সঙ্গমা (মানবাধিকার গোষ্ঠী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সঙ্গমা হলো ভারতের ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত একটি এলজিবিটি অধিকার গোষ্ঠী। এটি ১৯৯৯ সালে শুরু হয়েছিল।[১] সেইসময় এটি তথ্য প্রস্তুত কেন্দ্র হিসাবে কাজ করছিল। কিন্তু তারপর থেকে এটি এলজিবিটি অধিকার এবং এইচআইভি প্রতিরোধে নিযুক্ত বেসরকারি সংস্থায় পরিণত হয়েছে।[২] এই সংস্থা যৌন হয়রানি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এবং এইচআইভি প্রতিরোধ সম্মিলন ও কার্যক্রম পরিচালনা করে। সংস্থাটি অ-ইংরেজি ভাষী, শ্রমজীবী শ্রেণীর যৌনকর্মী ও এলজিবিটি মানুষ এবং কর্ণাটককেরালার এইচআইভি (পিএলএইচআইভি - এইচআইভি নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষ) আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৯৯ সালে মনোহর এলাবর্তি একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখানে যৌন সংখ্যালঘুদের পরামর্শ পরিষেবা পাওয়া যাবে। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন সঙ্গমা। এটি বেঙ্গালুরু অঞ্চলের এলজিবিটি সমস্যাগুলি নিয়ে কাজ করা পণ্ডিতদের গবেষণা সামগ্রীও প্রদান করে।[৪] সংগঠনটি এমন আলোচনার আয়োজন করেছিল যেগুলি সামাজিক কর্মী এবং ইংরেজিভাষী এলজিবিটি ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করেছিল। বছরের পর বছর ধরে, সংস্থাটি নিজেদের কাজের ক্ষেত্র ক্রমশ প্রসারিত করেছে, এখন সংস্থাটি পরামর্শ পরিষেবা প্রদান থেকে শুরু করে এইচআইভি / এইডস তথ্য প্রদান, র‌্যালি ও সমবেতকরণের মাধ্যমে রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিদের অধিকারকে সমর্থন করা এবং কর্ণাটকে এলজিবিটি ব্যক্তিদের জন্য নিরাপদ ড্রপ-ইন (নৈমিত্তিক পরিদর্শন) হিসাবে কাজ করছে। মানবাধিকারের ওপর সংস্থাটির মনোযোগ থাকায়, সংস্থাটি উৎসাহিত হয়েছে, ভারতের সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের অ-ইংরেজিভাষী কোথিহিজড়ারা, যারা এইচআইভি এবং অপব্যবহারের ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের ওপর নিজেদের ক্রিয়া-কেন্দ্র (ফোকাস) স্থাপন করার জন্য।

কার্যক্রম[সম্পাদনা]

সম্প্রদায় গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ[সম্পাদনা]

সঙ্গমা এইচআইভি প্রতিরোধ প্রকল্পে কয়েকটি সংস্থার সাথে কাজ করে, প্রকল্পটির নাম লাস্যকইরালি পেহচান। প্রকল্পটি সম্প্রদায় ভিত্তিক সংস্থাগুলিকে তাদের নিজ নিজ এলজিবিটি সম্প্রদায়গুলিতে এইচআইভি / এইডস প্রতিরোধ করার কৌশলগুলির উপর সহায়তা প্রদান করে। সঙ্গমার একটি উপগোষ্ঠী হলো সমর। এটি একটি সম্প্রদায় ভিত্তিক সংস্থা যারা বেঙ্গালুরু নগর জেলায় এইচআইভি / এইডস প্রতিরোধ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে।[৫]

প্রচার[সম্পাদনা]

সঙ্গমা দুটি প্রচার প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেছে - একটি সমকামী ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এবং অন্যটি রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছানোর জন্য। তৃণমূল স্তরের কর্মীরা বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ব্যক্তি এবং যৌনকর্মীদের মুখোমুখি সমস্যার কথা শোনার জন্য তাঁদের ইতস্তত ভ্রমণস্থলগুলিতে যান। এই প্রচার কার্যক্রমগুলি সঙ্গমাকে সাহায্য করেছিল তাদের ড্রপ-ইন বৈঠকগুলির জন্য আরও সদস্য পেতে।[৪]

