প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
অ বিষয়শ্রেণী:হাংরি আন্দোলন সরিয়ে মূল বিষয়শ্রেণী বিষয়শ্রেণী:হাংরি প্রজন্ম স্থাপন |
|||
২৪০ নং লাইন: | ২৪০ নং লাইন: | ||
[[বিষয়শ্রেণী:মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা]] |
[[বিষয়শ্রেণী:মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:হাংরি কবিতা]] |
[[বিষয়শ্রেণী:হাংরি কবিতা]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:হাংরি |
[[বিষয়শ্রেণী:হাংরি প্রজন্ম]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:অশ্লীলতা বিতর্ক]] |
[[বিষয়শ্রেণী:অশ্লীলতা বিতর্ক]] |
১২:৩৯, ১৭ মার্চ ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
মলয় রায়চৌধুরী কর্তৃক রচিত | |
লিখেছেন | ১৯৬৩ |
---|---|
প্রথম প্রকাশিত | ১৯৬৪ |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
প্রকাশক | হাংরি বুলেটিন |
প্রকাশনার তারিখ | ১৯৬৪ |
লাইন | ৯০ |
প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার ১৯৬৩ সালে ভারতীয় কবি মলয় রায়চৌধুরী রচিত ৯০ লাইনের একটি জলবিভাজক কবিতা। কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৪ সালে হাংরি বুলেটিনে।
প্রকাশের পর সাহিত্যে অশ্লীলতার অভিযোগে কবিতাটি নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতীয় আদালতে হাংরি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় মামলা হয় এবং মলয় রায়চৌধুরীসহ অন্যান্য আন্দোলনকারী গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে মামলাটি নাকচ হয়ে যায়। মামলা চলাকালীন সময়ে আমেরিকা ও ইউরোপে মলয় রায়চৌধুরীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে, এবং বিভিন্ন ভাষায় কবিতাটি অনুদিত হয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত 'মর্ডান অ্যান্ড পোস্টমর্ডান পোয়েট্রি অফ দ্য মিলেনিয়াম" সংকলনে দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র কবিতা হিসেবে এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
১৯৬৪ অশ্লীলতার বিচার
কবিতাটি "হাংরি বুলেটিন ১৯৬৪" সংখ্যায় প্রকাশের পর হাংরি আন্দোলনকারীদের মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় আদালতে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারতীয় দণ্ড বিধির ১২০বি (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র), ২৯২ (সাহিত্যে অশ্লীলতা) এবং ২৯৪ (তরুণদের বিপথগামী করা) ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর মধ্যে মলয় রায়চৌধুরীসহ অন্যান্য যাঁরা সংখ্যাটিতে লিখেছিলেন তাদের মধ্যে ছয়জনকে কলকাতা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৫ সালের মে মাসে বাকি সবাইকে মুক্তি দেয়া হলেও মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৯২ ধারায় চার্জশীট প্রদান করা হয় এবং ৩৫ মাসব্যাপী এ মামলা চলে। মলয়ের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ভারতীয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তরুণ সান্যাল, জ্যোতির্ময় দত্ত এবং সত্রাজিত দত্ত আর বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শৈলেশ্বর ঘোষ, সুভাষ ঘোষ, পবিত্র বল্লভ, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এবং উৎপলকুমার বসু। নিম্ন আদালতে মলয় রায়চৌধুরীর ২০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছিলো। গ্রেফতারি পরোয়ানার দরুন কবি উৎপলকুমার বসু অধ্যাপনার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। প্রদীপ চৌধুরী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাসটিকেট হন। কবি সমীর রায়চৌধুরী সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। ঔপন্যাসিক সুবিমল বসাক এবং কবি দেবী রায়কে কলকাতা থেকে মফঃস্বলে বদলি করে দেয়া হয়।[১] ১৯৬৭ সালের ২৬ জুলাই কলকাতা উচ্চ আদালত মামলাটি খারিজ করে কবিতাটির সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। কবিতাটি ভারতের এবং ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
মূল কবিতা
'ওঃ মরে যাব মরে যাব মরে যাব
আমার চামড়ার লহমা জ্বলে যাচ্ছে অকাট্য তুরুপে
আমি কী কোর্বো কোথায় যাব ওঃ কিছুই ভাল্লাগছে না
সাহিত্য-ফাহিত্য লাথি মেরে চলে যাব শুভা
শুভা আমাকে তোমার তর্মুজ-আঙরাখার ভেতরে চলে যেতে দাও
চুর্মার অন্ধকারে জাফ্রান মশারির আলুলায়িত ছায়ায়
সমস্ত নোঙর তুলে নেবার পর শেষ নোঙর আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে
আর আমি পার্ছিনা, অজস্র কাঁচ ভেঙে যাচ্ছে কর্টেক্সে
আমি যানি শুভা, যোনি মেলে ধরো, শান্তি দাও
প্রতিটি শিরা অশ্রুস্রোত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হৃদয়াভিগর্ভে
শাশ্বত অসুস্থতায় পচে যাচ্ছে মগজের সংক্রামক স্ফুলিঙ্গ
মা, তুমি আমায় কঙ্কালরূপে ভূমিষ্ঠ করলে না কেন ?
