বিষয়বস্তুতে চলুন

ফতেহ আলী ওয়াসি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ফতেহ আলী ওয়াইসি থেকে পুনর্নির্দেশিত)
ফতেহ আলী ওয়াসি
জন্ম১৮২০
মৃত্যু১৮৮৬
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
শিক্ষাহুগলী মাদ্রাসা
মাদ্রাসা ই আলিয়া

সুফি ফতেহ আলী ওয়াসি (১৮২০-১৮৮৬) ছিলেন একজন সুফি সাধক, ইসলাম প্রচারক ও ফারসি ভাষার কবি।[১] তার ফার্সি ভাষায় লেখা দিওয়ান-ই-ওয়াসি মহাকাব্যটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। সাহিত্যিক গুরুত্ব বিচারে কাব্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাঁর নামে দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসায় একটি আবাসিক হল রয়েছে।

জন্ম ও পরিচয়[সম্পাদনা]

ফতেহ আলী চট্টগ্রাম জেলার তৎকালীন সাতকানিয়া উপজেলার অন্তর্গত বর্তমান লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মল্লিক সোবহান হাজীপাড়ায় ১৮২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওয়ারেস আলী, তিনিও একজন সুফি সাধক ছিলেন, তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বালাকোটের যুদ্ধে শহীদ হন। ওয়াসির মাতার নাম ছিলো সাঈদা খাতুন, হজ্বে যাওয়ার সময়, ট্রলার ডুবিতে মৃত্যুবরন করেন।

ওয়াসির পূর্বপুরুষগণের আদি নিবাস সৌদি আরবের মক্কাতে, এই পরিবার আলী ইবনে আবু তালিবআবদুল কাদির জিলানীর বংশধর থেকে এসেছে। পরবর্তী সময়ে এরা চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার মল্লিক সোবহান গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

ফতেহ আলী ভারতের হুগলি মোহসিনীয়া মাদ্রাসাকলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। তিনি সুফিবাদের বিভিন্ন ধারার মিশ্র আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন, এসব ধারার মধ্যে কাদেরিয়া, চিশতিয়া ও  নকশবন্দিয়া তরিকা উল্লেখযোগ্য। এসব সাধনার পাশাপাশি তিনি ফারসি ভাষায় কাব্যচর্চাও করেছিলেন। তিনি ওয়াসি ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন, এজন্য তার নামের শেষে ওয়াসি নাম জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তার ফার্সি ভাষায় লেখা দিওয়ান-ই-ওয়াসি মহাকাব্যটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়, এই মহাকাব্যটি লেখকের অন্যতম গুরুত্ববহ বই। সাহিত্যিক গুরুত্ব বিচারে কাব্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তিনি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার পুনাশিতে নিজস্ব বাড়িতে থাকতেন। তবে তিনি কলকাতার শিয়ালদহের একটি স্থানে মঠ কোঠাতে বাস করতেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তিনি কর্মজীবনের প্রথম দিকে কলকাতা হাইকোর্টের ফার্ম বিভাগের কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন। এই সময় তিনি ইসলামি শিক্ষা প্রদান করা শুরু করেন। এরপরে তিনি কলকাতা মেটিয়া বুরুজের নওয়াব শাহ ওয়াজেদ আলীর ব্যক্তিগত সেক্রেটারি হিসাবে কাজ শুরু করেন। এরপরে পলিটিক্যাল পেনশন অফিসের সুপারিন্টেন্ডেন্টের পদে যোগদান করেন। এরপরে তিনি চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়ে পুরোপুরি ইসলামি আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রদানের কাজ শুরু করেন।

আধ্যাত্মিকতা[সম্পাদনা]

ওয়াসি ছোটবেলায় তার বড় ভাইয়ের সাথে আধ্যাত্মিক সিদ্ধির জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের অরণ্যে গিয়েছিলেন। তিনি নূর মুহাম্মদ নিজামপুরীর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন, তার নিকট থেকেই কাদেরিয়া, নকশবন্দীয়া, চিশতিয়া ও মোজাদ্দেদিয়া তরিকার খেলাফত (উত্তরসূরিতা) লাভ করেন।

দিওয়ান-ই-ওয়াসি[সম্পাদনা]

ওয়াইসি তার মহাকাব্য দিওয়ান-ই-ওয়াসি ফার্সি ভাষায় রচনা করেন। এই বইতে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (স) এর প্রতি প্রেম-ভালোবাসা, আধ্যাত্মিক লহরীময় গজল ও ছন্দে লেখা হয়েছে।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ওয়াসি পরবর্তীকালে স্থায়ীভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ চলে যান এবং ১৮৮৬ সালে কলকাতা যাওয়ার সময় হাওড়া রেলওয়ে ষ্টেশনে মৃত্যুবরণ করেন।[১] তিনি ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করেন।

