রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
জন্ম(১৯৪৭-১২-১০)১০ ডিসেম্বর ১৯৪৭
মৃত্যু২ অক্টোবর ২০২২(2022-10-02) (বয়স ৭৪)
CNCI হাসপাতাল, নিউটাউন, কলকাতা
মৃত্যুর কারণফুসফুসের ক্যান্সার
যুগসমসাময়িক দর্শন
ধারা
প্রধান আগ্রহ
উল্লেখযোগ্য অবদান
প্রাচীন ভারতে চার্বাক এবং প্রাক-চার্বাক বস্তুবাদ

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য (জন্মঃ ১০ই ডিসেম্বর ১৯৪৭ মৃত্যুঃ ২রা অক্টোবর ২০২২) ছিলেন পুরোনো ঘরানার একজন ভারতীয় মার্কসবাদী-লেনিনবাদী। তিনি সান্ধ্য-ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে রিডার হিসেবে কলকাতার ব্রাহ্ম-সমাজী আনন্দমোহন কলেজে অধ্যাপনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এমিরিটাস ফেলো থাকার পাশাপাশি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ফিলজফিক্যাল রিসার্চের ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।[১]

জন্ম ও শৈশব[সম্পাদনা]

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালের ১০ ডিসেম্বর, কলকাতার শ্যামবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামাতার তিনিই ছিলেন একমাত্র সন্তান। যুবক বয়স থেকেই তার যুক্তি-চর্চা, তর্ক-বিতর্কের প্রতি আকর্ষণ ছিল।

জীবনী[সম্পাদনা]

শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

১৯৬৩ সালে কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজিয়েট স্কুল থেকে সেকেন্ডারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ও স্নাতকোত্তর করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে।

ছাত্র রাজনীতি[সম্পাদনা]

ছাত্রাবস্থায় তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন, সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য ছিলেন তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন, বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশন (বিপিএসএফ) এর রাজ্য-সম্পাদকও হন। ১৯৬৪/৬৫ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কলকাতার ছাত্র আন্দোলনে রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে শুধু পশ্চিমা দেশগুলির বিরুদ্ধেই নয়, ১৯৬৮ সালে সোভিয়েত ঐক্যতন্ত্রের নেতৃত্বে ওয়ারশ চুক্তির পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি যখন চেকোস্লোভাকিয়াকে আক্রমণ করে তখন তিনি সেটা মেনে নিতে পারেননা ও এর জেরে প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। সাতের দশকে তাকে গ্রেফতার করা হয় রাজনৈতিক কারণে, একমাস কারাবাসের পর তিনি ছাড়া পান।

রাজনীতি থেকে সরে আসা[সম্পাদনা]

কেরালায় যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতনের পর ১৯৭০ কেরালা বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও সিপিআই জোট বাঁধার ফলস্বরূপ সিপিআইয়ের সঙ্গে সবরকম সম্পর্ক ত্যাগ করেন তিনি। অবশ্য, নির্বাচনী রাজনীতি থেকে সরে এলেও মার্ক্সবাদের প্রতি তিনি তার আস্থা অব্যাহত রাখেন।[২] এছাড়াও, বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ও বিভিন্ন সমাজ-রাজনৈতিক সংগঠন আয়োজিত আলোচনাসভায় বক্তা হয়ে অংশগ্রহণ করা চালিয়ে যান তিনি।[৩]

পেশাগত জীবন[সম্পাদনা]

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে রিডার হিসেবে আনন্দমোহন কলেজে অধ্যাপনায় নিযুক্ত ছিলেন। ২০০৭ সালে অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন ও পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস অ্যান্ড কমার্স কলেজের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন বিভাগে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কর্তব্যরত থাকেন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দিল্লির ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ফিলোজফিক্যাল রিসার্চ এর ভিজিটিং প্রফেসর এবং ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের 'এমেরিটাস ফেলো' হিসেবে দায়িত্বভারও সামলেছেন।

লেখালেখি জীবন[সম্পাদনা]

