নয়নের আলো
নয়নের আলো | |
---|---|
পরিচালক | বেলাল আহমেদ |
প্রযোজক | বেগম শাহনাজ সুলতানা |
রচয়িতা | হিরেন দে (সংলাপ) |
চিত্রনাট্যকার | বেলাল আহমেদ |
কাহিনিকার | বেলাল আহমেদ |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল |
চিত্রগ্রাহক | বেবী ইসলাম |
সম্পাদক | আতিকুর রহমান মল্লিক |
পরিবেশক | সপ্তরূপা ফিল্মস |
মুক্তি | ৩ আগস্ট ১৯৮৪ |
স্থিতিকাল | ১৪৪ মিনিট |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
নয়নের আলো বেলাল আহমেদ পরিচালিত ১৯৮৪ সালের সঙ্গীতধর্মী প্রণয়ধর্মী-নাট্য চলচ্চিত্র।[১] চলচ্চিত্রের কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন বেলাল আহমেদ এবং সংলাপ লিখেছেন হিরেন দে। বেগম শাহনাজ সুলতানা প্রযোজিত ও কাজী ফরিদ নিবেদিত চলচ্চিত্রটি পরিবেশন করে সপ্তরূপা ফিল্মস। একজন গায়ক ও দুই যুবতীর ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে এই চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এতে গায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন জাফর ইকবাল,[২] এবং দুই যুবতী চরিত্রে অভিনয় করেন কাজরী ও সুবর্ণা মুস্তাফা। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন প্রবীর মিত্র, আনোয়ার হোসেন, সুচেতা মালিয়া, রাইসুল ইসলাম আসাদ[৩] প্রমুখ।
চলচ্চিত্রটি ১৩ আগস্ট, ১৯৮৪ সালে প্রথম সপ্তাহে ১৩টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[৪] এটি কাজরী অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। ছবিটির চিত্রগ্রাহক বেবী ইসলাম ৯ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক (সাদাকালো) বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া সামিনা চৌধুরী "আমি তোমার দুটি চোখের তারা হয়ে" গানের জন্য শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।[৫]
কাহিনী সংক্ষেপ
[সম্পাদনা]জীবন গ্রামে মঞ্চে গান গায়। সে উপার্জন দিয়ে সে আর তার মা গ্রামের এক কোণে বাস করে। জীবন ভালোবাসে আলোকে। কিন্তু আলোর বাবা গ্রামের প্রভাবশালী হওয়ায় সে জীবনকে আলোর সাথে মিশতে মানা করে দেয় এবং গ্রামে তার গান গাওয়া বন্ধ করে দেয়। এসময়ে তার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায় এবং তাকে তার বাবার গাওয়া গান গাইতে বলে। মায়ের অনুরোধে সে গান গায়। গ্রামের লোকেরা তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়।
গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে সে শহরে চলে আসে। শহরে তাকে আবিষ্কার করে ড্রাইভার মন্টু। সে তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়, যেখানে তার মন্টুর বোন নয়নের সাথে পরিচয় হয়। একদিন জীবন আর মন্টু সাথে এক পার্কে গান গাওয়ার সময় সঙ্গীত পরিচালক রুনা খানের সাথে তাদের পরিচয় হয়। রুনা জীবনকে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেয় এবং তার গান রেকর্ড করে। শীঘ্রই সে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে আলো বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে শহরে চলে আসে এবং জীবনকে খুঁজে বেড়ায়। রুনা খানের প্রাক্তন প্রেমিক রাসেলের সাথে এক সিডির দোকানে তার দেখা হয়। রাসেল তাকে রুনা খানের পার্টিতে নিয়ে আসে। আলো রুনা খান আর জীবনকে একত্রে দেখে অভিমান করে পার্টি ছেড়ে চলে যায়।
