নাদর ইবনে আল-হারিস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সিয়ার-ই নবী একটি চিত্র, আলী মুহাম্মদ এবং তার সঙ্গীদের উপস্থিতিতে নাদর ইবনে আল-হারিসের শিরশ্ছেদ করছেন।

আল-নাদর ইবনে আল-হারিস ইবনে আলকামা ইবনে কালাদা ইবনে আবদ মানাফ ইবনে আবদ আল-দার ইবনে কুসায়ি ( আরবি: النضر إبن الحارث) (মৃত্যু. ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে) একজন আরব পৌত্তলিক চিকিৎসক ছিলেন যিনি ইসলামিক নবী মুহাম্মদের সর্বশ্রেষ্ঠ কুরাইশি বিরোধীদের একজন হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি বদরের যুদ্ধের পর পৌত্তলিক যোদ্ধা এবং পতাকাবাহী হিসেবে বন্দী হন এবং মক্কায় নবী মুহাম্মদ এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার অংশগ্রহণ ও নিপীড়নের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।[১] যুদ্ধ থেকে মদিনায় ফিরে আসার আগে আলী ইবনে আবি তালিব আস-সাফরা'তে নবী ও সাহাবাদের সামনে তার শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন।

সিরাত অনুসারে, এই ঘটনার সময় দুই বন্দী - আল-নাদর ইবনুল-হারিস এবং 'উকবা ইবনে আবু মুয়াইতকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, প্রথম জনকে আলী এবং পরের জনকে আসিম বিন সাবিত আল-আনসারী কার্যকর করেন। অধ্যাপক সারাহ বোয়েন সাভান্তের মতে, এই ঘটনাটি নাদরের বোনকুতাইলাকে তার মৃত্যুতে একটি শোকগাথা রচনা করতে অনুপ্রাণিত করে বলে দাবি করে, যাতে হত্যা জন্য মুহাম্মাদকে দায়ী করা হয়।[২][৩]

জীবন[সম্পাদনা]

মক্কার সময়কালে, নাদর মুসলিম সম্প্রদায়ের বয়কটের পক্ষে সমর্থন করে মুসলিমদের কাছে পণ্য বিক্রি বন্ধ করে তাদের অনাহারে রাখার নেতৃত্ব্দানকারী দলিল লেখক হিসাবে পরিচিত ছিল।[৪] তিনি মক্কার যুগে ইসলামিক নবী মুহাম্মদ এবং তাঁর বার্তার অন্যতম বিরোধী এবং তাদের নিপীড়নের প্রবর্তক ছিল।[১] মুকাতিল ইবনে সুলায়মানের মতো ইসলামিক ঐতিহ্যবাদীদের মতে, নাদর তার কুরআনের আয়াতে প্রাচীন মানুষের গল্পের ভিত্তিতে মুহাম্মদ বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনেছিল। বদরের যুদ্ধে তার সেনাবাহিনী মুসলিমদের আক্রমণে পরাজিত হওয়ার পর তাকে বন্দী করা হয় এবং মক্কার নিপীড়নে তার অংশগ্রহণ ও জড়িত থাকার জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মুহাম্মাদ মোহর আলী আল-নাদরকে ঘাতক হিসাবেও উল্লেখ করেছেন যে মুহাম্মদকে মদিনায় হিজরতের আগে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ ডেভিড স্যামুয়েল মারগোলিউথ অবশ্য দাবি করেছেন যে তাকে তার চ্যালেঞ্জ এবং মুহাম্মাদকে উপহাস করার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং এই সংস্করণটি তাবারি সহ নবম এবং দশম শতাব্দীর কিছু মুসলিম উৎস দ্বারা সমর্থিত।[৫] আল-ওয়াকিদি উল্লেখ করেছেন যে যখন নাদর মুসলমানদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, তারা উত্তর দিয়েছিল যে এটি তার নিপীড়ন ও নির্যাতনের পাশাপাশি কুরআনকে উপহাস করার জন্য।[৬][৭]

নাদির বিন আল-হারিসের শিরশ্ছেদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত[সম্পাদনা]

ইবনে কাসির তার তাফসির ইবনে কাসির গ্রন্থেও এই ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে কুরআনের আয়াত ৮:৩১ নাদির বিন আল-হারিস সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিল। কুরআন ৮:৩১ এবং কুরআন ৮:৫ সম্পর্কে ইবনে কাসিরের ভাষ্য নিম্নরূপ:[৮][৯]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Al-Mubarakpuri, Safi-Ur-Rahman (২০১৫)। The Sealed Nectar (Ar-Raheeq Al-mMakhtum): Biography of the Noble prophet (Revised সংস্করণ)। Darussalam Publications। পৃষ্ঠা 274। আইএসবিএন 978-1591440710 
  2. Savant, Sarah Bowen (২০১৩)। The New Muslims of Post-Conquest Iran: Tradition, Memory, and Conversion (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা ১৭৬। আইএসবিএন 978-1-107-29231-4 
  3. Ibn Khallikān, 1211-1282; Slane, William Mac Guckin (১৮৪২)। Ibn Khallikan's biographical dictionary। University of Michigan। Paris, Printed for the Oriental translation fund of Great Britain and Ireland। 
  4. Ibn Kathir। Bidaya Wa Nihaya (Volume 2 সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 30–31। 
  5. Sarah Boven Savant (৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। The New Muslims of Post-Conquest Iran: Tradition, Memory, and Conversion। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 174, 175। আইএসবিএন 978-1107292314 
  6. Rizwi Faizer (৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। The Life of Muhammad: Al-Waqidi's Kitab Al-Maghazi। Routledge। পৃষ্ঠা 53, 54। আইএসবিএন 978-1136921148 
  7. Journal of King Abdulaziz University: Islamic economics, Volume 3। al-Majlis al-'Ilmī bi-Jāmi'at al-Malik 'Abd al-'Azīz। পৃষ্ঠা 106। 
  8. [কুরআন ৮:৩১] and [কুরআন ৮:৫]
  9. Abdul-Rahman, Muhammad Saed (২০০৯-১০-২৯)। The Meaning and Explanation of the Glorious Qur'an (Vol 3) 2nd Edition (ইংরেজি ভাষায়)। MSA Publication Limited। পৃষ্ঠা ৪১২। আইএসবিএন 978-1-86179-769-8