সত্যরঞ্জন বকসি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সত্যরঞ্জন বকসি
জন্ম১৪ জুলাই ১৮৯৭
মৃত্যু৮ জানুয়ারি ১৯৮৩
জাতীয়তাভারতীয়
প্রতিষ্ঠানবেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স
পরিচিতির কারণভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও সাংবাদিকতা

সত্যরঞ্জন বকসি (১৪ জুলাই, ১৮৯৭ ― ৮ জানুয়ারি, ১৯৮৩) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সাংবাদিক।[১]

জীবনী[সম্পাদনা]

সত্যরঞ্জন বকসি'র জন্ম ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুলাই অধুনা বাংলাদেশের বরিশালের গৌরনদী থানার বার্থী গ্রামে। পিতা বসন্ত কুমার বকসি এবং মাতা মোক্ষদাসুন্দরী।[২] পড়াশোনা ঢাকা ও কলকাতায়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রাবস্থাতেই মাত্র চোদ্দ বৎসর বয়সে মাতুল হেমচন্দ্র ঘোষ প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবী দল মুক্তি সংঘের (পরবর্তীকালে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স নামে পরিচিত হয়) সংস্পর্শে আসেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজী সাহিত্যে এম. এ পাশ করেন এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে আইনের স্নাতক হন। এই সময় তিনি 'এশিয়াটিক ফেডারেশন' শীর্ষক বিখ্যাত প্রবন্ধ লিখে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নজরে আসেন ও তার স্নেহভাজন হন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের 'ফরোয়ার্ড' পত্রিকার সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পান এবং তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু হয়। দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি ওই পত্রিকার সম্পাদক হন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে দেশদ্রোহিতার অপরাধে জরিমানাসহ তার জেলযাত্রা শুরু হয়। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কারারুদ্ধ হন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পেয়ে 'লিবার্টি' কাগজে যোগ দেন। লিবার্টি বন্ধ হলে 'অ্যাডভান্স' ও পরে শরৎচন্দ্র বসুর 'নেশন' কাগজে সম্পাদক হিসাবে কাজ করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সহায়তা করে গেছেন সুকৌশলে। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে, ঢাকায় লেম্যান, হাডসন, মেদিনীপুরে বার্জ, পেডি, ডগলাস, কুমিল্লায় জেলা ম্যাজিসেট্রটের উপর শান্তি-সুনীতির গুলি, অ্যান্ডারসনের উপর আক্রমণ বা রাইটার্স বিল্ডিং-এ অলিন্দ যুদ্ধের বিনয়-বাদল-দীনেশ এর আত্মাহুতি - এ সবের পিছনে কোন না কোন ভাবে তার যোগদান ছিল। কোথাও পরামর্শদাতা, কোথাও আশ্রয় দাতা আবার কোথাও বা সহযোগী হিসাবে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী তিনি ছিলেনই। তিনি ও মেজর সত্য গুপ্ত নিরলস ভাবে অত্যন্ত সাবধানে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৬/১৭ ই জানুয়ারির সুভাষের মহানিস্ক্রম্মণের পরিকল্পনার ছক তৈরি করেছিলেন।[৩] মহানিস্ক্রম্মণ পর্বের অনেক কিছুই তিনি জানতেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স-এর শান্তিময় গঙ্গোপাধ্যায়, যতীশ গুহ প্রমুখ বিপ্লবীদের সাথে সত্যরঞ্জনও গ্রেফতার হন। সামরিক বাহিনীর হেফাজতে বৃটিশ শাসকের অকথ্য অত্যাচার চালায় দিল্লির লালকেল্লায়। বন্দিদশায় যতীশ গুহ নির্মম অত্যাচারের ফলে মারা যান।[৩] কিন্তু সত্যরঞ্জন অনাহারে, অর্ধাহারে থেকে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে থেকেও শেষে মুক্তি লাভ করেন। নেতাজী সম্পর্কে তার অসামান্য রচনা হল - "অ্যান অ্যাডভেঞ্চার ইন লাইফ" (জীবনের একটি অ্যাডভেঞ্চার)। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে সত্যরঞ্জন দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের নেপথ্য নায়ক সত্যরঞ্জন বকসি ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি কলকাতায় প্রয়াত হন।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৭৫৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "স্মরণে মন্থনে সত্যরঞ্জন বক্সী"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২১ 
  3. "A perilous journey netajisubhasbose"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১৪