রাসেল আলোকে আধুনিকতার নাম করে ক্লাব ড্যান্সারে পরিণত করে। জীবনের সাথে তার দেখা হলে আলো তাকে উপেক্ষা করে। রুনা জীবন আর আলোর পূর্ব পরিচয় ও প্রেমের কথার জানতে পেরে তার সাথে দেখা করতে যায়। কিন্তু আলো তার আগেই গাড়ি দুর্ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। সে হাসপাতালে নয়ন তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভর্তি ছিল। জীবন নয়নকে দেখতে সেই হাসপাতালে গিয়েছিল এবং আলোকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যেতে দেখে চিনতে পারে। নয়নও জীবনকে পছন্দ করে। এখন জীবন নয়ন আর আলোর মধ্যে থেকে কাকে বেচে নেবে।
কুশীলব
[সম্পাদনা]- জাফর ইকবাল - জীবন
- কাজরী - আলো
- সুবর্ণা মুস্তাফা - নয়ন
- প্রবীর মিত্র - ড্রাইভার মন্টু
- আনোয়ার হোসেন - ডক্টর
- রাইসুল ইসলাম আসাদ - রাসেল
- সুচেতা মালিয়া - রুনা খান
- আখতার হোসেন - মাতবর
- আনিসুর রহমান আনিস - ঘটক
- শেখ ফজলুর রহমান - রুনার নানা
- সাবিহা - বোষ্টমী
- টেলি সামাদ - বিজু
- দিলীপ বিশ্বাস -
- দারাশিকো - আবুলের বাবা
- ইদ্রিস - আবুল
- তন্দ্রা ইসলাম - জীবনের মা
- মিজু আহমেদ
- অনু
- অনুপ
- পরেশ বসু
- ইয়াসমিন
- শাহ আলম কিরণ
- কবির মুরাদ
- মহিউদ্দিন
- লোপা
- রিজিয়া
- নয়ন
- সন্ধ্যা
- কাজল
- ঝর্ণা
নির্মাণ
[সম্পাদনা]চিত্রনাট্য উন্নয়ন
[সম্পাদনা]১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে নাগরদোলা চলচ্চিত্র মুক্তির এক মাস পর বেলাল আহমেদ নতুন আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেন এবং সে অনুযায়ী কাহিনী লিখতে শুরু করেন। এক বছর পর কাহিনী লিখা শেষ হলে তিনি সপ্তরূপা ফিল্মসের কাজী ফরিদকে তা দেখান। কাজী ফরিদের কাহিনী পছন্দ হলে বেলাল আহমেদ হিরেন দেকে নিয়ে সংলাপ লিখার কাজ শেষ করেন।[৪]
অভিনয়শিল্পী নির্বাচন
[সম্পাদনা]বেলাল আহমেদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নতুন অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে কাজ করবেন। ফলে তিনি পূর্বে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সুবর্ণা মুস্তাফা এবং নবাগত কাজরীকে অভিনেত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেন। আর অভিনেতা চরিত্রে তিনি জাফর ইকবালকে নির্বাচিত করেন। জাফর ইকবাল এর আগে শহুরে ফ্যাশনেবল চরিত্রে অভিনয় করলেও গ্রাম্য চরিত্রে এই প্রথম অভিনয় করেন।[৪]
চিত্রগ্রহণ
[সম্পাদনা]ছবিটির মূল চিত্রগ্রহণ শুরু হয় ১৯৮২ সালে। মানিকগঞ্জের প্রশিকায় ছবির ৯০ ভাগ শ্যুটিং হয় এবং বাকি ১০ ভাগ শ্যুটিং হয় বিএফডিসিতে। ছবির ডাবিং, সম্পাদনা ও মুদ্রণ হয় মিরপুরের একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন স্টুডিওতে।[৪]
সঙ্গীত
[সম্পাদনা]নয়নের আলো চলচ্চিত্রের গীত রচনা ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। এই চলচ্চিত্র দিয়ে সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।[৬] বুলবুল এই ছবির জন্য ১৬টি গান রচনা ও সুরারোপ করেছিলেন। তিনমাস নিরীক্ষার পর ৫টি গান রেখেছিলেন।[৭] ছায়াছবির গান গুলি ১৯৮৫ সালে গীতবিতান হতে গ্রামোফোন সিডিতে মুক্তি পায়।[তথ্যসূত্র দরকার] ১৯৯৮ সালে একই নামে টলিউডে আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়, তাতে "আমার সারাদেহ খেয়োগো মাটি", "আমার বাবার মুখে" ও "আমি তোমার দুটি চোখের দুটি তারা হয়ে" গান তিনটি ব্যবহার করা হয়, তবে তাতে গীতিকার ও সুরকার হিসেবে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের নাম উল্লেখ করা হয় নি। এ নিয়ে বুলবুল বিস্মিত ও হতাশ হয়েছেন।[৮] গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এন্ড্রু কিশোর এবং সামিনা চৌধুরী।[৯]
