ফ্লোরিন (মুদ্রা)
ফ্লোরেন্সীয় ফ্লোরিন ছিল একটি সোনার মুদ্রা, যা ১২৫২ থেকে ১৫৩৩ সাল পর্যন্ত খোদাই করা হতো। সেই সময়জুড়ে এর নকশা বা ধাতব সামগ্রীর মানে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।[১] এতে ৫৪ দানা (৩.৪৯৯ গ্রাম, ০.১১৩ ট্রয় আউন্স) নামমাত্র খাঁটি বা 'সূক্ষ্ম' সোনা ছিল।[২] এর ক্রয়ক্ষমতা অনুমান করা কঠিন (এবং পরিবর্তনশীল) তবে সামাজিক পরিস্থিতি ও দৃষ্টিকোণ অনুসারে প্রায় ১৪০ থেকে ১,০০০ আধুনিক মার্কিন ডলার পর্যন্ত ছিল। মুদ্রার নামটি গিগলিও বোতোনাতো (it) থেকে এসেছে। এই শহরের ফুলের প্রতীক হিসেবে এটি মুদ্রার সামনের দিকে খোদাই করা হতো।[৩]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ফিওরিনো দো'রো (সোনার ফ্লোরিন) ফ্লোরেন্স প্রজাতন্ত্রে ব্যবহৃত হতো। এটি সপ্তম শতাব্দীর পর থেকে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক ভূমিকা পালনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জারিকৃত প্রথম ইউরোপীয় স্বর্ণমুদ্রা ছিল। ফ্লোরিন ইউরোপের বিশাল অংশ জুড়ে স্বীকৃত ছিল। লিরা ও ফ্লোরিনের আঞ্চলিক ব্যবহার প্রায়ই একই স্থানেও হতো। সেসব স্থানে লিরা সাধারণত মজুরি প্রদান, খাদ্য ক্রয় ইত্যাদির মতো ছোটো ছোটো লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হতো। অন্যদিকে ফ্লোরিন ব্যবহৃত হতো যৌতুক, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা কর সম্পর্কিত বিষয়গুলোর মতো বৃহত্তর লেনদেনের কাজে।[৪]
১২৫২ সালে প্রথমবার ফ্লোরিন ছাপানো হয়। সেসময় ফ্লোরিনের মান লিরার সমান ছিল, তবে ১৫০০ সাল নাগাদ ফ্লোরিনের মান অনেক বেড়ে যায়। সেসময় সাত লিরের বিনিময়ে এক ফ্লোরিন পাওয়া যেত।[৪]
চতুর্দশ শতাব্দীতে প্রায় ১৫০ টি ইউরোপীয় রাজ্য এবং স্থানীয় মুদ্রা-ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ ফ্লোরিনের নিজস্ব অনুলিপি তৈরি করেছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল হাঙ্গেরীয় ফোরিন্ট। কারণ হাঙ্গেরি কিংডম ইউরোপীয় সোনার একটি প্রধান উত্স ছিল (১৬ তম এবং ১৭ তম শতাব্দীতে নতুন বিশ্বের খনি সরবরাহে অবদান রাখতে শুরু না করা পর্যন্ত, ইউরোপে ব্যবহৃত বেশিরভাগ সোনা আফ্রিকা থেকে এসেছিল)।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মূল ফ্লোরেন্সীয় ফ্লোরিনগুলোর নকশাটি একদিকে শহরের স্বতন্ত্র ফ্লোর-দে-লিস ব্যাজ ছিল এবং অন্যদিকে সিলিস পরা সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্টের দাঁড়ানো ও মুখের চিত্র ছিল।[৫] অন্যান্য দেশের ফ্লোরিনগুলোতে খোদাইকৃত ছাপ (ফ্লেউরের চারপাশে "ফ্লোরেন্তিয়া" এবং অন্যদিকে সাধুর নাম) পরিবর্তন করা হয়েছিল। একইসাথে ফ্লোরের বদলে স্থানীয় রাজকীয় প্রতীক ছাপা হয়েছিল। পরে, অন্যান্য চিত্রগুলো প্রায়ই সেন্ট জনের পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। হাঙ্গেরীয় ফোরিন্টসে, সেন্ট জনের বদলে হাঙ্গেরির প্রাথমিক খ্রিস্টান রাজা এবং পৃষ্ঠপোষক সাধু সেন্ট লাডিসলাস হিসাবে পুনরায় চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং মূল রাজদণ্ডের পরিবর্তে একটি যুদ্ধ কুড়াল প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। ধীরে ধীরে চিত্রটি আরও রাজকীয় চেহারায় পরিণত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অন্যান্য মুদ্রা
[সম্পাদনা]ফ্লোরিন শব্দটি ইউরোপের অন্য কোথাও ধার করা হয়েছিল। ফ্লোরিনের একটি রূপ ছিল রাইখসগুল্ডেন, যা ১৩৫৪ সালে শুরু হওয়া আর্থিক কনভেনশনের একটি সিরিজের অধীনে রাইন (রাইন) নদী উপত্যকার বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোকে ঘিরে বেশ কয়েকটি জার্মান রাজ্য দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এগুলোতে ফ্লোরেনটাইন ফ্লোরিনের (৯৮%) সাথে ব্যবহারিকভাবে অভিন্ন সোনা (৩.৫৪ গ্রাম) ব্যবহৃত হতো। ১৪১৯ সাল নাগাদ, ওজন কিছুটা কমানো হয় (৩.৫১ গ্রাম পর্যন্ত) এবং অন্যান্য ধাতুর মিশ্রণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় (৭৯% সোনায়)। ১৬২৬ সালের মধ্যে স্বর্ণের পরিমাণ আবারও সামান্য হ্রাস করা হয় (৭৭% সোনা)। এসময় ওজন আরও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় (৩.২৪০ গ্রাম)। ১৪০৯ সালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের রাইখসগুল্ডেনের জন্য রাইখসগুল্ডেন মান (সে সময় ৯১.৭% সোনা) গৃহীত হয়। [৬]
