ল্যাঞ্জা হরিয়াল
ল্যাঞ্জা হরিয়াল Treron apicauda | |
---|---|
![]() | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Columbiformes |
পরিবার: | কলাম্বিডি |
গণ: | Treron |
প্রজাতি: | T. apicauda |
দ্বিপদী নাম | |
Treron apicauda ব্লাইদ, ১৮৪৬ |

ল্যাঞ্জা হরিয়াল (বৈজ্ঞানিক নাম: Treron apicauda), হরিকল বা শুধু হরিয়াল Columbidae (কলুম্বিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Treron (ট্রেরন) গণের এক প্রজাতির মাঝারি আকারের সবুজ বৃক্ষচারী পাখি।[১][২] ল্যাঞ্জা হরিয়ালের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ তীক্ষ্নলেজ হরিয়াল (গ্রিক: Treron = হরিয়াল; ল্যাটিন: apex = তীক্ষ্ন আগা, cauda = লেজ)।[২] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ১৬ লাখ ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[৩] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমেনি আবার বাড়েওনি, স্থিতিশীল রয়েছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[৪] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত নয়।[২]
বিস্তৃতি
[সম্পাদনা]ল্যাঞ্জা হরিয়াল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ও চীন এই প্রজাতিটির মূল আবাসস্থল।[৪]
উপপ্রজাতি
[সম্পাদনা]ল্যাঞ্জা হরিয়ালের মোট তিনটি উপপ্রজাতি সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।[৫] উপপ্রজাতিগুলো হচ্ছে:
- T. a. apicauda (Blyth, 1846) - হিমালয়ের পাদদেশে কুমায়ুন থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসাম এবং দক্ষিণ চীন ও মায়ানমার পর্যন্ত এরা বিস্তৃত।
- T. a. lowei (Delacour & Jabouille, 1924) - এদের মূল আবাস থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনাম।
- T. a. laotinus (Delacour, 1926) - লাওস ও উত্তর ভিয়েতনামের পাহাড়ি অঞ্চলে এরা বিস্তৃত।
বিবরণ
[সম্পাদনা]ল্যাঞ্জা হরিয়াল সবুজ বৃক্ষচারী পাখি। এর দর্শনীয় দীর্ঘ সূঁচালো লেজটি একে হরিয়ালজাতীয় অন্যসব পাখি থেকে আলাদা করেছে। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪২ সেন্টিমিটার, ডানা ১৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ২৪ সেন্টিমিটার ও পা ২.৪ সেন্টিমিটার। ওজন ২১৫ গ্রাম।[২] পেটে ফুটফুটে সাদা দাগ দেখা যায়। লেজতল-ঢাকনি দারুচিনি বর্ণের। দেহতল পুরোপুরি হলদে-সবুজ বা টিয়া বর্ণের। চোখ লাল। ঠোঁটের উপরি অংশের সামনের সবুজে অর্ধ-ভাগসহ ঠোঁট নিকেল-নীল। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় লাল। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির দৈহিক গঠনে অল্পবিস্তর পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ হরিয়ালের ঘাড়ের পেছনে গলাবন্ধ থাকে। গলাবন্ধের রঙ ধূসরাভ-জলপাই ও সবুজে মেশানো। বুকে ফিকে কমলার ছাপ রয়েছে। কাঁধ-ঢাকনির উপরিভাগ ও লেজের লম্বা কেন্দ্রীয় পালকে ধূসরাভ আভা থাকে। স্ত্রী হরিয়াল অনুজ্জ্বল। বুকে কমলার ছাপ নেই। লেজ খাটো ও গলাবন্ধ থাকেনা।[২]
স্বভাব
[সম্পাদনা]ল্যাঞ্জা হরিয়াল উঁচু গাছ রয়েছে এমন চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। দলবদ্ধ পাখি, সচরাচর ১০-৩০টির ঝাঁকে দেখা যায়। ভোরে দেহের পালক ফুলিয়ে প্রায়ই পাতাহীন গাছের মগডালে বসে এরা রোদ পোহায়। বনের উঁচু ফলদ গাছের মগডালে এরা খাবার খায়। খাদ্যতালিকায় রয়েছে কেবল ফল: বিশেষ করে বট, পাকুড়, ডুমুর ও অন্যান্য রসালো ফল। কেবল পানি পানের জন্য মাটিতে নামে। প্রজনন ঋতুতে এরা ডাকাডাকি শুরু করে। সুরেলা কণ্ঠে গান করে: কো-ক্লা-অই-অই-অইলি-ইলিও-ক্লা.....।[২]
প্রজনন
[সম্পাদনা]এপ্রিল থেকে জুন মাস ল্যাঞ্জা হরিয়ালের প্রধান প্রজনন মৌসুম। কাঠি, মূল, পাতা ও শ্যাওলা দিয়ে বাসা করে। পত্রবহুল বনজ গাছ, ঝোপ বা বাঁশঝাড়ে ছোট করে বাসা বানায়। বাসা বানানো হলে ২টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা রঙের। ডিমের মাপ ৩.১ × ২.৩ সেন্টিমিটার।[২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ৩৬৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ১৪১।
- ↑ Treron apicauda ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে, BirdLife International এ ল্যাঞ্জা হরিয়াল বিষয়ক পাতা।
- ↑ ক খ Treron apicauda[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], The IUCN Red List of Threatened Species এ ল্যাঞ্জা হরিয়াল বিষয়ক পাতা।
- ↑ Pin-tailed Green-pigeon (Treron apicauda), The Internet Bird Collection এ ল্যাঞ্জা হরিয়াল বিষয়ক পাতা।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
- ল্যাঞ্জা হরিয়ালের আরও আলোকচিত্র ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে, Oriental Bird Images.

- আইইউসিএন লাল তালিকার ন্যূনতম উদ্বেগজনক প্রজাতি
- এশিয়ার পাখি
- বাংলাদেশের পাখি
- ভারতের পাখি
- নেপালের পাখি
- ভুটানের পাখি
- মিয়ানমারের পাখি
- থাইল্যান্ডের পাখি
- কম্বোডিয়ার পাখি
- লাওসের পাখি
- ভিয়েতনামের পাখি
- চীনের পাখি
- ট্রেরন
- ১৮৪৬-এ বর্ণিত পাখি
- অ্যাডওয়ার্ড ব্লাইদ কর্তৃক নামকরণকৃত ট্যাক্সা
- উত্তর ভারতের পাখি
- পূর্ব হিমালয়ের পাখি