প্রাচ্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৭৯৬ সালে প্রাচ্যের একটি মানচিত্র, যেখানে এশিয়াঅস্ট্রেলিয়া (তখন "নিউ হল্যান্ড" নামে পরিচিত ছিল) মহাদেশকে দেখানো হয়েছে।

প্রাচ্য একধরনের অধ্যর্থক শব্দ, যা একধরনের সংস্কৃতি, সামাজিক কাঠামো, জাতিদার্শনিক তত্ত্বকে বোঝায়। এর অর্থ ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন হলেও সাধারণত এশিয়া, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলআরব বিশ্বকে প্রাচ্য বলে অভিহিত করা হয়। বিশেষ করে ঐতিহাসিক (প্রাগাধুনিক) আলোচনা এবং আধুনিককালের প্রাচ্যতত্ত্ব সম্পর্কিত আলোচনায় এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়।[১] প্রাচ্যকে অনেকসময় পাশ্চাত্যের বিপরীত হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

"প্রাচ্য" শব্দে অন্তর্গত বিভিন্ন অঞ্চলের সংখ্যা ভিন্ন এবং এদের কোনো একক সাধারণ ঐতিহ্য নেই। যদিও প্রাচ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সাধারণত্ব আছে (যেমন বৈশ্বিক দক্ষিণ), এই অংশগুলো ঐতিহাসিকভাবে নিজেদের সমষ্টি হিসাবে মনে করেনি। আগে "প্রাচ্য" শব্দের এক আক্ষরিক ভৌগোলিক অর্থ ছিল এবং এটি প্রাচীন বিশ্বের পূর্বাংশকে বোঝাত। পরে এই শব্দের মাধ্যমে এশিয়ার সংস্কৃতি ও সভ্যতা এবং ইউরোপ তথা পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য করার জন্য ব্যবহৃত হতে লাগল।

প্রাচ্যের ধারণা[সম্পাদনা]

ধারণাগতভাবে, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যবর্তী সীমানা ভৌগোলিকের তুলনায় আরও সাংস্কৃতিক। যেমন: ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসাবে স্থাপিত অস্ট্রেলিয়ানিউজিল্যান্ডকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে ধরা হয় যদিও এরা ভৌগোলিকভাবে প্রাচ্যের কাছাকাছি। আবার, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো পাশ্চাত্য প্রভাব দ্বারা অনেকটা প্রভাবিত হলেও এদের প্রাচ্যের সঙ্গে ধরা হয়।[২] এশিয়া ও আফ্রিকার বড় অংশ ছাড়াও ইউরোপ উপনিবেশবাদের মাধ্যমে ওশেনিয়া, উত্তর এশিয়াআমেরিকা অঞ্চলের প্রায় সমস্ত সমাজগুলোকে পাশ্চাত্য দুনিয়ার অন্তর্গত করেছে।[৩][৪]

এই "প্রাচ্য" ও "পাশ্চাত্য" বিশ্বের মধ্যে বিভাজন আদতে ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক ইতিহাস এবং খ্রিস্টান ইউরোপ ও তার পূর্বে অবস্থিত সংস্কৃতির মধ্যে বিভেদের ফল। আমেরিকা মহাদেশে ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপনের ফলে এই প্রাচ্য–পাশ্চাত্য বিভেদ আরও বৈশ্বিক আকার ধারণ করেছে। "প্রাচ্য" বা "ভারতীয়" মণ্ডলের ধারণা প্রজাতিগত, ধার্মিক ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের দ্বারা প্রভাবিত। প্রাচ্যতত্ত্ব নামক এক পণ্ডিত পরম্পরার মাধ্যমে পাশ্চাত্যের ব্যক্তিগণ এই পার্থক্য তুলে ধরেছিল।[৫][৬]

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

প্রাচ্যের কোনো একক সংস্কৃতি না থাকলেও এর অনেক উপবিভাগ আছে, যেমন পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়াদক্ষিণপূর্ব এশিয়া, এবং এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে সমন্বয়বাদ দেখা যায়। প্রাচ্য সংস্কৃতির মধ্যে হিন্দুবৌদ্ধধর্মের মতো প্রাচ্য ধর্মের বিস্তার, চীনাব্রাহ্মী লিপির ব্যবহার, রন্ধনশৈলী ও পরম্পরার মধ্যে সমন্বয় ইত্যাদি অন্তর্গত।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Thompson, William; Joseph Hickey (২০০৫)। Society in Focus। Boston: Pearson plc। 0-205-41365-X। 
  2. Meštrovic, Stjepan (১৯৯৪)। Balkanization of the West: The Confluence of Postmodernism and PostcommunismRoutledge। পৃষ্ঠা 61। আইএসবিএন 0-203-34464-2 
  3. "Embassy of Brazil – Ottawa"। Brasembottawa.org। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৬ 
  4. Falcoff, Mark। "Chile Moves On"। AEI। ২০০৯-০৪-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৬ 
  5. Tromans, 6
  6. from the Latin oriens; Oxford English Dictionary