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

দিওয়ানে ওয়াইসি বইয়ে তার ৩৫ জন খলিফা বা আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারীর নাম উল্লেখ আছে। তারা হলেন:

  1. মাওলানা আবদুল হক, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ
  2. মৌলভি আইয়াজ উদ্দীন, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
  3. সুফি নিয়াজ আহমদ, কাতরাপোতা, বর্ধমান, ভারত
  4. আওলাদে রাসুল শাহ সুফি সৈয়দ একরামুল হক, পুনাসী, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ। মাজার হলদিবাড়ি কোচবিহার, ভারত।
  5. মৌলভি মতিয়ুর রহমান, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
  6. মোঃ ইব্রাহীম, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
  7. মৌলভি আবদুল কাদির, ফরিদপুর, বাংলাদেশ
  8. মৌলভি আকবর আলী, সিলেট, বাংলাদেশ
  9. আমজাদ আলী, ঢাকা, বাংলাদেশ
  10. আহমদ আলী, ফরিদপুর, বাংলাদেশ
  11. শাহ দিদার বখস, পদ্মপুকুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ
  12. শাহ বাকিউল্লাহ, কানপুর, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
  13. হজরত আবু বকর সিদ্দিকী, ফুরফুরা, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
  14. শাহ সুফি গোলাম সালমানী, ফুরফুরা, পশ্চিমবঙ্গ
  15. গনিমত উল্লাহ, ফুরফুরা, পশ্চিমবঙ্গ
  16. সদাকত উল্লাহ, ফুরফুরা, পশ্চিমবঙ্গ
  17. মোঃ ইব্রাহিম, ফুরফুরা, হুগলি
  18. মৌলভি আবদুল আজিজ, চন্দ্র জাহানাবাদ, হুগলি
  19. শরাফত উল্লাহ সাহেব, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
  20. কোরবান আলী, বানিয়া তালাব, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
  21. মির্জা আশরাফ আলি, কলকাতা
  22. ওয়াজেদ আলি, মেহদিবাগ, কলকাতা
  23. আতাউর রহমান, চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ
  24. মুবিনুল্লাহ, রামপাড়া, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
  25. মৌলভি সৈয়দ জুলফিকার আলি, টিটাগড়, চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ
  26. আতায়ে এলাহি, মঙ্গলকোট, বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ
  27. মুন্সি সুলায়মান, বারাসাত, চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ
  28. মৌলভি নাছিরুদ্দীন, নদিয়া, পশ্চিমবঙ্গ
  29. কাজী খোদা নওয়াজ, দাহসা, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
  30. আবদুল কাদির, বৈদ্যবাটি, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
  31. কাজি ফাসাহতুল্লাহ, চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ
  32. শায়খ লাল মোহম্মদ, চুচুড়া, হুগলী, পশ্চিমবঙ্গ
  33. মুহাম্মদ সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ, শান্তিপুর, নদিয়া, পশ্চিমবঙ্গ।
  34. গুল হুসাইন সাহেব, খোরাসান, আফগানিস্তান
  35. সৈয়দ আজম হুসাইন, মদিনা শরীফ

ফতেহ আলী ওয়াসি রহ: এর অন্যতম খলিফা একরামুল হক মুর্শিদাবাদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়:[সম্পাদনা]

রাসূলে নোমা শাহ সুফি সৈয়দ আল্লামা ফতে আলী ওআইসি তার অন্যতম খলিফা শাহ সুফি সৈয়দ আল্লামা একরামুল হক মুশিদাবাদী রহ কে খেলাফত নামা প্রদান করেছেন। দরবারে একরামের গদ্দীনিশীন পীর সাহেব নজিরুল হক বর্ণনা করেন। ফতে আলী রহ বলেন,একরাম খেলাফত দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।

তাই তোমাকে খেলাফত প্রাপ্ত হওয়ার জন্য বিলম্ব করতে হ।ো আল্লাহর তরফ হতে ইঙ্গিত হওয়ায় পিরানে পীি বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী কর্তৃক তোমাকে খেলাফত দেওার আদেশ শ প্রাপ্ত হওয়ায় আমআজ ি তোমাকে খেলাফত প্রদান ক। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় তুমি আমার সঙ্গে মোরাকাবায় বসবে ।এরপর দুজনে মোরাকাবায় বসলেন এবং পরিপূর্ণ তালিম তাওয়াজুহ দিয়ে হুজুর কে খেলাফত নামা প্রদান করলেন। একরামুলক হুজুর ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলা জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ১৩৫৯ সালে ১৩ই ভাদ্র ৯ রমজান ৯৩ বছর বয়সে রোজ মঙ্গলবার সকাল আটটার সময় মানবতার মূর্ত প্রতিক ইন্তেকাল করেন।রাসুলে করীম সাঃ এর বংশধর তিনি। এজন্য তাকে আওলাদে রাসুল বলা হয়।


রব

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ফতেহ আলী ওয়াসি - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৫