সিনোজোয়িক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সিনোজোয়িক মহাযুগ
৬.৬ - ০ কোটি বছর পূর্বে
-৭ —
-৬ —
-৫ —
-৪ —
-৩ —
-২ —
-১ —
সিনোজোয়িকের মূল ঘটনাগুলির একটি আনুমানিক সময়সীমা।
অক্ষের স্কেল: বর্তমানের আগে কোটি বছর আগে।
Cenozoic
Rock deposits from the Cenozoic Era (Torre Sant'Andrea, Salento, Italy)
Chronology
সিনোজোয়িকের মূল ঘটনাগুলির একটি আনুমানিক সময়সীমা।
অক্ষের স্কেল: বর্তমানের আগে কোটি বছর আগে।
Etymology
Name formalityFormal
Nickname(s)Age of Mammals
Usage information
Celestial bodyEarth
Regional usageGlobal (ICS)
Time scale(s) usedICS Time Scale
Definition
Chronological unitEra
Stratigraphic unitErathem
Time span formalityFormal
Lower boundary definitionIridium enriched layer associated with a major meteorite impact and subsequent K-Pg extinction event.
Lower boundary GSSPEl Kef Section, El Kef, Tunisia
৩৬°০৯′১৩″ উত্তর ৮°৩৮′৫৫″ পূর্ব / ৩৬.১৫৩৭° উত্তর ৮.৬৪৮৬° পূর্ব / 36.1537; 8.6486
GSSP ratified1991
Upper boundary definitionN/A
Upper boundary GSSPN/A
GSSP ratifiedN/A

সিনোজোয়িক ( /ˌsnəˈzɪk, ˌsɛ-/) [১][২] মহাযুগ হল বর্তমান ভূতাত্ত্বিক মহাযুগ যা ৬৬ মিলয়ন বছর পূর্বে শুরু হয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলছে।

সিনোজোয়িক মহাযুগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর যুগ নামেও পরিচিত কারণ বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীরা এই সময়ে আধিপত্য বিস্তার করে। মহাদেশগুলি এই মহাযুগেই তাদের বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়েছিল।

নামকরণ[সম্পাদনা]

সিনোজোয়িক অর্থ “নতুন জীবন” যা গ্রীক শব্দ καινός kainós (সিনোস) যার অর্থ “নতুন” এবং ζωή zōḗ (জোয়) যার অর্থ “জীবন” থেকে উদ্ভূত হয়েছে। [৩] এই মহাযুগটি স্যানোজোয়িক (ক্যানোজোয়িক), সায়েনোজোয়িক (কায়েনোজোয়িক) বা সাইনোজোয়িক (কাইনোজোয়িক) /ˌknəˈzɪk, ˌk-/ [৪][৫] প্রভৃতি নামেও পরিচিত।

ভাগসমূহ[সম্পাদনা]

সিনোজোয়িক মহাযুগ তিনটি যুগে বিভক্ত: প্যালিওজিন, নিওজিন এবং কোয়াটার্নারি এবং সাতটি উপযুগে বিভক্ত প্যালিওসিন, ইওসিন, অলিগোসিন, মায়োসিন, প্লাইওসিন, প্লেইস্টোসিন এবং হলোসিন। কোয়াটার্নারি যুগটি ২০০৯ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক স্তরবিদ্যা কমিশন দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়,[৬] যা পূর্বে টারশিয়ারী যুগ নামে পরিচিত ছিল এবং ২০০৪ সালে সিনোজোয়িক মহাযুগকে এর পুর্ববর্তী মহাযুগ যেমন প্যালিওজোয়িক এবং মেসোজোয়িক মহাযুগে বিভক্ত করা প্রয়োজন পড়ার কারণে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হয়ে যায়। [৭] [কেন?] সিনোজোয়িক মহাযুগের উপযুগগুলির সাধারণ ব্যবহার প্যালিওনটোলজিস্টদের (জীবাশ্মবিদ) অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার অপেক্ষাকৃত সঠিক বিন্যাস এবং শ্রেণী তৈরী করতে সাহায্য করে যা অপেক্ষাকৃত কম সময়ের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। এই মহাযুগের তথ্যজ্ঞান অন্য যেকোন মহাযুগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি কারণ এই সময় নব্য এবং অধিক সংরক্ষনশীল শিলা সৃষ্টি হয়েছিল।