তাহলে আমি দুকোটি আলোকবর্ষ ঈশ্বরের পোঁদে চুমু খেতুম
কিন্তু কিছুই ভালো লাগে না আমার কিছুই ভালো লাগছে না
একাধিক চুমো খেলে আমার গা গুলোয়
ধর্ষণকালে নারীকে ভুলে গিয়ে শিল্পে ফিরে এসেছি কতদিন
কবিতার আদিত্যবর্ণা মুত্রাশয়ে
এসব কী হচ্ছে জানি না তবু বুকের মধ্যে ঘটে যাচ্ছে অহরহ
সব ভেঙে চুরমার করে দেব শালা
ছিন্নভিন্ন করে দেব তোমাদের পাঁজরাবদ্ধ উত্সব
শুভাকে হিঁচড়ে উঠিয়ে নিয়ে যাব আমার ক্ষুধায়
দিতেই হবে শুভাকে
ওঃ মলয়
কোল্কাতাকে আর্দ্র ও পিচ্ছিল বরাঙ্গের মিছিল মনে হচ্ছে আজ
কিন্তু আমাকে নিয়ে কী কোর্বো বুঝতে পার্ছিনা
আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
আমাকে মৃত্যুর দিকে যেতে দাও একা
আমাকে ধর্ষণ ও মরে যাওয়া শিখে নিতে হয়নি
প্রস্রাবের পর শেষ ফোঁটা ঝাড়ার দায়িত্ব আমায় শিখতে হয়নি
অন্ধকারে শুভার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়া শিখতে হয়নি
শিখতে হয়নি নন্দিতার বুকের ওপর শুয়ে ফরাসি চামড়ার ব্যবহার
অথচ আমি চেয়েছিলুম আলেয়ার নতুন জবার মতো যোনির সুস্থতা
যোনিকেশরে কাঁচের টুকরোর মতো ঘামের সুস্থতা
আজ আমি মগজের শরণাপন্ন বিপর্যয়ের দিকে চলে এলুম
আমি বুঝতে পার্ছিনা কী জন্য আমি বেঁচে থাকতে চাইছি
আমার পূর্বপুরুষ লম্পট সাবর্ণ চৌধুরীদের কথা আমি ভাবছি
আমাকে নতুন ও ভিন্নতর কিছু কোর্তে হবে
শুভার স্তনের ত্বকের মতো বিছানায় শেষবার ঘুমোতে দাও আমাকে
জন্মমুহুর্তের তীব্রচ্ছটা সূর্যজখম মনে পড়ছে
আমি আমার নিজের মৃত্যু দেখে যেতে চাই
মলয় রায়চৌধুরীর প্রয়োজন পৃথিবীর ছিল না
তোমার তীব্র রূপালি য়ুটেরাসে ঘুমোতে দাও কিছুকাল শুভা
শান্তি দাও, শুভা শান্তি দাও
তোমার ঋতুস্রাবে ধুয়ে যেতে দাও আমার পাততাড়িত কঙ্কাল
আমাকে তোমার গর্ভে আমারি শুক্র থেক জন্ম নিতে দাও
আমার বাবা-মা অন্য হলেও কি আমি এরকম হতুম ?
সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শুক্র থেকে মলয় ওর্ফে আমি হতে পার্তুম ?
আমার বাবার অন্য নারীর গর্ভে ঢুকেও কি মলয় হতুম ?
