লতিকা ঘোষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লতিকা ঘোষ
উপবেশনে লতিকা ঘোষ পিতার সঙ্গে, দন্ডায়মান দিদি মৃণালিনী
জন্ম(১৯০২-০৯-১২)১২ সেপ্টেম্বর ১৯০২
মৃত্যু১১ ডিসেম্বর ১৯৮৭(1987-12-11) (বয়স ৮৫)
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয় ভারত
পেশাঅধ্যাপনা
পরিচিতির কারণমহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ
পিতা-মাতামনোমোহন ঘোষ (পিতা)
মালতী ঘোষ (মাতা)

লতিকা ঘোষ (১২ সেপ্টেম্বর ১৯০২ - ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৭) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব। বিশ শতকে প্রথমার্ধে রাজনৈতিক আঙিনায় ও সমাজে ভারতে নারী জাগরণে তথা নারী আন্দোলনে যারা বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়ে মহিলাদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। [১] সুভাষচন্দ্র বসুর অনুপ্রেরণায় গঠিত রাষ্টীয় মহিলা সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। [২][৩]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

লতিকা ঘোষের জন্ম ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরে। পিতা কবি মনোমোহন ঘোষ ও মাতা মালতী ঘোষ (বন্দ্যোপাধ্যায়) । শ্রীঅরবিন্দ ও বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ছিলেন তার পিতৃব্য। লতিকা কলকাতার লরেটো হাউসে শিক্ষা শেষ করে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে যান। অক্সফোর্ড থেকে বি.লিট রিসার্চ ডিগ্রি এবং ট্রেনিং ডিপ্লোমা অর্জনের পর দেশে ফেরেন ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

দেশে ফিরে লতিকা জাতীয়তাবাদী মতবাদ ও কাজকর্মে লিপ্ত থাকার কারণে সরকারি বেথুন কলেজে কাজ পাননি। শেষে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের অনুরোধে চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে যোগ দেন। সেখানে যে সমস্ত দুঃস্থ বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলারা জুনিয়র নার্সিং ও ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষণ নিতেন, দু-বছরের প্রশিক্ষণকালে লতিকা তাদের রিপোর্ট লেখাসহ অন্যান্য কাজ শেখাতেন। এছাড়াও চিকিৎসক-প্রশিক্ষকদের বক্তৃতার ব্যবস্থাপনা ও সংগঠনের ভার লতিকার উপর ন্যস্ত ছিল। তারই উদ্যোগে কলকাতার নানাস্থানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। সেখানে বক্তৃতা ছাড়াও ম্যাজিক ল্যান্টার্ন দেখানো হত। এই সমস্ত কাজের মাধ্যমে লতিকা মহিলাদের রাজনৈতিক চেতনা জাগাতে, দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করতেন। উদ্দেশ্য ছিল, মহিলারাও স্বাধীনতা আন্দোলনে, অসহযোগ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করুক — সমাজে নিজেদের স্থান অর্জন করে নিক। কংগ্রেসের আহ্বানে সাইমন কমিশন বয়কট করার উদ্দেশ্যে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ওয়েলিংটন স্কোয়ারে আয়োজিত সভায় লতিকা তার সংস্থার বহু মহিলাকে উপস্থিত করান এবং একসঙ্গে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করার শপথ গ্রহণ করেন। সুভাষচন্দ্র বসু লতিকার এই প্রচেষ্টায় মুগ্ধ হন [৩] এবং গ্রামে গ্রামে ঘুরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ গড়ার পরামর্শ দেন। নেতাজীর মাতা প্রভাবতী দেবীর সভাপতিত্বে তিনি গড়ে তোলেন সে সংগঠন এবং তিনি নিজে সম্পাদিকা হন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দেই কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে নিখিল ভারত কংগ্রেসের অধিবেশনে মহিলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কর্নেল হিসাবে ভারপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি। এই অধিবেশনের উদ্বোধনের দিন ভারতবর্ষে প্রথম প্রকাশ্য রাস্তায় তিন শত মহিলা লাল পাড়ের সবুজ শাড়ি ও সাদা ব্লাউজ পরিহিত হয়ে পুরুষের সঙ্গে সামরিক কায়দায় মার্চে অংশ নেন।[২][৪] "কর্নেল" লতিকার নেতৃত্বে কংগ্রেসের বিশাল প্রদর্শনীমণ্ডপে মহিলা বেষ্টনিতে প্রথম মহিলাদের রান্নায় তৈরি চা ও খাবার বিক্রি হয়। অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করেই সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হয়েছিল তাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই যে, সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষক বেণীমাধব দাসের কন্যা বীণা দাস যিনি তৎকালীন বাংলার গভর্নরকে হত্যা করার প্রচেষ্টা করেও ব্যর্থ হন,ছিলেন তার অন্যতম সহযোগী সদস্য।[৩] নিখিল বঙ্গ যুব সংঘের একজন সক্রিয় সদস্যা হয়ছিলেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের ও পরে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্যা হন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের পর অবশ্য লতিকা রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে সরে আসেন এবং অধ্যাপনার কাজে ব্রতী হন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ হতে তিন বৎসর তিনি মোরদাবাদের মহিলা কলেজের অধ্যক্ষা ছিলেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বেথুন কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজের মহিলা বিভাগের অধ্যাপিকা এবং ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে দমদম সরোজিনী নাইডু কলেজের অধ্যক্ষাপদে যোগ দিয়ে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন। [১] লতিকা ঘোষ গুরুসদয় দত্ত প্রতিষ্ঠিত সরোজ নলিনী দত্ত স্মৃতি সমিতি-র একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। [৩]

লতিকা লন্ডনে অবস্থানকালে পিতার রচিত ইংরাজী কাব্যগ্রন্থ সঙস অফ লভ অ্যান্ড ডেথ পিতার বন্ধু ইংরেজ কবি লরেন্স বিনওনের সহযোগিতায় সম্পাদনা করেন এবং গ্রন্থটি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

ব্যক্তিগত জীবন ও জীবনাবসান[সম্পাদনা]

লতিকা ঘোষের বিবাহ ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস নেতা ও সুভাষচন্দ্র বসুর এক মিত্র ড.সুবোধচন্দ্র বোসের সঙ্গে হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। লতিকা ঘোষ ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রয়াত হন। [৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা ৩৬০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "Larika Ghosh" (ইংরেজী ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৬ 
  3. "StreeShakti" (ইংরাজী ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৬ 
  4. "আইন অমান্য আন্দোলনে ভারতের নারী সমাজ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৭ 
  5. "First Lady Colonel of India - Latika Ghosh" (হিন্দি ভাষায়)।