প্যালিওজিন যুগ[সম্পাদনা]

৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে নন-এভিয়েন ডাইনোসোরের বিলুপ্তি থেকে শুরু হয়ে ২৩.০৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে নিওজিন যুগের প্রারম্ভ পর্যন্ত প্যালিওজিন যুগের ব্যপ্তিকাল ছিল। এটি তিনটি উপযুগে বিভক্ত: প্যালিওসিন, ইওসিন এবং অলিগোসিন

ব্যাসিলোসরাস

প্যালিওসিন উপযুগ ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্ব হতে ৫৬ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত চলেছিল। আধুনিক প্ল্যাসেন্টাল স্তন্যপায়ী প্রাণী এই সময়ে সৃষ্টি হয়েছিল। প্যালিওসিন হল K-T বিলুপ্তি থেকে আদিম নিওসিন উপযুগেরর গভীর অরণ্যময় পরিবেশের ধ্বংসের মধ্যবর্তী পরিবর্তনশীল সময়কাল। আদিম প্যালিওসিনের সময় পৃথিবী পুনর্গঠিত হয়েছিল। মহাদেশগুলি আধুনিক আকার নিতে শুরু করেছিল, সকল মহাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশ একে অপরের থেকে পৃথক ছিল। আফ্রো-ইউরেশিয়া অঞ্চল টেথিস সাগর দ্বারা পৃথক হয়েছিল এবং আমেরিকা পানামার জলপ্রণালী দ্বারা পৃথক হয়েছিল কিন্তু ইসথমাস তখনো সৃষ্টি হয় নি। ব্যাপক উষ্ণতা এই উপযুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যা জঙ্গলের সাথে সাথে মেরুতেও প্রসারিত হয়েছিল। মহাসাগরগুলি হাঙ্গরের অধীনে ছিল [৮] যদিও এর পূর্বে বৃহৎ সরিসৃপের অধীনে ছিল যা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রাচীন স্তন্যপায়ী যথা- ক্রেওডোন্টস (বিলুপ্ত মাংসাশী বিদ্যমান স্তন্যপায়ী শ্বাপদ বর্গের থেকে ভিন্নতর ছিল) দ্বারা পৃথিবী পূর্ণ ছিল।

ইওসিন উপযুগের ব্যাপ্তি ছিল ৫৬ মিলিয়ন বছর পূর্ব হতে ৩৩.৯ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত। আদিম ইওসিন উপযুগে গভীর অরণ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী প্যালিওসিন উপযুগের মত অপেক্ষাকৃত বড় আকারে বিবর্ধিত হতে অসমর্থ ছিল। কোন কিছুর ওজনই ১০ কিলোগ্রাম এর বেশি ছিল না।[৯] সেগুলোর মধ্যে আদিম উচ্চস্তরের প্রাণী, তিমি, ঘোড়া এবং বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রাথমিক রূপ উল্লেখযোগ্য ছিল। খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে প্যারাক্রাক্স এর মত বৃহৎ আকারের পাখি ছিল। তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এক মেরু থেকে অন্য মেরুতে তাপমাত্রার সামান্য তারতম্য ছিল। ইওসিনের মধ্যবর্তী সময়ে অস্ট্রেলিয়া এবং এন্টার্কটিকার মধ্যে এন্টার্কটিক সার্কামপোলার স্রোত গঠিত হয়েছিল। বিচ্যুৎ মহাসাগরগুলি পৃথিবীব্যাপী স্রোত সৃষ্টি করেছিল এবং এর ফলে বৈশ্বিক শীতল প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিল এবং জঙ্গল সংকুচিত হয়েছিল। এটা স্তন্যপায়ীকে তিমির মত অতিকায় অনুপাতে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করেছিল এবং এদেরকে পূর্ণ জলচর প্রাণীতে পরিণত করেছিল। অ্যাণ্ড্রুসারকাসের মত স্তন্যপায়ী প্রাণী খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে ছিল। অন্ত্য ইওসিনে ঋতুসমূহের পুনর্জন্ম হয় এবং এর ফলে ক্রান্তীয় ঘাসযুক্ত অঞ্চলের বিস্তার ঘটে এবং ঘাসের বিবর্তন ঘটে। [১০][১১] ইওসিনের শেষ পর্যায় ইওসিন-অলিগোসিন বিলুপ্তির ঘটনা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল এবং এর ইউরোপীয় অংশ Grande copure নামে পরিচিত ছিল।

