অতিমহানগরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অতিমহানগরী বা মেগাশহর (ইংরেজি: Megacity) বলতে সাধারণত সেসব মহানগর এলাকাকে বোঝানো হয় যাদের জনসংখ্যা ১ কোটি বা তার অধিক।[১][২] কোনও কোনও ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ঘনত্বও (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ন্যূনতম ২০০০ জন) বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে একাধিক মহানগর এলাকার সমন্বয়ে একটি অতিমহানগরী গঠিত হয়ে থাকে। ২ কোটির বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট মহানগরীকে অনেক সময় "অধিনগরী" (ইংরেজি: Metacity মেটাসিটি) বলা হয়।

২০১৯ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্ব পৌরায়ন সম্ভাবনা : ২০১৮ সালের সংশোধন (World Urbanization Prospects: The 2018 Revision) নামক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ শেষে বিশ্বে অতিমহানগরীর সংখ্যা ছিল ৩৩। এগুলির বেশিরভাগই গণচীন এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশে অবস্থিত। ঐ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালে বিশ্বের বৃহত্তম তিনটি অতিমহানগরী ছিল জাপানের টোকিও (৩ কোটি ৭৪ লক্ষ অধিবাসী), ভারতের দিল্লি (২ কোটি ৮৫ লক্ষ অধিবাসী) এবং চীনের সাংহাই (২ কোটি ৫৫ লক্ষ অধিবাসী)। বাংলাভাষী অঞ্চলে ২টি অতিমহানগরী রয়েছে; এগুলি হল বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম অতিমহানগরী ঢাকা (১ কোটি ৯৫ লক্ষ অধিবাসী) এবং ষোড়শ (১৬শ) বৃহত্তম অতিমহানগরী কলকাতা (১ কোটি ৪৬ লক্ষ অধিবাসী)।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

জাতিসংঘ প্রকাশিত বিশ্ব পৌরায়ন সম্ভাবনা : ২০১৮ সালের সংশোধন শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বে ১০টি অতিমহানগরী ছিল। ২০১৮ সালে এদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩। জাতিসংঘের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ২০৩০ সালে অতিমহানগরীর সংখ্যা বেড়ে হবে ৪৩। ২০১০ সালে ১০টি অতিমহানগরীতে ১৫ কোটি ৩০ লক্ষ লোক বাস করত, যা ছিল তৎকালীন বিশ্ব পৌর জনসংখ্যার ৬.৭%। ২০১৮ সালে এসে ২০টি দেশে অবস্থিত ৩৩টি অতিমহানগরীতে প্রায় ৫৩ কোটি লোক বাস করত, যা ছিল বিশ্ব পৌর জনসংখ্যার ১২.৫%। ২০৩০ সালে ৪৩টি অতিমহানগরীতে প্রায় ৭৫ কোটি লোক বাস করবে, যা হবে বিশ্ব পৌর জনসংখ্যার ১৪.৬%।[৩]

অতিমহানগরীসমূহের তালিকা[সম্পাদনা]

২০১৯ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্ব পৌরায়ন সম্ভাবনা : ২০১৮ সালের সংশোধন নামক প্রতিবেদনে প্রকাশিত ২০১৮ সাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী ১ কোটির বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত অতিমহানগরীসমূহের একটি তালিকা নিচে উপস্থাপিত হল।[১]

