মালয় ফেডারেশন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মালয় ফেডারেশন

পেরেসকেতুয়ান তানাহ মেলায়ু
ڤرسكوتوان تانه ملايو
১৯৪৮–১৯৬৩
মালয়ের জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
মালয়ের অবস্থান
রাজধানীকুয়ালালামপুর
প্রচলিত ভাষামালয়
ইংরেজি
সরকারসাংবিধানিক রাজতন্ত্র
ইয়াং দি-পেরতুয়ান আগং 
• ১৯৫৭–১৯৬০
তুয়ানকু আবদুর রহমান ইবনে আলমরহুম তুয়ানকু মুহাম্মদ
• ১৯৬০
সুলতান হিসামউদ্দিন আলম শাহ
• ১৯৬০–১৯৬৩
তুয়ানকু সৈয়দ হারুন পুতরা
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠা
১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮[১]
• স্বাধীনতা
৩১ আগস্ট ১৯৫৭
১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩
আয়তন
১৯৬৩১,৩২,৩৬৪ বর্গকিলোমিটার (৫১,১০৬ বর্গমাইল)
মুদ্রামালয়/ব্রিটিশ বোর্নি‌ও ডলার
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
মালয় ইউনিয়ন
মালাক্কা উপনিবেশ
পেনাং উপনিবেশ
মালয়েশিয়া
বর্তমানে যার অংশ মালয়েশিয়া

মালয় ফেডারেশন (মালয়: Persekutuan Tanah Melayu; জাউই: ڤرسكوتوان تانه ملايو) ছিল ১১টি রাজ্যের একটি ফেডারেশন। এদের মধ্যে ৯টি ছিল মালয়ী রাজ্য এবং ২টি ব্রিটিশ বসতি পেনাংমালাক্কা[২] এই ফেডারেশন ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৬৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট ফেডারেশন স্বাধীন হয়।[৩] ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়া হিসেবে রাষ্ট্রকে পুনর্গঠিত করা হয় এবং এসময় সিঙ্গাপুর, উত্তর বোর্নি‌ও এবং সারাওয়াক রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হয়।[৪] এসব রাজ্যের সমন্বয় বর্তমানে পেনিনসুলার মালয়েশিয়া নামে পরিচিত।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত উক্ত ১১টি রাজ্য মিলে মালয় ইউনিয়ন নামক ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল।[৫] মালয়ী জাতীয়তাবাদিদের প্রতিবাদের মুখে ইউনিয়ন ভেঙে দিয়ে ফেডারেশন গঠিত হয় এবং এতে মালয়ী রাজ্যসমূহের শাসকদের প্রতীকী অবস্থান ফিরিয়ে দেয়া হয়।

ফেডারেশনের মালয়ী রাজ্যসমূহ ব্রিটিশ প্রটেক্টরেট হলেও পেনাং ও মালাক্কা ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অঞ্চল। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর ঐতিহ্যগতভাবে মালয়ের সাথে সম্পর্কিত হলেও তা সাবেক ইউনিয়ন ও নবগঠিত ফেডারেশনের অংশ ছিল না।

১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট কমনওয়েলথ অব নেশনসের মধ্যে ফেডারেশন স্বাধীনতা লাভ করেন।[২] ১৯৬৩ সালে ফেডারেশনকে পুনর্গঠন করে মালয়েশিয়া গঠন করা হয়। এসময় সিঙ্গাপুর, সারাওয়াক ও উত্তর বোর্নি‌ওকে রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।[৬][৭] ১৯৬৫ সালের ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া থেকে পৃথক হয়।[৮]

মালয়ী শাসকদের সাথে ব্রিটিশ প্রতিনিধি স্যার এডওয়ার্ড জেনের মধ্যে মালয় ফেডারেশন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[৯] এই চুক্তির মাধ্যমে মালয় ইউনিয়ন গঠনের চুক্তি বিলুপ্ত হয় এবং ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মালয় ফেডারেশন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়। মালয়ের শাসকদের অবস্থানকেও এতে পুনপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। তবে মালয় উপদ্বীপের সাথে সিঙ্গাপুরের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক থাকলেও তাকে ফেডারেশনের অংশ করা হয়নি।

সদস্য রাজ্যসমূহ[সম্পাদনা]

সরকার ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

মালয় ফেডারেশনের সরকার একজন ব্রিটিশ হাই কমিশনারেরের নেতৃত্বে পরিচালিত হত। তার হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ছিল। নির্বাহী কাউন্সিল ও আইন সভা তাকে সহায়তা করত।

