বিষয়বস্তুতে চলুন

ভারতে কর্নওয়ালিস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস রিসিভিং টিপু সুলতান’স সনস অ্যাজ হোস্টেজেস, রবার্ট হোম অঙ্কিত, আনু. ১৭৯৩

১৭৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ জেনারেল চার্লস কর্নওয়ালিস, দি আর্ল কর্নওয়ালিস নিযুক্ত হন ব্রিটিশ ভারতের কম্যান্ডার-ইন-চিফফোর্ট উইলিয়াম প্রেসিডেন্সির গভর্নর উভয় পদ অলংকৃত করার জন্য (ফোর্ট উইলিয়াম প্রেসিডেন্সি বাংলা প্রেসিডেন্সি নামেও পরিচিত ছিল)। তিনি উপদ্বীপীয় ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ সংহতকরণের কাজ তত্ত্বাবধান করেন এবং ব্রিটিশ রাজের প্রেক্ষাপট প্রস্তুত করে দেন। তিনি সমসাময়িককালে প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কারের কাজেও মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন, যে সংস্কারগুলি ভারতের জনপ্রশাসন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত প্রথাগুলিকে খোলনলচে বদলে দেয়। ইতিহাসবিদ জেরি ডুপোন্টের মতে, কর্নওয়ালিস সারা ভারত জুড়ে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য দায়ী ছিলেন এবং সরকারি কৃত্যক, আদালত ও রাজস্ব সংগ্রহের মানের যে মাপকাঠি তিনি স্থির করে যান, তা ব্রিটিশ যুগের প্রায় শেষভাগ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে অপরিবর্তিত ছিল।[]

১৭৯২ সালে তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে মার্কুইস কর্নওয়ালিস উপাধিতে উত্তীর্ণ করা হয়। এই যুদ্ধে তিনি মহীশূরের শাসক টিপু সুলতানের থেকে প্রচুর সুবিধা আদায় করেছিলেন। ১৭৯৩ সালে ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তনের পরও কয়েক বছর তিনি প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ১৭৯৮ সালে তিনি আয়ারল্যান্ড রাজ্যে লর্ড লেফট্যানেন্টকম্যান্ডার-ইন-চিফ পদে নিযুক্ত হন। ১৮০১ সালে তিনি আবার ভারতে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৮০৫ সালের জুলাই মাসে তিনি ভারতে পৌঁছান এবং অক্টোবর মাসে গাজিপুরে মারা যান।

প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]
কর্নওয়ালিসের টমাস গেইনসবরা কর্তৃক অঙ্কিত প্রতিকৃতি

লর্ড কর্নওয়ালিস ছিলেন একজন ব্রিটিশ সেনা আধিকারিক, জনপ্রশাসক ও কূটনীতিবিদ। তার কর্মজীবনের প্রকৃতিটি ছিল প্রধানত সামরিক। ১৭৭৬ থেকে ১৭৮১ সাল পর্যন্ত মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি একাধিক সুবিখ্যাত সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইয়র্কটাউনে আত্মসমর্পণ করার পর সেই কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।[] ১৭৮২ সালে তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। প্যারোলে থাকার কারণে তিনি এই যুদ্ধে আর অংশগ্রহণ করতে পারেননি। আর্থিক কারণে এরপরে তাকে সামরিক আধিকারিকেরা কর্তব্যে না থাকা অবস্থায় যে অর্ধেক বেতন পান, তার থেকে বেশি বেতনের একটি কাজের খোঁজ করে নিতে হয়।[]

১৭৮০-এর দশকে ভারত

[সম্পাদনা]

অধুনা যে অঞ্চলটি ভারত নামে পরিচিত তা অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর বহুলাংশে বিভাজিত হয়ে পড়েছিল।[] ভারতের বিভিন্ন স্থানে ডেনমার্ক-নরওয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্সওলন্দাজ প্রজাতন্ত্র সহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের বণিকেরা ‘ফ্যাক্টরি’ নামে পরিচিত বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। এই কুঠিগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল উপমহাদেশের পূর্বে করমণ্ডল ও পশ্চিমে মালাবার উভয় উপকূলভাগেই। অবশ্য এগুলির মধ্যে অনেকগুলিই স্থাপিত হয়েছিল স্থানীয় শাসকদের আনুষ্ঠানিক সম্মতি ক্রমে (সেই সম্মতিও কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার বলপূর্বক আদায় করা হত)। উপদ্বীপের দক্ষিণতম প্রান্তটি শাসন করত ত্রিবাঙ্কুর রাজ্য; মহীশূর রাজ্য উপদ্বীপের মধ্যভাগের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছিল এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সহযোগী রাজ্য নিয়ে ঢিলেঢালাভাবে গড়ে ওঠা মারাঠা সাম্রাজ্য নামে একটি রাজ্যসংঘ উত্তর দিকে কলকাতা থেকে বোম্বাই পর্যন্ত ভূভাগে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল।[] পৃথক পৃথক প্রেসিডেন্সি হিসেবে শাসিত বোম্বাই ও মাদ্রাজ অঞ্চলে ব্রিটিশদের উপস্থিতির হার লক্ষণীয় হলেও কলকাতা সহ বাংলা অঞ্চলটি ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে। এই অঞ্চলে কোম্পানি কর আরোপের অধিকার প্রাপ্ত হয়েছিল এবং এটির প্রেসিডেন্সি অন্যগুলিকে শাসন করত। বাংলা প্রেসিডেন্সির অসামরিক প্রধান ছিলেন ফোর্ট উইলিয়ামের গভর্নর-জেনারেল। পদমর্যাদার দিক থেকে তিনি মাদ্রাজবোম্বাই প্রেসিডেন্সির গভর্নর-জেনারেলদের অগ্রবর্তী ছিলেন।[][] কর্নওয়ালিস দ্রুত নিজেকে একজন রূপান্তরকারী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।[]

