ভি. এন. খারে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিশ্বেশ্বর নাথ খারে
৩৩তম ভারতের প্রধান বিচারপতি
কাজের মেয়াদ
১৯ ডিসেম্বর ২০০২ – ২ মে ২০০৪
নিয়োগদাতাএ. পি. জে. আবদুল কালাম
পূর্বসূরীগোপাল বল্লভ পট্টনায়েক
উত্তরসূরীএস. রাজেন্দ্র বাবু
ভারতের সুপ্রিমকোর্ট এর বিচারক
কাজের মেয়াদ
২১ মার্চ ১৯৯৭ – ১ মে ২০০৪
নিয়োগদাতাশঙ্কর দয়াল শর্মা
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1939-05-02) ২ মে ১৯৩৯ (বয়স ৮৪)
এলাহাবাদ, উত্তরপ্রদেশ, ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
প্রাক্তন শিক্ষার্থীএলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বেশ্বর নাথ খারে ভারতের ৩৩তম প্রধান বিচারপতি ছিলেন যিনি ১৯ ডিসেম্বর ২০০২ থেকে ২ মে ২০০৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি প্রধান বিচারপতি পদে উন্নীত হওয়ার আগে ২১ মার্চ ১৯৯৭ সাল থেকে ভারতের সুপ্রিমকোর্টের একজন বিচারপতি ছিলেন।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

খারে ১৯৩৯ সালের ২ মে এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় এলাহাবাদে বসবাস করেন। তিনি এলাহাবাদের সেন্ট জোসেফ কলেজে পড়াশোনা করেন।[২] এছাড়াও তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। খারে ছিলেন একজন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলোয়াড় যিনি ১৯৫৮ সালে রনজি ট্রফি ম্যাচে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হয়ে খেলেছিলেন।[২]

আইনি কর্মজীবন[সম্পাদনা]

খারে ১৯৬১ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টে একজন আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন, যেখানে তিনি দেওয়ানী, রিট এবং রাজস্ব পিটিশনে অনুশীলন করেন।[২] তিনি উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রধান স্থায়ী পরামর্শদাতা নিযুক্ত হন। ২৫ জুন ১৯৮৩ তারিখে তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। যেখান থেকে এক বছর পরে তিনি ভারতের সুপ্রিমকোর্টে উন্নীত হন।[২]

জরুরী অবস্থা[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সালে আইনজীবী হিসাবে ভি. এন. খারে এবং তার চাচা এসসি খারে রাজ নারায়ণের বিরুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এটি ছিল সেই বিখ্যাত মামলা যেখানে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ ছিল। তিনি হাইকোর্টের আদেশ পাওয়া মামলাটি সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা মামলার ওকালতির দায়িত্বে ছিলেন।[৩] সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্তের ফলে ভারতে ১৯ মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি গণতন্ত্রের একমাত্র স্থগিতাদেশ দেখেছে।[২]

গুজরাত দাঙ্গা[সম্পাদনা]

ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসাবে তার মেয়াদকালে গোধরা ট্রেনে আগুনের পর গুজরাতে সহিংসতার ঘটনায়, ভি. এন. খারে বিচার ব্যবস্থায় ব্যর্থতার মুখোমুখি হন। বেস্ট বেকারি কেস পুনরায় খোলার আদেশ দিয়ে তিনি সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কিছুটা অবলম্বন এনে দিয়েছিলেন। তিনি অবসর নেওয়ার সময় দ্য হিন্দু সংবাদপত্রের সাথে কথা বলতে গিয়ে [৪] বলেছিলেন, "আমি দেখতে পেলাম গুজরাতে অভিযুক্ত এবং প্রসিকিউশনের মধ্যে সম্পূর্ণ যোগসাজশ ছিল, যা আইনের শাসনকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। এই যোগসাজশ ভাঙতে এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সুপ্রিমকোর্টকে পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। দাঙ্গার মামলার বিচারের সময় ঘটনার পালা দেখে আমি ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত ছিলাম কিন্তু ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে বাঁচাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম।"

২০০৪ সালে মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে কেন তিনি বেস্ট বেকারি কেসটি পুনরায় বিচারের জন্য মহারাষ্ট্রে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।[৫][৬] ২০১২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে খারে বেস্ট বেকারি কেস এবং গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিয়ে বলেছিলেন, কেন তিনি বিশ্বাস করেন যে ২০০২ গুজরাত দাঙ্গা একটি "রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক গণহত্যা"র উদাহরণ।[৭]

অবসরের পর[সম্পাদনা]

ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নেওয়ার পর থেকে ভি. এন. খারে মাঝে মাঝে জাতীয় টেলিভিশনে মন্তব্য করেন এবং আইনশাস্ত্র বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন।[৮] জেসিকা লাল হত্যা মামলায় তার মন্তব্য গুজরাত দাঙ্গার সময় প্রকাশিত অনুভূতির প্রতিধ্বনি করেছে। তিনি ঝাড়খণ্ড সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলরও নিযুক্ত হয়েছেন।[৯]

সমালোচনা[সম্পাদনা]

২০০২ সালের গুজরাত সহিংসতার সময় রাজ্য সরকার এবং দাঙ্গাকারীদের মধ্যে জটিলতার উপস্থিতি সম্পর্কে খারের মন্তব্য ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং জাতীয়তাবাদী জোট বিজেপির সদস্য) দ্বারা সমালোচিত হয়েছে।[১০][১১] মোদির মতে:

বিচারকদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। খারের খারে এবং খোটে ('ঠিক' এবং ভুল) এর মধ্যে পার্থক্য জানা উচিত। রাজ্য সরকার কখনও দাঙ্গার পক্ষে ছিল না, নীরব দর্শকও ছিল না। কোনো তদন্ত কমিশন আমাকে অভিযুক্ত করেনি। আমি মিডিয়ার একাংশের মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার। মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হল কেন খারে দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার পরেই এই মন্তব্য করলেন? দাঙ্গায় আমার ভূমিকার বিষয়ে গুজরাতের জনগণই সেরা বিচারক এবং তারা উপযুক্তভাবে উত্তর দিয়েছেন।[১০]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

খারেকে ২০০৬ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ দেওয়া হয়।[১২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "VN Khare"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৩ 
  2. "Know your Judges : Justice V.N Khare"Indian Legal Solution। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৩ 
  3. Kuldip Nayar 1977. The judgment: Inside story of the emergency in India. Vikas Publishing House.
  4. "National : I raised the image of judiciary: V.N. Khare"The Hindu। ২০০৪-০৫-০২। ২৪ জুন ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৪ 
  5. "Khare vote for truth"The Telegraph। ৩ মে ২০০৪। ২৯ মে ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  6. "As a judge, my job is to wipe tears"Rediff। ১৯ মে ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  7. "I would have lodged an FIR against Narendra Modi on charges of genocide and manslaughter"HardNews। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২। ৩১ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  8. "Justice after Jessica Lall"The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৪ 
  9. "Justice V.N.Khare"। Cuj.ac.in। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৪ 
  10. "Modi on retired CJI Khare's comments"Sify। ৫ মে ২০০৪। ১৮ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  11. "Justice Khare's remarks irk Gujarat CM"The Times of India। ৩ মে ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  12. "V. N. Khare"। Supremecourtofindia.nic.in। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]