  • মালয় নির্বাহী কাউন্সিল ৭জন দাপ্তরিক ও ৭জন দপ্তর বহির্ভূত সদস্য নিয়ে গঠিত হত।
  • মালয় ফেডারেশনের আইন সভায় হাই কমিশনার কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পাশাপাশি ১৪জন দাপ্তরিক ও ৫০জন দপ্তর বহির্ভূত সদস্য ব্রিটিশ বসতি, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করতেন। এছাড়াও ৯ টি রাজ্যের কাউন্সিল প্রধান, চীফ মিনিস্টার এবং ব্রিটিশ বসতির ২ জন প্রতিনিধি দপ্তর বহির্ভূত সদস্য ছিলেন।
  • অভিবাসন ইস্যুতে মালয়ী শাসকদের সম্মেলন হাই কমিশনারকে পরামর্শ দিতে পারত। ফেডারেশনের প্রতিটি রাজ্যে ব্রিটিশ রেসিডেন্টের বদলে চীফ মিনিস্টার পদ প্রতিস্থাপন করা হয়।

নাগরিকত্ব শর্ত[সম্পাদনা]

আইন অনুসারে নাগরিকত্বের শর্ত ছিল নিম্নরূপ:

  1. কোনো রাজ্যের সুলতানের নাগরিক
  2. ফেডারেশনে ১৫ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী পেনাং বা মালাক্কায় জন্মগ্রহণকারী ব্রিটিশ নাগরিক
  3. ফেডারেশনে জন্মগ্রহণকারী এমন ব্রিটিশ নাগরিক যার বাবা ফেডারেশনে জন্মগ্রহণ করেছে বা ১৫ বছর ধরে ফেডারেশনে বসবাস করেছে
  4. ফেডারেশনে জন্মগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তি যে মালয় ভাষা নিয়ে ওয়াকিবহাল এবং নিজের দৈনন্দিন জীবনে মালয়ী প্রথার অনুসরণ করে
  5. ফেডারেশনে জন্মগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তি যার পিতামাতা ফেডারেশনে জন্মগ্রহণ করেছে এবং ১৫ বছর ধরে বসবাস করেছে

এছাড়াও আবেদনের মাধ্যমে নিম্নোক্ত শর্তের আলোকে নাগরিকত্ব অর্জন করা যেত:

  1. ফেডারেশনে জন্ম হয়েছে এবং আবেদনের পূর্বে ১২ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৮বছর বসবাস করেছে
  2. আবেদনের পূর্বে ২০ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ বছর ফেডারেশনে বসবাস করেছে

আবেদনের উভয় ক্ষেত্রে আবেদনকারী অবশ্যই ভদ্র আচরণকারী হতে হবে, আনুগত্যের শপথ হবে ও ফেডারেশনে বসবাসের কারণ স্পষ্ট করতে হবে এবং মালয় বা ইংরেজি যেকোনো এক ভাষা পারদর্শী হতে হবে।

সংবিধান অনুযায়ী মালয় ফেডারেশন মালয়ী জনগণের অধিকার ও বিশেষ অবস্থানের নিশ্চয়তা এবং নিজ নিজ রাজ্যে মালয়ী শাসকদের অধিকার,ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বর নিশ্চয়তা প্রদান করে।[১১]

ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের ক্ষমতার পৃথকীকরণ[সম্পাদনা]

ফেডারেশন চুক্তিতে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের ক্ষমতা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়াদি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাতে সমর্পণ করা হয়য়। ধর্মীয় বিষয় ও মালয়ী প্রথা নিয়ে সুলতানকে পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। বৈদেশিক নীতি ও প্রতিরক্ষা ব্রিটিশ সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়। ফেডারেশন চুক্তিকে ফেডারেশনের সংবিধান ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।[১২]

আইন সভা[সম্পাদনা]

১৯৪৮ সালে কুয়ালালামপুরে ফেডারেশনের আইন সভার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ হাই কমিশনার স্যার এডওয়ার্ড জেন্ট এর উদ্বোধন করেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড লিস্টোয়েল এতে উপস্থিত ছিলেন। সভার সদস্যদের নিম্নোক্তভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়:

  • ব্রিটিশ হাই কমিশনার (প্রেসিডেন্ট হিসেবে);
  • ৩ জন পদাধিকার বলে সদস্য (প্রধান সচিব, অর্থ সচিব ও এটর্নি জেনারেল);
  • ১১ জন "রাজ্য ও বসতি সদস্য" (প্রত্যেক মালয়ী রাজ্যের কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটিশ বসতির কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত একজন করে সদস্য);
  • ১১ জন দাপ্তরিক সদস্য; এবং
  • ৩৪ জন নিযুক্ত দপ্তর বহির্ভূত সদস্য।

