হলদে বক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

হলদে বক
হলদে বক, হংকং
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Pelecaniformes
পরিবার: Ardeidae
গণ: Ixobrychus
প্রজাতি: I. sinensis
দ্বিপদী নাম
Ixobrychus sinensis
(Gmelin, 1789)
বৈশ্বিক বিস্তৃতি
প্রতিশব্দ

Ardea sinensis

হলদে বক (বৈজ্ঞানিক নাম: Ixobrychus sinensis), হলদে বগলা, কেঠো বক বা কাঠবগ Ardeidae (আর্ডেইডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Ixobrychus (ইক্সোব্রাইকাস) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির হলদে-বাদামি রঙের ছোট আকারের জলচর পাখি[২][৩][৪] হলদে বকের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চীনের গুল্মবাসী (গ্রিক: ixos = চিরহরিৎ পরগাছা, brukhao = গর্জন, sinai = চীনের)।[৪] প্রজাতিটি একপ্রজাতিক, অর্থাৎ এর কোন উপপ্রজাতি নেই।[৫] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ, পূর্বদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৪৭ লক্ষ ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।[৬] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমছে না বাড়ছে সে ব্যাপারে কোন ধারণা পাওয়া যায় নি, তবে এদের সংখ্যা একেবারে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[১] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৪] বিল ও বাদায় বাস করে। এদের গায়ের রং পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বলে সহজে নজরে আসে না। কেবল ওড়ার সময়ই চোখে পড়ে। স্থির, নিশ্চল থাকতে ব্যাপক পারদর্শী এরা। হলদে বক প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধানের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ খেয়ে কৃষকের উপকার করে। কিন্তু আবাস ধ্বংস এবং বিষাক্ত কীটনাশকের কারণে বিরল হলদে বকের সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।[২] সারা পৃথিবীতে হলদে বকের সংখ্যা আনুমানিক এক লক্ষ থেকে দশ লক্ষ।[৬]

আকার[সম্পাদনা]

শিকারী হলদে বক

হলদে বক লম্বায় ৩৬ থেকে ৩৮ সেন্টিমিটার। এদের গলা ছোট এবং ঠোঁট লম্বা। পুরুষের দেহের ওপরটা হলদে-বাদামি এবং নিচের রং হালকা হলুদ। ডানা হালকা হলুদ। ডানার মাঝের ও প্রান্তের পালকগুলো কালো। কোমর ও লেজের পালক কালচে। মাথা ও গলা খয়েরি, মাথার টুপি কালো। ঠোঁট হলুদ। পা ও পায়ের পাতা হলদে-সবুজ। মেয়ে পাখির মাথার টুপি, গলা ও বুক বাদামি রেখাযুক্ত। বাচ্চাগুলো দেখতে মায়ের মতো হলেও দেহের নিচের দিকে বাদামি রেখার পরিমাণ বেশি। পিঠের ওপরটা হলদে ফোঁটাযুক্ত।[২]

খাদ্য[সম্পাদনা]

হলদে বক সাধারণত কোনো পাতা বা উদ্ভিদের নিচে লুকিয়ে থাকা ছোট ছোট মাছ, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গ শিকার করে খায়।[২]

স্বভাব[সম্পাদনা]

ভারতের কলকাতায় উড়ন্ত হলদে বক

হলদে বক নলবন, ঢোলকলমি, কচুরিপানা ও জলজ উদ্ভিদপূর্ণ জলাধার, বিল, বাদা, খাল, পুকুর ও ধানখেতে বিচরণ করতে পছন্দ করে। এরা একাকী চরে বেড়ায় এবং অত্যন্ত সাবধানী ও লাজুক পাখি। সকালে ও পড়ন্ত বিকেলে বেশি তৎপর থাকে। উচ্চ স্বরে 'কেকের-কেকের' বা 'কাকাক-কাকাক' স্বরে ডাকে।[২]

প্রজননকাল[সম্পাদনা]

জুন-সেপ্টেম্বর হলদে বকের প্রজননকাল। জলাশয়ের পাশের ঘন ঝোপ, কচুরিপানা, পানিতে ঝুলে পড়া উদ্ভিদ, প্লাবিত ধানগাছ—এসবে অতি গোপনে বাসা বানায়। স্ত্রী বক চার থেকে ছয়টি ফ্যাকাশে নীলচে-সবুজ ডিম পাড়ে। মা-বাবা দুজনেই ডিমে তা দেয়। ডিম থেকে ফোটার ১৫ দিন পর ছানারা বাসা ছাড়ে।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Ixobrychus sinensis"The IUCN Red List of Threatened Species। ২০১২-১১-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৫ 
  2. আ ন ম আমিনুর রহমান (১৯-০৩-২০১৩)। "বাইক্কার বিলের বিরল হলদে বক"। দৈনিক প্রথম আলো। ২০২০-০৫-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. রেজা খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ৮২। আইএসবিএন 9840746901 
  4. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৯২–৩। 
  5. "Yellow Bittern (Ixobrychus sinensis)"। The Internet Bird Collection। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩ 
  6. "Yellow Bittern Ixobrychus sinensis"BirdLife International। ২০১৬-১০-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]