সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়
সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | ৯ জানুয়ারি ১৮৮৪ |
মৃত্যু | ১৯ মে ১৯৬৬ (বয়স ৮৪) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | সাহিত্যিক, অনুবাদক ও আইনজীবী |
দাম্পত্য সঙ্গী | সুবর্ণলতা দেবী |
সন্তান | সুচিত্রা মিত্র |
পিতা-মাতা | হরিদাস মুখোপাধ্যায় (পিতা) |
পুরস্কার | কুন্তলীন পুরস্কার |
সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় (৯ জানুয়ারি, ১৮৮৪ – ১৯ মে, ১৯৬৬) একজন খ্যাতনামা সাহিত্যিক, অনুবাদক ও আইনজীবী ছিলেন।[১]
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার ইছাপুরে। পিতার নাম হরিদাস মুখোপাধ্যায় । পিতামহ কৃষ্ণসখা হাই কোর্টের উকিল এবং জনপ্রিয় শৌখিন নট ও নাট্যকার নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তার মাতামহ ছিলেন। রামায়ণ অনুবাদক কবি কৃত্তিবাস ওঝা ছিলেন এঁদের পূর্বপুরুষ। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভবানীপুরের সাউথ সুবারবন স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ভাগলপুরের তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজ থেকে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে এফ. এ, ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল অ্যাসেব্লিজ ইনস্টিটিউশন থেকে বি. এ পাশ করেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কলকাতার পুলিশ কোর্টে ওকালতি শুরু করেন।
সাহিত্যচর্চা
[সম্পাদনা]তিনি পেশায় আইনজীবী হলেও নেশায় ছিলেন সাহিত্য-শিল্পকর্মী। চোদ্দ বৎসর বয়সে এন্ট্রান্সে পড়ার সময়ই তার 'ছেলেবেলাকার কথা' গল্পটি 'কমলা' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে সাহিত্য জগতে তার ঘনিষ্ঠতা। সতীর্থ মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রভৃতির সহযোগিতায় ভবানীপুরে ' সাহিত্য সেবক সমিতি' প্রতিষ্ঠা করে 'তরণী' নামে এক হাতে লেখা পত্রিকার সম্পাদনা করেন। এই সময়ে ছোটদের মাসিক পত্রিকা 'মুকুল' -এ তার কয়েকটি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে 'কুন্তলীন পুরস্কার' লাভ করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে কুন্তলীনের দ্বিতীয় এবং ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পুরস্কার পান। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত "ভারতী" পত্রিকার পরিচালনভার গ্রহণ করেন। ১৯১৫ - ২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ও মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় 'ভারতী' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে 'মাসিক বসুমতী' র সাথে যুক্ত হয়ে দীর্ঘ দিন থাকেন । সৌরীন্দ্রমোহন প্রকৃত অর্থে সব্যসাচী লেখক ছিলেন। গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র কাহিনী, বেতার নাট্য, জীবনী, অনুবাদ-সাহিত্য, রম্য রচনা, ব্যঙ্গ-কৌতুক, ভ্রমণকাহিনী, প্রবন্ধ, পরলোকতত্ত্ব প্রভৃতি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতার সাথে ছিল তার অবাধ বিচরণ। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত দেবকী বসু পরিচালিত নিউ থিয়েটার্সের সঙ্গীতবহুল চলচ্চিত্র 'চণ্ডীদাস ' ছবির জনপ্রিয় ' ফিরে চলো আপন ঘরে' গানটির গীতিকার ছিলেন তিনি। তিনি অনর্গল রায়, অপ্রকাশ গুপ্ত, বৈকুন্ঠ শর্মা, সত্যব্রত শর্মা প্রভৃতি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। প্রায় দু'শো গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি হল —
কিশোর সাহিত্য
[সম্পাদনা]- 'লালকুঠি'
- 'পাঠান মুলুকে'
- 'চালিয়াৎ চন্দর'
- 'মা-কালীর খাঁড়া'
গল্পগ্রন্থ
[সম্পাদনা]- 'মণিদীপা'
- 'নির্ঝর'
- 'রঙের টেক্কা'
- 'পুষ্পক'
- 'খাট্টা ও খোট্টা'
উপন্যাস
[সম্পাদনা]- 'দরদী'
- 'আঁধি'
- 'কাজরী'
- 'বাবলা'
- 'পিয়ারী'
- 'কুজ্ঝটিকা'
নাটক
[সম্পাদনা]- 'লাখ টাকা'
- 'স্বয়ংবরা'
- 'হারানো রতন'
অন্যান্য
[সম্পাদনা]- 'রবীন্দ্রস্মৃতি'
- 'জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি'
- 'উকিলের ডায়েরি'
- 'পরলোকের বিচিত্রকাহিনী'
- 'ওপারের খবর'
- 'তান্ত্রিকদের বিচিত্র কাহিনী'
শেক্সপিয়ারের গ্রন্থাবলি ছাড়াও তিনি বিদেশি বই অনুবাদ করেছেন। গ্রামোফোন রেকর্ডে তার রচিত গান 'ও কেন গেল চলে', 'জীবনে জেগেছিল মধুমাস' প্রভৃতি সেসময় খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে তার আলাদা গীত-সংকলন প্রকাশিত হয় নি। কলকাতা বেতার কেন্দ্রের সূচনাকাল থেকে আমৃত্যু তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। রবীন্দ্র সংগীতের প্রথিতযশা ও স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী সুচিত্রা মিত্র তার কন্যা।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]সৌরীন্দ্রমোহন ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে মে ৮৪ বৎসর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৮৩৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