রউফা হাসান আল-শারকি
রউফা হাসান আল-শারকি | |
---|---|
জন্ম | আমাতালরাউফ আল-শারকি ১৯৫৮ |
মৃত্যু | ১৭ এপ্রিল ২০১১ কায়রো |
নাগরিকত্ব | ইয়েমেনী |
মাতৃশিক্ষায়তন | প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | মানবাধিকার এবং মহিলাদের নাগরিক অধিকার সক্রিয়তা |
আমাতালরাউফ "রউফা হাসান" আল-শারকি (১৯৫৮-এপ্রিল ২৭, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, নারীবাদী কর্মী[১] ও ইয়েমেনের মানবাধিকার কর্মী । তিনি ম্যাচ মিডিয়ার অধ্যাপক এবং সানা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন।[২] আল-শারকি ইয়েমেনের প্রথম মহিলা সাংবাদিক ছিলেন[৩] এবং বহু বছর ধরে নিয়মিত সংবাদপত্রের কলাম লিখেছেন।
জীবনী
[সম্পাদনা]আল-শার্কির জন্ম ও বেড়ে ওঠা সানায়।[৪] আল-শার্কি বারো বছর বয়স থেকে বিভিন্ন কাজে জড়িত হন। তিনি সাত বন্ধু মিলে পায়ে হেঁটে ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল-কুরশুমির বাড়িতে যান।[৫] তার কাছে ইয়েমেনের ছেলেদের স্কুলে দেওয়া বইয়ের মতো একই মানের বই তাদের স্কুলগুলিতে দেয়ার অনুরোধ করেন। মন্ত্রী আল-শার্কির উদ্যোগে মুগ্ধ হয়ে ছেলেদের সাথে তাদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয় এবং ইয়েমেনে প্রথমবারের মতো সহশিক্ষা চালু।[৫] আল-শার্কি বারো বছর বয়সে রেডিওতে কাজ শুরু করেন এবং এই সময় তার নাম আমাতালরাউফ পরিবর্তন করে ছদ্মনাম রওফা হাসান রাখেন।[৪] তিনি এটি এ কারণে করেছিলেন যে রেডিওর কাজে তার মায়ের সমর্থন থাকলেও তার বাবার সমর্থন ছিল না। তার বাবা বিষয়টি বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হন এবং তার রেডিও অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতে বলেন।[৪] উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন, তিনি ইয়েমেনি মহিলা সমিতির সাথে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে ধর্মীয় রক্ষণশীলরা [৪] এ মহিলা সমিতিকে মৌলিক সাক্ষরতা, নৈপুণ্য প্রশিক্ষণ এবং রেডিও সম্প্রচার প্রশিক্ষণ প্রদান করে।[৬] আল-শারকি ১৯৭৫ সালে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং সেখান থেকে স্নাতক পাশ করেন[৪] তিনি নিকাব না পরে স্কুলে যাতায়াত করতেন।[৪] [৭] আল-শার্কি ১৯৭৯ সালে পুনরায় সানায় ইয়েমেনি মহিলা সমিতির কাজ চালু করেন।[৬] ১৯৮৪ সালে আল-শারকি ইয়েমেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। পরবর্তীতে, ১৯৯১ সালে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[৫] ১৯৯৩ সালে তিনি প্রথমে গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে হেরে যান।[৪] আল-শারকি ১৯৯৬ সালে সানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমপিরিয়াল রিসার্চ অ্যান্ড উইমেন্স স্টাডি সেন্টার (ইআরডব্লিউএস) প্রতিষ্ঠা করেন।[১] ১৯৯৭ সালে বিভিন্ন মিডিয়া আউটলেটে তরুণীদের শিক্ষিত করার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেন।[৮] ২০০০ সালে রক্ষণশীল ইসলামপন্থীরা এর সমালোচনা করে এবং ইয়েমেন সরকারকে কেন্দ্রটি বন্ধ করতে বাধ্য করে। আল-শার্কি ইয়েমেন ছেড়ে নেদারল্যান্ডসের উদ্দেশ্যে চলে যান।[৯] এ সময় তার বিরুদ্ধে এক ফতোয়া জারি করা হয়েছিল,[১০] তাকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং তার টেলিফোন কলগুলি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।[১১] তিনি ২০০৪ সালে ইয়েমেনে ফিরে আসেন। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত “সাংস্কৃতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ফাউন্ডেশন” (সিডিপিএফ) এ সাংস্কৃতিক প্রকল্পগুলিতে কাজ চালিয়ে যান। এ প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল : (১) "মহিলাদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়া শেখতে" সাহায্য করা ( তিনি এ কাজে ইয়েমেনের ইসলাহ পার্টির সমর্থন পেয়েছিলেন)।[১] (২) নারী ভোটার নিবন্ধন করতে সাহায্য করা; (৩) মহিলাদের অফিসে কাজ করার প্রশিক্ষণ দিতে সাহায্য করা।[১২] তার এ সংস্থা "হাজার হাজার নারীকে ভোট দিতে" সাহায্য করেছিল।[১৩] তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং নারীর অধিকারের প্রয়োজনীয়তার জন্য সরকারের কাছে তদবির করেছিলেন।[১৪] ইয়েমেনের পার্লামেন্টে নারীদের জন্য কোটা দাবি করেছিলেন। তিনি নারীদের নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য খুব সোচ্চার ছিলেন।