ সালে সন্তান প্রসব করে। [৭]

শ্রেণিবিন্যাসগত বিবরণ[সম্পাদনা]

সিংহলি ভাষাতে এই প্রজাতির নাম Ahaetulla এর অর্থ 'চোখ খেকো'। তামিল ও ভারতের অন্যান্য স্থানীয় ভাষাগুলোতেও কাছাকাছি অর্থ বিশিষ্ট নাম পাওয়ার কারণ হিসেবে, 'এই সাপ শিকারির চোখে আক্রমণ করে' এমন ভ্রান্ত-বিশ্বাস দায়ী। [৮]

নিম্নে উল্লিখিত বিবরণ (চিহ্নিতকরণ বৈশিষ্ট্যসহ) Boulenger (১৮৯০) থেকে নেয়া হয়েছে:[৯]

চোখা মুখযুক্ত, যা চোখ অপেক্ষা ছোট ত্বকীয় সংযোজন দ্বারা শেষ হয় এবং সম্পূর্ণরূপে রোস্ট্রাল দ্বারা গঠিত; ত্বকীয় লেজুর ছাড়া মুখের দৈর্ঘ্য, চোখের ব্যাসের দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি। কোন লরিয়াল নেই; ল্যাবিয়াল এর সাথে ইন্টার-ন্যাসাল ও প্রি-ফ্রন্টাল এর কোন সংযোগ নেই। ফ্রন্টালের দৈর্ঘ্য এর থেকে রোস্ট্রাল এর দূরত্বের সমান বা তার চেয়ে খানিক বেশি এবং প্যারীয়েটাল এর সমান বা তার চেয়ে সামান্য বেশি; ২টি প্রিওকুলার ও ১টি সাবওকুলার (অথবা, ১টি প্রিওকুলার ও ২টি সাবওকুলার) বিশিষ্ট, উপরের প্রিওকুলার ফ্রন্টালের সাথে যুক্ত; ২টি পোস্টওকুলার আছে; টেম্পরাল ১+২ বা ২+২; উপরি ল্যাবিয়াল ৮টি, ৫ম টি চোখে প্রবেশ করে; ৪টি নিম্ন ল্যাবিয়াল সম্মুখবর্তী থুতনি-সুরক্ষক এর সাথে যুক্ত, যেগুলো পশ্চাদ্বর্তী সুরক্ষক গুলোর চেয়ে ছোট। ১৫টি সারিতে আঁইশ সজ্জিত। ভেন্ট্রাল সংখ্যা ১৭২-১৮৮; পায়ুপথ বিভক্ত; সাবকডাল ১৪০-১৬৬। উজ্জ্বল সবুজ বা মলিন বাদামী বর্ণের, আঁইশের ভাজে থাকা দেহের সম্মুখভাগের চামড়া সাদাকালো, যা স্ফীত অবস্থায় ডোরাকাটা দেখায়; দেহের নিম্ন দেশের উভয় পাশে একটি করে হলুদ রেখা দেখা যায়। মোট দৈর্ঘ্য ৫ ফুট : লেজ ২.

Ahaetulla nasuta anomala কে পূর্বে উপ-প্রজাতি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলেও বর্তমানে, স্বতন্ত্র একটি প্রজাতি, Ahaetulla anomala হিসেবে শ্রেনি-বিন্যাস করা হয়।


বাসস্থান[সম্পাদনা]

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত, নিঁচু গুল্ম, ঝোপঝাড় এবং নিম্ন ভূমির বিস্তৃত বনাঞ্চলের গাছ-পালাতে, বিশেষত জলাশয়ের ধারে, বসবাস করে। মানব বসতির পাশেও প্রায়ই এদের পাওয়া যায়। [১০]

বিষ ও বিষক্রিয়া[সম্পাদনা]

পাতি লাউডগা সাপের বিষের উপাদান এখনও অজানা। এই সাপের বিষক্রিয়া প্রাণঘাতী না হলেও এর ছোবলে বমি, ব্যাথা, জখম, আক্রান্ত স্থান অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে যা, মোটামুটি ৩ দিনের মধ্যে প্রশমিত হয়ে যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন- মাথা, চোখ ইত্যাদির নিকট ছোবল দিলে তা মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। [১১][১২]

