বিষয়বস্তুতে চলুন

দেশি গাঙচষা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

দেশি গাঙচষা
Rynchops albicollis
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Charadriiformes
পরিবার: Rynchopidae
গণ: Rynchops
প্রজাতি: R. albicollis
দ্বিপদী নাম
Rynchops albicollis
Swainson, 1838

দেশি গাঙচষা (বৈজ্ঞানিক নাম: Rynchops albicollis) (ইংরেজি: Indian Skimmer) Rynchopidae (রাইঙ্কোপিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Rynchops (রাইঙ্কপস্) গণের এক প্রজাতির আজব ঠোঁটের জলচর পাখি[] পানিকাটা নামেই এর পরিচিতি বেশি। দেশি গাঙচষার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ধলাগলার ঠোঁটওয়ালা (গ্রিক rhunkhos = ঠোঁট, ops = মুখ; লাতিন: albus = সাদা, collis = গলার)।[] প্রায় ১ লক্ষ ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে এদের বিস্তৃতি।[] বিগত কয়েক বছরে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে ও বর্তমানে পাচ্ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে সংকটাপন্ন বলে ঘোষণা করেছে।[] পৃথিবীতে মোট প্রাপ্তবয়স্ক দেশি গাঙচষার সংখ্যা আনুমানিক ৪,০০০ থেকে ৬,৭০০টি বলে বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে।[] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[]

বিস্তৃতি

[সম্পাদনা]

ভারতপাকিস্তানে দেশি গাঙচষা সারা বছর থাকে ও দেশ দু'টি এদের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র। শীতকালে বাংলাদেশে দেশি গাঙচষার বিশাল ঝাঁক দেখা যায়। দেশটির পদ্মামেঘনার ব-দ্বীপচরসমূহ এদের প্রধান বিচরণস্থল। শীতকালে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা-মোক্তারিয়া চ্যানেল নামের মেঘনা নদীর মোহনায় এবং এখানকার দমারচর নামের কাদাচরে এদের সবচেয়ে বড় দলটি বিচরণ করে।[] নেপালে খুব কম সংখ্যায় দেখা যায়। মায়ানমারেও খুব কম সংখ্যায় এরা টিকে আছে। অথচ একসময় সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ইন্দোচীনের মেকং নদ পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামলাওসে কোন দেশি গাঙচষা দেখা যায় নি। সম্ভবত এরা দেশগুলো থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।[]

বিবরণ

[সম্পাদনা]

দেশি গাঙচষা মাঝারি আকারের সাদা-কালো জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪০ সেন্টিমিটার, ডানা ৩৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৭.৭ সেন্টিমিটার, পা ২.৫ সেন্টিমিটার ও লেজ ১০.৮ সেন্টিমিটার।[] প্রজনন ঋতুতে প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ কালচে-বাদামি রঙ ধারণ করে। দেহতল চকচকে সাদা। মাথার চাঁদি কালো, কপাল ও গলাবন্ধ সাদা। ঘাড়ের পিছন দিক, কাঁধ ঢাকনি, ডানা ও লেজের উপরিভাগ কালো। লেজতল ও ডানার মধ্য-পালকের আগা সাদা। ডানার পালকতল-ঢাকনিও সাদা। চোখ বাদামি। ঠোঁট লম্বা ও আকার ছুরির মত। ঠোঁটের গোড়া উজ্জ্বল লাল। আগা হলুদ। এদের ঠোঁট আসলে অন্যসব পাখির ঠোঁটের মত নয়। উপরের চঞ্চু নিচের চঞ্চুর তুলনায় খাটো। শিকার ধরার সুবিধার্থে এদের ঠোঁটের এমন আজব গড়ন। খাবারের খোঁজে এরা পানিতে নিচের চঞ্চু ডুবিয়ে একধার থেকে আরেকধারে শিকার উড়ে বেড়ায়। পানি কেটে বেড়ায় বলে এদের আরেক নাম পানিকাটা।

দেশি গাঙচষার ঠোঁট, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের অঙ্কিত চিত্র

দেশি গাঙচষার পা খাটো এবং পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল সূক্ষ্ম দাগে ভরা। প্রজননকাল ছাড়া পূর্ণবয়স্ক পাখির পিঠ অনুজ্জ্বল ও তুলনামূলক বাদামি। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির কাঁধ-ঢাকনি ও ডানার পালক-ঢাকনির পাড় সাদাটে। ঠোঁট অনুজ্জ্বল কমলা ও ঠোঁটের আগা কালো।[]

স্বভাব

[সম্পাদনা]

দেশি গাঙচষা বড় বড় নদী ও মোহনায় বিচরণ করে। সচরাচর বিচ্ছিন্ন দল বা বড় ঝাঁকে থাকে। এদের খাদ্যতালিকায় প্রধানত রয়েছে পানির উপর ভেসে বেড়ানো ছোট মাছ। এরা দলবদ্ধভাবে পানির ওপর ঘুরে ঘুরে গা না ভিজিয়ে মাছ শিকার করে। মাছ ধরার ফাঁকে ফাঁকে ধারেকাছের বালুচরে এরা বিশ্রাম করে। দীর্ঘ সময় একজায়গায় এক পায়ে বসে থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গাঙচিল পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ বা জলজ প্রাণী শিকার করে।ভোর ও গোধূলিতে এরা বেশি কর্মচঞ্চল থাকে। পূর্ণিমা রাতেও খাবার খায়। মাঝে মাঝে নাকি সুরে ডাকে: ক্যাপ-ক্যাপ-ক্যাপ....

প্রজনন

[সম্পাদনা]

ফেব্রুয়ারি থেকে মে দেশি গাঙচষার প্রধান প্রজনন ঋতু। এ সময় বড় বড় নদীর নির্জন বালুচরে গাঙচিলের সাথে মিশে বালি খুঁড়ে এরা বাসা করে। বাসায় ৩-৪ টি ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ পাটল রঙের, তাতে বাদামি বড় বড় ছোপ থাকে। ডিমের মাপ ৪.১ × ৩.০ সেন্টিমিটার।[]

ডিমের বর্ণ

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ২১৪।
  2. Rynchops albicollis ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে, BirdLife International এ দেশি গাঙচষা বিষয়ক পাতা।
  3. Rynchops albicollis ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ নভেম্বর ২০১২ তারিখে, The IUCN Red List of Threatened Species এ দেশি গাঙচষা বিষয়ক পাতা।
  4. গাজী মুনছুর আজিজ, দেশি গাঙচষা পাখি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], দৈনিক ডেস্টিনি, ১ জুলাই ২০১২।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]