মাক্স প্লাংক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট
প্রতিষ্ঠাতা(গণ) | হান্স এলস্যাসার |
---|---|
প্রতিষ্ঠিত | ১৯৬৯ |
কেন্দ্রবিন্দু | জ্যোতির্বিজ্ঞান |
ব্যবস্থাপনা পরিচালক | হান্স-ওয়াল্টার রিক্স |
প্রধান ব্যক্তি | থমাস হেনিং |
অবস্থান | হাইডেলবার্গ , , |
ওয়েবসাইট | Official website |
মাক্স প্লাংক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট (জার্মান: Max-Planck-Institut für Astronomie; ইংরেজি: Max Planck Institute for Astronomy, সংক্ষেপে এমপিআইএ) মাক্স প্লাংক সোসাইটির অন্তর্ভুক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি জার্মানির বাডেন-ভুর্টেমবের্গের হাইডেলবার্গ শহরে অবস্থিত। ইনস্টিটিউটি প্রাথমিকভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রাথমিক গবেষণা পরিচালনা করে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা পরিচালনার জন্য শক্তিশালী দূরবীনবিশিষ্ট একটি আঞ্চলিক ইনস্টিটিউটের প্রয়োজন অনুভব করার পর ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী হান্স এলস্যাসার এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হন। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে, পাঁচজন কর্মকর্তার দল প্রতিবেশী কনিগস্টুহল স্টেট অবজারভেটরির ভবনে কাজ শুরু করে।[১] ইনস্টিটিউটটির নির্মাণ ১৯৭৫ সালে সমাপ্ত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এর লক্ষ্য ছিল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের প্রস্তুতি, মূল্যায়ন এবং নতুন পরিমাপ পদ্ধতিগুলোর বিকাশ করা।
১৯৭৩ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এটি স্পেনীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলমেরিয়ার কাছে ক্যালার আল্টো অবজারভেটরিতে পরিচালিট হয়। ২০১৯ পর্যন্ত ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ডের এই বৃহত্তম অবজারভেটরিটি উভয় দেশের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সমানভাবে ব্যবহার করেছিলেন। ২৩ মে, ২০১৯ এ আন্ডালুসিয়ার আঞ্চলিক সরকার এবং মাক্স প্লাংক সোসাইটি ৫০% ভাগের জন্য একটি স্থানান্তর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর পর থেকে এটি সম্পূর্ণরূপে স্পেনের মালিকানাধীনে রয়েছে।[২]
২০০৫ সাল থেকে, মাক্স প্লাংক সোসাইটি জার্মানি, ইতালি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একত্রে 'লার্জ বাইনোকুলার টেলিস্কোপ' (এলবিটি) পরিচালনা করছে। এলবিটিটি অ্যারিজোনার টুসন কাছে গ্রাহাম পর্বতে অবস্থিত। এটি ৩১৯০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
গবেষণার বিষয়
[সম্পাদনা]মাক্স প্লাংক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে দুটি বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের প্রাধান্য দেওয়া হয়। একটি হলো নিকটবর্তী তারা এবং গ্রহগুলোর গঠন এবং বিকাশ। আরেকটি প্রশ্ন হলো: সূর্য কি তার গ্রহ পৃথিবীর সাথে অনন্য, নাকি অন্যান্য নক্ষত্রের আশেপাশে এমন গ্রহ রয়েছে যা জীবের জন্য উপযুক্ত? অন্যদিকে, মহাবিস্ফোরণ থেকে এই সুশৃঙ্খল মহাবিশ্বের গঠন ও বিকাশ বোঝা যায় ছায়াপথ ও ভৌত বিশ্বতত্ত্বের মাধ্যমে।
এক নজরে গবেষণা বিষয়গুলো:
- তারা গঠন, প্রাথমিক বস্তু, গ্রহ গঠন, জ্যোতির্জীববিজ্ঞান, আন্তঃনাক্ষত্রিক পদার্থ, জ্যোতিঃরসায়ন
- মিল্কিওয়ে, আপাত-নক্ষত্র, সক্রিয় ছায়াপথের গঠন ও বিবর্তন, ছায়াপথগুলোর বিবর্তন, ছায়াপথ স্তবক এবং বিশ্বতত্ত্ব