২০১২ সালে কর্ণাটক সেক্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এবং পেডেস্ট্রিয়ান ফিল্মসের সাথে একত্রিত হয়ে, সঙ্গমা একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র, লেট দ্য বাটারফ্লাইস ফ্লাই, রিলিজ করেছিল। চলচ্চিত্রটি ব্যাঙ্গালোর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল কিন্তু কাশিশ মুম্বাই ফেস্টিভ্যালে একটি পুরস্কার জিতেছিল।[৬]

বৈধ সেবা[সম্পাদনা]

যৌন সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা পুলিশ দ্বারা নির্যাতিত ও নিগৃহীত অথবা তাদের যৌন অভিমুখতার কারণে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, সঙ্গমা তাদের আইনি সহায়তা প্রদান করে।[৪] আইনি পরিষেবা ছাড়াও, গোষ্ঠীটি কর্ণাটকে এলজিবিটি ব্যক্তিদের পুলিশি হয়রানি এবং আটকের দিকে নজর রাখে। ২০০৮ সালে, গ্রেপ্তার হওয়া ৫ হিজড়াকে সহায়তা দেবার জন্য একটি থানায় যাওয়ার সময়, সঙ্গমা প্রতিনিধিদের অন্য থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সেখানে তাদের মারধর করা হয়েছিল।[৭] সংস্থাটি ভারতের রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিদের জন্য যৌন বৈষম্য এবং অধিকার নিয়ে কথা বলে চলেছে।

করোনা ত্রাণ[সম্পাদনা]

অরুন্ধতী রায়ের কাছ থেকে ₹ ১.৫ লাখ অনুদান সহ, সঙ্গমা প্রায় ₹ ১০ লাখ সংগ্রহ করেছে এবং ব্যাঙ্গালোর গ্রামীণের হাসান, বিদার, ইয়াদগির, রামনগর, হাভেরি, গদাগ, রাইচুর, কোপ্পালা, কোলার, চিকমাগালুর এবং উত্তর কন্নড় জেলায় যৌনকর্মী এবং পরিবর্তিত লিঙ্গের মানুষদের প্রত্যেককে ₹ ২০০০ ত্রাণ প্রদান করেছে। দুটি যৌনকর্মী সংস্থা, কর্ণাটক সেক্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (কেএসডব্লিউইউ) এবং উত্তর কর্ণাটক মহিলা ওকুট্টা (ইউকেএমও), ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করেছে।[৩]

কর্ণাটকে পরিবর্তিত লিঙ্গের মানুষদের জন্য সংরক্ষণ[সম্পাদনা]

সঙ্গমার ওকালতি প্রচেষ্টার পর, কর্ণাটক সরকার ২০২১ সালের মে মাসে নিয়োগের নিয়ম সংশোধন ক'রে মেধা তালিকায় তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণি বিভাগে পরিবর্তিত লিঙ্গের ব্যক্তিদের জন্য এক শতাংশ সংরক্ষণ করেছে। সঙ্গমা এবং এর প্রোগ্রাম অফিসার নিশা গুলুর হাইকোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন এবং সরকার ২০২১ সালের ১৩ই মে বিজ্ঞপ্তিটি আদালতে প্রকাশ করেছিল।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Love and let love"www.telegraphindia.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-০১ 
  2. Senthalir (জুলাই ১৮, ২০১১)। "Fights to create safer space for sexual minorities"The Times of India 
  3. "NGO Launches Fundraising Campaign to Help Sex Workers, Transpersons in Karnataka"The Wire। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-০১ 
  4. Sen, Indrani (২০০৫)। Transgender human rights। Isha Books। পৃষ্ঠা 205–209। 
  5. "Samara to handle projects of HIV prevention programme"The Hindu। Bangalore। মার্চ ৫, ২০০৯। 
  6. "Sangama releases award winning documentary"The Hindu। Bangalore। জুন ১৯, ২০১২। 
  7. Wockner, R. (2008, Nov 06). Trans people and LGBT activists arrested in India. Between the Lines
  8. Reddy, Y Maheswara (২০২১-০৬-২১)। "Quota for transgenders welcome"Bangalore Mirror (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-০১