শানথৌ
শানথৌ 汕头市 | |
---|---|
জেলা-স্তরের নগরী | |
কুয়াংতুং প্রদেশের শানথৌ নগরীর অবস্থান | |
চীনে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক (Shantou government): ২৩°২১′১৪″ উত্তর ১১৬°৪০′৫৫″ পূর্ব / ২৩.৩৫৪° উত্তর ১১৬.৬৮২° পূর্ব | |
দেশ / রাষ্ট্র | গণচীন |
প্রদেশ | কুয়াংতুং |
পৌরসভা আসন | চিনফিং জেলা |
সরকার | |
• সাম্যবাদী দলের সমিতি সচিব | ফাং লিশু (方利旭) |
• নগরপাল | চেং চিয়াংয়ে (郑剑戈) |
আয়তন | |
• জেলা-স্তরের নগরী | ২,২৪৮.৩৯ বর্গকিমি (৮৬৮.১১ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৯,২৯৭.১ বর্গকিমি (৩,৫৮৯.৬ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৫১ মিটার (১৬৭ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১০ সালের জনগণনা) | |
• জেলা-স্তরের নগরী | ৫৩,৮৯,৩২৮ |
• জনঘনত্ব | ২,৪০০/বর্গকিমি (৬,২০০/বর্গমাইল) |
• মহানগর[১] | ১,২৭,৮৫,২৪১ |
• মহানগর জনঘনত্ব | ১,৪০০/বর্গকিমি (৩,৬০০/বর্গমাইল) |
• প্রধান জাতীয়তাসমূহ | হান |
সময় অঞ্চল | চীনা মান (ইউটিসি+৮) |
ডাক সঙ্কেত | ৫১৫০০০, ৫১৫০৪১ |
এলাকা কোড | ৭৫৪ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | CN-GD-05 |
ভাষা | মিন |
স্থানীয় উপভাষা | তিয়েচিউ উপভাষা |
ওয়েবসাইট | shantou |
শানথৌ | |||||||||||||||||||||||||||||
সরলীকৃত চীনা | 汕头 | ||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 汕頭 | ||||||||||||||||||||||||||||
পোস্টাল | Swatow | ||||||||||||||||||||||||||||
আক্ষরিক অর্থ | Fish-basket Point | ||||||||||||||||||||||||||||
|
শানথৌ (ম্যান্ডারিন চীনা ভাষায় 汕头市) গণচীনের দক্ষিণ-পূর্বভাগের কুয়াংতুং প্রদেশের পূর্বাংশে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরী। প্রশাসনিকভাবে জেলা-স্তরের নগরী শানথৌ একাধারে একটি শিল্পকেন্দ্র ও সমুদ্র বন্দর। নগরীটি দক্ষিণ চীন সাগরের উপকূলে, হান নদীর মোহনা থেকে স্বল্প দূরত্বে পশ্চিম দিকে হান ব-দ্বীপের ভেতরে অবস্থিত। নগরীটি দক্ষিণ-পূর্ব চীনের উপকূলীয় হংকং নগরী থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
হান নদীর ব-দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে একটি খাঁড়ি প্রায় ১৬ কিলোমিটার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে; শানথৌ নগরীটি এই খাঁড়ির একটি সরু সমুদ্রমুখী অংশে, উত্তর তীরের ব-দ্বীপ ও দক্ষিণ তীরের শিলাময় একটি অন্তরীপের মধ্যবর্তী অবস্থানে অবস্থিত। মূল শানথৌ নগরীটি প্রশাসনিকভাবে ৬টি পৌর জেলা ও ১টি কাউন্টি নিয়ে গঠিত এবং এর আয়তন প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার। বৃহত্তর শানথৌ মহানগর এলাকার আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি, যার মধ্যে চিয়েইয়াং এবং ছাওচৌ শহরগুলি অন্তর্ভুক্ত। মূল শানথৌ নগরীতে প্রায় ৫৩ লক্ষ লোকের বাস (জনঘনত্ব প্রায় ২৪০০ জন/বর্গকিমি)। বৃহত্তর শানথৌ মহানগর এলাকাতে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ অধিবাসী বাস করে।[১] জনসংখ্যার বিচারে বৃহত্তর শানথৌ বিশ্বের অতিমহানগরীগুলির একটি এবং চীনের চতুর্থ বৃহত্তম মহানগর এলাকা (বেইজিং, সাংহাই ও ছুংছিং মহানগর এলাকাগুলির পরে)।