আঞ্চলিক নামসমূহ[সম্পাদনা]

সিংহলি ভাষায় এর নাম "Aheatulla" বা "চোখ-খেকো", যা থেকে এর শ্রেণিবিন্যাসের 'প্রজাতি নাম' এসেছে। তামিল ভাষায় এটি পাচাই পাম্বু নামে পরিচিত।

  • সিংহলি ভাষা: ඇහැටුල්ලා (উচ্চারণ: আহায়তুল্লা)
  • তামিল: பச்சை பாம்பு


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Thy, N., Nguyen, T.Q., Golynsky, E., Demegillo, A., Diesmos, A.C. & Gonzalez, J.C. (২০১২)। "Ahaetulla prasina"The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১০ 
  2. "ইণ্ডিয়ান স্নেকস ওয়েব সাইটে এই সাপের বিবরণ ও নানা ভারতীয় ভাষায় নাম"। ৬ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৩ 
  3. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৪৪
  4. Mallik, Ashok Kumar; Srikanthan, Achyuthan N.; Pal, Saunak P.; D’souza, Princia Margaret; Shanker, Kartik; Ganesh, Sumaithangi Rajagopalan (২০২০-১১-০৬)। "Disentangling vines: a study of morphological crypsis and genetic divergence in vine snakes (Squamata: Colubridae: Ahaetulla ) with the description of five new species from Peninsular India"Zootaxa (ইংরেজি ভাষায়)। 4874 (1): 1–62। আইএসএসএন 1175-5334ডিওআই:10.11646/zootaxa.4874.1.1 
  5. জিয়া উদ্দীন আহমেদ (সম্পা.) (২০১১)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: উভচর প্রাণী ও সরীসৃপ (খণ্ড ২৫)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১২৩–৪। আইএসবিএন 9843000002860 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য) 
  6. Brischoux, F.; Pizzatto, L.; Shine, R. (২০১০)। "Insights into the adaptive significance of vertical pupil shape in snakes"। Journal of Evolutionary Biology (ইংরেজি ভাষায়)। 23 (9): 1878–1885। আইএসএসএন 1420-9101এসটুসিআইডি 23349083ডিওআই:10.1111/j.1420-9101.2010.02046.xঅবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 20629855 
  7. Wall, Frank 1905. A popular treatise on the common Indian snakes. Part 1. J. Bombay Nat. Hist. Soc. 16:533-554.
  8. Snakes of Sri Lanka ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত মে ১৯, ২০০৫ তারিখে
  9. Boulenger, George A. 1890 The Fauna of British India, Including Ceylon and Burma. Reptilia and Batrachia. Taylor & Francis, London, xviii, 541 pp.
  10. http://www.toxinology.com/fusebox.cfm?fuseaction=main.snakes.display&id=SN0004
  11. Snakes of Sri Lanka ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত মে ১৯, ২০০৫ তারিখে
  12. “Ahaetulla nasuta” at WCH Clinical Toxinology Resources. Accessed on 9.1.2014 at http://www.toxinology.com/fusebox.cfm?fuseaction=main.snakes.display&id=SN0004


বিশেষ দ্রষ্টব্য:

  • Lacepède, B. G. E. 1789 Histoire Naturelle des Quadrupèdes Ovipares et de Serpens. Vol.2. lmprimerie du Roi, Hôtel de Thou, Paris, 671 pp.
  • Wall, F. 1908 Remarks on some recently acquired snakes. J. Bombay N. H. S. xviii: 778-784
  • Wall 1908 A new color variety of the common green whip-snake (Dryophis mycterizans). J. Bombay N. H. S. xviii: 919
  • Wall, F. 1910 Remarks on the varieties and distribution of the common Green Whip Snake (Dryophis mycterizans). J. Bombay nat. Hist. Soc. 20: 229
  • Wall 1910 Varieties of the common Green Whip Snake (Dryophis mycterizans). J. Bombay nat. Hist. Soc. 20: 524