সফিউদ্দিন আহমদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সফিউদ্দিন আহমদ
ফজলুল হক খোন্দকারের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সফিউদ্দিন আহমদ
জন্ম(১৯৪১-১০-১৯)১৯ অক্টোবর ১৯৪১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশাঅধ্যাপনা
পরিচিতির কারণলেখক, গবেষক, অনুবাদক
পিতা-মাতামোঃ আবদুস ছামাদ মোল্লা
দিলবরুন নেসা
পুরস্কারজাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কার
বিদ্যাসাগর গবেষণা পুরস্কার
বঙ্গবঙ্গবন্ধু স্মৃতি পুরস্কার

সফিউদ্দিন আহমদ (জন্ম: অক্টোবর ১৯, ১৯৪১) বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা ভাষা ও সাহিত্য গবেষক। তিনি বাংলা সাহিত্য, তুলনামূলক সমালোচনা এবং বিশ্বসাহিত্যে পণ্ডিত; তথ্যসন্ধানী এবং সমাজমনস্ক ও প্রগতিশীল চিন্তাচেতনায় ঋদ্ধ একজন মৌলিক গবেষক।[১] তার গবেষণা গ্রন্থ ডিরোজিও এবং ইয়ং বেঙ্গল মুভমেন্ট ও ডিরোজিও বাংলা গবেষণা সাহিত্যে একটি মৌলিক অবদান[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] হিসাবে স্বীকৃতি। বাংলাদেশে উনিশ শতকের রেনেসাঁর বিশ্লেষণ ও গবেষণায় তার অবদান যুগস্রষ্টা[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] হিসাবে স্বীকৃত। তার মতে চর্যাপদের ভাষা বাংলা নয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের নরসিংদীর রায়পুরায় তার জন্ম ১৯ অক্টোবর ১৯৪১। পিতা মোঃ আবদুস ছামাদ মোল্লা একজন দেশব্রতী কংগ্রেস নেতা, সমাজসেবক ও শিক্ষক ছিলেন। কংগ্রেস নেতা সুন্দর আলী গান্ধী, মানিক ভট্টাচার্য ও অতীন রায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তিনি। মাতা দিলবরুন নেসা আত্মগোপনকারী বামপন্থী নেতাকর্মীদের মাতৃস্নেহে আশ্রয় দিতেন। তিন একজন সমাজ সচেতন মহিলা ছিলেন; আত্মগোপনকারী নেতাকর্মীরা তাকে "মা" বলে সম্বোধন করতেন। রায়পুরা সদরের পূর্ব পাড়ায় "ছায়াবীথি" নামক বাড়িটি দেশবরেণ্য নেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের তীর্থকেন্দ্র ছিল। ছাত্রজীবনে তিনি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সামরিক জান্তা আইয়ুব খান শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি জেল খেটেছেন দু-দু’বার। তিনি রায়পুরা আর.কে.আর.এম. উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ খ্রীস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশ করেন৷ আই.এ পাস করেন ১৯৬২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে৷ অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ থেকে বি.এ এবং এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তুলনামূলক সাহিত্য এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র সাহিত্যের ওপর উচ্চতর পর্যায়ে পড়াশোনা ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন৷[২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

চাকরি জীবনের শুরুতে তিনি নেত্রকোণা কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। পরে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে সরকারী চাকরি লাভ করেন এবং সেই সূত্রে বরিশালের বি এম কলেজ, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ ও সিলেটের এমসি কলেজে অধ্যাপনা করেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় ২০০৫ সালে অবসর গ্রহণ করেছেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত দেশের বৃহত্তম সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২০ তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন।

সাহিত্যজীবন[সম্পাদনা]