শানথৌ নগরীর উত্তরভাগের মধ্য দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখাটি অতিক্রম করেছে; অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা যে অক্ষাংশে (২৩°৪২′উত্তর) অবস্থিত, শানথৌ নগরীটি মোটামুটি একই অক্ষাংশে (২৩°২১′ উত্তর) অবস্থিত। শানথৌয়ের জলবায়ু মৌসুমী বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত এবং উপক্রান্তীয় প্রকৃতির (ক্যোপ্পেন Cwa)। এখানকার শীতকালগুলি সংক্ষিপ্ত ও মৃদু থেকে উষ্ণ প্রকৃতির। এর বিপরীতে গ্রীষ্মকালগুলি দীর্ঘ, তপ্ত ও আর্দ্র। শীতকালের জানুয়ারিতে মাসব্যাপী দৈনিক গড় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন, যা প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মে জুলাই মাসে মাসব্যাপী দৈনিক সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাৎসরিক বৃষ্টিপাতে পরিমাণ প্রায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (৬৪ ইঞ্চি বা ১৬১৮ মিলিমিটার)। শানথৌয়ের পোতাশ্রয়টি একটি বালুর চড়া দিয়ে আবদ্ধ। এখানকার আবহাওয়া অনিয়মিত প্রকৃতির এবং এটি তাইফুন ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়। ১৯২২ সালের একটি তাইফুন ঘূর্ণিঝড়ে শানথৌ বন্দরটি বিধ্বস্ত হয়ে ৫০ হাজার অধিবাসীর মৃত্যু হয়। এসব অসুবিধা সত্ত্বেও শানথৌ কুয়াংতুং প্রদেশের একটি প্রাদেশিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র এবং এখানকার প্রধানতম বন্দর।
১৯শ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্তও শানথৌ লোকালয়টি ছেংহাই কাউন্টির অধীনে একটি অগুরুত্বপূর্ণ ও মৎস্যজীবীভিত্তিক গ্রাম ছিল। ঐ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ১৮৫৮ সালে হান নদীর মোহনা থেকে ৩২ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত ছাওচৌ শহরকে চুক্তি করে একটি বৈদেশিক বন্দরের মর্যাদা দেওয়া হয়। এর কয়েক বছর পরেই ১৮৬০ সালে শানথৌকে ছাওচৌয়ের বহির্মুখী বন্দর হিসেবে নির্বাচন করা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর থেকে শানথৌ খুব দ্রুত একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর ও পরিবহন ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে বিকাশ লাভ করা শুরু করে। ১৯৩০-এর দশক নাগাদ শানথৌ বন্দরটি কুয়াংচৌ বন্দরের পরেই দক্ষিণ চীনের ২য় বৃহত্তম বন্দরে পরিণত হয়। শানথৌ বন্দর থেকে বিপুল সংখ্যক চীনা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে অভিবাসী হয়। গণনা অনুযায়ী ১৮৮০ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ লক্ষ চীনা শানথৌ বন্দর দিয়ে বিদেশে অভিবাসী হয়েছিল। চীন-জাপান যুদ্ধ ও পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৩৮ সালে জাপানি বিমানসেনাদের বোমাবর্ষণে নগরীটির গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত নগরীটি জাপানের দখলে ছিল। ১৯৪৯ সালে নিকটবর্তী তাইওয়ান দ্বীপের সাথে ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যভিত্তিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর থেকে চীনা সরকার এটিকে একটি শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলে।