অলিগোসিন উপযুগের ব্যাপ্তি ছিল ৩৩.৯ মিলিয়ন বছর পূর্ব হতে ২৩.০৩ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত। অলিগোসিন উপযুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ঘাসের বিস্তার ঘটা যা অনেক নতুন প্রজাতি সৃষ্টির সূচনা করেছিল এবং এদের মধ্যে প্রথম হাতি, বিড়াল, কুকুর, ক্যাঙ্গারু এবং বর্তমান যুগের অনেক প্রজাতিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনেক প্রজাতির উদ্ভিদও এই সময় সৃষ্টি হয়েছিল। এই শীতল সময়ের বৈশিষ্ট্য ছিল ঋতুভিত্তিক বৃষ্টিপাত যা তখনো খুবই ফলপ্রসূ ছিল। স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তখনও বড় হতে আরও বড় আকারে বৃদ্ধি পাওয়া অব্যহত রেখেছিল। [১২]

নিওজিন যুগ[সম্পাদনা]

নিওজিন যুগের ব্যাপ্তি ছিল ২৩.০৩ মিলিয়ন বছর পূর্ব হতে ২.৫৮ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত। এই যুগের দুইটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপযুগ রয়েছে: মায়োসিন এবং প্লাইওসিন। [১৩]

মায়োসিন উপযুগের ব্যাপ্তি ছিল ২৩.০৩ মিলিয়ন বছর পূর্ব হতে ৫.৩৩৩ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত এবং এই সময়ে ঘাসের আরও বিস্তার ঘটে এবং পৃথিবীর বিশাল অংশে ঘাস প্রাধান্য বিস্তার করায় অরণ্যগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেলপ অরণ্য সৃষ্টি হয় যা সী অটারের (সামুদ্রিক উদবিড়াল) মত প্রজাতির বিবর্তনকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এই সময় পেরিসোডাকটায়লা (অযুগ্ম-খুর-যুক্ত চতুষ্পদ) বিস্তার লাভ করে এবং এর বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় প্রজাতির সৃষ্টি হয়। এপিস (নরবানর) এর ৩০ টি প্রজাতির সৃষ্টি হয়। আরব উপদ্বীপ সৃষ্টির সাথে সাথে টেথিস সাগর শুকিয়ে গিয়েছিল এবং শুধুমাত্র কৃষ্ণ সাগর, লোহিত সাগর, ভূমধ্যসাগর এবং কাস্পিয়ান সাগরের অবশিষ্টাংশ ছিল। অনেক নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়েছিল: ৯৫% বীজজাতীয় উদ্ভিদ মধ্য-মায়োসিন উপযুগে সৃষ্টি হয়েছিল। [১৪]

প্লাইওসিন উপযুগ ৫.৩৩৩ মিলিয়ন বছর পূর্ব থেকে ২.৫৮ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত চলেছিল। প্লাইওসিন উপযুগে জলবায়ুর নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছিল যা প্রকৃতপক্ষে আধুনিক প্রজাতি সৃষ্টির পথিকৃৎ ছিল। ভূমধ্যসাগর কয়েক মিলিয়ন বছরের জন্যে শুকিয়ে গিয়েছিল (কারণ বরফযুগ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাকে কমিয়ে দিয়েছিল যা আটলান্টিককে ভূমধ্যসাগর হতে পৃথক করেছিল এবং নদীর অন্তঃপ্রবাহ থেকে বাষ্পীভবন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল।) আফ্রিকায় অস্ট্রালোপিথেকাসের উদ্ভব ঘটে বা মানবীয় শাখার সূচনা করেছিল। পানামার ইসথমাস গঠিত হয় এবং বিভিন্ন প্রাণী উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকায় স্থানান্তরিত হয় যা স্থানীয় বাস্তুসংস্থানকে ব্যাপক ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। জলবায়ুর যেসব পরিবর্তন ঘটে: ক্রান্তীয় ঘাস সারা পৃথিবীব্যাপী বিস্তার অব্যহত রাখে, ভারতীয় মৌসুমি বায়ুর সূত্রপাত ঘটে, মধ্য এশিয়াতে মরুভূমির সৃষ্টি হয় এবং সাহারা মরুভূমির সূত্রপাত ঘটে। কোয়াটার্নারি যুগের গ্লাসিয়েসন উদ্ভবের মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন যথা- বৃহৎ হ্রদসমূহ, হাডসন উপসাগর এবং বাল্টিক সাগর প্রভৃতি ব্যতীত বৈশ্বিক মানচিত্রের খুব একটা পরিবর্তন ঘটে নি। [১৫][১৬]