১৭৬০-এর ও ১৭৭০-এর দশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসন পরিচালনা করতেন ওয়ারেন হেস্টিংস। তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি গভর্নর-জেনারেল উপাধির অধিকারী হয়েছিলেন।[] সাত বছরের যুদ্ধদ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামরিক শাখাটি পরিচালনা করেছিলেন জেনারেল আয়ার কুট। ১৭৮৩ সালে মহীশূরের বিরুদ্ধে পরবর্তী পর্যায়ের যুদ্ধ চলাকালীন তার মৃত্যু ঘটে।[] হেস্টিংস কর্তৃক গৃহীত নীতির ফলে কোম্পানি ফ্রান্স, মহীশূর, মারাঠা, সেগুলির বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী এবং অন্যান্য স্থানীয় রাজন্যবর্গের সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও পরিবর্তনশীল মৈত্রীবন্ধনে জড়িয়ে পড়েছিল।[১০]

নিয়োগ

[সম্পাদনা]

১৭৮২ সালের বসন্তে শেলবার্নের আর্লের মন্ত্রিসভার যুগেই প্রথম কর্নওয়ালিস ভারতে একটি পদের জন্য বিবেচিত হয়েছিলেন। শেলবার্ন কর্নওয়ালিসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি ভারতে গভর্নর-জেনারেল হিসেবে কাজে যোগ দিতে ইচ্ছুক কিনা। এই প্রস্তাবে কর্নওয়ালিস রাজিও হয়েছিলেন, কারণ এর ফলে তিনি নিজের প্যারোল মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্থ না করেই একটি চাকরি পেতেন।[১১] অবশ্য শেলবার্ন ছিলেন এক দুর্বল শাসক। ১৭৮৩ সালের গোড়াতেই তিনি ক্ষমতাচ্যূত হন এবং একটি জোট সরকার তার স্থলাভিষিক্ত হয়। এই সরকার পরিচালনা করছিলেন চার্লস জেমস ফক্সলর্ড নর্থ। দু’জনকেই কর্নওয়ালিস (এবং রাজা জর্জ) অপছন্দ করতেন। কর্নওয়ালিস হাউস অফ লর্ডসের সদস্য হলেও সাধারণত রাজনীতি এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু পরবর্তী সরকার তার সাহায্যের প্রতিদান দেবে এই আশায় তিনি ফক্স-নর্থ মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তিনি অধিকতর সোচ্চার হয়ে ওঠেন।[১২]

"বহুলাংশে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং হৃদয়বেদনার সঙ্গে আমি হ্যাঁ বলতে বাধ্য হয়েছি এবং [তা করেছি] সাচ্ছন্দ্য ও সন্তুষ্টিতে ভরা জীবনের বিনিময়ে, একটি পাবলিক স্টেশনকে নেতৃত্ব দেওয়ার সকল বিঘ্ন ও দুঃখ নিবারণের জন্য।"[১৩]

১৭৮৩ সালের ডিসেম্বরএ উইলিয়াম পিট দি ইয়ংগার ক্ষমতায় এলে আর্লের নিকট নতুন অবস্থান গ্রহণের দরজা খুলে যায়। পিট প্রথমে তাকে আয়ারল্যান্ডের লর্ড লেফট্যানেন্ট পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। এছাড়া তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, ভারতে নিযুক্ত হলে তিনি অসামরিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সর্বোচ্চ সামরিক অধিনায়কত্ব চাইবেন।[১৪] পিট তার দাবি মেনে নিয়েছেন, একথা জানার পর কিছুকাল তিনি আত্ম-অন্বেষণে ডুবে থাকেন। এই সময় পরিবার ও দেশের দাবির মধ্যে সংঘাত তাকে বিচলিত করে তুলেছিল। অবশ্য শুধু যে এই বিষয়টিই তাকে পীড়া দিচ্ছিল, তা নয়। ১৭৮৪ সালের অগস্ট মাসে তাকে ভারতে নিয়োগের কথা বিবেচনা করার সময় পার্লামেন্ট তাকে দুই পদের একটিতে মাত্র নিয়োগের প্রস্তাব দেয়, যা তিনি আবার গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন।[১৫] অন্যান্য সামরিক পদগুলিকে উপেক্ষা করে পিট তাকে কনস্টেবল অফ দ্য টাওয়ার পদ প্রদানের আশ্বাস দিয়েছিলেন।[১৬]

১৭৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে পদ গ্রহণের জন্য পিটের আরেকটি অপর্যাপ্ত অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের এক বছর পর ১৭৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই পদে কর্নওয়ালিসের দাবি শেষ পর্যন্ত মেনে নেওয়া হয়।[১৩] মে মাসে লন্ডন থেকে রওনা হয়ে "এক সর্বাপেক্ষা সফল ও দ্রুত কার্যকর যাত্রা"র পরে ১৭৮৬ সালের ২২ অগস্ট তিনি মাদ্রাজে উপস্থিত হন এবং তারপরে কলকাতায় উপনীত হন ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে।[১৭] তাকে তার পদমর্যাদার যথাযোগ্য অভ্যর্থনা করা হলেও কার্যনির্বাহী গভর্নর-জেনারেল জন ম্যাকফারসন বদলি হওয়ার জন্য খুশি ছিলেন না। কলকাতার গভর্নমেন্ট হাউস সাধারণত গভর্নর-জেনারেলের জন্য সংরক্ষিত হলেও ম্যাকফারসন চেয়েছিলেন সেটিকে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কুক্ষিগত করে রাখতে। কর্নওয়ালিস কার্যভার গ্রহণের শপথ নেওয়ার পরই ঘোষণা করেন যে তিনি গভর্নর-জেনারেলের বাসভবনটি অধিকার করতে চান।[১৮]

