ধম্মালোক মহাস্থবির

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ধম্মালোক মহাস্থবির
অন্য নামভিক্ষু ধম্মালোক মহাথেরো, ধর্মালোক
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
দাসরত্ন

(১৮৯০-০১-১৬)১৬ জানুয়ারি ১৮৯০
অসন ধলাসিক্ব, কাঠমান্ডু, নেপাল
মৃত্যু১৭ অক্টোবর ১৯৬৬(1966-10-17) (বয়স ৭৬)
আনন্দকুটি বিহার, স্বয়ম্ভু, কাঠমান্ডু, নেপাল
ধর্মবৌদ্ধ ধর্ম
জাতীয়তানেপালি
শিক্ষালয়থেরোবাদ
অন্য নামভিক্ষু ধম্মালোক মহাথেরো, ধর্মালোক
কাজবৌদ্ধ সন্ন্যাসী

ধম্মালোক মহাস্থবির (দেবনাগরী: धम्मालोक महास्थविर) (জন্ম দাসরত্ন তুলাধর) (১৬ জানুয়ারি ১৮৯০ – ১৭ অক্টোবর ১৯৬৬) হলেন একজন নেপালি বৌদ্ধ ভিক্ষু, যিনি ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে নেপালে থেরোবাদী বৌদ্ধধর্মের নবজাগরণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ কারণে স্বৈরশাসক রাণাদের শাসনামলে তাকে নেপাল থেকে বহিষ্কার করা হয়।[১]

ধম্মালোক নেপাল ভাষার পুনর্জাগরণের অন্যতম লেখক ছিলেন। সরকারি নিপীড়ন সত্ত্বেও তিনি থেরোবাদ বৌদ্ধধর্ম এবং নেপাল ভাষার প্রচারণা চালিয়ে যান।[২][৩]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

ধম্মালোক (বিকল্প নাম: ভিক্ষু ধম্মালোক মহাথেরো, ধর্মালোক; জন্ম নাম: দাসরত্ন তুলাধর) কাঠমান্ডুর অসন ধলাসিক্বে একটি ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কেশসুন্দর এবং মা বেখা লক্ষ্মী তুলাধর। দাসরত্ন তার প্রাথমিক জীবনে তিব্বতে ব্যবসায়িক কাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং ডাকনাম "বারান সাহু" (बारां साहु) নামে পরিচিত ছিলেন।[৪]

তিনি দিব্যলক্ষ্মীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যাদের ঘরে দুই ছেলে এবং এক মেয়ের জন্ম হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর পর গভীর দুঃখ এবং ভারতে রাহুল সংকৃত্যায়নের সাথে সম্পর্কের কারণে তিনি ধর্মতত্ত্বের প্রতি আকৃষ্ট হন।[৫] তার জ্যেষ্ঠ পুত্র গজ রত্নও সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন এবং অনিরুদ্ধ মহাথেরা নাম ধারণ করেন।

কারাবাস এবং সন্ন্যাসব্রত[সম্পাদনা]

১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে দাসরত্ন ধর্মতত্ত্ব শিক্ষার জন্য শ্রীলংকায় গমন করেন। নেপালে ফিরে এসে তিনি স্বয়ম্ভুর নিকট কিন্দু বহা নামক মঠে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি নিয়মিত আরাধনায় নিয়োজিত থাকতেন এবং অনুদানের জন্য নেপাল ভাষায় লিখিত পামফ্লেট বিলি করতেন। তৎকালে নিষিদ্ধ নেপাল ভাষায় লেখা এবং বৌদ্ধধর্মের প্রচার করার কারণে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ নভেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সাতদিন কারাগারে আটক রাখা হয়।[৬] পরবর্তীকালে দাসরত্ন দেশত্যাগ করে বার্মার রেঙ্গুনে (বর্তমানে ইয়াঙ্গুন, মায়ানমার) চলে যান, যেখানে তিনি এক বছর অতিবাহিত করেন। বার্মা থেকে ফিরে তিনি কুশীনগরে গমন করেন, যেখানে তিনি ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষানবিশ ভিক্ষু হিসেবে যোগ দেন এবং ধম্মালোক নাম পরিগ্রহ করেন।[৭]

কিন্দু বহায় প্রত্যাবর্তনের পর তিনি নেপাল ভাষায় চিরাচরিত প্রথার বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করেন। ভারতের বেনারস থেকে প্রকাশিত লোকায় কুচল কুব্যবহার সুধার ("লোকজ খারাপ প্রচলন এবং কদাচার সংশোধন") এবং ধর্ময় নামায় পাপ ("ধর্মের নামে পাপ") তার উল্লেখযোগ্য ও বিখ্যাত গ্রন্থ। ধম্মালোক সংস্কৃত ভাষায় অশ্ব ঘোষের লেখা বুদ্ধের জীবনীসংক্রান্ত গ্রন্থ বুদ্ধ চরিত নেপাল ভাষায় অনুবাদ করেন।[৮] তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে ভ্রমণকাহিনী মহাচীন যাত্রা ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে কালিম্পং থেকে প্রকাশিত হয়। ধম্মালোক ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সারনাথ থেকে উচ্চতর ভিক্ষুব্রত গ্রহণ করেন।[৯]

