নেঘেরিটিং শিবদৌল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নেঘেরিটিং শিবদৌল
নেঘেরিটিং শিবদৌল
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
ঈশ্বরশিব
অবস্থান
অবস্থানদেরগাঁও
রাজ্যঅসম
দেশভারত
স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীরাজেশ্বর সিংহ

নেঘেরিটিং শিবদৌল আসামের গোলাঘাট জেলার অন্তর্গত দেরগাঁও শহর থেকে পূর্বদিকে ছয় কি.মি. মত ভিতরে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত। নেঘেরিটিং শিবদৌল দু'শ বছরেরও অধিক পুরানো বলে অনুমান করা হয়। তিনকুড়ি পনেরোটা পাথরের সিড়ি উঠে গিয়ে প্রায় বিশ গজ সিড়ি পার হয়ে ক্রমান্বয়ে ওপরে উঠে যাওয়া বাট অতিক্রম করে মন্দিরের লোহার গেটটি পাওয়া যায়। গেট থেকে একশ গজ গেলেই মন্দিরের বাটসোরা পাওয়া যায়। চৌহদ্দির দশবিঘা জায়গার মধ্যে মন্দিরটি অবস্থিত।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

আহোম রাজবংশের রাজা প্রতাপ সিংহ বা চুচেংফা দেরগাঁওয়ের মন্দির তৈরির আগে দেরগাঁওয়ের গেলাবিল নদীর কাছে মহাদেবের একটি মন্দির তৈরি হয়েছিল। এই দেবালয়টি নদীর জল গ্রাস করার পর ১৬৮৭ শকে (ইংরাজী ১৭৬৫ সালে) রাজা রাজেশ্বর সিংহ মন্দিরটি নেঘেরিটিং নামক গিরি শিখরে তৈরি করেন [১]। প্রবাদ মতে, টিলাটির উপর নেঘেরি সরাইয়ের খোরোং ছিল বলে এর নাম নেঘেরিটিং রাখা হয়। দেরগাঁওয়ের শিবদৌলের ঐতিহ্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল দেবদাসী নৃত্য। এসময়ে এই নৃত্য দেখতে বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসত। এই নৃত্য পটিয়সীদেরকে "নটী" বলা হত। নটীরা নৃত্য করার জন্য মাথার ওপরের মধ্যভাগে বড় করে খোঁপা বাঁধত, একে "নেঘেরী খোঁপা" বলা হত। চিনাতলার নটের কন্যা ফুলমতী দেরগাঁওয়ের নটী ছিলেন। ফুলমতীর নৃত্যে সন্তুষ্ট হয়ে রাজা শিবসিংহ তাকে রাজকারেং-এ নিয়ে এসে ফুলেশ্বরী কুঁয়রী ও প্রমথেশ্বরী নাম দেন। বররাজা উপাধি প্রদানের মাধ্যমে তাকে আসামের রানী করেছিলেন।

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

নেঘেরিটিং শিবদৌল এবং দৌলের গায়ে থাকা কয়েকটি ভাস্কর্যের ছবি।

চ্যাপ্টা ইট দিয়ে তৈরি কর্দৈশিরীয়া নেঘেরিটিং শিবদৌল আহোম যুগের কারুকার্য্যের এক সুন্দর নির্দশন। দৌল সমূহের বাইরে থাকা নানা ধরনের মূর্তি বর্তমানে লোপ পেয়েছে। বড় দৌলটির চারদিকে চারটি দৌল আছে। প্রতিটি দৌলের একটি আগসোরা আছে। মূল দৌলে বাণলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই লিংগটির আকার প্রায় ৩ ফুট। বাকীগুলিতে গণেশ, বিষ্ণু, দুর্গা এবং সূর্য দেবতার বিগ্রহ আছে[২]। দেরগাঁওয়ের শিবদৌলের প্রতি আহোম রাজবংশের অসীম ভক্তি ছিল। তাঁরা পূজার নির্মালি নিয়ে এসে আহার গ্রহণ করতেন। এর জন্য দেরগাঁও থেকে রাজধানী রংপুর পর্যন্ত ‘বরআলি’ নামের এটি ছোট পথ ছিল। দৌলের প্রধান ঠাকুরকে "বরঠাকুর" বলা হত। বর্তমান দেরগাঁও শিবদৌলের পূজারী ব্রাহ্মণদের বেশিরভাগই আহোম যুগে ভাটির দিক থেকে আসা। অনুমান করা হয় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য এবং প্রাচীন মন্দিরসমূহ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় রাজবাড়ির পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় ব্রাহ্মণ পূজারীগণ অন্যস্থানে চলে যান বা তাঁরা বৃত্তি বন্ধ করে দেন। তখন রাজা প্রতাপ সিংহ ভূধর আগমাচার্য্যকে নতুন পূজারী হিসাবে আনতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই আগমাচার্য্যের বংশধররা এখনও নেঘেরিটিং দৌলের সেবায় আছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Thousands throng Negheriting Shivadol"। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ January 07, 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. "Negheriting Shiva Doul"। সংগ্রহের তারিখ January 07, 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]