২০১৩ শাপলা চত্বর বিক্ষোভ

স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৩.৫৯′ উত্তর ৯০°২৫.৩০′ পূর্ব / ২৩.৭২৬৫০° উত্তর ৯০.৪২১৬৭° পূর্ব / 23.72650; 90.42167
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অপারেশন সিকিউর শাপলা
শাপলা চত্ত্বর, মতিঝিল
অবস্থান
আদেশদাতাবাংলাদেশ সরকার
Objectiveহেফাজতে ইসলামের আন্দোলনকারীদের শাপলা চত্বর থেকে অপসারণ।
তারিখ৫ মে ২০১৩ (2013-05-05)
বিকাল ৫টা
বিকাল, ০৫ মে ২০১৩ – ভোর, ০৬ মে ২০১৩ (GMT+6)
ফলাফল
হতাহত৩০০-৪০০ জন[১][২] নিহত

অপারেশন সিকিউর শাপলা[৩] বা শাপলা চত্বর অভিযান হল ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ ই মে বাংলাদেশের ঢাকায় সংঘটিত ঘটনাসমূহ, যার মাধ্যমে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের তৎকালীন সদ্যপ্রসূত ইসলামী অরাজনৈতিক জোট হেফাজতে ইসলামের গনসমাবেশ, আন্দোলন এবং তাদেরকে বিতাড়িত করার জন্য সরকার কর্তৃক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বিত বাহিনীর ব্যবহারকে বোঝানো হয়।[৪][৫][৬] এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইসলামিক নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে অপ্রীতিকর মন্তব্যকারী "নাস্তিক ব্লগার"দের ফাসি কার্যকর করার জন্য একটি ব্লাসফেমি আইন প্রনয়ন এবং জনসম্মুখে "নারী পুরুষের মেলামেশা" নিষিদ্ধকরণ।[৭][৮][৯]

৬ই মে'র ভোররাত থেকে, সরকার উস্কানিমূলক আচরণের অভিযোগে বিরোধীদলীয় গোষ্ঠীর মালিকানাধীন দুটি চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন এবং ইসলামিক টিভি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়, যেগুলো অপারেশানের কার্যকলাপ সরাসরি সম্প্রচার করছিলো।[১০][১১][১২] মতিঝিলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন সোমবার সকালে হেফাজতের লোকদের রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর নারায়ণগঞ্জ, হাঁটহাজারী এবং বাগেরহাট সহ দেশের বেশ কিছু স্থানে হেফাজত কর্মীদের কথিত হত্যার প্রতিবাদে মিছিল হয়।[১৩][১৪][১৫] বিভিন্ন সূত্র থেকে অপারেশনে সঙ্ঘটিত হতাহতের সংখ্যা ও পরিস্থিতিকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়। অনেকগুলো সূত্র থকে ৩০ জনেরও অধিক নিহত হওয়ার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।[১৩][১৪][১৫][১৬][১৭] হেফাজত দাবি করে যে তাদের হাজারেরও অধিক কর্মী অভিযানে নিহত হয়েছে যা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অধিকার'র জুন মাসের প্রতিবেদন, এবং সরকারি বিবৃতিসহ কোন মুক্ত গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় নি।[১৩][১৮][১৯]

পটভূমি[সম্পাদনা]

১৩ দফা দাবি[সম্পাদনা]

২০১১ সালে এই সংগঠনটি, সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত নারী উন্নয়ন নীতির তীব্র বিরোধিতা করে।[২০][২১] ২০১৩ সালে তারা ইসলাম ও রাসুলকে কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি দাবি করে ব্যাপক আন্দোলন ও সমাবেশ শুরু করে। এ প্রেক্ষিতে তারা ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে।[২২][২৩][২৪] হেফাজতে ইসলামের এই দাবির কয়েকটি দফা সমালোচিত হলে পরবর্তীতে তারা সংবাদ সম্মেলনে ১৩ দফার ব্যাখ্যা প্রদান করে।[২৫]

হেফাজতে ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের দাবিসমূহ হলো:

  1. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কুরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।
  2. আল্লাহ্, রাসুল ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
  3. শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক এবং রাসুল এর নামে কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
  4. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
  5. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
  6. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
  7. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
  8. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
  9. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
  10. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
  11. রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র রাসুলপ্রেমিক জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।
  12. সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।
  13. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও রাসুলপ্রেমিক জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান।[২২][২৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Assembly of Hefazate Islam Bangladesh and Human Rights Violations"Odhikar। ১০ জুন ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৪ 
  2. "Blood on the Streets: The Use of Excessive Force During Bangladesh Protests"Human Rights Watch। Human Rights Watch। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  3. "যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার"সংগ্রাম। দৈনিক সংগ্রাম। ৯ মে ২০১৩। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৫ 
  4. "Hefajat men flee Motijheel"The Daily Star (Bangladesh)। মে ৬, ২০১৩। ২৯ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৪ 
  5. "Govt trashes loss of thousands of lives rumour"The Daily Star (Bangladesh)। ১০ মে ২০১৩। ২৯ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৪ 
  6. ""Bangladesh clashes rage over blasphemy law""। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  7. "Press note on Motijheel reflects party views instead of govt: Dudu"Weekend Independent। মে ১২, ২০১৩। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৩ 
  8. "At least 32 dead as Bangladesh Islamists demand blasphemy law"Dawn। মে ৬, ২০১৩। ২৪ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৩ 
  9. Rahman, Anisur (মে ৫, ২০১৩)। "Radical Islamists lay siege to Dhaka"Gulf News। ১০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৩ 
  10. "diganta islamic tv taken off air"। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৫ 
  11. "Controversy over Shapla Square Casualty"The Independent। ৯ মে ২০১৩। ২৩ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  12. "Riot police battle Islamists in Dhaka Bangladesh"BBC news। BBC। ২০১৩-০৫-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-২১ 
  13. "27 more killed"The Daily Star। ৭ মে ২০১৩। ৭ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৩ 
  14. Paul, Ruma। "At least 20 dead in Islamist protests in Bangladesh"Yahoo News। ২৯ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৩ 
  15. "BNS bears Hefajat brunt"। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৫ 
  16. "Bangladesh protest violence leaves more than 30 people dead"। guardian.co.uk। ২০১৩-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-২০ 
  17. "Clashes over Islam blasphemy law kill 27 in Bangladesh"MSN। ২০১৩-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-২০ 
  18. "HRW rebuts genocide claim"bdnews24.com। ১১ মে ২০১৩। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৩ 
  19. "HRW bins genocide claim by BNP, Hefazat"The Daily Sun। ২৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৩ 
  20. "Bangladesh: 1 dead in clash over women's rights – AP Online | HighBeam Research"। ১১ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৩ 
  21. "New Age | Newspaper"। ২০১৩-০৬-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-১২ 
  22. Correspondent, Staff; Chittagong (২০১০-০২-২৬)। "All detainees set free in Ctg"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-৩০ 
  23. "BanglaSongbad24.com"। ২০১৩-০৪-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-০৭ 
  24. Chowdhury, Moinul Hoque। "Govt must accede to our demands: Hifazat"bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-৩০ 
  25. "হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট"। ২০১৩-০৭-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৯ 
  26. "হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি"। দৈনিক প্রথম আলো। ৫ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]