সরিস্কিয়া
সরিস্কিয়া সময়গত পরিসীমা: অন্ত্য ট্রায়াসিক—হলোসিন, ২৩.১৪–৬.৬কোটি | |
---|---|
ইওর্যাপ্টর লুনেনসিস-এর কঙ্কালের প্রতিকৃতি | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপপর্ব: | ভার্টিব্রাটা |
শ্রেণী: | সরীসৃপ |
মহাবর্গ: | ডাইনোসরিয়া |
বর্গ: | সরিস্কিয়া সীলি, ১৮৮৮ |
উপবিভাগসমূহ | |
| |
প্রতিশব্দ | |
হার্পাগোসরিয়া হ্যাকেল, ১৮৬৬ |
সরিস্কিয়া (উচ্চারণ /sɔːˈrɪskiə/ সও-রিস্-কি-আ) হল ডাইনোসরদের প্রধান দুটি ভাগের মধ্যে একটি। সরিস্কিয়া নামের উৎস হল গ্রিক সাউরোস (σαυρος) অর্থাৎ 'গিরগিটির মত', আর ইস্কিয়ন (ισχιον) অর্থাৎ 'পশ্চাদ্দেশ'।[১] ১৮৮৮ খ্রিঃ সীলি শ্রোণীচক্রের গঠনের ভিত্তিতে ডাইনোসরদের দুটি প্রধান বর্গে ভাগ করেন,[২] যদিও বর্তমানে অধিকাংশ পুরাজীববিদ সরিস্কিয়াকে নির্দিষ্ট বর্গ না বলে অনির্ণিত একটি ক্লেড হিসেবেই বিবেচনা করেন।[৩] সরিস্কিয়ানদের শ্রোণীচক্রে তাদের পূর্বসূরী সরীসৃপদের গঠন বহুলাংশে অপরিবর্তিত ছিল।
সরোপড ও থেরোপড ডাইনোসরেরা হল সরিস্কিয়া ক্লেডের দুটি অতিপরিচিত উপবিভাগ।
সমস্ত মাংসাশী ডাইনোসরই (থেরোপড) সরিস্কিয়ান। নিরামিষাশী ডাইনোসরদের অন্যতম প্রধান শাখা সরোপডরাও তাই। ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষে পাখি ছাড়া সমস্ত সরিস্কিয়ান ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই ঘটনাকে ক্রিটেশিয়াস-প্যালিওজিন বিলুপ্তি ঘটনা বলে চিহ্নিত করা হয়। থেরোপড ডাইনোসরদের একটি শাখার প্রত্যক্ষ উত্তরসূরী হিসেবে আধুনিক পাখিরা জাতিজনি নামকরণে সরিস্কিয়ানদের উপবিভাগ বা ক্লেড হিসেবে গণ্য হয়।[৪]
বর্ণনা
[সম্পাদনা]সরিস্কিয়ানরা তাদের শ্রোণীচক্রের তিন কাঁটাবিশিষ্ট আকারের দ্বারা অর্নিথিস্কিয়ানদের থেকে স্বতন্ত্র। সরিস্কিয়ান পিউবিস হাড়টি সামনের দিকে এগিয়ে থাকে বলে এই আকৃতি সম্ভব হয়। অন্যদিকে অর্নিথিস্কিয়ানদের পিউবিস থাকত ইস্কিয়ামের সমান্তরালে, পশ্চাৎমুখী অবস্থায়। ফলে সমগ্র শ্রোণীচক্রের আকার হত চার কাঁটাবিশিষ্ট।
সরিস্কিয়ানদের শ্রোণীচক্রের গঠন দেখে সীলি তাদের নামকরণ করেন, যার অর্থ হল "গিরগিটির মত পশ্চাদ্দেশ", কারণ সরিস্কিয়ানদের দেহে শ্রোণীচক্রটি তাদের পূর্বসূরী সরীসৃপদের শারীরস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বর্তমান টিকটিকি ইত্যাদির দেহেও একই রকম শ্রোণীচক্র দেখা যায়। সীলির প্রদত্ত অর্নিথিস্কিয়া নামের মানে হল "পাখির ন্যায় পশ্চাদ্দেশ" কারণ তাদের শ্রোণীচক্রের সাথে পাখিদের শ্রোণীচক্রের আপাত-সাদৃশ্য ছিল। কিন্তু সীলি পাখি ও অর্নিথিস্কিয়ানদের মাঝে কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা বলেননি।
পরবর্তী গবেষণা থেকে বোঝা গেছে 'পাখির ন্যায়' শ্রোণীচক্র ডাইনোসরদের মধ্যে দু'বার স্বাধীনভাবে বিবর্তিত হয়েছিল: একবার অর্নিথিস্কিয়ানদের দেহে এবং তার পর থেরোপডদের অন্তর্গত এভিয়ালা গোষ্ঠীর দেহে, যাদের থেকে বর্তমান পাখিদের উদ্ভব। এটি অভিসারী বিবর্তনের একটি উদাহরণ; পাখিরা পূর্বতন অর্নিথিস্কিয়ানদের সদৃশ শ্রোণীচক্রের বিবর্তন ঘটিয়েছিল, খুব সম্ভবত নিরামিষ বা সর্বভুক আহারের সহায়ক অভিযোজন হিসেবে।
শ্রেণিবিভাগ