দপ্তর বহির্ভূত সদস্যদেরকে অবশ্যই ফেডারেশনের নাগরিক বা ব্রিটিশ প্রজা হতে হত।

১৯৪৮ সালে আইন সভার জাতিগত প্রতিনিধিত্ব নিম্নোক্তভাবে স্থাপিত হয়:

  • ২৮ জন মালয়ী প্রতিনিধি (সকল চীফ মিনিস্টারসহ),
  • ১৪ জন চীনা প্রতিনিধি,
  • ৬ জন ভারতীয় প্রতিনিধি, এবং
  • ১৪ জন ইউরোপীয় (পদাধিকার বলে সদস্য এবং দাপ্তরিক সদস্য)।

প্রথম বৈঠকে দাতু ওন জাফর জোর দিয়ে বলেন যে ফেডারেশনের নাগরিকরা ফেডারেশনের নিজস্ব ব্যাপারে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ চায় না। চীনা প্রতিনিধি ওং চোং কেং জানান যে চীনা জনগণ ফেডারেশনের প্রতি অনুগত থাকবে। প্রথম বৈঠকে কয়েকটি কমিটি গঠিত হয়, যেমন:

  • অর্থ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি;
  • নির্বাচন কমিটি; এবং
  • বিশেষ সুবিধা কমিটি।

প্রথম অধিবেশনে কুয়ালালামপুর শহর বিল, ক্ষমতা হস্তান্তর বিল, এবং ঋণ বিল পাস হয়[১৩]

বিচারবিভাগ[সম্পাদনা]

বিচারবিভাগ নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত ও আপিল আদালত নিয়ে গঠিত হয়েছিল। বিচারপতিদের মধ্যে ছিলেন স্যার স্ট্যাফর্ড‌ ফস্টার-সাটন (১৯৫২-১৯৫৩), স্যার চার্লস ম্যাথু (১৯৫৩-১৯৫৬) ও স্যার জেমস বেভেরিজ থমসন (১৯৫৭-১৯৬৩)।

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

মালয় ফেডারেশনের জনসংখ্যা[১৪]
জাতিগোষ্ঠী ১৯৪৮ ১৯৫১
মালয়ী ২৪,৫৭,০১৪ 2457014
 
২৬,৩১,১৫৪ 2631154
 
চীনা ১৯,২৮,৯৬৫ 1928965
 
২০,৪৩,৯৭১ 2043971
 
ভারতীয় ৫,৩৬,৬৪৬ 536646
 
৫,৬৬,৩৭১ 566371
 
অন্যান্য ৬৪,৮০২ 64802
 
৭৫,৭২৬ 75726
 

সময়রেখা[সম্পাদনা]

মালয়েশিয়ার উদ্ভব

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Federation of Malaya is inaugurated"http://eresources.nlb.gov.sg  |সাময়িকী= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  2. See: Cabinet Memorandum by the Secretary of State for the Colonies. 21 February 1956 টেমপ্লেট:Sourcetext
  3. The UK Statute Law Database: Federation of Malaya Independence Act 1957 (c. 60)
  4. "No.10760: Agreement relating to Malaysia" (pdf)United Nations Treaty Collection। United Nations। জুলাই ১৯৬৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-২৯ 
  5. "Multinational federation"https://books.google.ch  |সাময়িকী= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  6. United Nations Treaty No. 8029, Manila Accord between Philippines, Federation of Malaya and Indonesia (31 July 1963)
  7. Exchange of notes constituting an agreement relating to the implementation of the Manila Accord of 31 July 1963
  8. See: the Independence of Singapore Agreement 1965 and the Proclamation of Singapore.
  9. "Massacre in Malaya: Exposing Britain's My Lai"https://books.google.ch  |সাময়িকী= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  10. See: The UK Statute Law Database: Formation of the Malay States and of the Settlements of Penang and Malacca into a new independent Federation of States under Federation of Malaya Constitution
  11. Persekutuan Tanah Melayu Ditubuhkan[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  12. [Perlembagaan Persekutuan Tanah Melayu Diumumkan]
  13. The First Conference of the Federation of Malaya Legislative Council[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  14. Annual Report on the Federation of Malaya: 1951 in C.C. Chin and Karl Hack, Dialogues with Chin Peng pp. 380, 81.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]