সায়ানাইড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সায়ানাইড অ্যানায়ন
Ball-and-stick model of the cyanide anion
নামসমূহ
পছন্দসই ইউপ্যাক নাম
Cyanide
পদ্ধতিগত ইউপ্যাক নাম
Nitridocarbonate(II)
শনাক্তকারী
ত্রিমাত্রিক মডেল (জেমল)
সিএইচইবিআই
কেমস্পাইডার
ইসি-নম্বর
ইউএনআইআই
  • InChI=1S/CN/c1-2/q-1
    চাবি: XFXPMWWXUTWYJX-UHFFFAOYSA-N
বৈশিষ্ট্য
CN
আণবিক ভর ২৬.০২ g·mol−১
অনুবন্ধী অম্ল Hydrogen cyanide
সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ছাড়া, পদার্থসমূহের সকল তথ্য-উপাত্তসমূহ তাদের প্রমাণ অবস্থা (২৫ °সে (৭৭ °ফা), ১০০ kPa) অনুসারে দেওয়া হয়েছে।
তথ্যছক তথ্যসূত্র

সায়ানাইড একটি রাসায়নিক যৌগ, যার মধ্যে C≡N মূলক বিদ্যমান। এই মূলকটি সায়ানো গ্রুপ নামেও পরিচিত। একটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে একটি নাইট্রোজেন পরমাণু ত্রিবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সায়ানো মূলক গঠন করে।[১]

অজৈব সায়ানাইডে CN- অ্যানায়নরূপে সায়ানো গ্রুপ উপস্থিত থাকে । সোডিয়াম সায়ানাইড ও পটাশিয়াম সায়ানাইডের মত লবণ অত্যন্ত বিষাক্ত।[২] হাইড্রোসায়ানিক এসিড (যেটি হাইড্রোজেন সায়ানাইডরূপেও পরিচিত) অত্যন্ত অস্থিতিশীল তরল, শিল্পক্ষেত্রে যাকে ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয়। সায়ানাইড লবণের অম্লীয়করণের মাধ্যমে এটি আহরণ করা হয়।

জৈব সায়ানাইড নাইট্রাইল নামে প্রসিদ্ধ। নাইট্রাইলে সায়ানো গ্রুপ কার্বনের সঙ্গে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। উদাহরণস্বরূপ -অ্যাসিটোনাইট্রাইল-এ সায়ানাইড মূলক মিথাইলের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে। কিন্তু যেহেতু নাইট্রাইল সায়ানাইড আয়ন নির্গত করে না, তাই এরা সায়ানাইড লবণের চেয়ে কম বিষাক্ত। সায়ানোহাইড্রিনের মত প্রকৃতিতে প্রাপ্ত যৌগগুলো হাইড্রোজেন সায়ানাইড নির্গত করে।

নামকরণ ও ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

The cyanide ion, CN.
From the top:
1. Valence-bond structure
2. Space-filling model
3. Electrostatic potential surface
4. "Carbon lone pair"

ইউপ্যাক পদ্ধতিতে জৈব রসায়নের নামকরণ পদ্ধতি অনুযায়ী, যে সকল জৈব যৌগে একটি –C≡N মূলক বিদ্যমান, সেগুলো নাইট্রাইল নামে পরিচিত। অর্থাৎ নাইট্রাইল এক প্রকার জৈব যৌগ। [৩] নাইট্রাইলের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ CH3CN বা অ্যাসিটোনাইট্রাইল, যেটি মিথাইল সায়ানাইড নামেও পরিচিত। নাইট্রাইল সাধারণত সায়ানাইড আয়ন নির্গত করে না। যে সকল কার্যকরী মূলকে হাইড্রক্সিল ও সায়ানাইড একই কার্বন পরমাণুর সাথে যুক্ত থাকে, তাদের সায়ানোহাইড্রিন বলে। অজৈব রসায়নে, যে সকল লবণ C≡N যুক্ত, সেগুলোকে সায়ানাইড অভিহিত করা হয়। সায়ানাইড আয়নে কার্বন পরমাণু থাকলেও এটি সচরাচর জৈব বিবেচিত হয় না।

গ্রিক "কায়ানোস" থেকে সায়ানো শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ গাঢ় নীল। প্রুশীয় নীল নামক এক ধরনের পিগমেন্ট উত্তপ্ত করে এটি প্রথম আহরণ করা হয় বলে এর এই নাম দেওয়া হয়েছে।