প্রশাসনিক সংস্কার

[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালকেরা কর্নওয়ালিসকে ভারতে কোম্পানির প্রশাসন খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে সংস্কার করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ঐতিহাসিকভাবেই এর কর্তাব্যক্তিদের (রাজস্ব আদায়কারী, বণিক ও প্রশাসক) তুলনামূলকভাবে কম বেতন দিত। কিন্তু তারা নিজেরা ব্যবসা চালাবার এবং সেই কাজে কোম্পানির জাহাজ ব্যবহারেরও অনুমতি পেতেন। কোম্পানি যতদিন লাভজনক ছিল কোম্পানির খরচে দুর্নীতি ও অসাধু উপায়ে মুনাফা অর্জনের এই মুক্ত দরজাটিকে উপেক্ষার দৃষ্টিতেই দেখা হত। যদিও ব্রিটেনে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে ভারত থেকে আমদানিকৃত বস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর দাম কমতে থাকে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কোম্পানির ব্যয়ভারও বাড়তে থাকে। কর্নওয়ালিস যখন আসেন তখন কোম্পানির লোকসান শুরু হয়েছিল। কোম্পানির কর্মচারীরা অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসাতে লাভের মুখই দেখছিল। কিন্তু কোম্পানির লাভ-লোকসান নিয়ে তারা আদৌ মাথা ঘামাত না।[১৯] কর্নওয়ালিস এই ব্যবস্থায় বদল আনতে চান। প্রথমেই তিনি এই ধরনের ব্যক্তিগত ব্যবসায় নিজে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। এরপর কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ব্যবসার সুযোগসুবিধা রদ করে তাদের বেতন বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করেন।[২০]

কর্নওয়ালিসের সংস্কারের আরেকটি ক্ষেত্র ছিল কোম্পানির মধ্যে পদোন্নতি ও উচ্চ পদ লাভের একটি উপায় হিসাবে স্বজনপোষণ ও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব হ্রাস। পরিবর্তে কোম্পানির স্বার্থে তিনি ব্যক্তি নির্বাচন করতেন মেধার ভিত্তিতে। এমনকি এই ক্ষেত্রে তিনি প্রিন্স অফ ওয়েলসের নিজের পছন্দের লোকেদের নিয়োগের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[২১]

বিচারবিভাগীয় সংস্কার

[সম্পাদনা]

আর্লের আগমনের আগে বিভিন্ন অঞ্চলে কোম্পানি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বিচারবিভাগীয় ও পুলিশি ক্ষমতার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মাপকাঠি থাকায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। এই ক্ষমতাগুলি হয় অসঙ্গতিপূর্ণভাবে নয়তো অযৌক্তিকভাবে প্রয়োগ করা হত।[২২] কর্নওয়ালিসের অন্যতম কাজ ছিল ফৌজদারি ও বিচারবিভাগীয় প্রনিয়মের প্রবর্তন, যা তখনও ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণভাবে অসম্পূর্ণ অবস্থায় ছিল।

সেই সময়কার ব্রিটিশ শহরগুলির মতো ভারতীয় শহরগুলিতেও পুলিশ ব্যবস্থা ছিল দুর্বল এবং অপরাধের হার ছিল অত্যধিক।[২৩] হিন্দু ও মুসলমানদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিধি প্রযোজ্য ছিল এবং ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় এই সব আইন লিখিত থাকায় বিচারকার্য যথাযথ ও সুসঙ্গতভাবে চালানো ছিল কার্যত অসম্ভব।[২৪] বাংলার ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা বহুলাংশে কোম্পানির এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার নামমাত্র শাসক নবাবের হাতেই রয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক যোগাযোগ যে সব ব্যক্তির ছিল তারা শাস্তির হাত থেকে অব্যাহতি পেত। কারণ তাদের হাতে অত্যাচারিত ব্যক্তিরা প্রতিহিংসার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করত না। হেস্টিংস বেশ কয়েকবার পুলিশ ব্যবস্থা ও বিচারবিভাগীয় প্রশাসনে পরিবর্তন এনেছিলেন। কিন্তু এগুলি সমস্যাগুলির উপর কোনও বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।[২৫]

উইলিয়াম জোন্স, স্যার জোশুয়া রেনল্ডস অঙ্কিত একটি প্রতিকৃতি অনুযায়ী কৃত খোদাইচিত্র

আইনি সংস্কার সাধনের কাজে কর্নওয়ালিস অন্যদের সমালোচনামূলক সহায়তা প্রাপ্ত হন। বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী উইলিয়াম জোন্স প্রচলিত হিন্দু ও মুসলমান দণ্ডবিধিগুলি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন, যাতে ইংরেজ বিচারকেরা সেই আইনগুলির মূল্যায়ন ও প্রয়োগ করতে পারেন।[২৬]

কোম্পানির রাজস্ব আদায়কারীরা ইতিমধ্যেই সিভিল ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করতেন। ১৭৮৭ সালে কর্নওয়ালিস তাদের সীমাবদ্ধ ফৌজদারি বিচার ক্ষমতা প্রদান করে সংস্কারকার্য শুরু করেন। তাদের থেকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মিত শাস্তির মেয়াদ ও প্রদত্ত শাস্তি সম্পর্কে প্রতিবেদন আদায় করতেন।[২৭] ১৭৯০ সালে কোম্পানি নবাবের হাত থেকে বিচারবিভাগীয় প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে নেয়। কর্নওয়ালিস কলকাতায় একটি উচ্চতর আদালত সহ সার্কিট আদালতের একটি ব্যবস্থা চালু করেন এবং সার্কিট আদালতের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার ক্ষমতা ধরে রাখেন।[২৮][২৯] বিচারকদের বেছে নেওয়া হত কোম্পানির ইউরোপীয় কর্মচারীদের মধ্যে থেকে। এই সব সংস্কারের মধ্যে ছিল সেই সময় প্রচলিত বিভিন্ন আইনের মধ্যে সমতা সাধন করে দণ্ডবিধির পরিবর্তনগুলিও। ১৭৯৩ সালে তিনি যখন ইংল্যান্ডে ফিরে যান, তখন ভারতে কর্নওয়ালিস বিধি নামে পরিচিত এই আইনগুলি প্রণয়নের কাজ সারত সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।[৩০]