নির্বাসন[সম্পাদনা]

১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ধম্মালোক স্বয়ম্ভুতে আনন্দকুটি বিহার প্রতিষ্ঠা করেন, যা আধুনিক নেপালের প্রথম থেরোবাদী বৌদ্ধ বিহার। বিহারটি ক্রমেই নেপালের থেরোবাদী সম্প্রদায়ের কেন্দ্রে পরিণত হয়।[২]

তবে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বৌদ্ধধর্ম এবং নেপাল ভাষার প্রচারের এই কর্মকাণ্ডকে সরকার অবৈধ ঘোষণা করে এবং এই কর্মকাণ্ড বন্ধের সরকারি আদেশ পালনে অস্বীকৃতির জন্য ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ধম্মালোক, প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির এবং কুমার কাশ্যপ মহাস্থবিরসহ আটজন ভিক্ষুকে নেপাল থেকে নির্বাসিত করা হয়।[১০][১১] নির্বাসিত ভিক্ষুরা প্রথমে ভারতের কুশীনগর এবং সেখান থেকে সারনাথে গমন করে। সারনাথে ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ নভেম্বরের পূর্ণিমায় তারা "ধর্মোদয় সভা" নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। "ধর্মোদয় সভা" বৌদ্ধ ধর্মীয় বই এবং ধর্মোদয় নামক সাময়িকী প্রকাশ করে।

ধম্মালোক নির্বাসিত অবস্থায় ভারত, তিব্বত ও ভুটানে দিন অতিবাহিত করেন এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুন কাঠমান্ডুতে ফিরে আসেন।[১২] ১৯৪৬ থেকে ভারতীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায় কর্তৃক ক্রমাগত চাপের ফলে নেপালের সরকার সেন্সরিংয়ের মাধ্যমে নেপাল ভাষায় প্রকাশনার ওপর আংশিকভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।[১৩] ধম্মালোক তার পরবর্তী জীবন লেখালেখি করে কাটান। এছাড়া তিনি বুদ্ধের জন্ম ও বাল্যকাল কাটানো স্থান লুম্বিনী এবং কপিলাবস্তুর উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।[১৪] ধম্মালোক আনন্দকুটি বিহারে মৃত্যুবরণ করেন।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sarah Ethel LeVine; David N Gellner (২০০৫)। Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth Century Nepal। পৃষ্ঠা 41আইএসবিএন 978-0-674-01908-9 
  2. "Theravada Buddhism in Modern Nepal"। Lumbini Nepalese Buddha Dharma Society (UK)। ৪ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১১ 
  3. Gellner, David N. (২০০৪)। "Three Buddhist Hymns from Nepal" (পিডিএফ)Guthi। Newa Pasa Pucha UK। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১১ 
  4. Aniruddha, Bhikshu (July 2004). Mahosadha Mahajataka. Taipei: The Corporate Body of the Buddha Educational Foundation. Page 3.
  5. Sudarshan, Bhikshu (1970). Lumankebahapin ("Memorable Figures"). Kathmandu: Chwasapasa. Pages 75-84.
  6. Lienhard, Siegfried (১৯৯২)। Nevārīgītīmañjarī। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 978-81-208-0963-5 
  7. Mahasthavir, Bhikkhu Dharmaloka (1999). A Pilgrimage in China. Kathmandu: Bhikkhu Aniruddha Mahasthavir. Page 17.
  8. Kloppenborg, Ria। "Theravada Buddhism in Nepal" (পিডিএফ)Kailash। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১১  Page 305.
  9. Mahasthavir, Bhikkhu Dharmaloka (1999). A Pilgrimage in China. Kathmandu: Bhikkhu Aniruddha Mahasthavir. Page 30.
  10. Mahasthavir, Bhikkhu Dharmaloka (1999). A Pilgrimage in China. Kathmandu: Bhikkhu Aniruddha Mahasthavir. Pages 124-125.
  11. Dietrich, Angela (১৯৯৬)। "Buddhist Monks and Rana Rulers: A History of Persecution"Buddhist Himalaya: A Journal of Nagarjuna Institute of Exact Methods। ১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১১ 
  12. "Boudddha Bhichhuharu" (পিডিএফ)Gorkhapatra। ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Page 7.
  13. Hutt, Michael (ডিসেম্বর ১৯৮৬)। "Diversity and Change in the Languages" (পিডিএফ)CNAS Journal। Tribhuvan University। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১১  Page 10.
  14. Sakya, Ratna Man। "Lumbini - The Birthplace of Lord Buddha"। Non-Resident Nepali Association। ২৫ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১১