কোয়াটার্নারি যুগ[সম্পাদনা]

কোয়াটার্নারি যুগের ব্যাপ্তি ২.৫৮ মিলিয়ন বছর পূর্ব হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত এবং এটি ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগের সর্বাপেক্ষা সংক্ষিপ্ত ভূতাত্ত্বিক যুগ। এই যুগের বৈশিষ্ট্য হল আধুনিক প্রাণীর উদ্ভব এবং জলবায়ুর নাটকীয় পরিবর্তন। এটা দুইটি উপযুগে বিভক্ত: প্লেইস্টোসিন এবং হলোসিন।

প্লেইস্টোসিন উপযুগের প্রাণীকুল (ম্যামথ, গুহার সিংহ, রোমশ গণ্ডার, মেগালোসেরোস, ঘোড়া)

প্লেইস্টোসিন উপযুগের ব্যাপ্তি ২.৫৮ মিলিয়ন বছর পূর্ব হতে ১১৭০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত। মধ্য ইওসিনে শুরু হওয়া প্রবণতার ফলস্বরূপ সৃষ্ট বরফ যুগ দ্বারা এই উপযুগটি চিহ্নিত হয়েছিল। পর্বতময় এলাকার ৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের দক্ষিণে অবস্থিত আগাম বরফ ক্যাপের দ্বারা কমপক্ষে ৪টি পৃথক গ্লাসিয়াসন যুগ চিহ্নিত হয়েছে। ইতিমধ্যে আফ্রিকা ব্যাপক শুষ্কপ্রবণতার মুখোমুখি হয় যার ফলশ্রুতিতে সাহারা, নামিব এবং কালাহারি মরুভূমির সৃষ্টি হয়। অনেক প্রাণী সৃষ্টি হয় এবং এদের মধ্যে ম্যামথ, দৈত্যাকার স্থলজ স্লথ, ভয়ানক নেকড়ে, বাঁকা দন্তযুক্ত বিড়াল এবং বিখ্যাত ''Homo sapiens'' অন্তর্ভুক্ত ছিল। আফ্রিকার অন্যতম ভয়াবহ খরার সমাপ্তি চিহ্নিত হয় ১০০০০ বছর পূর্বে এবং এর ফলে আদিম মানব প্রজাতির ঘটা শুরু হয়। যখন প্লেইস্টোসিন উপযুগের সমাপ্তি ঘটে তখন নিয়ানডারথালস এর মত কিছু হোমিনিড প্রজাতিসহ পৃথিবীর প্রাণিজগতের ব্যাপক বিলুপ্তি ঘটে। সকল মহাদেশই আক্রান্ত হয়েছিল কিন্তু আফ্রিকা অল্প পরিমাণে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও এটা জলহস্তির মত কিছু বড় আকারের প্রাণীদের বসবাস বজায় রেখেছিল। [১৭]

হলোসিন উপযুগ ১১৭০০ বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল এবং এটা বর্তমান সময় পর্যন্ত চলছে। সকল সংরক্ষিত ইতিহাস এবং “বিশ্বের ইতিহাস” হলোসিন উপযুগের সীমানায় অবস্থান করছে। [১৮] মানুষের কার্যক্রম অনেক কিছু বিলুপ্তির জন্যে দায়ী যা মোটামুটিভাবে ১০০০০ বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল, যদিও প্রজাতির বিলুপ্তি শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে শুরু হয়েছিল বলে নথিভুক্ত আছে। একে অনেক সময় “ষষ্ঠ বিলুপ্তি (Sixth Extinction)” বলেও অভিহিত করা হয়। শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে মানুষের কার্যক্রমের জন্যে ৩২২ টির বেশি বিভিন্ন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। [১৯][২০]

প্রাণীর জীবন[সম্পাদনা]