কর্নওয়ালিস বিধির অন্যতম পরিণতি ছিল যে, এটি কার্যক্ষেত্রে বিচারব্যবস্থায় বর্ণবৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। সেই যুগের প্রচলিত ধারায় কর্নওয়ালিসও বিশ্বাস করতেন যে, ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত সুশিক্ষিত ভদ্রলোকেরা অন্যান্যদের তুলনায়, এমনকি ভারতের সঙ্গে মিশ্র সম্পর্কের ফলে যে গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছিল তাদের তুলনায়ও শ্রেষ্ঠতর। শেষোক্ত ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কে তিনি লিখেছিলেন, "তাদের গাত্রবর্ণ ও বংশের বিচারে এই দেশে তাদের ইউরোপীয়দের তুলনায় হীনতর গণ্য করা হয়। আমার মত এই যে, তাদের মধ্যে যারা শ্রেষ্ঠ সামর্থ্যের অধিকারী তারা সেই অধিকার ও সম্মানের যোগ্য নয় যা একজন অফিসারের কর্তব্যের প্রতি যথাযথ হয়।"[৩১] ১৭৯১ সালে তিনি এই মর্মে আদেশ জারি করেন যে, "স্থানীয় ভারতীয়ের সন্তান এমন কোনও ব্যক্তিকে এই কোর্ট ভবিষ্যতে কোম্পানির অসামরিক, সামরিক ও নৌবিভাগীয় কৃত্যকে নিয়োগ করতে পারবে না।"[৩১] কর্নওয়ালিসের জীবনীকার উইকওয়ারেরা ব্রিটিশদের একটি অভিজাত শ্রেণি হিসেবে এই প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দানের বিষয়টিকে দেখেছিলেন সেই যুগে ভারতে বিদ্যমান বর্ণ ও ধর্মের জটিল ক্রমাধিকারতন্ত্রের উপর আরেকটি স্তর যোগ হিসেবেই।[৩২] কোম্পানির পরিচালকবর্গ ও কর্মচারীদের (কৌশলী বা প্রতক্ষ) সম্মতি ছাড়া এই নীতিগুলির রূপায়ন কর্নওয়ালিসের পক্ষে কখনই সম্ভব হত না।[৩৩]

অবশ্য নিম্নশ্রেণির প্রতি কর্নওয়ালিসের মনোভাবে একটি কল্যাণকর এবং কিছুটা পিতৃসুলভ পন্থায় তাদের অবস্থার উন্নতির একটি বাসনা নিহিত ছিল। কোম্পানির দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মচারীরা অনেক সময় স্থানীয় তাঁতিদের এমন নিম্নমানের মজুরির বিনিময়ে কাজ করাতো যা দিয়ে অতি আবশ্যকীয় নিত্য ব্যবহার্য খাদ্যসামগ্রীও কেনা যেত না। এই তাঁতিদের সুরক্ষায় কর্নওয়ালিস আইন প্রণয়ন করেন। এছাড়াও তিনি শিশুদের দিয়ে ক্রীতদাসবৃত্তি বেআইনি ঘোষণা করেন এবং ১৭৯১ সালে বারাণসীতে হিন্দুদের জন্য একটি সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটিরই নাম সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়[৩৪] কলকাতা একটি টাকশালও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সঙ্গে দরিদ্র জনসাধারণের সাহায্যার্থে একটি নির্ভরযোগ্য প্রামাণ্য মুদ্রাব্যবস্থারও প্রচলন ঘটান। এই মুদ্রাব্যবস্থাই ছিল ভারতের বর্তমান মুদ্রাব্যবস্থার পূর্বসূরি।[৩৫]

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত

[সম্পাদনা]

১৭৬০-এর দশকে কোম্পানি বাংলা অঞ্চল অধিকার করার পর ভারতের দিকে বিনিয়োগ পুঁজি হ্রাসের একটি উপায় হিসেবে রাজস্ব সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।[৩৬] পরবর্তী বছরগুলিতে করারোপের মাধ্যমে অর্থসংগ্রহের বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহীত হয়। কিন্তু কোনও ভাবেই সন্তোষজনক ফল লাভ করা সম্ভব হয়নি। এই সব পরিকল্পনার অনেকগুলিতেই স্থানীয় রাজস্ব আদায়কারী বা জমিদারদের হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কোম্পানির পরিচালকেরা কর্নওয়ালিসকে করারোপের এমন এক পরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ জানান, যার মাধ্যমে কোম্পানির অধিভুক্ত অঞ্চলের শ্রমিকদের উপর অন্যায্য বোঝা না চাপিয়েই কোম্পানির উদ্দেশ্যসিদ্ধি সম্ভব হবে।[৩৭]

জন শোর, জর্জ রিচমন্ড অঙ্কিত প্রতিকৃতি

কর্নওয়ালিস সংশয়াতীতভাবে বিশ্বাস করতেন জন শোর (যিনি কর্নওয়ালিসের পরে গভর্নর-জেনারেল পদে আসীন হন) এবং চার্লস গ্র্যান্টকে[৩৮] বর্তমানে যা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে পরিচিত তাতে সর্বপ্রধান অবদানকারী ছিলেন এরাই। ১৭৮৯ সালের গ্রীষ্মে তারা যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তার সারমর্ম হল জমিদারেরা কার্যকরীভাবে বংশানুক্রমে জমির মালিক হবেন এবং জমির মূল্যের ভিত্তিকে কোম্পানিকে কর প্রদান করবেন। একটি বিষয়েই শোর ও কর্নওয়ালিসের মধ্যে মতান্তর হয়েছিল। শোর দশ বছরের সীমিত মেয়াদের পক্ষপাতী ছিলেন, কিন্তু কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী মেয়াদের পক্ষে মত দেন।[৩৯] কর্নওয়ালিসের মতটিই গৃহীত হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল কোম্পানির অনেক ইংরেজ রাজস্ব সংগ্রাহক এবং সেই সঙ্গে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ও করব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অনেকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পক্ষে ছিলেন। ১৭৯০ সালে প্রস্তাবটি লন্ডনে প্রেরিত হয়। সেখানে ১৭৯২ সালে কোম্পানির পরিচালকেরা প্রস্তাবটিকে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। ১৭৯৩ সালে কর্নওয়ালিস এই নিয়মগুলির প্রয়োগ শুরু করেন।[৪০]

