কুন্তলীন পুরস্কার
কুন্তলীন পুরস্কার বাংলায় বস্তুপণ্যের প্রচারে প্রথম সাহিত্য-পুরস্কার। প্রবর্তন করেন বিস্মৃত বাঙালি উদ্যোগপতি হেমেন্দ্রমোহন বসু (১৮৬৬ - ১৯১৬)।[১] তিনি ছিলেন তখনকার বাংলায় প্রচলিত 'কুন্তলীন কেশতৈল' ও সুগন্ধি দ্রব্য 'দেলখোস'-এর ব্যবসায়ী।[২] শিল্পে বাঙালির কর্মক্ষেত্র প্রস্তুতে ও অন্যান্য স্বকীয় ধারায় অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মূলতঃ উল্লিখিত খাদ্যসামগ্রীর প্রচারের উদ্দেশ্যে হলেও বাঙালির সাহিত্যসৃষ্টিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যই ১৩০৩ বঙ্গাব্দে (ইংরাজী ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে) প্রবর্তন করে অনেক সাহিত্যিককে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের প্রথম সুযোগ দেন তিনি। সহায়তায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও।[২]
বর্ণনা[সম্পাদনা]
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় হেমেন্দ্রমোহন বসুর এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেছিলেন,
“তেলে-জলে কখনও মেশে না, কিন্তু তবুও একথা মানতেই হয় যে, অন্তত একটি তেল আমাদের সাহিত্যরূপ জলের সঙ্গে নিতান্ত নিগূঢ় ভাবেই মিশে আছে। সেটি কুন্তলীন”।
বিজ্ঞাপন মূল উদ্দেশ্য হলেও পুরস্কার প্রতিযোগিতায় শর্ত থাকত -
“গল্পের সৌন্দর্য কিছুমাত্র নষ্ট না করিয়া কৌশলে 'কুন্তলীন' এবং এসেন্স 'দেলখোস' এর অবতারণা করিতে হইবে, অথচ কোনো প্রকারে ইহাদের বিজ্ঞাপন বিবেচিত না হয়”।
কুন্তলীন পুরস্কার পুস্তিকার জন্য রবীন্দ্রনাথ ‘কর্মফল’ গল্পটি লিখে সাম্মানিক পেয়েছিলেন ৩০০ টাকা। কুন্তলীন পুরস্কারের জন্য ১০০ টাকা বরাদ্দ ছিল। প্রথম স্থানাধিকারী পেতেন ১০০ টাকা। তবে স্থানাধিকারী বেশি হলে,- এ ভাবে ২৫, ২০, ১৫, ১০ এবং পঞ্চম থেকে দশম স্থানাধিকারীকে ৫ টাকা দেওয়া হত। প্রথম বর্ষের ১৩০৩ বঙ্গাব্দের প্রথম ‘কুন্তলীন পুরস্কার’ পেল ‘নিরুদ্দেশের কাহিনি’ নামের গল্প। প্রথমে লেখকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। পরে অবশ্য জানা যায়, সেই গল্প লিখেছিলেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। গল্প লিখে ‘কুন্তলীন পুরস্কার’ পাওয়া তখন খুব সম্মানের ব্যাপার ছিল। কেননা বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশনা সংস্থা পুরস্কার প্রাপকদের সমীহ করতেন।[৩] ১৯০৩ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘মন্দির’ এই পুরস্কার লাভ করেছিল।[৪]
বর্তমান কালের 'রবীন্দ্র পুরস্কার',‘সাহিত্য অকাডেমি পুরস্কার’ এবং অন্যান্য সাহিত্য পুরস্কার তৎকালীন ‘কুন্তলীন পুরস্কার’ থেকেই অনুপ্রাণিত।[৫] সর্বশেষ কুন্তলীন পুরস্কার ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ (ইংরাজী ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ) ঐতিহ্য বজায় রাখতে প্রকাশ করা হয়েছিল ।
পুরস্কার প্রাপক[সম্পাদনা]

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পুরস্কার প্রাপকেরা হলেন -
- ১) মানকুমারী বসু (১৩০৩ব.- 'রাজলক্ষ্মী')[৬]
- ২) যোগীন্দ্রনাথ সরকার (১৩০৩ব.- 'মনে পড়ে' কবিতা)
- ৩) প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (রাধামণি দেবী ছদ্মনামে) (১৩০৪ব. - 'পূজার চিঠি')[৭]
- ৪) মানকুমারী বসু ( ১৩০৫ব. - 'অদৃষ্টচক্র')[৬]
- ৫) মানকুমারী বসু (১৩০৬ব. - 'শোভা')[৬]
- ৬) অনুরূপা দেবী ( তিনি ‘রাণী দেবী’ ছদ্মনামে গল্প লিখে কুন্তলীন পুরস্কার জিতে নেন)[৮]
- ৭) হরকুমারী সেন (১৩০৫ব. - 'জামাইবেটার উপাখ্যান')
- ৮) বারীন্দ্রকুমার ঘোষ (১৩০৮ব.'পরিণয় রহস্য', ১৩০৯ ব.'উদোরপিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে')
- ৯) সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়(১৩০৯ব,১৩১০,১৩১১ব) [৯]
- ১০) সরলাবালা সরকার (১৩০৯ বঙ্গাব্দে 'স্মৃতিচিহ্ন'গল্পের জন্য)
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ভট্টাচার্য, বিভূতিসুন্দর (২১ নভেম্বর ২০১৪)। "সফল বাঙালি উদ্যোগপতি হেমেন্দ্রমোহন"। www.anandabazar.com। ২৩ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২০।
- ↑ ক খ "ঐতিহ্যের সেই বারান্দায় আজও জীবন্ত কুন্তলীনের উৎস"। এই সময়। ২৭ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২০।
- ↑ সাইফুর রহমান (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "আমার প্রথম কাগুজে সন্তান"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২০।
- ↑ "শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২০।
- ↑ বারিদবরণ ঘোষ সম্পাদিত কুন্তলীন গল্প-শতক, আনন্দ পাবলিশার্স কলকাতা প্রকাশিত ।
- ↑ ক খ গ "'কুন্তলীন পুরস্কার' প্রাপ্ত লেখিকা মানকুমারী বসু"। দৈনিক সংগ্রাম। ১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২০।
- ↑ "প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২০।
- ↑ দাশগুপ্ত, মুনমুন। "নারীর অধিকার রক্ষায় অগ্রণী তিনি"। anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২০।
- ↑ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৮৩৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