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ছাত্রাবস্থায় সমাজ-রাজনৈতিক বিষয়ে লেখালিখি আরম্ভ করেন এবং তার রচনাশৈলী দ্রুত পাঠকদের মাঝে সমাদর লাভ করে। তার সাম্রাজ্যবাদ, বৈষম্য, বিভাজনের প্রতি ঘৃণা ছিল। তার একটি উক্তি হলো "অন্ধকার বলে কোথাও কিছু নেই, যা আছে তা কেবলই আলোর অভাব, পারলে একটা প্রদীপ জ্বেলো‌।"[৪] ২০০৯ সালে রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘স্টাডিজ অন দি চার্বাক/লোকায়ত’ এবং ২০২০ সালে 'মোর স্টাডিজ অন দি চার্বাক/লোকায়ত' প্রকাশিত হয় কেমব্রিজ স্কলার প্রেস থেকে। 'কমিউনিজম কী' নামক গ্রন্থটি তার শেষ গ্রন্থ।

পত্রিকায় লেখালেখি[সম্পাদনা]

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য যখন কলকাতার পাভলভ ইনস্টিটিউট এর সমাজবিজ্ঞান, দর্শন ও মনোবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণাধর্মী পত্রিকা 'মানবমন' এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তখন 'পরিচয়', 'অনুষ্টুপ', 'চতুরঙ্গ'-সহ নানা বাংলা এবং ইংরেজি পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন। তার জীবদ্দশায় বৃহৎ বাণিজ্যিক পত্রিকায় লেখার অনুরোধ এলেও তা ফিরিয়ে দিয়ে লিটল ম্যাগাজিনেই মূলত তিনি লেখালেখি করতেন।[৫]

ছোটদের জন্য লেখালেখি[সম্পাদনা]

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ছোটদের জন্য ‘অংশু মিত্র’ ছদ্মনামে লিখতেন। তিনি মোল্লা নাসিরুদ্দিন জিন্দাবাদ গল্পটি লিখেছিলেন।[৬]

নির্বাচিত রচনাবলী[সম্পাদনা]

  • ন্যাশনাল বুক এজেন্সির প্রকাশনায় ‘চার্বাক চর্চা’
  • ব্রাহ্মণ-রোমান ক্যাথলিক বিসংবাদ
  • ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত: ইতিহাসবোধ ও রাষ্ট্রচিন্তা
  • বের্টল্ট ব্রেশ্ট: প্রয়োগের নন্দনতত্ত্ব
  • দর্শন পড়ার ভূমিকা
  • বাঙলা ভাষার ভূত-ভবিষ্যৎ
  • বাঙালির নতুন আত্মপরিচয়: সমাজসংস্কার থেকে স্বাধীনতা
  • ওরে বর্ণচোরা ঠাকুর এল ইত্যাদি বিতর্ক
  • কামারের এক ঘা
  • ক্লাসিক কেন চিরায়ত
  • মননের মূর্তি
  • বিদ্যাসাগর: নানা প্রসঙ্গ
  • পরশুরাম গল্পকার
  • পরশুরামের চরিত্রশালা
  • পরশুরাম বিবিধ
  • রবীন্দ্রনাথের তিন সঙ্গী
  • বিভূতিভূষণ ও কথাসাহিত্যে বাস্তববাদ
  • বস্তুবাদ জিজ্ঞাসা
  • ন্যারেটলজি: ছোটোগল্প: ছোটোদের গল্প
  • ভারতবিদ্যা ও মার্কসবাদ
  • মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব
  • প্রবন্ধসংগ্রহ
  • Grounds for Hope
  • Studies on the Carvaka/Lokayata

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Ramkrishna Bhattachrya: A Memoir"CPI(M)। ২ অক্টোবর ২০২২। 
  2. "Ramkrishna Bhattacharya: a Memoir | রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য: মার্কসবাদের অতন্দ্র সেপাই | মার্কসবাদী পথ | MarxbadiPath.org"marxbadipath.org। ১৮ অক্টোবর ২০২২। 
  3. "'অন্ধকার বলে কিছু নেই, আছে আলোর অভাব', বলতেন আজীবন মার্কসবাদী রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য"inscript.me। ৮ অক্টোবর ২০২২। 
  4. "'অন্ধকার বলে কিছু নেই, আছে আলোর অভাব', বলতেন আজীবন মার্কসবাদী রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য"inscript.me। ৮ অক্টোবর ২০২২। 
  5. "Ramkrishna Bhattacharya: a Memoir | রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য: মার্কসবাদের অতন্দ্র সেপাই | মার্কসবাদী পথ | MarxbadiPath.org"marxbadipath.org। ১৮ অক্টোবর ২০২২। 
  6. "'অন্ধকার বলে কিছু নেই, আছে আলোর অভাব', বলতেন আজীবন মার্কসবাদী রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য"inscript.me। ৮ অক্টোবর ২০২২।