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সমালোচকেরা এই ব্যবস্থার চিরস্থায়ী মেয়াদে আপত্তি উত্থাপন করেছিলেন। তারা দাবি করেছিলেন যে কোম্পানি রাজস্ব আদায় করা ছেড়ে দিচ্ছে এবং কর্নওয়ালিস ও অন্যান্যেরা জমিদারদের ঐতিহাসিক প্রকৃতি বিস্মৃত হয়ে তার পক্ষে মত দিচ্ছেন। উইকওয়ারেরা বলেছেন যে, কর্নওয়ালিসের ভারতে আসার আগে ভারতে প্রভূত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন জন শোর। কর্নওয়ালিশ শুধু তার উপদেশের উপরেই নির্ভর করেননি, বরং বিভিন্ন জেলার অন্যান্য রাজস্ব আদায়কারীদের উপদেশও গ্রহণ করেছিলেন। এই রাজস্ব আদায়কারীরা প্রায় একযোগেই জমিদারদের সঙ্গে একটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন।[৪১] জমিদারদের অতিরিক্ত রায়তদের (ভূম্যধিকারী প্রজা) স্বার্থরক্ষার প্রয়োজনটির কথাও কর্নওয়ালিস স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, "যে ব্যক্তি জমির অধিকারী তা সরকারের কাছে গুরুত্বহীন, শুধু তাকে জমি চাষ করতে হবে, রায়তদের রক্ষা করতে হবে এবং রাজস্ব জমা দিতে হবে।"[৪২]

পেনাং ও নেপাল

[সম্পাদনা]
ফোর্ট কর্নওয়ালিস, পেনাং

কর্নওয়ালিসের পূর্বসূরি জন ম্যাকফারসন পেনাং দ্বীপে কোম্পানির একটি বাণিজ্যকুঠি প্রতিষ্ঠার জন্য কেডাহের সুলতানের সঙ্গে সমঝোতার অধিকার প্রদান করেছিলেন। ইস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সুপরিচিত বণিক ক্যাপ্টেন ফ্র্যান্সিস লাইট একটি সমঝোতাপত্র সাক্ষর করেন। এই সমঝোতা অনুযায়ী, শক্তিশালী প্রতিপক্ষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত সুলতান পেনাং-এর বিনিময়ে বাণিজ্যিক লভ্যাংশের একটি অংশ এবং প্রতিরক্ষামূলক সামরিক সহায়তা লাভ করেছিলেন। ক্যাপ্টেন লাইট সুলতানকে জানিয়েছিলেন যে কোম্পানি এই শর্তে রাজি হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী ১৭৮৬ সালের অগস্ট মাসে দ্বীপটি অধিকার করেন এবং নামকরণ করেন প্রিন্স অফ ওয়েলস দ্বীপ। কর্নওয়ালিস চুক্তিটির সামরিক দিকটি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, এই চুক্তির ফলে কোম্পানি সুলতানের প্রতিক্ষদের বিরুদ্ধে বা ওলন্দাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়বে। তাই তিনি চুক্তিটিতে সম্মতি দান স্থগিত রাখেন এবং কোম্পানির পরিচালকদের এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুরোধ জানান। কোম্পানি সামরিক সহায়তায় অসম্মতি জানালে সুলতান দ্বীপটি অবরোধ শুরু করেন। ১৭৯০ সাল থেকে তিনি বাহিনী জড়ো করে ব্রিটিশদের বলপূর্বক দ্বীপ ত্যাগ করতে বাধ্য করতে থাকেন।[৪৩] কর্নওয়ালিসের ভাই উইলিয়াম সেই সময় এই এলাকায় রাজকীয় নৌবাহিনীতে ছিলেন। তিনি পেনাং থেকে ভারতে সাহায্যের জন্য বাহিনী সংগ্রহে সমুদ্রযাত্রা করেন। ক্যাপ্টেন লাইট অবশ্য সেই বাহিনী এসে পৌঁছানোর আগেই ১৭৯১ সালের এপ্রিল মাসে সুলতানের বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করেন।[৪৪] এরপর একটি যুক্তি সাক্ষরিত হয়, যার ফলে কোম্পানি পেনাং ব্যবহারের বিনিময়ে সুলতানকে একটি বার্ষিক ভাতা দিতে সম্মত হয়। পেনাং-এর প্রধান শহর জর্জ টাউন রক্ষার্থে ক্যাপ্টেন লাইট যে দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন, সেটির নামকরণ আর্লের সম্মানে করা হয় ফোর্ট কর্নওয়ালিস[৪৩]

নেপালের রাজা রানা বাহাদুর শাহের সঙ্গে কোম্পানির বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। ১৭৯২ সালে রানা বাহাদুর শাহ কোম্পানির থেকে সামরিক সহায়তা চান। তিনি সন্নিহিত ক্ষুদ্র রাজ্যগুলিতে সামরিক অভিযান চালিয়ে নিজের অঞ্চল প্রসারিত করছিলেন। কিন্তু ১৭৯১ সালে তিব্বত অভিযানের সময় চীনাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েন। কর্নওয়ালিস রাজার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। পরিবর্তে কর্নেল উইলিয়াম কার্কপ্যাট্রিককে বিবাদে মধ্যস্থতা করতে পাঠান। কার্কপ্যাট্রিকই ছিলেন প্রথম ইংরেজ যিনি নেপাল দেখেছিলেন। ১৭৯৩ সালে তিনি যখন কাঠমান্ডুতে পৌঁছান, সেই সময়ে অবশ্য দুই পক্ষই নিজেদের বিবাদ মিটিয়ে নিয়েছিল।[৪৫][৪৬]

মহীশূরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

[সম্পাদনা]

১৭৮৪ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের শেষে ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি সাক্ষরিত হয়। এর পরই মহীশূর রাজ্যের শাসক টিপু সুলতান ব্রিটিশদের প্রতি তার ঘৃণা নতুন করে প্রকাশ করেন এবং ঘোষণা করেন যে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংঘাত চালিয়ে যাবেন। ভারতে উপস্থিত হয়ে কর্নওয়ালিস মারাঠা সাম্রাজ্যহায়দ্রাবাদের নিজামের (দুই রাজ্যই অবস্থিত ছিল মহীশূরের উত্তর সীমায়) সঙ্গে চুক্তিগুলি পরিবর্তন বা রদ করতে উদ্যোগী হন। তিনি ১৭৮৪ সালের সন্ধিচুক্তির শর্তগুলির মধ্যেও কিছু সমস্যামূলক বিষয় লক্ষ্য করেছিলেন।[৪৭] তিনি এই রাজ্যগুলিকে প্রতিশ্রুতি দেন যে ফ্রান্স যদি এই সকল রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়েন তাহলে কোম্পানি তাদের সহায়তা করবে। কিন্তু অন্যথায় এই রাজ্যগুলি কোনও সামরিক সাহায্য কোম্পানির থেকে পাবে না। মারাঠা ও নিজামেরা যখন নিজেদের হৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধারের জন্য মহীশূরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তখন এই নীতির অনুবর্তী হয়ে কর্নওয়ালিস তাদের সাহায্য করতে অস্বীকার করেন।[৪৮]

প্রথম দিকের সামরিক অভিযান

[সম্পাদনা]
টিপু সুলতান

১৭৮৮ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজামের সঙ্গে পূর্ববর্তী একটি চুক্তি অনুসারে উত্তর সরকার উপকূলের দক্ষিণতম সরকার গুন্টুরের কর্তৃত্বভার স্বহস্তে গ্রহণ করে। এর ফলেই টিপু, নিজাম ও ব্রিটিশদের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে। বিনিময়ে কোম্পানি নিজেদের ফৌজের একাংশকে হায়দ্রাবাদের বাহিনীতে যুক্ত করতে রাজি হয়।[৪৯] ১৭৮৯ সালের মধ্যেই টিপু, তার প্রতিবেশী, মহীশূরের পশ্চিমের সামন্ত রাজ্য এবং ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের মধ্যে বিবাদ লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৭৮৪ সালের চুক্তিতে ব্রিটিশ মিত্রশক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত ত্রিবাঙ্কুর মহীশূরের সামন্ত রাজ্য কোচিনের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় অবস্থিত দু’টি দুর্গ ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে লাভ করে। এই দুর্গগুলি অধিকার করার পর থেকে ওলন্দাজরা এগুলির জন্য কাউকেই কর প্রদান করত না। কিন্তু এই দুর্গ দু’টির অবস্থান কোচিনের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় হওয়ায় তা টিপুর সঙ্গে ত্রিবাঙ্কুরের দাবি ঘিরে বিবাদ সমুপস্থিত করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। টিপু কোয়েম্বাটোরে ফৌজ সমবেত করতে শুরু করেন এবং ত্রিবাঙ্কুরের ধর্ম রাজার প্রতি ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন। মাদ্রাজের ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ টিপুকে সাবধান করে দিয়ে জানান যে, ত্রিবাঙ্কুরের বিরুদ্ধে এই ধরনের আগ্রাসী ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে ব্রিটিশরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে। কর্নওয়ালিসও মাদ্রাজের গভর্নর জন হল্যান্ডকে সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণের আর্জি জানাতে থাকেন। ১৭৮৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর, টিপু ত্রিবাঙ্কুরের প্রতিরক্ষাবাহিনীকে আক্রমণ করেন[৫০] হল্যান্ড সামরিক বাহিনীর লোক ছিলেন না, শুধুমাত্রই ওজস্বিতার সঙ্গে কাজ করতেন। তিনি অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিপুর সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করেন।[৫০] ১৭৯০ সালের গোড়ার দিকে জেনারেল উইলিয়াম মেডোস তার স্থলাভিষিক্ত হন। কর্নওয়ালিস মেডোসকে মহীশূরের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের ক্ষমতা প্রদান করেন।[৫০] কর্নওয়ালিস নিজে মারাঠা ও নিজামের সমর্থন আদায়ের জন্য তাদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেন। কারণ টিপুর বাহিনীর অন্যতম শক্তি ছিল অশ্বারোহী সেনাদল এবং ভারতে ব্রিটিশ বাহিনীতে অশ্বারোহী সেনার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অভাব ছিল।[৫১] মারাঠা ও নিজাম উভয়ের হাতেই যথেষ্ট সংখ্যায় অশ্বারোহী বাহিনী ছিল এবং তারাও মহীশূরের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী যুদ্ধগুলির ফলে হারানো অঞ্চলগুলি ফিরে পেতে আগ্রহী ছিল। যদিও পৃথক পৃথকভাবে মহীশূরকে আক্রমণ করার সামর্থ্য তাদের ছিল না এবং পরস্পরকে বিশ্বাসও করতে পারত না তারা। তাই তারা ব্রিটিশদের মহীশূরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মুখাপেক্ষী হয়ে ছিল।[৫২]