সিনোজোয়িক মহাযুগের শুরুতে, K-Pg ইভেন্টের দ্বারা এই পৃথিবী গ্রহে তুলনামূলক ছোট প্রাণী আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং এদের মধ্যে ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী, পাখি, সরিসৃপ এবং উভচর প্রাণী অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোন থেকে জানা যায়, মেসোজোয়িক মহাযুগে আধিপত্য বিস্তার করা ডাইনোসরের অনুপস্থিতিতে পৃথিবীতে স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের ব্যাপকভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ হতে বেশি সময় লাগেনি। কিছু ওড়ার ক্ষমতাবিহীন পাখি আকারে মানুষের চেয়েও বড় হতে থাকে। এই প্রজাতিকে অনেক সময় “সন্ত্রাসী পাখি (terror birds)” বলে অভিহিত করা হত এবং এরা ভয়ানক শিকারী ছিল। স্তন্যপায়ীরা এসে প্রায় সকল ব্যবহারযোগ্য স্থান দখল করে নেয় (সামুদ্রিক এবং স্থলজ উভয়ই) এবং আকারে অনেক বড় হতে থাকে, যদিও তাদের অর্জিত আকার বর্তমানে অধিকাংশ স্থলজ স্তন্যপায়ীর ক্ষেত্রেই আর দেখা যায় না।

শুরুর দিকের প্রাণীদের মধ্যে এনটেলেডোন (“হেল-ডগ” বলা হত), প্যারাসেরাথেরিয়াম (একটি শিংবিহীন গণ্ডারজাতীয় প্রাণী) এবং ব্যাসিলোসরাস (আদি তিমি) উল্লেখযোগ্য ছিল। ওড়ার ক্ষমতাবিহীন ডাইনোসর, প্লেসিওসউরিয়া এবং টেরোসউরিয়া প্রভৃতি অনেক ডায়াপসিড প্রাণী শেণীর বিলুপ্তি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে এবং পৃথিবীর কর্তৃত্বপূর্ণ প্রাণী হতে সাহায্য করেছিল।

টেকটোনিকস[সম্পাদনা]

ভূতাত্ত্বিকভাবে, সিনোজোয়িক হল এমন একটি মহাযুগ যখন মহাদেশগুলি তাদের বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়েছিল। ক্রিটাসিয়াসের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়া-নিউগিনি অঞ্চল প্যানজিয়া থেকে বিভক্ত হয়ে উত্তরদিকে সরে আসে এবং এরপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে সংঘর্ষ করে; এন্টার্কটিকা দক্ষিণ মেরুতে এর বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়; আটলান্টিক মহাসাগর আরও প্রশস্ত হয় এবং এই মহাযুগের শেষের দিকে (২.৮ মিলিয়ন বছর পূর্বে) দক্ষিণ আমেরিকা পানামার ইসথমাস প্রণালীর মাধ্যমে উত্তর আমেরিকার সাথে সংযুক্ত হয়।

৫৫ থেকে ৪৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে ভারত এশিয়ার সাথে সংঘর্ষ করে এবং হিমালয় পর্বত সৃষ্টি হয়, প্রায় ৩৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে আরব ইউরেশিয়ার সাথে সংঘর্ষ করে এবং টেথিস সাগর শুকিয়ে গিয়ে জাগরস পর্বতমালার সৃষ্টি হয়। [২১]

বিলম্বিত ক্রিটাসিয়াস যুগে গণ্ডোয়ানা ভেঙ্গে যায় এবং সিনোজোয়িক মহাযুগে আফ্রিকার অনেক বড় বড় নদীর স্থান পরিবর্তন ঘটায় এবং এসব নদীর মধ্যে কঙ্গো, নাইজার, নীল, কমলা, লিমপোপো এবং জামবেজি অন্তর্ভুক্ত। [২২]

জলবায়ু[সম্পাদনা]