প্রথম জীবনে তিনি কবিতা ও গল্প লিখতেন। সংবাদ, ইত্তেফাক ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর অনেক কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গল্প ‘মানুষগড়ার কারিগর’, ‘ডাক পিয়ন’, ‘মেরুদন্ড, ‘উত্তরণ’, সিঁড়ি ‘ঈদ মানে আনন্দ’; ‘ওরা আমাদের কেনো খেতে দেয় না’ প্রভৃতি সমসাময়িককালে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষ করে। ‘ডাক পিয়ন’ ও ‘মেরুদণ্ড’ ইভনেভ কৃদ্রভ কর্তৃক রুশ ভাষায় এবং ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ নয়েল গার্নিয়ে কর্তৃক ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়। পরবর্তীকালে আহমদ শরীফমুনীর চৌধুরী প্রমুখের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য তাকে ভাষা ও সাহিত্য গবেষণায় অনুপ্রাণিত করে। এছাড়া বিদেশী সাহিত্যের অনুবাদেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ড. সফিউদ্দিন আহমদের গবেষণা ও সাহিত্যকর্ম বিচিত্রমাত্রিক। লেখায় তিনি তুলনামূলক মাত্রিকতা সংযোজন করে বাংলার সাহিত্যে তুলনামূলক সমালোচনার ক্ষীণ স্রোতটিকে বেগবান করেছেন। তার গদ্য ছন্দিত, অনুপ্রাসের অভিযোজনে রসমাধুর্য এবং আকর্ষণীয় ও সুখপাঠ্য। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ১২টি গবেষণাগ্রন্থসহ তার মোট গবেষণাগ্রন্থ পঁয়ত্রিশটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা পত্রিকা, বাংলা একাডেমী গবেষণা পত্রিকা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণামূলক পত্রিকা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা পত্রিকা, বিশ্বভারতী পত্রিকা ইত্যাদি মর্যাদাপূর্ণ সাহিত্যপত্রে পঞ্চাশটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এখনো তিনি নিরলস গতিতে লিখছেন বাংলাদেশ ও কলকাতার বিভিন্ন সাময়িকীতে।

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

ভিনদেশী লেখকদের নিয়ে রচিত গ্রন্থাবলী[সম্পাদনা]

  • সাহিত্যিক ও দার্শনিক : সক্রেটিস থেকে সার্ত্রে
  • পাবলো নেরুদার প্রেম ও বিপ্লবের কবিতা
  • জাঁ আঁতুর র্যাঁবো
  • শেকসপিয়র
  • ডিরোজিও, বোদলেয়ার ও র্যাঁবো
  • সক্রেটিস।

অনুবাদকর্ম[সম্পাদনা]

  • ডিরোজিওর কবিতা
  • সক্রেটিসের শেষ দিনগুলি
  • বোদলেয়ারের কবিতা
  • র‌্যাবোর কবিতা
  • পাবলো নেরুদার কবিতা

পুরস্কার ও স্বীকৃতি[তথ্যসূত্র প্রয়োজন][সম্পাদনা]

  • জামালপুর সাহিত্য পুরস্কার
  • স্ফুটন সাহিত্য পুরস্কার (ময়মনসিংহ)
  • স্বকাল সাহিত্য পুরস্কার (বরিশাল)
  • জাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কার
  • ডিরোজিও গবেষণা পুরস্কার, ডিরোজিও একাডেমী, আগরতলা, ত্রিপুরা, ২০০৩
  • বিদ্যাসাগর গবেষণা পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ
  • শিকড় সাহিত্য পুরস্কার
  • পশ্চিমবঙ্গ লেখক সমিতি পুরস্কার
  • শেরেবাংলা স্মৃতি পুরস্কার
  • বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পুরস্কার

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. কবীর চৌধুরী, ‍"ড. সফিউদ্দিন আহমদের ‘ভাষার সংগ্রাম, শিক্ষার সংগ্রাম’" : ‌‌দৈনিক প্রথম আলো, শুক্রবারের সাহিত্য সাময়িকী‌‌, ঢাকা, শুক্রবার ২৬ শ্রাবণ, ১৪১৪, ১০ আগস্ট ২০০৭
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৮ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০০৯ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]