যক্ষগান

যক্ষগান একটি ঐতিহ্যগত ভারতীয় থিয়েটার অভিনয় বা মঞ্চাভিনয় যা কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ কন্নড় , উড়পি, উত্তর কন্নড় , শিবমোগ্গা ও চিকমাগালুর জেলার পশ্চিমাংশ এবং কেরল রাজ্যের কাসারগড় জেলায় উদ্ভূত ও বিকশিত হয়েছে। এটি মূলত নাচ, গান, সংলাপ, পরিচ্ছদ, মেকআপ এবং অনন্য শৈলী ও বিন্যাসের সঙ্গে মঞ্চকৌশলের একটি অভূতপূর্ব সন্নিবেশন। ভক্তি আন্দোলনের সময়কালে এটি প্রাক-শাস্ত্রীয় সংগীত এবং থিয়েটার থেকে বিকশিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।[১] এটিকে কখনও কখনও কেবল "আট" বা āṭa (অর্থ "নাটক") বলে ডাকা হয়।[২] এই থিয়েটার শৈলীটি মূলত কর্ণাটকের উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। দক্ষিণ কন্নড় থেকে দক্ষিণে তুলুনাড়ু অঞ্চলের কাসারগড় পর্যন্ত যক্ষগানের রূপটিকে 'থেঙ্কু থিট্টু' এবং উড়ুপি থেকে উত্তর দিকে উত্তর কন্নড় পর্যন্ত একে 'বাডাগা থিট্টু' বলা হয়। এই উভয় রূপই উল্লেখিত অঞ্চলজুড়ে সমানভাবে পরিবেশিত হয়। প্রথাগতভাবে যক্ষগান সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত উপস্থাপিত হয়। এর গল্পগুলো রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত এবং হিন্দু , জৈন ও অন্যান্য প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের উভয় মহাকাব্য থেকে তৈরি হয়েছে। [৩] [৪]
ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]কন্নড় ভাষায় যক্ষগান হলো পূর্বেকার কেলিক, আট, বয়লাট এবং দশাবতার নামে পরিচিত শিল্পকর্মগুলোর জন্য ব্যবহৃত (গত ২০০ বছর ধরে ব্যবহৃত) একটি সাধারণ প্রমিত নাম। তবে তার পূর্বে (ষোড়শ শতাব্দী থেকে শুরু করে) যক্ষগণ শব্দটি মূলত সাহিত্যের একটি রূপকে বুঝাত। তুলুতে এমনকি ইদানীং তেলুগুতেও যক্ষগানের রেশ রয়েছে। এই যক্ষগান সাহিত্যের অভিনয় বা নাটককে আট বলা হয়। এখন আর বিশ্বাস করা হয় না যে এককালগান শব্দটি যক্ষগনকে বোঝায়।
বিবর্তন
[সম্পাদনা]ঊনবিংশ শতাব্দীতে যক্ষগান কঠোর ঐতিহ্যবাহী রূপগুলো থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেছিল। তৎকালীন যক্ষগান অনুশীলনকারীরা বেশ কয়েকটি নতুন রচনা তৈরি করেছিলেন। এছাড়াও উপকূলীয় কর্ণাটক জুড়ে প্রচুর সংখ্যক দল বেঁধে উঠেছে।
শিল্পী
[সম্পাদনা]কয়েক শতাব্দী ধরে কয়েক শতাধিক শিল্পী যক্ষগান করেছেন এবং তাদের মধ্যে কিছু শিল্পী তারকা সম্মান অর্জন করেছেন, যেমন সিদ্ধকাট্টে চেন্নাপ্পা শেঠি, চিত্তনী রামচন্দ্র হেগডে, নারানপা উপ্পুর, বালিপা নারায়ণ ভাগবত এবং কলিঙ্গ নবদা ।
প্রশিক্ষণ ও গবেষণা
[সম্পাদনা]যেহেতু বেশিরভাগ দল মন্দিরের সাথে সম্পর্কিত, তাই যক্ষগান শিল্পের প্রশিক্ষণ কেবল মন্দির চত্বরে সীমাবদ্ধ। উড়পিতে এমজিএম কলেজে অবস্থিত গোবিন্দ পাই গবেষণা ইনস্টিটিউটে যক্ষণ কলাকেন্দ্র তে তরুণদের প্রাচীন নাচ আকারে যক্ষগানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ইনস্টিটিউটটি ভাষা, আচার এবং নৃত্যশিল্পের বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা ও কাজ করে। [৫]
ভারতের বাইরে