৫৫.৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে প্যালিওসিন-ইওসিন থার্মাল ম্যাক্সিমাম একটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈশ্বিক উষ্ণতার ঘটনা ছিল, যদিও ৪৯ মিলিয়ন বছর পূর্ব থেকে অ্যাজোলা ইভেন্ট শুরু হয়েছিল তবুও সিনোজোয়িক মহাযুগ দীর্ঘ-মেয়াদী শীতলতার মহাযুগ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। ৪১ মিলিয়ন বছর পূর্বে অলিগোসিন উপযুগে যখন দক্ষিণ আমেরিকা উত্তর আমেরিকা হতে পুরোপুরি পৃথক ছিল তখন ড্রেক প্যাসেজ এর টেকটোনিক প্লেট সৃষ্টি হওয়ার পর জলবায়ু তাৎপর্যপূর্ণভাবে শীতল হয় কারণ সার্কামপোলার এন্টার্কটিক স্রোতের আবির্ভাব গভীর এন্টার্কটিকের শীতল পানি ভূ-পৃষ্ঠে নিয়ে আসে। তুলনামূলক স্বল্প উষ্ণ পর্যায় ব্যতীত মায়োসিন উপযুগেও এই শীতলতা প্রবণতা চলতে থেকে। প্রায় ২.৮ মিলিয়ন বছর পূর্বে পানামার ইসথমাস প্রণালী সৃষ্টির মাধ্যমে ইওসিন উপযুগে যখন দক্ষিণ আমেরিকা উত্তর আমেরিকার সাথে সংযুক্ত হয় এবং শক্তিশালী হামবোল্ড এবং গলফ স্ট্রিম স্রোতের প্রভাবে উত্তর মেরুর অঞ্চলসমূহ শীতল হয়[২৩] এবং অতঃপর এগুলো কোয়াটার্নারি বরফযুগের হিমবাহ (গ্লাসিয়াসন) সৃষ্টিতে অগ্রসর হয় যা হলোসিন উপযুগে বর্তমান ইন্টারগ্লাসিয়ালে রূপ নেয়। ভূচৌম্বকীয় বিপরীতমুখী স্পন্দন, অক্সিজেনের আইসোটোপ রেকর্ড, টেকটোনিক প্লেটের সাবডাকশন হার প্রভৃতির সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ কোর এবং ম্যান্টেলের সীমানার তাপীয় ফ্লাক্সের পরিবর্তন, জলবায়ু এবং টেকটোনিক প্লেটের কার্যক্রম প্রভৃতির নির্দেশক হিসেবে কাজ করে এবং দেখায় যে সিনোজোয়িক মহাযুগে মিলিয়ন বছরের সময়ক্রমে এসবের পরিবর্তন অভিন্ন ছন্দ নির্দেশ করে যা অধিকাংশ সময় ~১৩ Myr এর একটি সাধারণ ভিত্তিগত পর্যাবৃত্তি বজায় রাখে।[২৪]

জীবন[সম্পাদনা]

সিনোজোয়িক মহাযুগে ক্ষুদ্র, সরল এবং সাধারণ আকৃতির প্রাণী থেকে বিচিত্র ধরনের স্থলজ, সামুদ্রিক এবং উড়ন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী সৃষ্টি হয় বলে এই সময়কে স্তন্যপায়ী প্রাণীর যুগও বলা হয় যদিও প্রকৃতপক্ষে স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতির থেকে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যায় পাখির প্রজাতি ছিল। সিনোজোয়িক মহাযুগকে তৃণভূমির যুগ, পরস্পর সহযোগী সপুষ্পক উদ্ভিদকীটপতঙ্গের যুগ এবং পাখির যুগও বলা হয়ে থাকে। [২৫] ঘাসও এই যুগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর খাদ্য যোগান দেওয়ার মাধ্যমে এদের বিবর্তনকে রূপায়ন করেছে। সিনোজোয়িক মহাযুগে একটি শ্রেণী খুব বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ ধারণ করেছিল এবং এটি হল সাপ। সিনোজোয়িক মহাযুগে উদ্ভূত হয়ে সাপের বিচিত্রতা তাৎপর্যপূর্ণভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এরফলে অনেক কলুব্রিডি সাপের সৃষ্টি হয় যাদের শিকারের উৎস হিসেবে বর্তমান তীক্ষ্ণ-দন্তযুক্ত প্রাণীদের বিবর্তন ঘটে।

সিনোজোয়িক মহাযুগের প্রারম্ভিকভাগে এই পৃথিবী গ্যাসটরনিথিড পাখি, প্রিস্টিক্যাম্পসাস এর মত স্থলজ কুমির এবং ইউইনটাথেরেস, মেসোনাইকিডপ্যানটোডোন্ট এর মত অনেক বৃহৎ আকারের আদিম স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আধিপত্য ছিল। কিন্তু যখন অরণ্য কমে যাওয়া শুরু করল এবং জলবায়ু শীতল হওয়া শুরু করল তখন পৃথিবীতে অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীরা আধিপত্য বিস্তার করল।