২০১৫ সাল থেকে এমপিআইএ মাক্স প্লাংক পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও মিউনিখ লুডভিগ মাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে "হাইডেলবার্গ ইনিশিয়েটিভ ফর অরিজিনস অফ লাইফ" বা ''জীবনের উদ্ভবের জন্য হাইডেলবার্গ উদ্যোগ'' নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূ-বিজ্ঞান, রসায়ন এবং জৈবিক বিজ্ঞানের শীর্ষ গবেষকদের একত্রিত করে জীবনের উত্থানের প্রতি বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিকাশ করা।[৩]
বিভাগসমূহ
[সম্পাদনা]নিচে ইন্সটিটিউটটির কয়েকটি বিভাগের নাম দেওয়া হলো:
- ছায়াপথ ও বিশ্বতত্ত্ব বিভাগ (হান্স-ওয়াল্টার রিক্স)
- গ্রহ ও তারা গঠন বিভাগ (থমাস হেনিং)
- তারা গঠন (হেনরিক বিউথার)
- গবেষণাগার জ্যোতিঃপদার্থর্বিজ্ঞান (করনেলিয়া ইয়েগার)
- গ্রহ ও তারা গঠন তত্ত্ব (হুবার্ট ক্লাহর)
- গ্রহের উৎপত্তি (পলা পিনিলা)
- প্রযুক্তি বিভাগ
যন্ত্রপাতি
[সম্পাদনা]এমপিআইএ স্থলভিত্তিক দূরবীন এবং কৃত্রিম উপগ্রহের জন্য যন্ত্র বা যন্ত্রের কিছু অংশ তৈরি করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ক্যালার আল্টো অবজারভেটরি (স্পেন)
- ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি এর লা সিলা অবজারভেটরি
- প্যারানাল অবজারভেটরি এবং এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ
- লার্জ বাইনোকুলার টেলিস্কোপ (ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি)
- ইনফ্রারেড স্পেস অবজারভেটরি (ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা)
- হার্শেল স্পেস অবজারভেটরি (ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা, নাসা)
- জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (নাসা, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা)
এমপিআইএও গাইয়া মিশনে অংশ নিচ্ছে। গাইয়া হলো ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার একটি মহাকাশ মিশন। এখানে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির প্রায় এক বিলিয়ন তারা অবস্থান, দূরত্ব এবং বেগ নির্ধারণ করা হবে।
পরিচালকগণ
[সম্পাদনা]- হান্স এলস্যাসার, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, ১৯৬৮-১৯৯৭[৪]
- গুইডো মুনচ, ১৯৭৮-১৯৮৯[৪]
- স্টিভেন বেকউইথ, ১৯৯১-২০০১[৪]
- ইমো অ্যাপেনজেলার, ১৯৯৮-২০০০ (অস্থায়ী)[১]
- হান্স ওয়াল্টার রিক্স, ১৯৯৯-বর্তমান[৪]
- থমাস হেনিং, ২০০১-বর্তমান[৪]
অবকাঠামো
[সম্পাদনা]হান্স-ওয়াল্টার রিক্স হলো ব্যবস্থাপনা পরিচালক (আগস্ট, ২০১৯)। এমপিআইএর প্রাক্তন ও বর্তমান বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক সদস্যগণ হলো:[৫][৬]
- অধ্যাপক ডঃ কার্ল-হাইঞ্জ বোহম (মৃত)
- অধ্যাপক ডঃ ওয়াল্টার ফ্রিকে (মৃত)
- অধ্যাপক ডঃ জর্জ এইচ. হার্বিগ (মৃত)
- অধ্যাপক ডঃ কনি আর্টস
- অধ্যাপক ডঃ ইমো অ্যাপেনজেলার
- অধ্যাপক ডঃ স্টিভেন বেকউইথ
- অধ্যাপক ডঃ উইলি বেঞ্জ
- অধ্যাপক ডঃ রাফায়েল রেবোলো
- অধ্যাপক ডঃ ভোলকার স্প্রিংগেল
২০১৮ এর শেষে, ইনস্টিটিউটে মোট ৪১৩ জনকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ২২৭ জন বিজ্ঞানী ছিল। বিজ্ঞানীদের মধ্যে ৩৪ জন জুনিয়র এবং পরিদর্শক বিজ্ঞানী ছিলেন। একই বছরে, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ৭৯ জন ডক্টরাল শিক্ষার্থীর পর্যালোচনা করা হয়েছিল। এমপিআইএতে ২০১৮ সালে নয়টি স্বতন্ত্র গবেষণা দল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মাক্স প্লাংক গবেষণা দল[৭] এবং পাঁচটি ইউরোপীয় গবেষণা দল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একটি গ্রুপকে আলেকজান্ডার ভন হুমবোল্ট ফাউন্ডেশন অর্থায়িত করেছে।[৮]