১৭৯০ সালে মেডোসের সামরিক অভিযানের সাফল্য ছিল সীমিত। ন্যূনতম বিরোধিতায় তিনি কোয়েম্বাটোর জেলা দখল করে নেন। কিন্তু টিপুর পক্ষ থেকে শক্তিশালী প্রতি-আক্রমণের ফলে কোয়েম্বাটোর ও অন্য কয়েকটি কেন্দ্রে ব্রিটিশদের ঘাঁটি দুর্বল হয়ে পড়ে। টিপু উপকূলীয় সমভূমিতেও নেমে আসেন এবং সেখানে বহু বাধাবিপত্তি ঠেকে কর্ণাটক অঞ্চলের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হন। পন্ডিচেরিতে তিনি ফরাসিদের সঙ্গে দেখা করে তাদেরও এই সংঘর্ষে লিপ্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই কাজে তিনি সফল হননি।[৫৩] ১৭৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্রিটিশদের মিত্রশক্তিগুলি মাঠে নামে, কিন্তু তখনও তারা যথেষ্ট ব্রিটিশ সহায়তা ব্যতিরেকে টিপুর শক্তিশালী বাহিনীর সম্মুখীন হতে চাইছিল না। তাই কর্নওয়ালিস সিদ্ধান্ত নেন যে মেডোসের থেকে প্রধান ব্রিটিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ স্বহস্তে গ্রহণ করবেন। ১৭৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে তিনি তিনি যা সামরিক অভিযান শুরু করেন তার প্রত্যক্ষ লক্ষ্য ছিল মহীশূরের রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তন[৫৪]

শ্রীরঙ্গপত্তনের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযান

[সম্পাদনা]

শ্রীরঙ্গপত্তনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযান

[সম্পাদনা]

প্রত্যাবর্তন

[সম্পাদনা]

ভারতের পরে

[সম্পাদনা]

ভারতে প্রত্যাবর্তন

[সম্পাদনা]

উত্তরাধিকার

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. ডুপোন্ট ২০০১, পৃ. ৪৮৩
  2. অ্যাসপিনাল ১৯৩১, পৃ. ৬
  3. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৫–৭
  4. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ১৯
  5. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ১১৮–১২২
  6. হিউজেস ১৮৭১, পৃ. ৭৫, ১০২
  7. ফরেস্ট ১৮৯২, পৃ. ৫৯
  8. "লর্ড কর্নওয়ালিস ইন ইন্ডিয়া" [ভারতে লর্ড কর্নওয়ালিস]। অমৃত। ২০১০। 
  9. ফরেস্ট ১৮৯২, পৃ. ২৩২,276
  10. গার্ডনার ১৯৭২, পৃ. ১২৬
  11. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৮
  12. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৯
  13. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ১৮
  14. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ১২
  15. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ১৩
  16. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ১৪
  17. অ্যাসপিনাল ১৯৩১, পৃ. ৮
  18. অ্যাসপিনাল ১৯৩১, পৃ. ৯
  19. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৩৭–৩৮
  20. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৪৩
  21. গার্ডনার ১৯৭২, পৃ. ১২৭
  22. মিল ও উইলসন ১৮৫৮, পৃ. ৩৬১
  23. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৭৪–৭৫
  24. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৭৬–৭৭
  25. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৮০–৮১
  26. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৭৮–৭৯
  27. মিল ও উইলসন ১৮৫৮, পৃ. ৩৬৫
  28. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৮৩
  29. মিল ও উইলসন ১৮৫৮, পৃ. ৩৫৩–৩৫৪
  30. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৮৪
  31. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৮৯
  32. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৯০
  33. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৯১
  34. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৯৪
  35. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৯৫
  36. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৬০
  37. মিল ও উইলসন ১৮৫৮, পৃ. ৩৩১–৩৩২
  38. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৬৪
  39. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৬৫
  40. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৬৬
  41. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৬৯
  42. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ৭২
  43. উই ২০০৪, পৃ. ৭৮৬
  44. অ্যাসপিনাল ১৯৩১, পৃ. ২০২
  45. হেল্পটন ২০০৫, পৃ. ৩৯
  46. উইলবার ১৯৪৫, পৃ. ৩৫৪
  47. ফোর্টেস্কু ১৯০২, পৃ. ৫৪৬
  48. সেন ১৯৯৪, পৃ. ৪৭
  49. মিল ও উইলসন ১৮৫৮, পৃ. ২২৫–২২৯
  50. ফোর্টস্কু ১৯০২, পৃ. ৫৫০
  51. উইকওয়ার ১৯৮০, পৃ. ১৩৬, ১৪০
  52. মিল ও উইলসন ১৮৫৮, পৃ. ২৩৪
  53. ফোর্টেস্কু ১৯০২, পৃ. ৫৫১–৫৬১
  54. ফোর্টেস্কু ১৯০২, পৃ. ৫৬৩