[সম্পাদনা]
যক্ষগান ভারতের বাইরে নতুন জনপ্রিয়তা খুঁজে পাচ্ছ। আমেরিকান ক্যালিফোর্নিয়া এবং কানাডার অন্টারিওতে শৌখিন যক্ষদল প্রকাশ পেয়েছে। কানাডার যক্ষমিত্র, যক্ষগান কলাবৃন্দ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যক্ষরঙ্গ, যক্ষলোক বোস্টন হলো আন্তর্জাতিক দলের কয়েকটি উদাহরণ।
কানাডার টরন্টোতে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত যক্ষমিত্র ভারতের বাইরে প্রথম পূর্ণ উপন্যস্ত যক্ষগণ মেলা। তাদের অভিনয়ের জন্য স্থানীয় লাইভ মিউজিক হিমমেলা ব্যবহার করা এটিই প্রথম।
মেলা বা দল
[সম্পাদনা]যক্ষগানের প্রায় ৩০টি পরিপূর্ণ পেশাদার দল এবং প্রায় ২০০টি শৌখিন দল রয়েছে। পেশাদার দলগুলো নভেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে প্রায় ১৮০-২০০টি পরিবেশনার আয়োজন করে। এখানে প্রায় এক হাজার পেশাদার শিল্পী এবং আরও অনেক অপেশাদার রয়েছেন। এছাড়াও আর্দ্র মরসুমে অফ সিজন শো, বার্ষিকী অনুষ্ঠান, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা যক্ষগান মঞ্চস্থ করেন। কর্ণাটকে প্রতিবছর ১২০০০টি পরিবেশনা নিয়ে যক্ষগান প্রায় ছয় কোটি টাকার বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে।[৬] [৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Prof. Sridhara Uppura; 1998; Yakshagana and Nataka Diganta; publications.
- ↑ "The changing face of Yakshagana"। Online webpage of The Hindu। Chennai, India: The Hindu। ২১ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭।
- ↑ Ashton, Martha Bush (৩ জানুয়ারি ১৯৭৬)। "Yakshagana"। Abhinav Publications – Google Books এর মাধ্যমে।
- ↑ http://kasargod.nic.in/profile/yakshagana.htm
- ↑ "Archive News"। The Hindu।
- ↑ "Open study-chairs for research on Yakshagana"। Online webpage of The Hindu। Chennai, India: The Hindu। ৯ জুলাই ২০০৭। ১ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭।
- ↑ "Traditional touch in theatre"। The Telegraph। Kolkata। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭।
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- অ্যাশটন, মার্থা বুশ; যক্ষগান ; অভিনব প্রকাশনা প্রকাশিত; ভারত; ১ম সংস্করণ (১৫ জুন ২০০৩);আইএসবিএন ৮১-৭০১৭-০৪৭-৮ এবংআইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭০১৭-০৪৭-১
- রাও, নীলাভরা লক্ষ্মীনারায়ণ ও পাতিল, গোরপাদি ভিট্টলা; যক্ষগান স্ববোধিনী ; প্রকাশ করেছেন: যক্ষগান কেন্দ্র; এমজিএ কলেজ; উড়পি, ভারত; ১ম সংস্করণ।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- যক্ষগান শ্রুতি সফটওয়্যার ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে
- চন্দে মহাভলেশ্বরের বিক্ষোভ। মুদুগডু ।
- সাক্ষাৎকার - যক্ষগানের ইতিহাস ও বিকাশ (অনানুষ্ঠানিক) ।
- যক্ষগান পুতুল ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ আগস্ট ২০০৭ তারিখে
- কেরেমনে মেলা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে