মেহদী হাসান খান
মেহদী হাসান খান | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | বাংলাদেশ | ২৩ জুলাই ১৯৮৬
পেশা | সফটওয়্যার প্রকৌশলী |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | একুশে পদক (২০২৫) |
দাম্পত্যসঙ্গী | সুমাইয়া নাজমুন[১] |
মেহদী হাসান খান (জন্ম ১৯৮৬) একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক ও প্রোগ্রামার।[২] তিনি ২০০৩ সালে ইউনিকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা লেখার বিনামূল্যের ও মুক্ত সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ড তৈরি করেন।[১][৩][৪][৫] অভ্র কিবোর্ড তৈরির জন্য মেহেদী হাসান ২০২৫ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদক পান।[৬] তার সাথে অভ্র টিমের রিফাত নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম ও শাবাব মুস্তাফাও একুশে পদক লাভ করেন।[৭][৮]
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]মেহদী হাসান খান ১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০১ সালে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং ২০০৩ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।[১][২]
কম্পিউটিং
[সম্পাদনা]অভ্র কিবোর্ড তৈরি
[সম্পাদনা]
মেহদী তার প্রথম বাংলা ফন্ট ইউনিবিজয় ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ও ভিজ্যুয়াল বেসিক উপর লেখেন। পরে তিনি অভ্র কিবোর্ড ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়াই লেখেন। অভ্র সম্পূর্ণভাবে ইউনিকোড উপযোগী, যা ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম দ্বারা ২০০৩ সালের ১৪ জুন স্বীকৃত হয়।[২] তিনি তার সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ওমিক্রনল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন। অভ্র কিবোর্ড প্রথম উন্মুক্ত করা হয় ২০০৩ সালে ২৬ মার্চ।[১][৪] ওমিক্রনল্যাব থেকে অভ্র উন্মুক্ত করা হয় ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর।[২] বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে অভ্র ব্যবহার করে।[৯][১০]
বিজয়-অভ্র বিতর্ক
[সম্পাদনা]কম্পিউটারে বাংলা লেখার বাণিজ্যিক আবদ্ধ উৎসের (ক্লোজ সোর্স) সফটওয়্যার বিজয় কিবোর্ড এর স্বত্বাধিকারী এবং ‘আনন্দ কম্পিউটার্স' এর প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা জব্বার ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল দৈনিক জনকণ্ঠের একটি নিবন্ধে অভ্রর দিকে ইঙ্গিত করে দাবী করেন যে- হ্যাকাররা তার ‘বিজয়’ সফটওয়্যারটি চুরি করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি অভ্র কিবোর্ডকে পাইরেটেড সফটওয়্যার হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে ইউএনডিপি হ্যাকারদের সহযোগিতা করেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে ইউএনডিপি-র প্ররোচনাতেই জাতীয় তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র কিবোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। মেহ্দী হাসান খান জানান যে ক্লোজড সোর্স প্রোগ্রাম হ্যাক করা সম্ভব নয় বিধায় বিজয়ের সিস্টেম হ্যাক করা সম্ভব নয়।[১১] অপরদিকে, অভ্র'র পক্ষ থেকে মেহ্দী হাসান খান সকল নালিশ অস্বীকার করেন এবং অভিযোগ করেন যে, মোস্তাফা জব্বার বিভিন্ন পর্যায়ে ও গণমাধ্যমে তাদেরকে চোর বলেন এবং তাদের প্রতিবাদ সেখানে উপেক্ষিত হয়। কম্পিউটারে বাংলা নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য উকিল নোটিশ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে আক্রমণের হুমকি উপেক্ষা করে কাজ করা স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা। তিনি আরো বলেন যে নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বাণিজ্যিক বিজয়-এর পরিবর্তে বিনামূল্যের অভ্র ব্যবহার করাতে প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হওয়ায় মোস্তাফা জব্বার এমন অভিযোগ করেছেন।[১২]
অভ্র ৪.৫.১ সফটওয়্যারের সাথে ইউনিবিজয় নামে একটি কিবোর্ড লেআউট সরবরাহ করা হয়। এই ইউনিবজয় কিবোর্ড লেআউট প্যাটেন্টকৃত বিজয় কিবোর্ড লেআউটের নকল দাবী করে মোস্তাফা জব্বার কপিরাইট অফিসে কপিরাইট আইন ভঙ্গের জন্য মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে কপিরাইট অফিস খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। পরবর্তিতে মেহ্দী হাসান খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে এর সময়সীমা ২৩ মে ২০১০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।[১৩]