[সম্পাদনা]সীলি প্রথাগত ডাইনোসরিয়া মহাবর্গটির শ্রেণিবিভাগ করার সময় পূর্বতন বিজ্ঞানীদের সংশ্লিষ্ট কাজকর্ম অনুসন্ধান করেন। ১৮৭৮ খ্রিঃ অথনিয়েল চার্লস মার্শ কর্তৃক প্রদত্ত শ্রেণিবিভাগ পদ্ধতিটি তাঁর যুক্তিযুক্ত মনে হয়। মার্শ ডাইনোসরদের চারটে বর্গে ভাগ করেছিলেন, যথা সরোপোডা, থেরোপোডা, অর্নিথোপোডা এবং স্টেগোসরিয়া। এই নামগুলো এখনও সরিস্কিয়া ও অর্নিথিস্কিয়ার অন্তর্গত উপবর্গগুলোকে চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়।[২]
কিন্তু সীলি চেয়েছিলেন সমস্ত ডাইনোসরকে এমন কোনো মূলগত শারীরস্থানিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে প্রধান প্রধান কতকগুলি গোষ্ঠীতে বিভক্ত করতে যার মাধ্যমে শুধু সেই গোষ্ঠীগুলোকেই নয়, বরং সাধারণভাবে ডাইনোসর মহাবর্গটিকেও অন্যান্য সরীসৃপদের থেকে আলাদা করা যাবে। তিনি দেখেছিলেন শ্রোণীচক্রের গঠন হতে পারে তেমনই এক বৈশিষ্ট্য, যার ভিত্তিতে মার্শ প্রস্তাবিত চারটি বর্গকে সহজেই দুই ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়। সীলি অতঃপর স্টেগোসরিয়া ও অর্নিথোপোডাকে অর্নিথিস্কিয়ার অন্তর্গত করেন, আর থেরোপোডা ও সরোপোডাকে সরিস্কিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেন। এছাড়া তিনি আরও বলেন যে ডাইনোসরিয়া প্রকৃতপক্ষে কোনো স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক একক জীবগোষ্ঠীই নয়; তারা আর্কোসরদের থেকে উদ্ভূত দু'টো সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বর্গ।[২] এর ফলে কয়েক দশক ধরে 'ডাইনোসর' কথাটি সাধারণ ও বৈজ্ঞানিক আলোচনায় অব্যবহার্য হিসেবে গণ্য হতে থাকে। কিন্তু ১৯৬০ এর দশকে আবার বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণার ভিত্তিতে বিবেচনা করেন যে সরিস্কিয়া ও অর্নিথিস্কিয়া বর্গদ্বয় প্রকৃতপক্ষে পরস্পরের সাথে অপেক্ষাকৃত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত; অন্যান্য আর্কোসরদের সাথে তাদের সম্পর্ক সেই তুলনায় কম।
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা
[সম্পাদনা]নিম্নস্থ ক্ল্যাডোগ্রামটি ২০০৪ খ্রিঃ ওয়াইশ্যাম্পেল প্রমুখের প্রকাশিত গবেষণাপত্রের অনুসারী।[৫]
সরিস্কিয়া |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
এছাড়া টেয়ুওয়াসু ও অ্যাগ্নসফাইটাস গণ দুটোও আদিম সরিস্কিয়ার অন্তর্গত।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ OED
- ↑ ক খ গ Seeley, H.G. (1888). "On the classification of the fossil animals commonly named Dinosauria." Proceedings of the Royal Society of London, 43: 165-171.
- ↑ Weishampel, D.B., Dodson, P., and Osmólska, H. (eds.). (2004). The Dinosauria. 2nd edition. University of California Press, Berkeley. 833 pp.
- ↑ Padian, K. (২০০৪)। "Basal Avialae"। Weishampel, David B.; Dodson, Peter; & Osmólska, Halszka (eds.)। The Dinosauria (Second সংস্করণ)। Berkeley: University of California Press। পৃষ্ঠা 210–231। আইএসবিএন 0-520-24209-2।
- ↑ Weishampel, David B.; Dodson, Peter; Osmólska, Halszka (eds.) (2004). The Dinosauria, Second Edition. University of California Press., 861 pp.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]সরিস্কিয়া -প্যালিওস ওয়েবসাইট থেকে।