উল্লেখপঞ্জি

[সম্পাদনা]
  • অ্যাসপিনাল, আর্থার (১৯৩১), কর্নওয়ালিস ইন বেঙ্গল [বাংলায় কর্নওয়ালিস], ম্যাঞ্চেস্টার, যুক্তরাজ্য: ম্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটি প্রেস, ওসিএলসি 1088230 
  • ফর্টেস্কু, জন উইলিয়াম (১৯০২), আ হিস্ট্রি অফ দ্য ব্রিটিশ আর্মি, ভলিউম ৩ [ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস, খণ্ড ৩], ম্যাকমিলান 
  • ফরেস্ট, জর্জ (১৮৯২), দি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফ ওয়ারেন হেস্টিংস, ১৭৭২–১৭৮৫ [ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রশাসন, ১৭৭২-১৭৮৫], কলকাতা: অফিস অফ দ্য সুপারইনটেনডেন্ট অফ গভর্নমেন্ট প্রিন্ট, ওসিএলসি 11151866 
  • গ্রেইঞ্জার, জন ডি (২০০৪), দি অ্যামিয়েন্স ট্রুস: ব্রিটেন অ্যান্ড বোনাপার্ট, ১৮০১–১৮০৩ [অ্যামিয়েন্স সন্ধি: ব্রিটেন ও বোনাপার্ট], বয়ডেল প্রেস, আইএসবিএন 978-1-84383-041-2 
  • ডাফ, জেমস গ্র্যান্ট (১৯২১), আ হিস্ট্রি অফ দ্য মারহাট্টাজ, ভলিউম ২ [মারাঠাদের ইতিহাস, খণ্ড ২] 
  • ডুপোন্ট, জেরি (২০০১), দ্য কমন ল অ্যাব্রড: কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড লিগ্যাল লেগাসি অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার [বিদেশে সাধারণ আইন: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাংবিধানিক ও আইনগত উত্তরাধিকার], লিটলটন, সিও: ডব্লিউএম. এস. হেইন, আইএসবিএন 978-0-8377-3125-4, ওসিএলসি 44016553 
  • গার্ডনার, ব্রায়ান (১৯৭২), দি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি: আ হিস্ট্রি [ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি: ইতিহাস], নিউ ইয়র্ক: ম্যাককল, আইএসবিএন 0-8415-0124-6 
  • হিউজেস, অ্যালবার্ট উইলিয়াম (১৮৭১), আউটলাইনস অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি [ভারতীয় ইতিহাসের রূপরেখা], লন্ডন: বেল অ্যান্ড ড্যালডি, ওসিএলসি 33475084 
  • হোম, রবার্ট (১৮০৮), সিলেক্ট ভিউজ ইন মাইসোর, দ্য কান্ট্রি অফ টিপ্পু সুলতান: ফ্রম ড্রইংস টেকেন অন দ্য স্পট [টিপু সুলতানের দেশ মহীশূরের নির্বাচিত দৃশ্যাবলি: সেই স্থানে অঙ্কিত চিত্রাবলি থেকে], লন্ডন: বোওয়ার, ওসিএলসি 5096657 
  • লিথেস, স্যার স্ট্যানলি মর্ডন্ট, সম্পাদক (১৯০৭), দ্য কেমব্রিজ মডার্ন হিস্ট্রি [কেমব্রিজ আধুনিক ইতিহাস], ১০, নিউ ইয়র্ক: ম্যাকমিলান, ওসিএলসি 6253478 
  • মার্শাল, পি. জে. (১৯৯২), "কর্নওয়ালিস ট্রায়াম্ফ্যান্ট: ওয়ার ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ব্রিটিশ পাবলিক ইন দ্য লেট এইটিনথ সেঞ্চুরি [কর্নওয়ালিস বিজয়ী: অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ভারতে যুদ্ধ ও ব্রিটিশ জনসাধারণ]", লরেন্স ফ্রিডম্যান; পল হাইস; রবার্ট ও'নেইল, ওয়ার, স্ট্র্যাটেজি, অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল পলিটিকস: এসেজ ইন অনার অফ স্যার মাইকেল হাওয়ার্ড [যুদ্ধ, রণকৌশল ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি: স্যার মাইকেল হাওয়ার্ডের সম্মানে প্রবন্ধগুচ্ছ], অক্সফোর্ড: ক্লেয়ারডন প্রেস, পৃষ্ঠা ৫৭–৭৪, আইএসবিএন 9780198222927 
  • মিল, জেমস; উইলসন, হোরাস হেম্যান (১৮৫৮), দ্য হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া, ভলিউম ৫ [ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাস, খণ্ড ৫], লন্ডন: পাইপার, স্টিফেনসন, অ্যান্ড স্পেন্স, ওসিএলসি 3019507 
  • উই, কিট জিন, সম্পাদক (২০০৪), সাউথইস্ট এশিয়া: আ হিস্টোরিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়া, ফ্রম আংকোর ভাট টু ইস্ট টিমোর, ভলিউম ৩ [দক্ষিণপূর্ব এশিয়া: একটি ইতিহাস বিশ্বকোষ, আংকোর ভাট থেকে পূর্ব টিমোর, খণ্ড ৩], সান্টা বারবারা, ক্যালিফোর্নিয়া: এবিসি-ক্লিও, আইএসবিএন 978-1-57607-770-2 
  • ফিলিপস, সি. এইচ. (২০০৬), দি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৮৪–১৮৩৪ [ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৮৪-১৮৩৪], বেল এয়ার, সিএ: রিড বুকস, আইএসবিএন 978-1-4067-9687-2, ওসিএলসি 221999046 
  • রোহতাগি, পলাইন; পারলেট, গ্রাহাম (২০০৯), ইন্ডিয়ান লাইফ অ্যান্ড ল্যান্ডস্কেপ বাই ওয়েস্টার্ন আর্টিস্টস: বিগিনিংস – দি ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি [পাশ্চাত্যের শিল্পীদের আঁকা ভারতীয় জীবন ও প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি: সূত্রপাত – ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি], ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বাস্তু সংগ্রহালয়, ২৯ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১০ 
  • সেন, শৈলেন্দ্রনাথ (১৯৯৪), অ্যাংলো–মারাঠা রিলেশনস, ১৭৮৫–৯৬ [ইঙ্গ-মারাঠা সম্পর্ক, ১৭৮৫-৯৬], দিল্লি: পপুলার প্রকাশন, ওসিএলসি 1406688 
  • সেটন-কার, ওয়াল্টার স্কট (১৮৯৩), দ্য মার্কুইস কর্নওয়ালিস [মার্কুইস কর্নওয়ালিস], অক্সফোর্ড: ক্ল্যারেনডন প্রেস 
  • উইকওয়ার, ফ্র্যাংকলিন ও মেরি (১৯৮০), কর্নওয়ালিস: দি ইম্পিরিয়াল ইয়ারস [কর্নওয়ালিস: সাম্রাজ্যের বছরগুলি], চ্যাপেল হিল: ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা প্রেস, আইএসবিএন 0-8078-1387-7 
  • উইলবার, মার্গারিট ইয়ার (১৯৪৫), দি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অ্যান্ড দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার ইন দ্য ফার ইস্ট [দূর প্রাচ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্য], নিউ ইয়র্ক: আর. স্মিথ, ওসিএলসি 186486927 
  • ওয়েলফটন, জন (২০০৫), আ হিস্ট্রি অফ নেপালবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন [নেপালের ইতিহাস], কেমব্রিজ, যুক্তরাজ্য: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, আইএসবিএন 978-0-521-80470-7, ওসিএলসি 55502658