ভাত
অন্যান্য নাম | সিদ্ধ ভাত |
---|---|
উৎপত্তিস্থল | ভারতীয় উপমহাদেশ |
সংশ্লিষ্ট জাতীয় রন্ধনশৈলী | বাংলাদেশ |
প্রধান উপকরণ | চাল, পানি |
৮৫ কিলোক্যালরি (৩৫৬ কিলোজুল)[১] | |
অনুরূপ খাদ্য | বাপ, বিরিয়ানি, রিসত্তো |
ভাত বা অন্ন চালকে জলে সেদ্ধ করে তৈরি খাবার। ভাত বাংলাদেশের ও ভারতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রধান খাদ্য। এছাড়াও ভারতীয় উপমহাদেশে ভাত খাওয়ার চল রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও চীন জাপান ও কোরিয়ায় ভাত খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। তবে স্থান ভেদে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন রকম ভাত খাওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ ঝরঝরে ভাত খাওয়া হয়। কিন্তু চীন জাপান ও কোরিয়ায় আঠালো ভাব খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
ধানের বিভিন্ন প্রকরণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার সুগন্ধিযুক্ত ভাত রান্না হয়। মনসামঙ্গল কাব্যে প্রায় ৬৫ রকমের ধানের নাম উল্লেখ করা রয়েছে।[২] বাঙালির খাদ্যাভাসে ভাতের উল্লেখ প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকেই লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও বাঙালির কথোপকথনে বিভিন্ন প্রবাদ বাক্যের মধ্যে ভাত শব্দের উল্লেখ লক্ষ্য করা যায়।
শুধু খাওয়া ছাড়াও ভাত দিয়ে আরো বিভিন্ন রকমের খাদ্য প্রস্তুত করা হয়। তাদের মধ্যে পলান্ন (পোলাও), বিরিয়ানি, ফ্রাইড রাইস বহুল প্রচলিত এবং উল্লেখ্য।
প্রস্তুতপ্রণালী
[সম্পাদনা]চালকে জলে সেদ্ধ করে ভাত রান্না করা হয়। তবে চালের বিভিন্ন প্রকরণের উপরে বিভিন্ন রকম ভাত রান্না করা হয়। চাল প্রধানত দুই প্রকার -
- সিদ্ধ চাল
- আতপ চাল
চাল ভালো করে ধুয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ জলে পরিমিত সিদ্ধ করে নামিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ঝরঝরে ভাতের জন্য ফ্যান ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু আতপ চালের ক্ষেত্রে মাড় বা ফ্যান ফেলা হয় না।
সিদ্ধ চাল রান্না করার পর মাড় না ফেলে ভাত রান্নাকে অনেক অঞ্চলে বসা ভাত বলা হয়। এক্ষেত্রে চালের সঙ্গে ঠিক দিগুণ পরিমাণ পানি হাড়িতে চড়িয়ে ভাত রান্না করা হয়, এরচেয়ে কম বা বেশি পানি দিলে বসা ভাত রান্না করা সম্ভব হয় না। পুষ্টিমাণের দিক থেকে বসা ভাতের মান অনেক উপরে, আর তা মাড় ফেলে দেওয়ার অপচয়কে রোধ করে, পাশাপাশি মাড়ে থাকা পুষ্টিগুলো ভাতে থেকে যায় বলে বসা ভাতকে বিশেষজ্ঞগণ মাড় গালা ভাত থেকে অনেক বেশি উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত বলে থাকেন।
বাংলা সাহিত্যে ভাতের উল্লেখ
[সম্পাদনা]বাঙালি খাদ্যাভাসে ভাত আদিযুগ থেকেই রয়েছে। আদি যুগের প্রাকৃত ভাষায় লিখিত প্রাকৃত পৈঙ্গল গ্রন্থে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে[২]
ওগগর ভত্তা রম্ভঅ পত্তা গাইক ঘিত্তা দুগ্ধ সাজুত্তা।
অর্থাৎ কলাপাতায় গরম ভাত গরুর গরুর দুধের ঘি সহযোগ খাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
মধ্যযুগে বৃন্দাবন চন্দ্র দাসের চৈতন্য ভাগবতে চৈতন্যদেবের আহারের বর্ণনা দিতে গিয়ে দিব্য অন্ন ঘৃত দুগ্ধ পায়স এর উল্লেখ রয়েছে।[২] এছাড়া সার্বভৌম ভট্টাচার্যের কাছে গৌরচন্দ্রের নিমন্ত্রণের উল্লেখ করে লেখা[২] হয়েছে
বর্তিসা কলার এক আঙ্গেটিয়া পাত,
ঊণ্ডারিল তিন মান তাম্বুলের ভাত
পীত সুগন্ধী ঘৃতে অন্ন সিক্ত কৈল,
চারিদিকে পাতে ঘৃত বহিয়া চলিল।
সেই সময়ে ভাতের সঙ্গে ঘি খাওয়ার বহুল প্রচলন ছিল। বর্তমানে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসেও ঘি-ভাতের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
বিভিন্নতা
[সম্পাদনা]ভাত প্রধানত সাদা রং এর হয়। তবে চাল এর জাত এর উপর ভিত্তি করে হালকা সোনালী রঙ, বাদামী রং এর হতে পারে।
পরিবেশনা
[সম্পাদনা]এটি সাধারণত শুকনো অবস্থায় পরিবেশিত হয়। সাথে অন্য পথ দিয়ে খাওয়া হয়। এই পদ লবণ (যারা আর কিছু যোগাড়ের সামর্থ্য নেই) থেকে মাখন বা ঘি, কোনো তরকারি, মাছ বা মাংসের ঝোল হতে পারে। একদিন বা তার বেশি জলে ভিজিয়ে বাসি করে লেবুর রস ও লবণ মিশিয়ে তখন খাওয়া হয়, তাকে পান্তাভাত বলে।
পুষ্টিমান
[সম্পাদনা]ভাত প্রধানত শর্করা সরবরাহ করে। তবে এতে কিছুটা আমিষও পাওয়া যায়।শর্করা ৭৯%,স্নেহ ৬%,কিছু পরিমাণে আমিষ,ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে।
ভাত রান্না করে মাড় বা ফেন ফেলে দিলে ভাতে স্টার্চের অংশ অনেক কমে যায়। ফলে অনেক ভাত খেয়েও মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এ ধরনের ভুল ধারণা অনেকদিন ধরেই প্রচলিত ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ফুুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গাইজেশন অফ ইউনাইটেড নেশনসর (এফএও) এর গবেষণা রিপোর্টসহ একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত যে, ভাতের মাড় ফেলে দিলে মাড়ের সঙ্গে শর্করাসহ ১৮ রকমের পুষ্টি উপাদান অপচয় হয়ে যায় যা বসা ভাতে বিদ্যমান থাকে। আর এই পুুুুুষ্টি উপাদানগুলো শর্করার ক্ষতিকর প্রভাবকে অনেকটাই কমিয়ে আনে।[৩][৪] বিজ্ঞান গবেষক গাজী রফিক ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত করা গবেষণায় দেখিয়েছেন, মাড় ফেলা পদ্ধতিতে ভাত রান্নার কারণে চাল অপচয়ের মাত্রা ১৩-১৫ শতাংশ।[৫] এতে ৪২-৫১ লাখ টন চাল অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় বছরে ১৬৮০০-২০৪০০ কোটি টাকা (গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে)। এ পদ্ধতিতে রান্নার প্রচলনকে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এ অঞ্চলে জনপ্রিয় করা গেলে পুষ্টিঘাটতি দূর হওয়ার পাশাপাশি মোট জনসংখ্যার চাহিদার ১৩-১৫% সাশ্রয়ের মাধ্যমে ৪২-৫১ লাখ টন চালের অপচয় রোধ সম্ভব হবে।[৬] সেই সাথে আমদানি নির্ভরতাও কমে আসবে।
ফেন
[সম্পাদনা]ভাত ফোটাবার সময় অনেক ভাতের দানাই ফেটে গিয়ে তার মধ্যের স্টার্চ জলে মিশে যায়। এই স্টার্চ মেশা জলীয় অংশকে বলে ফেন বা ফ্যান। ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ইত্যাদি বাংলার বিভিন্ন দুর্ভিক্ষের সময় যখন চালের আকাল দেখা দেয়, ভাতের ফেন ভিক্ষা করা অনেক গরিব মানুষেরই ক্ষুণ্ণিবৃত্তির একমাত্র সহায় ছিল।
মাড়
[সম্পাদনা]ভাতকে বেশি জল দিয়ে খুব বেশিক্ষণ ফোটালে ভাতের অধিকাংশ গলে ফেনের মধ্যে মিশে খুব ঘন স্টার্চের দ্রবণ (প্রলম্বন) তৈরি করে। একে বলে মাড়। কাপড় ইস্ত্রী করার আগে তাকে কড়া করবার জন্যে মাড়ে ভিজিয়ে শুকানো হয়। একে মাড় দেওয়া বলে।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
পাকিস্তানের করাচিতে ভাতসহ কিমা
-
একটি রান্না করা চালের পিঠা
-
সিদ্ধ ভাত
-
একটি জাপানি বাষ্পীয় চুলা
-
একটি আধুনিক ভাত রান্নার যন্ত্র
-
আঠালো ছাড়া রান্নাকরা কালো চাল
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "huinbap" 흰밥। কোরীয় খাদ্য ফাউন্ডেশন (কোরীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ দত্ত, মিলন। বাঙালির খাদ্যকোষ। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা 292। আইএসবিএন 9788129524164।
- ↑ "Rice in human nutrition - Contents chapter 5 (Home preparation and Cooking)"। www.fao.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২৪। line feed character in
|শিরোনাম=
at position 36 (সাহায্য) - ↑ "পুষ্টিভাতে ষোলো আনা :: দৈনিক ইত্তেফাক"। archive.ittefaq.com.bd (Bengali ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২৪।
- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো Epaper"। eProthomalo https://earchive.prothomalo.com/view/dhaka/2012-11-21/9। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২৬।
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ "Getting the Best Out of Rice"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০১-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২৪।