নীহারবালা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নীহারবালা
জন্ম১৮৯৮
মৃত্যু৭ মার্চ ১৯৫৪
জাতীয়তাভারতীয় 
নাগরিকত্বভারতীয় 
পেশাঅভিনেত্রী, গায়িকা, নৃত্যশিল্পী
পিতা-মাতাকিশোরীমোহন সরকার (পিতা)
নীরদা (মাতা)

নীহারবালা (১৮৯৮ – ৭ মার্চ ১৯৫৪) বাংলা রঙ্গমঞ্চের নৃত্যগীতে সুদক্ষা খ্যাতনাম্নী অভিনেত্রী।[১]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

নীহারবালার জন্ম ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে। পিতা কিশোরী মোহন সরকার ও মাতা নীরদা। মাতার কাছেই তার শিক্ষা আর বেড়ে ওঠা এবং মাত্র নয় বৎসর বয়সেই তার রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ। তবে নৃত্য ও সঙ্গীতে  প্রশিক্ষণের জন্য কিছুদিন মঞ্চ ত্যাগ করেন। সঙ্গীতের শিক্ষা নেন গৌরীশঙ্কর মিশ্র'র কাছে। নৃত্য ও সঙ্গীতে তালিম নেওয়ার পর পুনরায়  ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রঙ্গমঞ্চে যোগ দেন।[২]

অভিনয় জীবন[সম্পাদনা]

১৯২১ খ্রিস্টাব্দ হতে তিনি দীর্ঘদিন স্টার থিয়েটারে অভিনয় করেন। স্ত্রী-চরিত্র অভিনয়ে একদিকে নাট্যসম্রাজ্ঞী তারাসুন্দরী ও অন্যদিকে লাস্যময়ী নীহারবালা সেসময় স্টারের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে "কর্ণার্জুন" নাটকে 'নিয়তি' র ভূমিকায় অভিনয় করে প্রথম খ্যাতি লাভ করেন। নাটকটি সেসময় দু-শো রজনী অভিনীত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "চিরকুমার সভা" নাটকে 'নীরবালা'র ভূমিকায় তার  অভিনয় দেখেন। নাটকে সঠিকভাবে তার নাট্যগীতির প্রয়োগের দক্ষতা কবিকে মুগ্ধ করে ও তিনি কবির প্রশংসা কুড়ান। এরপর গ্রামোফোন কোম্পানি তার অনেক গান রেকর্ড করে। রেকর্ডে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল-

  • 'কালপ্রবাহ চলে ধীরে'
  • 'আমি কখন ভাঙি কখন গড়ি'
  • 'প্রাণহীনা পুতুল সমান'

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে স্টার থিয়েটার গোষ্ঠীর সঙ্গে বর্মায় যান। সেখানে  "কর্ণার্জুন" ও "ইরাণের রানী" দুটি নাটকে অভিনয় করেন। তিন দশকের অভিনয় জীবনে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন। উল্লেখযোগ্য নাটক গুলি হল-

  • রাখিবন্ধন
  • ছিন্নহার
  • অপ্সরা
  • 'সধবার একদশী
  • মুক্তির ডাক
  • জয়দেব
  • চণ্ডীদাস
  • প্রফুল্ল
  • বন্দিনী
  • রূপকুমারী
  • বিবাহ বিভ্রাট
  • মৃণালিনী
  • কপালকুণ্ডলা 
  • নাহের ( বন্দিনীর ভূমিকায়)
  • সুদত্তা (ঋষির মেয়ে ভূমিকায়)
  • রামী 
  • চন্দনা
  • আলেয়া প্রভৃতি

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত নাট্য নিকেতনের (বর্তমানে বিশ্বরূপা ) সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন। মিনার্ভা থিয়েটারে তিনি কয়েকটি নাটকে সখীদের নৃত্য শেখান। স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র "চন্দ্রশেখর" অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এখানে তার সহঅভিনেতা ছিলেন নট ও নাট্যকার  অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। যে সমস্ত চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ভূমিকায়  তাকে অভিনয় দেখা গিয়েছে সেগুলি হল -

  • 'মিশর রানী' (১৯২৪) (সহ অভিনেত্রী)
  • 'কেলোর কীর্তি' (১৯২৮)
  • 'দেবদাস' (১৯২৮)
  • 'প্রহ্লাদ' (১৯৩১) (নর্তকী)
  • 'চাঁদ সদাগর' (১৯৩৪) (নেতা ধোপানি)
  • 'বিদ্যাসুন্দর' (১৯৩৫) (মালিনী)
  • 'সেলিমা' (১৯৩৫) (হিন্দি)
  • 'আবর্তন' (১৯৩৬)

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে পুদুচেরি যান। তারপর থেকে তিনি সেখানকার অরবিন্দ আশ্রমের নিয়মিত দর্শনার্থী হয়ে যান। 

অবসরকালীন জীবন ও জীবনাবসান[সম্পাদনা]

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে অভিনয়জগৎ থেকে অবসর নিয়ে শ্রীঅরবিন্দের পণ্ডিচেরি আশ্রমের বাসিন্দা হন এবং সেখানকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে থাকেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ৭ ই মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬,  পৃষ্ঠা ৩৭৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "নীহারবালা জীবনী (ইংরাজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৬