[১৫] তিনি বিশ্বাস করতেন, ইয়েমেনে নারীদের মর্যাদা কেবল ইয়েমেনী নারীর আন্দোলনের মাধ্যমেই আদায় হবে।[৮] আল-শার্কির মতে, পুরুষতান্ত্রিক উপজাতীয় ব্যবস্থায় পুরুষরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয় যা নারীর জন্য অকল্যানকর।[১৬] তার ড্রেস কোড প্রকল্প ইয়েমেনের রাজনৈতিক নেতারা গ্রহণ করেছিল। পোশাকের পাশাপাশি, তিনি ২০০৫ সালে “রাষ্ট্রীয় পোশাক এবং পরিচয় কোড প্রদর্শনের জন্য ১৯৪৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পতাকা ও স্টাম্প সংগ্রহ করেছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি ওয়েইসবার্গ এর বেলোইট কলেজে একজন ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে চেয়ারম্যান হন।[১৭]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালে কায়রোর একটি হাসপাতালে মারা যান ।[৩] আল-শারকির কাজে ইয়েমেনে নারী ও পুরুষদের অনুপ্রাণিত করে। সানায় তার বোন তাইসির আল-শারকি, তার স্মৃতির সম্মানে রওফা হাসান গ্যালারি খুলেছিলেন।[৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ Pulsipher, Lydia Mihelic; Pulsipher, Alex (২০০৯)। World Regional Geography Concepts। W. H. Freeman and Company। পৃষ্ঠা 230–231। আইএসবিএন 9781429223423।
- ↑ Wyatt, Susan Clough (২০০৯)। Arabian Nights and Daze: Living in Yemen with the Foreign Service। New Academia Publishing। পৃষ্ঠা 226। আইএসবিএন 9780982806128।
- ↑ ক খ গ Adams, Gaar (৯ এপ্রিল ২০১৩)। "Safe Space for Art Strikes a Chord in Yemen"। Al Jazeera। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ McCann, Michelle Roehm; Weldon, Amelie (২০১২)। "Amatalrauf al-Sharki (Raufa Hassan)" (পিডিএফ)। Girls Who Rocked the World: Heroines From Joan of Arc to Mother Teresa। Aladdin / Beyond Words। পৃষ্ঠা 207–211। আইএসবিএন 9781582703619। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ ক খ গ Al-Alaya, Zaid (৩০ এপ্রিল ২০১১)। "Raufa Hassan, Precious Philanthropist Dies at 53"। The Yemen Observer। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫। Alt URL[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ Nasser, Afrah (১০ ডিসেম্বর ২০১২)। "A Bleak Future for Yemen's Female Leaders"। Al-Akbar। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "Take Off Your Veil to Rock the World"। Muslimah Media Watch। Patheos। ৩০ অক্টোবর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ ক খ Metres, Katherine (১৯৯৭)। "Despite Illustrious Past, Yemeni Women Suffer Discrimination"। Washington Report on Middle East Affairs। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "Gender trouble at 'immoral' centre"। Times Higher Education। ১৬ জুন ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ Foster, Stephenie (৫ মে ২০১১)। "Remembering Raufa Hassan"। Foreign Policy Association। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ Nejib al-Ashtal, Amel (২০১২)। "A Long, Quiet, and Steady Struggle: The Women's Movement in Yemen"। Mapping Arab Women's Movements: A Century of Transformations from Within। American University in Cairo Press। আইএসবিএন 9781617973536।
- ↑ "2005–2006 – Raufa Hassan al-Sharki"। Beliot College। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "In Remembrance: Dr. Raufa Hassan—Activist, Professor, Journalist"। The Yemen Peace Project। ২৭ এপ্রিল ২০১১। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ Al-Mohattwari, Asma (৮ মার্চ ২০১৪)। "Death Stole Them But Their Work Immortalized Them"। National Yemen। ৩০ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ Heymach, Klaus; Sporrer, Susanne (২০০৬)। "The First Real Election Campaign"। Qantara। Translated from German by Michael Lawton। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "Raufa Hassan – Democracy in Yemen"। Cross Culture Film (video)। YouTube। ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "Raufa Hassan Al-Sharki, 2005–06 Wessberg Chair"। Beloit College। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।