শুভা না থাকলে আমি কি পেশাদার ভালোলোক হতুম মৃত ভায়ের
ওঃ বলুক কেউ এসবের জবাবদিহি করুক
শুভা, ওঃ শুভা
তোমার সেলোফেন সতিচ্ছদের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে দাও
পুনরায় সবুজ তোশকের উপর চলে এসো শুভা
যেমন ক্যাথোড রশ্মিকে তীক্ষ্ণধী চুম্বকের আঁচ মেরে তুলতে হয়
১৯৫৬ সালের সেই হেস্তনেস্তকারী চিঠি মনে পড়ছে
তখন ভাল্লুকের ছাল দিয়ে সাজানো হচ্ছিল তোমার ক্লিটোরিসের আশপাশ
পাঁজর নিকুচি-করা ঝুরি তখন তোমার স্তনে নামছে
হুঁশাহুঁশহীন গাফিলতির বর্ত্মে স্ফীত হয়ে উঠছে নির্বোধ আত্মীয়তা
আ আ আ আ আ আ আ আ আ আঃ
মরে যাব কিনা বুঝতে পার্ছিনা
তুল্কালাম হয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতরকার সমগ্র অসহায়তায়
সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়ে যাব
শিল্পের জন্যে সক্কোলকে ভেঙে খান-খান করে দোব
কবিতার জন্য আত্মহত্যা ছাড়া স্বাভাবিকতা নেই
শুভা
আমাকে তোমরা ল্যাবিয়া ম্যাজোরার স্মরণাতীত অসংযমে প্রবেশ কোর্তে দাও
দুঃখহীন আয়াসের অসম্ভাব্যতায় যেতে দাও
বেসামাল হৃদয়বত্তার স্বর্ণসবুজে
কেন আমি হারিয়ে যাইনি আমার মায়ের যোনিবর্ত্মে
কেন আমি পিতার আত্মমৈথুনের পর তাঁ পেচেছাপে বয়ে যাইনি
কেন আমি রজঃস্রাবে মিশে যাইনি শ্লেষ্মায়
অথচ আমার নিচে চিত আধবোজা অবস্থায়
আরাম গ্রহণকারিনী শুভাকে দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছে আমার
এরকম অসহায় চেহারা ফুটিয়েও নারী বিশ্বাসঘাতিনী হয়
আজ মনে হয় নারী ও শিল্পের মতো বিশ্বাসঘাতিনী কিছু নেই
এখন আমার হিংস্র হৃৎপিণ্ড অসম্ভব মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে
মাটি ফুঁড়ে জলের ঘূর্ণি আমার গলা ওব্দি উঠে আসছে
আমি মরে যাব
ওঃ এ সমস্ত কী ঘটছে আমার মধ্যে
আমি আমার হাত হাতের চেটো খুঁজে পাচ্ছি না
পায়জামার শুকিয়ে যাওয়া বীর্য থেকে ডানা মেলছে
৩০০০০০ শিশু উড়ে যাচ্ছে শুভার স্তনমণ্ডলীর দিকে
ঝাঁকে ঝাঁকে ছুঁচ ছুটে যাচ্ছে রক্ত থেকে কবিতায়
এখন আমার জেদি ঠ্যাঙের চোরাচালান সেঁদোতে চাইছে
হিপ্নোটিক শব্দরাজ্য থেকে ফাঁসানো মৃত্যুভেদী যৌন-পর্চুলায়
ঘরের প্রত্যেকটা দেয়ালে মার্মুখী আয়না লাগিয়ে আমি দেখছি
কয়েকটা ন্যাংটো মলয়কে ছেড়ে দিয়ে তার অপ্রতিষ্ঠ খেয়োখেয়ি।'
চলচ্চিত্র
২০১৪ সালে এই কবিতা অবলম্বনে মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় এবং হ্যাশ তন্ময় একটি নির্বাক স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার চলচ্চিত্রটি ব্রিটেনের নো গ্লস লিডস্ ইণ্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সহ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, প্যারিস, বার্সেলোনা, জার্মানি, স্পেনসহ মোট ১২টি দেশের ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অফিসিয়াল সিলেকশন এবং স্পেনের ম্যাডাটাক ইণ্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভেলে সবচেয়ে আশাপ্রদ ভিডিও শিল্পীর (Most Promising Video Artist) পুরস্কার পেয়েছে। [২][৩][৪]
তথ্যসূত্র
- ↑ মলয় রায়চৌধুরী (সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০)। "প্রতিসন্দর্ভের স্মৃতি"। arts.bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৪, ২০১৪।
- ↑ "কম বাজেটের প্রতিবাদ"। ebela। ABP Group। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪। ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
- ↑ "মলয় বিদ্যুৎ"। Anandabazar Patrika। ABP Group। 29 october 2014। সংগ্রহের তারিখ 29 october 2014। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "কয়েক জন কলেজ পড়ুয়া"। ei samay। Times Group। 06 october 2014। সংগ্রহের তারিখ 06 october 2014। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
আরো পড়ুন
- ড. উত্তম দাশ (১৯৮৬)। হাংরি শ্রুতি ও শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন। বারুইপুর, কলকাতা ৭০০ ১৪৪: মহাদিগন্ত প্রকাশনী।
- ড. বিষ্ণুচন্দ্র দে (২০১৩)। হাংরি আন্দোলন ও দ্রোহপুরুষ কথা। সহযাত্রী, ৮ পটুয়াটোলা লেন, কলকাতা ৭০০ ০০৯: সহযাত্রী।
- ড. শীতল চৌধুরী (২০০৮)। "অনুভবের দর্পণে : প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার"। স্বপ্ন। আসাম ৭৮৮ ৮০৬: নবীনচন্দ্র কলেজ (মলয় রায়চৌধুরী সংখ্যা)।
- এ. এম. মুর্শিদ (এপ্রিল ২০০১)। "এক রাজদ্রোহী রাজকুমারের কাহিনী"। হাওয়া। বাঁশদ্রোণী, কলকাতা ৭০০ ০৭০ (৪৯)।
- প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর ২০১৪)। "কিছু কথা"। চন্দ্রগ্রহণ। কলকাতা ৭০০ ০৩০ (বিশেষ সংখ্যা)।
বহিঃসংযোগ
- প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার (সম্পূর্ণ কবিতা) — আর্টস্ বিডিনিউজ