১৯০৬ সালের মধ্যেই শানথৌ নগরীটি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের রেলপথের মাধ্যমে ছাও-আন বা ছাওচৌ শহরের সাথে সংযোগ লাভ করে। কিন্তু নগরীটি মূলত হান নদী এবং মহাসড়ক ব্যবস্থার মাধ্যমেই চীনের অভ্যন্তরভাগের সাথে বহুদিন সংযুক্ত ছিল। ১৯৯৫ সালে নির্মিত একটি রেলপথ শানথৌকে হংকং ও কুয়াংচৌ নগরীর সাথে এবং ফুচিয়েন প্রদেশের পূর্বদিকের আরেকটি রেলপথের সাথে যুক্ত করেছে। শহরটি দ্রুতগতির মহাসড়কের মাধ্যমে শেনচেন শিল্পনগরীর সাথে (এবং এই সুবাদে আরও দূরের কুয়াংচৌ নগরীর সাথেও) সংযুক্ত। শানথৌ সমুদ্র বন্দরটির সাথে ২০০টিরও বেশি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক বন্দরের সমুদ্রগামী মাল প্রেরণ ও গ্রহণের ব্যবস্থা আছে।
১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে প্রবাসী চীনাদের আর্থিক সহায়তায় শানথৌ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। শানথৌয়ের অধিবাসীরা মিন চীনা ভাষা-পরিবারের উপকূলীয় ও দক্ষিণ মিন উপ-পরিবারের ছাওশান মিন দলের ছাওচৌ উপভাষাতে কথা বলে, তবে বিদ্যালয়গুলিতে ম্যান্ডারিন চীনা ভাষাতে শিক্ষাদান করা হয়। হংকংয়ের কাছে অবস্থিত বলে তারা ক্যান্টোনীয় চীনা ভাষাগুলিও বুঝতে পারে। শানথৌয়ের অধিবাসীরা চা পান করতে খুবই পছন্দ করে। চায়না ডেইলি পত্রিকার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী শানথৌ নগরীর লোকেরা চীনের অন্য সব শহরের তুলনায় চায়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি খরচ করে, ২০০৬ সালের হিসাবে যার বাৎসরিক পরিমাণ ছিল প্রায় ৮.৭৫ কোটি মার্কিন ডলার (৭০ কোটি চীনা ইউয়ান)।[২]
শানথৌ থেকে চিরায়তভাবে প্রধানত মাছ ও অন্যান্য সমুদ্রজাত দ্রব্য, চিনি, ফল, প্রক্রিয়াজাত টিনে রাখা খাদ্য ও চেরাই করা কাঠের তক্তা রপ্তানি করা হয়। শানথৌ নগরীর শিল্পকারখানাগুলির মধ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং জাহাজনির্মাণ শিল্পগুলি ঐতিহ্যবাহী। ১৯৪৯ সালের পর থেকে শিল্পোৎপাদনকে বহুমুখী করে তোলা হয়। ১৯৮১ সালে এখানে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার ভেতরে পরবর্তীতে শহরের অনেকগুলি পৌর জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। এর ফলশ্রুতিতে একাধিক দশক ধরে দীর্ঘ সময়ের জন্য শহরটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। আলোকরসায়ন, শব্দোত্তর (আলট্রাসনিক) যন্ত্রপাতি, চৌম্বকলেখচিত্র, ইলেকট্রনীয় বা বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি, খেলনা, বস্ত্র, ইত্যাদির কারখানা গড়ে তোলা হয়। শানথৌয়ের স্থানীয় সুইয়ের সুতার ঝালর ও অন্যান্য নকশার সেলাই তথা সূচিশিল্প-জাতীয় হস্তশিল্পগুলি সমগ্র চীনে সুপরিচিত।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ OECD Urban Policy Reviews: China 2015, OECD READ edition। OECD iLibrary। OECD। ১৮ এপ্রিল ২০১৫। পৃষ্ঠা 37। আইএসএসএন 2306-9341। আইএসবিএন 9789264230033। ডিওআই:10.1787/9789264230040-en।Linked from the OECD here
- ↑ For all the tea in China, head to Shantou, চায়না ডেইলি, ২০০৬
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- চলছবিতে (ভিডিও) শানথৌ শহরের উপস্থাপন (এয়ার এশিয়া বিমান সংস্থা প্রযোজিত)