হাউস ডের অ্যাস্ট্রোনমি
[সম্পাদনা]২০০৯ সালে, এমপিআইএ ক্যাম্পাসে "হাউস ডের অ্যাস্ট্রোনমি" বা ''হাউস অফ অ্যাস্ট্রোনমি'' প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একটি জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষা এবং প্রচার কেন্দ্র। কেন্দ্রটি মাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটি, ক্লাউস শচিরা ফাউন্ডেশন, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাইডেলবার্গ শহর মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব। ক্লাউস শচিরা ফাউন্ডেশন এই কেন্দ্রটির অর্থায়ন ও নির্মাণ করে। এই কেন্দ্রেটি একটি গ্যালাক্সি আকারের ভবন যা ২০১১ সালের ডিসেম্বরে চালু হয়েছিল। এটি মাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটি দ্বারা পরিচালিত।[১]
হাউস ডের অ্যাস্ট্রোনমির ক্রিয়াকলাপগুলোর মধ্যে রয়েছে আলোচনা, পরিদর্শন, প্ল্যানেটরিয়াম শো, স্কুল বা কিন্ডারগার্টেনের জন্য কর্মশালা, শিক্ষামূলক উপকরণের বিকাশ, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রাক-পরিষেবা প্রশিক্ষণ এবং জার্মান ও আন্তর্জাতিক শিক্ষকদের জন্য পরিষেবা প্রশিক্ষণ।[১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ Lemke, Dietrich. (২০১১)। Im Himmel über Heidelberg : 40 Jahre Max-Planck-Institut für Astronomie in Heidelberg (1969-2009)। Berlin: Archiv der Max-Planck-Gesellschaft। আইএসবিএন 9783927579255। ওসিএলসি 795320685।
- ↑ "Junta de Andalucía and the Max-Planck Institute make official the transfer of 50% of the Calar Alto Observatory"। www.caha.es। ২০১৯-০৭-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০৮।
- ↑ "Heidelberg Initiative for the Origins of Life – HIFOL"। MPIA | Origins of Life। Max Planck Institute for Astronomy (MPIA)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২২।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Henning, Eckart. (২০১১)। Chronik der Kaiser-Wilhelm-Max-Planck-Gesellschaft zur Förderung der Wissenschaften, 1911-2011 : Daten und Quellen। Kazemi, Marion.। Berlin: Duncker & Humblot। আইএসবিএন 9783428136230। ওসিএলসি 734081095।
- ↑ Wallerstein, George (২০১৪-০৬-০৫)। "Karl-Heinz Hermann Böhm"। Physics Today (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.1063/PT.5.6067।
- ↑ "Board of directors"। www.mpia.de। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০৮।
- ↑ "Research groups leaders"। www.mpg.de (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০৮।
- ↑ Fendt, Christian; Henning, Thomas; Kürster, Martin; Pössel, Markus; Rix, Hans-Walter (২০১৯)। Pössel, Markus; Nielbock, Markus, সম্পাদকগণ। Annual Report 2018। Max Planck Institute for Astronomy। Heidelberg: Thomas Henning, Hans-Walter Rix। আইএসএসএন 1437-2924।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Homepage of the Max Planck Institute for Astronomy
- Homepage of the International Max Planck Research School (IMPRS) for Astronomy and Cosmic Physics
- Homepage of Haus der Astronomie