সিনোজোয়িক মহাযুগ অপরিচিত এবং পরিচিত উভয় প্রকার স্তন্যপায়ী প্রাণী দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল এবং এদের মধ্যে ক্যালিকোথেরেস, ক্রেওডোন্টস, তিমি, প্রাইমেট, এনটেলোডোন্টস, বাঁকা দন্তযুক্ত বিড়াল, প্রস্তরীভূত হাতিম্যামথ, তিন আঙ্গুলযুক্ত ঘোড়া, ইনড্রিকোথেরিয়ামের মত দানবীয় গণ্ডার, গণ্ডার-সদৃশ ব্রন্টোথেরেস, দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত স্তন্যপায়ী প্রাণী যথা- পাইরোথেরেসের মত কিছুটা হাতি-সদৃশ প্রাণী ও বোরহেয়ায়েনিস নামক কুকুর-সদৃশ দ্বিগর্ভ গোত্রীয় প্রাণী এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Cenozoic". Dictionary.com Unabridged. Random House.
  2. "Cenozoic". Merriam-Webster Dictionary.
  3. "Cenozoic". Online Etymology Dictionary.
  4. "Cainozoic". Dictionary.com Unabridged. Random House.
  5. Oxford English Dictionary Second Edition, 1989
  6. Gibbard, P. L.; Head, M. J.; Walker, M. J. C. (2010). "Formal ratification of the Quaternary System/Period and the Pleistocene Series/Epoch with a base at 2.58 Ma". Journal of Quaternary Science. 25 (2): 96–102. Bibcode:2010JQS....25...96G.
  7. International Stratigraphic Chart
  8. Royal Tyrrell Museum (2012-03-28), Lamniform sharks: 110 million years of ocean supremacy, retrieved 2017-07-12
  9. University of California. "Eocene Epoch". University of California.
  10. University of California. "Eocene Climate". University of California.
  11. National Geographic Society. "Eocene". National Geographic.
  12. University of California. "Oligocene". University of California.
  13. Encyclopædia Britannica. "Neogene". Encyclopædia Britannica.
  14. University of California. "Miocene". University of California.
  15. University of California. "Pliocene". University of California.
  16. Jonathan Adams. "Pliocene climate". Oak Ridge National Library. Archived from the original on 25 February 2015.
  17. University of California. "Pleistocene". University of California.
  18. University of California. "Holocene". University of California.
  19. Scientific American. "Sixth Extinction extinctions". Scientific American.
  20. IUCN. "Sixth Extinction". IUCN.
  21. Allen, M. B.; Armstrong, H. A. (2008). "Arabia-Eurasia collision and the forcing of mid Cenozoic global cooling". Palaeogeography, Palaeoclimatology, Palaeoecology. 265 (1–2): 52–58. doi:10.1016/j.palaeo.2008.04.021.
  22. Goudie, A.S. (2005). "The drainage of Africa since the Cretaceous". Geomorphology. 67 (3–4): 437–456. doi:10.1016/j.geomorph.2004.11.008.
  23. "How the Isthmus of Panama Put Ice in the Arctic". Oceanus Magazine.
  24. Chen, J.; Kravchinsky, V.A.; Liu, X. (2015). "The 13 million year Cenozoic pulse of the Earth". Earth and Planetary Science Letters. 431: 256–263. Bibcode:2015E&PSL.431..256C. doi:10.1016/j.epsl.2015.09.033.
  25. "The Cenozoic Era".

বিবলিওগ্রাফি[সম্পাদনা]

  • ব্রিটিশ সিনোজোয়িক জীবাশ্ম, ১৯৭৫, দ্যা ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, লন্ডন।
  • রবার্ট হেনরির ভূতাত্ত্বিক সময়
  • আফটার দ্যা ডাইনোস্রস: দ্যা এজ অফ ম্যামালস, by Donald R. Prothero, ব্লুমিংটন, ইণ্ডিয়ানা: ইণ্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০৬. আইএসবিএন ৯৭৮-০-২৫৩-৩৪৭৩৩-৬.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]