আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী
জন্ম৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৩
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তমবীর বিক্রম

আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী (জন্ম: ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৩) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।[১][২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরীর জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৩ সালে তার পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম সামসুল হুদা চৌধুরী এবং মায়ের নাম বুল-এ-আনার বেগম। তার স্ত্রীর নাম সাবেরা ওয়াহেদ চৌধুরী। তার এক মেয়ে, এক ছেলে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় ফ্রান্সের তুলঁ নৌঘাঁটিতে তারা পাকিস্তানের সদ্য কেনা সাবমেরিনে ম্যানগ্রো সাবমেরিনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ১৩ জন বাঙালি। ১ এপ্রিল তাদের ওই সাবমেরিন চালিয়ে পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল। ১৩ জন বাঙালির মধ্যে ছিলেন আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তিনি। কমোডর হিসেবে ১৯৯৭ সালে অবসর নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

সাবমেরিনটি নিয়ে ১ এপ্রিল পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল দলটির। এর মধ্যে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ২৬ মার্চেই ওয়াহেদ চৌধুরী ও অন্যরা বাংলাদেশের ঘটনা জানতে পারেন। সেদিনই তারা গোপনে পরস্পর কথা বলেন এবং শেষ পর্যন্ত নয়জন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছান। তাদের পাসপোর্ট সাবমেরিনের লকারে ছিল। ওয়াহেদ চৌধুরী সাবমেরিনার বদিউল আলমকে (বীর উত্তম) সঙ্গে নিয়ে কৌশলে তা সংগ্রহ করেন। ২৯ মার্চ তারা সুরক্ষিত তুলঁ নৌঘাঁটি থেকে পালিয়ে জেনেভায় যান। অনেক ঘটনার পর ৮ এপ্রিল নয়জনের মধ্যে আটজন ভারতে পৌঁছান। ওয়াহেদ চৌধুরীসহ আটজন বাঙালি নাবিককে নিয়ে মুক্তিবাহিনীর নৌ উইং অর্থাৎ নৌ কমান্ডো বাহিনী গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নৌবাহিনী গঠিত হয়। তারা আটজন প্রথমে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশের ভেতরে নৌ অভিযান পরিচালনার জন্য আরও সহযোদ্ধা (সুইসাইডাল স্কোয়াড) তৈরি করেন। প্রশিক্ষণ ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিপজ্জনক, স্পর্শকাতর মাইন ও বিস্ফোরকের সঠিক ব্যবহার রপ্ত করতে নৌ মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তত তিন বছর সময়ের প্রয়োজন ছিল। তারা দুই মাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্তদের নৌ অভিযানের জন্য পারদর্শী করে তোলেন। এ জন্য তারা দৈনিক প্রায় ১৮ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ দেন। মধ্য আগস্টে নৌ মুক্তিযোদ্ধাদের চকিত উদ্ভাস বিপুলভাবে প্রাণিত করেছিল এ দেশের মানুষকে। তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ১৫ আগস্ট একযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে অপারেশন করেন। এ জন্য ৮ আগস্ট ভারতের হরিনা থেকে ওয়াহেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল নৌ মুক্তিযোদ্ধা রওনা হন চট্টগ্রামের উদ্দেশে। দীর্ঘ যাত্রাপথে ঘটে অনেক ঘটনা। অনেক চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে ওয়াহেদ চৌধুরী সহযোদ্ধাদের নিয়ে ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের কাছে পৌঁছান। ১৩ আগস্ট আকাশবাণী বেতারকেন্দ্রে পরিবেশিত হয় একটি গান। ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান’। এই গান ছিল সংকেত। এটা শুধু দলনেতাই জানতেন। এরপর তার নির্দেশে সবাই প্রস্তুত হন। গোলাবারুদসহ শহর অতিক্রম করে পরদিন তারা কর্ণফুলী নদীর তীরে পৌঁছান। ১৪ আগস্ট ওয়াহেদ চৌধুরী অপেক্ষায় থাকেন আরেকটি গান শোনার জন্য। গানটি সেদিনই বাজার কথা ছিল। কিন্তু বাজেনি। পরদিন ১৫ আগস্ট সকালে গানটি বাজে। ‘আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ী’। তিনি সহযোদ্ধাদের জানান, ওই রাতেই হবে অপারেশন। এরপর ওয়াহেদ চৌধুরীসহ নৌ মুক্তিযোদ্ধারা চরম উৎকণ্ঠায় সময় কাটান। এভাবে ১৫ তারিখের সূর্য বিদায় নেয়। গোপন শিবিরে নৌ মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত হন। বর্ষণমুখর গাঢ় অন্ধকার রাতে ওয়াহেদ চৌধুরী সহযোদ্ধাদের নিয়ে রওনা হন। রাত আনুমানিক একটায় তার সহযোদ্ধারা পানিতে নেমে সাঁতার কেটে দ্রুত এগিয়ে যান লক্ষ্যের দিকে। তিনিসহ কয়েকজন তীরে থাকেন নিরাপত্তায়। রাত আনুমানিক দুইটা ১৫ মিনিট। কানফাটা আওয়াজে কেঁপে ওঠে গোটা নগর। একের পর এক ঘটে বিস্ফোরণ। চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা পাকিস্তানিরা ছোটাছুটি শুরু করে। কী ঘটেছে তারা কেউ জানে না। এ অপারেশনের সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’। অভিযান সফল হওয়ার পর আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী সহযোদ্ধাদের নিয়ে ভারতে ফিরে যান। এরপর অবশ্য তিনি আর কোনো অপারেশনে অংশ নিতে পারেননি। [৩]

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব ও নেতৃত্বের জন্য আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরীকে বীর উত্তম, বীর বিক্রম দুই খেতাবে ভূষিত করা হয়। বীর উত্তম খেতাবে তার সনদ নম্বর ৫৪ এবং বীর বিক্রম খেতাবে তার সনদ নম্বর ১৩৩।[৪]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"প্রথম আলো। ১৪ নভেম্বর ২০১২। ২০১৭-০৮-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৮ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৯৪। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৩২। আইএসবিএন 9789849025375 
  4. ইশতিয়াক, আহমাদ (২০২২-০৭-০২)। "খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা: আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী বীর উত্তম, বীর বিক্রম"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-০৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]