গানের তালিকা
[সম্পাদনা]নং. | শিরোনাম | রচয়িতা | কণ্ঠশিল্পী | দৈর্ঘ্য |
---|---|---|---|---|
১. | "আমার সারাদেহ খেয়োগো মাটি" | আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল | এন্ড্রু কিশোর | : |
২. | "আমার বাবার মুখে" | আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল | এন্ড্রু কিশোর | : |
৩. | "আমার বুকের মধ্যেখানে" | আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল | এন্ড্রু কিশোর ও সামিনা চৌধুরী | : |
৪. | "আমি তোমার দুটি চোখের তারা হয়ে" | আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল | সামিনা চৌধুরী | : |
সম্মাননা
[সম্পাদনা]- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক (সাদাকালো) - বেবী ইসলাম
- বাচসাস পুরস্কার
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী - সামিনা চৌধুরী
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "চলচ্চিত্র পরিচালক বেলাল আহমেদ আর নেই"। দেশে বিদেশে। ১৮ আগস্ট ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ মারিয়া, শান্তা (২৪ সেপ্টেম্বর,২০১৪)। "'আমি তো এখন আর নই কারও'"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "৩২ বছর পর একসঙ্গে চলচ্চিত্রে আসাদ-সুবর্ণা"। দৈনিক ইনকিলাব। ১৭ অক্টোবর ২০১৬। ২৮ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ "চার বছরের ফসল 'নয়নের আলো'"। বাংলা মুভি ডেটাবেজ। ১ ডিসেম্বর ২০১৪। ২৫ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ নিশীথ সূর্য (২৯ জুন ২০১৫)। "গান কথা গল্প : আমি গান গাইতে চাইনি : সামিনা চৌধুরী"। এনটিভি অনলাইন। ১২ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "বিবিসির সাথে গানগল্প"। বিবিসি বাংলা। ৬ জুন ২০১৪। ১২ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ বকুল, কবির (২০১৬-০২-১১)। "চিরসবুজ ভালোবাসার গান"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১২।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "কলকাতার 'নয়নের আলো'তে নেই বুলবুল"। বাংলা মুভি ডেটাবেজ। ৬ নভেম্বর ২০১৬। ১০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "ভালোবাসার ১০টি চলচ্চিত্রের গান"। দৈনিক প্রথম আলো। ১০-০২-২০১১। ২০১৭-০৭-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে নয়নের আলো (ইংরেজি)
- বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র
- ১৯৮৪-এর চলচ্চিত্র
- ১৯৮০-এর দশকের সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্র
- ১৯৮০-এর দশকের নাট্য চলচ্চিত্র
- ১৯৮০-এর দশকের প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র
- বাংলাদেশী চলচ্চিত্র
- বাংলাদেশী সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্র
- বাংলাদেশী নাট্য চলচ্চিত্র
- বাংলাদেশী প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র
- বেলাল আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্র
- শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) বিজয়ী চলচ্চিত্র
- আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সুরারোপিত চলচ্চিত্র
- ১৯৮০-এর দশকের বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র
- বাংলা ভাষার বাংলাদেশী চলচ্চিত্র