ডাচ গিল্ডারের জন্য Fl বা ƒ প্রতীক নির্ধারণ করা হয়। এর অর্থ florijn (ফ্লোরিন)।
১৩৪৪ সালে ইংল্যান্ডের তৃতীয় এডওয়ার্ড দ্বারা প্রথম জারি করা ইংরেজি মুদ্রাটি ফ্লোরিন নামেও পরিচিত ছিল। মূলত ছয় শিলিং মূল্যে এই মুদ্রাটি ২৩ ক্যারেট ৩+১⁄২ দানা (বা২৩+৭⁄৮ ক্যারেট) বিশুদ্ধতা সহ ১০৮ দানা (৬.৯৯৮২৮ গ্রাম) স্বর্ণ দিয়ে গঠিত। [৭] [৮] আরও পরে এটি একটি ব্রিটিশ প্রাক-দশমিক রৌপ্য মুদ্রার (পরে নিকেল রৌপ্য) সাথে সম্পর্কিত যা ২৪ পেন্স বা এক পাউন্ডের এক-দশমাংশ মূল্যের দুই শিলিং (বা দুই বব) "বিট" (সংক্ষিপ্তরূপ ২/-) নামেও পরিচিত।
আয়ারল্যান্ডে একটি রৌপ্য ফ্লোরিন মুদ্রা (আইরিশ পাউন্ডের এক-দশমাংশ মূল্যের আইরিশ ছাপ flóirín যুক্ত) ১৯২৮ এবং ১৯৪৩ সালের মধ্যে ছাপা হয়েছিল। ১৯৪৩ সালে এটি তামা-নিকেলের মতো হয়ে ওঠে। ১৯৯৪ সালের জুনে এটি ব্যবহার থেকে প্রত্যাহার করা হয়। [৯]
হাঙ্গেরিয়ান ফরিন্টের নামকরণ করা হয়েছে ফ্লোরিনের নামে। [১০]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ See the Ricordanze di S. Maria di Cafaggio, which mentions florins being used in the year MCCL (1250).
- ↑ Bernocchi, Mario (১৯৭৬)। Le monete della repubblica fiorentina। Leo S. Olschki Editore। পৃষ্ঠা 66।
- ↑ Bazzicchi, Oreste (২০১১)। Il paradosso francescano tra povertà e società di mercato। Effatà Editrice। পৃষ্ঠা 98। আইএসবিএন 978-88-7402-665-4।
- ↑ ক খ Hollingsworth, Mary (২০১৭)। "A Note to the Reader"। The Medici (ইংরেজি ভাষায়)। Head of Zeus। আইএসবিএন 978-1-78669-151-4।
- ↑ Horner, Susan; Horner, Joanna B. (১৮৮৪)। Walks in Florence and Its Environs। Smith। পৃষ্ঠা 125।
- ↑ W. A. Shaw (১৯৬৭)। The History of Currency 1252–1894 (reprint of second সংস্করণ)। Augustus Kelley। এলসিসিএন 67020086।
- ↑ John S. Dye (১৮৮৩)। Dye's coin encyclopædia: a complete illustrated history of the coins of the world ...। Bradley & company। পৃষ্ঠা 761। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২।
- ↑ Palgrave, Sir Robert Harry Inglis (১৯১২)। Dictionary of political economy। Macmillan and Co.। পৃষ্ঠা 82। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২।
- ↑ "Electronic Irish Statute Book (EISB)"।
- ↑ Engel, Pál, 1938-2001. (২০০১)। The realm of St. Stephen : a history of medieval Hungary, 895-1526। I.B. Tauris। আইএসবিএন 1-4175-4080-X। ওসিএলসি 56676014।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- "Ian Cnulle's Florin"। Society for Creative Anachronism Archive। ১১ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০২৩।
- Philip Grierson (১৯৯১)। Coins of Medieval Europe। Seaby, London। আইএসবিএন 1-85264-058-8।
- Peter Spufford (১৯৮৮)। Money and its use in medieval Europe। Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-37590-8।
- Peter Spufford (১৯৮৬)। Handbook of Medieval Exchange। Royal Historical Society, London। আইএসবিএন 0-86193-105-X।
- Richard A. Goldthwaite, The Economy of Renaissance Florence [১]
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- অর্থ জাদুঘর: ফিওরিনো ডি'ওরো
- ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৩-০৫-২৪ তারিখে ব্রিটিশ ফ্লোরিনের ইতিহাস