১৬ জুন ২০১০ তারিখে ঢাকার আগারগাঁওে অবস্থিত বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অফিসে অনেক তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মেহ্দী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে একটি সমঝোতা হয় এই মর্মে, ২০১০ সালের ২০ আগস্টের মধ্যে, অভ্র কিবোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লেআউট সরিয়ে নেওয়া হবে এবং কপিরাইট অফিস থেকে মেহ্দী হাসান খানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত স্বত্ত্বাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।[১৪] সেই চুক্তি অনুযায়ী, অভ্রর ৪.৫.৩ সংস্করণ থেকে ইউনিবিজয় কিবোর্ড বাদ দেওয়া হয়। তিনি অভ্র কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।[১৫]
পুরস্কার
[সম্পাদনা]- ২০২৫ সালে অভ্র কিবোর্ড তৈরির জন্য তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক পান।[১৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ পল্লব মোহাইমেন (৫ নভেম্বর ২০১৮)। "ইন্টারনেটে বাংলার মুক্ত আকাশ"। প্রথম আলো। ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০২১।
- ↑ ক খ গ ঘ হাম্মাদি, সাদ বিন ফজলে (২০০৪-০৫-১২)। "Exploring the base of Bangla in computers"। দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)। ঢাকা। ২০১৫-০৭-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-১৭।
- ↑ "Mehdi Hasan Khan: 21 Anniversary Supplement"। দ্য ডেইলি স্টার। ২৪ মার্চ ২০১৬। ২৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে আসল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ ক খ চৌধুরী, সৈয়দ তাশফিন (২০০৬-০২-২৫)। "ICT turns more Bangla savvy"। দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)। ঢাকা। ২০১৬-০৩-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-১৭।
- ↑ "জনপ্রিয় বাংলা টাইপ সফটওয়্যার 'অভ্র' আবিষ্কার করেও প্রচারের আড়ালে রয়ে গেলেন এই তরুণ ডাক্তার"। দ্য ওয়াল। ২০২০-০২-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১০।
- ↑ "একুশে পদক পাচ্ছেন অভ্র'র মেহেদী হাসান খান"। ঢাকা পোস্ট। ২০২৫-০২-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৬।
- ↑ "একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫।
- ↑ "মেহদী হাসানের সঙ্গে অভ্রর জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন আরও ৩ জন"। প্রথম আলো। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫।
- ↑ "An amazing journey from Shahid Lipi to Avro"। দ্য ডেইলি স্টার। ২৭ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "জনস্বার্থে যা করার দরকার তাই করবো: মোস্তাফা জব্বার"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৯-০৬-১০। ২০১৯-০৬-১০ তারিখে আসল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১০।
- ↑ জব্বার, মোস্তফা (২০১০-০৪-০৪)। "সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা ॥ একুশ শতক"। দৈনিক জনকন্ঠ। ২০১৩-০১-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১২-১৬।
- ↑ খান, মেহদী হাসান (২০১০-০৫-০১)। "প্রতিক্রিয়া-ভাষা উন্মুক্ত হবেই"। দৈনিক জনকন্ঠ। ঢাকা। ২০১৩-০১-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৫-২৬।
- ↑ "কারণ দর্শানোর সময় বাড়াল কাপিরাইট অফিস"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১০।
- ↑ "সমঝোতার পথে অভ্র ও বিজয়"। প্রথম আলো। ঢাকা। ১৭ জুন ২০১০। ৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১০।
- ↑ "অভ্র থেকে ইউনিবিজয় প্রত্যাহার"। প্রথম আলো। ঢাকা। ২২ আগস্ট ২০১০। ৭ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১০।
- ↑ "তারুণ্যেই সফলতা"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৮ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "একুশে পদক পাচ্ছেন 'অভ্র'র মেহেদী হাসান খান"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিউক্তিতে মেহদী হাসান খান সম্পর্কিত উক্তি পড়ুন।
উইকিমিডিয়া কমন্সে মেহদী হাসান খান সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
- দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- টুইটারে মেহদী হাসান খান