রাজা টংকনাথ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাজা টংকনাথ চৌধুরী
পূর্বসূরিবুদ্ধিনাথ চৌধুরী
জন্ম১৮৯০ (আনুমানিক)
ঠাকুরগাঁও জেলা রাণীশংকৈল উপজেলা
মৃত্যু১৯৪৮
কলকাতা, ভারত
দাম্পত্য সঙ্গীজয়রামা শংকরী দেবী
পিতাবুদ্ধিনাথ চৌধুরী
ধর্মহিন্দু

রাজা টংকনাথ চৌধুরী (১৮৯০-১৯৪৮) ইংরেজ শাসনামলে বর্তমান বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় অবস্থিত মালদুয়ার পরগণার একজন জমিদার ছিলেন।[১] তার পিতা বুদ্ধিনাথ চৌধুরী । বহুমাত্রিক জনকল্যাণ ও জনসেবামূলক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি চৌধুরীরাজা উপাধিতে ভূষিত হন।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

বুদ্ধিনাথের তিন ছেলে রামনাথ, টংকনাথ ও গৌরাঙ্গনাথ। এরমধ্যে রামনাথের অকাল মৃত্যু হয়, গৌরাঙ্গনাথ ছিলেন হাবা-গোবা আর টংকনাথ ছিলেন চতুর।বুদ্ধিনাথের মৃত্যু হলে টংকনাথ জমিদারির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। টংকনাথের স্ত্রী নাম জয়রামা শংকরী দেবী। তাদের তিন ছেলে কর্মনাথ চৌধুরী, রুদ্রনাথ চৌধুরী এবং শেষনাথ চৌধুরী।

জমিদারী[সম্পাদনা]

রাজা টংকনাথ চৌধুরীর পূর্ব-পুরুষদের কেউ জমিদার ছিলেন না। বর্তমানে রাণীশংকৈল উপজেলা সদর হতে ৭ কিমি পূর্বে কাতিহার নামক জায়গায় গোয়ালা বংশীয় নিঃসন্তান এক জমিদার বাস করতেন। উক্ত জমিদারের মন্দিরে সেবায়েত হিসাবে কাজ করতেন টংকনাথের পিতা বুদ্ধিনাথ। গোয়ালা জমিদার ভারত এর কাশি যাওয়ার সময় তাম্রপাতে দলিল করে যান যে, তিনি ফিরে না এলে মন্দিরের সেবায়েত বুদ্ধিনাথ জমিদারির মালিক হবেন। গোয়ালা জমিদার ফিরে না আসায় বুদ্ধিনাথ জমিদারির মালিক হন। জমিদার বুদ্ধিনাথের মৃত্যুর পর টংকনাথ জমিদারির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের আস্থা অর্জন করার জন্য মালদুয়ার স্টেট গঠন করেন।

রাজা টংকনাথ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম ছিল জয়রামা শংকরী দেবীরানীশংকরী দেবীর নামানুসারে মালদুয়ার স্টেট হয়ে যায় রানীশংকৈল

চৌধুরী ও রাজা উপাধি লাভ[সম্পাদনা]

রাজা টংকনাথ চৌধুরী খুব বড় মাপের জমিদার না হলেও তার আভিজাত্যের কমতি ছিল না। ১৯২৫ সালের ১৮ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর হাউসে টংকনাথ চৌধুরীকে ব্রিটিশ সরকার চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত করেন। কথিত আছে, টংকনাথের আমন্ত্রণে তৎকালীন বড়লাট এবং দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজনাথ রায় রাণীশংকৈলে এলে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে টাকা নোট পুড়িয়ে রীতিমতো রাজকীয় অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন করান এবং পর্যাপ্ত স্বর্ণালংকার উপহার দেন। এর ফলে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে চৌধুরী উপাধি এবং দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজনাথ রায়ের কাছ থেকে রাজা উপাধি পান।

অবদান[সম্পাদনা]

রাজা টংকনাথ ১৯১১ সালে তৎকালীন বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন, যিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজে থেকে বি,এ পাশ করেন। তিনি দীর্ঘদিন বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। টানা ১৫ বছর তিনি জেলা বোর্ডের সদস্য ছিলেন ও প্রথম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া তিনি নিজ খরচে দুইটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করতেন। ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দিতেন। রাজা টংকনাথ একটি ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০ ছাত্রের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাসহ স্কুলের উন্নয়নের সার্বিক দায়ভার গ্রহণ করেন। তার পিতা বুদ্ধিনাথ চৌধুরীর নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন B.N INSTITUTE (ইংলিশ মিডিয়াম) বর্তমানে যা রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিত। তিনি শিক্ষানুরাগী হিসেবে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই স্থাপন করেননি, তার লাইব্রেরীও ছিল বিভিন্ন বইয়ে সমৃদ্ধ। তার সংগৃহীত বিভিন্ন বই এখনও দিনাজপুর সরকারী কলেজ,কারমাইকেল কলেজ লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে ।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের শাসন থেকে মুক্ত হলে রাজা টংকনাথ চৌধুরী ১৭ আগস্ট স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। তবে কথিত আছে রাজা মৌমাছির আক্রমণের শিকার হয়ে অসুস্থ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান এবং ১৯৪৮ সালে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রায়, অজয় কুমার (আগস্ট ২০১৮)। "রাজনৈতিক ও গুণী ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি"। ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস (২ সংস্করণ)। ঢাকা: টাঙ্গন প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ৯১। আইএসবিএন 978-9843446497