নানাবিধ অবস্থান্তর মৌলের সঙ্গে সায়ানাইড লিগ্যান্ড গঠন করে থাকে। এর পেছনে রয়েছে সায়ানাইড আয়নের ঋণাত্মক আধান ও পাই বন্ধন গঠন করার সক্ষমতা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে - হেক্সাসায়ানাইড (যেগুলোর আকৃতি অষ্টতলকীয়), টেট্রাসায়ানাইড (সমতলীয় বর্গাকার) ও ডাইসায়ানাইড (সরলরৈখিক)। এগুলোর মাধ্যমে গঠিত যৌগের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইড ও প্রুশীয় নীল। কেন্দ্রীয় আয়রন পরমাণুর সঙ্গে সায়ানাইড আয়ন দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে বলে এগুলো তেমন বিষাক্ত নয়। ১৭০৬ সালে এক পরীক্ষায় কার্বন, নাইট্রোজেন এবং আয়রনযুক্ত যৌগ দুর্ঘটনাবশত মিশ্রিত করার ফলে উৎপন্ন প্রুশীয় নীলের ব্যবহার আজও প্রচলিত।

বন্ধন গঠন প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

প্রাপ্তি ও বিক্রিয়া[সম্পাদনা]

ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং শৈবাল সায়ানাইড উৎপন্ন করে থাকে। তেতো কাঠবাদাম, খুবানি, আপেলপীচ ফলের বীজে সায়ানাইড পাওয়া যায়। [৪] যে সকল রাসায়নিক যৌগ সায়ানাইড নির্গত করে, সেগুলো সায়ানোজেনিক যৌগ নামে পরিচিত। উদ্ভিদে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড রূপে শর্করা অণুর সঙ্গে সায়ানাইড আবদ্ধ থাকে এবং আবদ্ধ অবস্থায় উদ্ভিদকে তৃণভোজী প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা করে। কাসাভা উদ্ভিদের মূলেও সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড পাওয়া যায়। [৫][৬]

মাদাগাস্কারে প্রাপ্ত বাঁশ Cathariostachys madagascariensis সায়ানাইড উৎপন্ন করায় এর চারদিকে পশুচারণ অসম্ভব। তবে গোল্ডেন ব্যাম্বু লেমুর সায়ানাইড প্রতিরোধী হওয়ায় এই উদ্ভিদ ভক্ষণ করে অনায়াসেই জীবন ধারণ করতে পারে।

উৎপাদন[সম্পাদনা]

প্লাটিনাম প্রভাবক ও অক্সিজেনের উপস্থিতিতে মিথেনঅ্যামোনিয়া বিক্রিয়া করে সায়ানাইড গ্যাস উৎপন্ন করে:[৭]

2 CH4 + 2 NH3 + 3 O2 → 2 HCN + 6 H2O

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "IUPAC - cyanides (C01486)"goldbook.iupac.org 
  2. "Environmental & Health Effects | International Cyanide Management Code (ICMI) For The Manufacture, Transport and Use of Cyanide In The Production of Gold(ICMI)"www.cyanidecode.org। ৩০ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০২০ 
  3. "IUPAC - nitriles (N04151)"goldbook.iupac.org 
  4. "ATSDR - ToxFAQs™: Cyanide"www.atsdr.cdc.gov 
  5. Vetter, János (1 জানু, 2000)। "Plant cyanogenic glycosides"Toxicon38 (1): 11–36। ডিওআই:10.1016/S0041-0101(99)00128-2 – ScienceDirect-এর মাধ্যমে।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  6. Jones, David A. (1 জানু, 1998)। "Why are so many food plants cyanogenic?"Phytochemistry47 (2): 155–162। ডিওআই:10.1016/S0031-9422(97)00425-1 – ScienceDirect-এর মাধ্যমে।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  7. Andrussow, Leonid (21 সেপ্টেম্বর, 1927)। "Über die schnell verlaufenden katalytischen Prozesse in strömenden Gasen und die Ammoniak-Oxydation (V)"Berichte der deutschen chemischen Gesellschaft (A and B Series)60 (8): 2005–2018। ডিওআই:10.1002/cber.19270600857। ১৭ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০২০ – chemistry-europe.onlinelibrary.wiley.com (Atypon)-এর মাধ্যমে।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

Safety data (French):