ক্রম অতিমহানগরী চিত্র রাষ্ট্র মহাদেশ জনসংখ্যা (আনুমানিক)
টোকিও জাপান এশিয়া ৩,৭৪,৬৮,০০০
দিল্লি ভারত এশিয়া ২,৮৫,১৪,০০০
সাংহাই গণচীন এশিয়া ২,৫৫,৮২,০০০
সাঁউ পাউলু ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকা ২,১৬,৫০,০০০
মেক্সিকো সিটি মেক্সিকো উত্তর আমেরিকা ২,১৫,৮১,০০০
কায়রো মিশর আফ্রিকা ২,০০,৭৬,০০০
মুম্বই ভারত এশিয়া ১,৯৯,৮০,০০০
বেইজিং গণচীন এশিয়া ১,৯৬,১৮,০০০
ঢাকা বাংলাদেশ এশিয়া ১,৯৫,৭৮,০০০
১০ ওসাকা জাপান এশিয়া ১,৯২,৮১,০০০
১১ নিউ ইয়র্ক শহর-নিওয়ার্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আমেরিকা ১,৮১,৮৯,০০০
১২ করাচী পাকিস্তান এশিয়া ১,৫৪,০০,০০০
১৩ বুয়েনোস আইরেস আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকা ১,৪৯,৬৭,০০০
১৪ ছুংছিং গণচীন এশিয়া ১,৪৮,৩৮,০০০
১৫ ইস্তাম্বুল তুরস্ক ইউরোপ ১,৪৭,৫১,০০০
১৬ কলকাতা ভারত এশিয়া ১,৪৬,৮১,০০০
১৭ ম্যানিলা ফিলিপাইন এশিয়া ১,৩৪,৮২,০০০
১৮ লেগোস নাইজেরিয়া আফ্রিকা ১,৩৬,৪৩,০০০
১৯ রিউ দি জানেইরু ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকা ১,৩২,৯৩,০০০
২০ থিয়েনচিন গণচীন এশিয়া ১,৩২,১৫,০০০<
২১ কিনশাসা কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র আফ্রিকা ১,৩১.৭১,০০০
২২ কুয়াংচৌ গণচীন এশিয়া ১,২৬,৩৮,০০০
২৩ লস অ্যাঞ্জেলেস-লং বিচ-স্যান্টা অ্যানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আমেরিকা ১,২৪,৫৮,০০০
২৪ মস্কো রাশিয়া ইউরোপ ১,২৪,১০,০০০
২৫ শেনচেন গণচীন এশিয়া ১,১৯,০৮,০০০
২৬ লাহোর পাকিস্তান এশিয়া ১,১৭,৩৮,০০০
২৭ বেঙ্গালুরু ভারত এশিয়া ১,১৪,৪০,০০০
২৮ প্যারিস ফ্রান্স ইউরোপ ১,০৯,০১,০০০
২৯ বোগোতা কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকা ১,০৫,৭৪,০০০
৩০ জাকার্তা ইন্দোনেশিয়া এশিয়া ১,০৫,১৭,০০০
৩১ চেন্নাই ভারত এশিয়া ১,০৪,৫৬,০০০
৩২ লিমা পেরু দক্ষিণ আমেরিকা ১,০৩,৯১,০০০
৩৩ ব্যাংকক থাইল্যান্ড এশিয়া ১,০১,৫৬,০০০

ভবিষ্যৎ অতিমহানগরী[সম্পাদনা]

জাতিসংঘের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ আরও ১০টি নতুন নগরী অতিমহানগরীতে পরিণত হবে। এগুলি হল ইউরোপের লন্ডন (যুক্তরাজ্য), পূর্ব এশিয়ার সিউল (দক্ষিণ কোরিয়া), ছেংতু (চীন) ও নানচিং (চীন), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হো চি মিন নগরী (ভিয়েতনাম), মধ্যপ্রাচ্যের তেহরান (ইরান), দক্ষিণ এশিয়ার হায়দ্রাবাদ (ভারত) ও আহমেদাবাদ (ভারত) এবং আফ্রিকার লুয়ান্ডা (অ্যাঙ্গোলা) ও দারুস সালাম (তানজানিয়া)।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৫০ সালে বিশ্বের মাত্র দুইটি নগরীর জনসংখ্যা এক কোটির বেশি ছিল: নিউ ইয়র্ক ও টোকিও। এরপর ১৯৭০ সালে ওসাকা এবং ১৯৭৫ সালে মেক্সিকো নগরী যথাক্রমে ৩য় ও ৪র্থ অতিমহানগরী হিসেবে এদের সাথে যোগ দেয়।

সমস্যাসমূহ[সম্পাদনা]

অতিমহানগরীগুলি বিভিন্ন শ্রেণীর সমস্যার সম্মুখীন হয়। অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে বেকারত্ব, চাকুরির অভাব, জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। পরিবেশগত সমস্যার মধ্যে বায়ু দুষণ সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য। অন্যদিকে সামাজিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে মানসম্মত আবাসনের ও জীবনযাত্রার অবস্থার অভাব, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য, দারিদ্র্য, নিরাপত্তা, ইত্যাদি। অবকাঠামোগত সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বিদ্যুৎ এবং পরিবহন অবকাঠামো।

বস্তিসমূহ[সম্পাদনা]

ঘরহারা মানুষজন[সম্পাদনা]

অতিমহানগরীগুলিতে প্রায়ই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গৃহহীন নর-নারীর দেখা পাওয়া যায়। ঘরহারা মানুষজনের প্রকৃত ও নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়নি। দেশ কিংবা অঞ্চলভেদে এ সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়েছে।[৪] সাধারণ অর্থে যাদের কোন স্থায়ী ঘর-বাড়ী, দালান-কোঠা নেই কিংবা ভাড়া করা কোন ঘর-বাড়ী, দালান-কোঠা নেই - তারাই ঘরহারা মানুষজন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকেন।

যোগাযোগ ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

নগরের আয়তনবৃদ্ধি[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. World Urbanization Prospects : 2018 revision (পিডিএফ), United Nations, ২০১৯, পৃষ্ঠা 77 
  2. "How Big Can Cities Get?" New Scientist Magazine, 17 June 2006, page 41.
  3. World Urbanization Prospects : 2018 revision (পিডিএফ), United Nations, ২০১৯, পৃষ্ঠা 58-59 
  4. "Glossary defining homelessness"। Homeless.org.au। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০১ 

উৎসপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]