হীনযান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

হীনযান হল একটি সংস্কৃত শব্দ। এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘ক্ষুদ্রতর বা হীনতর যান’।[১] বৌদ্ধধর্মে অর্হৎ গণ্য হওয়ার জন্য শ্রাবক যে শ্রাবকযান নামক পথ অনুসরণ করেন, তাকেই ‘হীনযান’ বলা হয়। খ্রিস্টীয় ১ম বা ২য় শতাব্দীতে এই শব্দটির প্রচলন ঘটেছিল। সাধারণভাবে ‘মহাযান’ (আক্ষরিক অর্থে ‘মহৎ যান’) শব্দটির বিপরীত শব্দ হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থেকে।

হীনযানের সংজ্ঞা কী বা হীনযান মতবাদের অনুগামী কারা, তা নিয়ে বিভিন্ন প্রকার ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে। কালু রিংপোচের মতে ‘হীন’ বা ‘মহৎ’ শব্দদুটির দ্বারা “আর্থিক বা সামাজিক পরিস্থিতি বোঝায় না। এই শব্দদুটি ধর্মানুশীলনকারীর আধ্যাত্মিক সামর্থ্যের দ্যোতক।”[১]

সংসার যে দুঃখে পরিপূর্ণ, তা আমরা সকলেই অনুভব করি। এই সত্যটি সম্পর্কে অবহিত হওয়াই হীনযান মতবাদের ভিত্তি। এই বিপদ সম্পর্কে সচেতন হলে আমাদের দুঃখ দূর হবে। আমরা ব্যক্তিগত স্তরে মুক্ত হব এবং আনন্দ লাভ করব। আমরা আমাদের নিজেদের স্বার্থে চলি।... [স্বার্থ ত্যাগ করে] ত্যাগ ও তিতিক্ষা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।[২]

খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে ভারত-পর্যটনকারী চীনা ভিক্ষু ই ৎসিং মহাযান ও হীনযান মতের পার্থক্য নিরূপণ করতে গিয়ে লিখেছেন:[৩]

উভয় মতবাদই একটি এবং একই বিনয় গ্রহণ করেছে। উভয়েরই পাঁচ অপরাধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উভয়েই চতুরার্য সত্য পালন করে। যাঁরা বোধিসত্ত্বগণের পূজা করেন এবং মহাযান সূত্রাবলি পাঠ করেন, তাঁদের বলা হয় ‘মহাযানী’। অন্যদিকে এগুলি যাঁরা করেন না, তাঁদের বলা হয় ‘হীনযানী’।

যক্ষ ভাস্কর্যের রিলিফ চিত্র, পাবুরাল্লাকোন্ডা বৌদ্ধ প্রত্নস্থল, অন্ধ্রপ্রদেশ (ভীমুনিপত্তনমের নিকটবর্তী)।
তোটলাকোন্ডা মঠ চত্বরের বৃহদাকার স্তুপ, বিশাখাপত্তনম, অন্ধ্রপ্রদেশ। এই মঠটি প্রথমে একটি হীনযান বিহার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরে থেরবাদী ভিক্ষুদের মঠে পরিণত হয়। খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দীতে এই মঠটি খ্যাতির শীর্ষে অবস্থিত ছিল।

অতীতে পাশ্চাত্যের গবেষকরা হীনযান শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার করতেন। মনিয়ার-উইলিয়ামস তার সংস্কৃত-ইংরেজি অভিধানে এই শব্দটির অর্থ করেছিলেন “বৌদ্ধ মতবাদের প্রাচীনতম পন্থা” ("the earliest system of Buddhist doctrine")। পাশ্চাত্যের গবেষকরাও সেই অর্থেই এই শব্দটি ব্যবহার করতেন।[৪] এই শব্দটিকে শ্রীলঙ্কাদক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধধর্মের প্রধান শাখা হিসেবে প্রচলিত থেরবাদ প্রথার সমার্থক শব্দ হিসেবেও ব্যবহার করা হত। তবে কোনও কোনও গবেষক থেরবাদ মতটিকে এই শব্দটির সঙ্গে যুক্ত করতে চাননি। ১৯৫০ সালে বিশ্ব বৌদ্ধ ভ্রাতৃসঙ্ঘ ঘোষণা করে যে, বর্তমানে প্রচলিত বৌদ্ধধর্মের কোনও শাখার সঙ্গেই হীনযান শব্দটি যুক্ত করা অনুচিত।

নাম-ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

‘হীনযান’ শব্দটি ‘হীন’ ও ‘যান’ শব্দদুটি দ্বারা গঠিত। ‘হীন’ শব্দের অর্থ ‘ক্ষুদ্র’, ‘দরিদ্র’, ‘হীনতর’, ‘পরিত্যক্ত’, ‘অসম্পূর্ণ’ বা ‘ত্রুটিপূর্ণ’।[৫] অন্যদিকে ‘যান’ শব্দটির অর্থ ‘বাহন’। এখানে বাহন বলতে ‘বোধিলাভের পথ’ বোঝানো হয়েছে।[৬] পালি টেক্সট সোসাইটি প্রকাশিত পালি-ইংরেজি অভিধানে (১৯২১-২৫) ‘হীন’ শব্দটিকে কঠোরতর শব্দে অনুবাদ করা হয়েছে। এই অভিধান অনুসারে ‘হীন’ শব্দটির অর্থ হল “দরিদ্র, নিরানন্দময়, অমঙ্গলকারী, নিম্নস্থ, নিরাশাজনক, লজ্জাজনক ও দুষ্ট”।

কুমারজীব ও অন্যান্য অনুবাদকেরা ধ্রুপদি চীনা ভাষায় ‘হীনযান’ শব্দটির অনুবাদ করেছেন ‘ক্ষুদ্র যান’ (小 অর্থে ‘ক্ষুদ্র’, 乘 অর্থে ‘যান’)। যদিও তার আগেও এই শব্দটির অধিকতর যথার্থ অনুবাদ করা হয়েছিল। মোঙ্গোলীয় ভাষাতেও ‘হীনযান’ শব্দটির অনুবাদ (বাগা হোলগোন) করা হয়েছে ‘ক্ষুদ্র’ বা ‘হীনতর’ যান অর্থেই।[৭] অন্যদিকে তিব্বতি ভাষায় ‘হীনযান’ বোঝাতে দুটি শব্দ প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যে থেগ চুং শব্দটির অর্থ ‘ক্ষুদ্র যান’[৮] এবং থেগ দ্মান শব্দটির অর্থ ‘হীনতর যান’ বা ‘হীনতর আধ্যাত্মিক পথ’।[৯]

থ্রাঙ্গু রিংপোচ বলেছেন যে, ‘হীনযান’ কোনও অর্থেই ‘হীন’ নয়। অসঙ্গের ধর্ম ও ধর্মত গ্রন্থের অনুবাদ ও টীকা রচনার সময় তিনি লিখেছেন, “তিব্বতে হীনযান, মহাযান ও বজ্রযান – এই তিন মতই অনুশীলন করা হত। ‘হীনযান’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘হীনতর যান’ [হলেও] এটি কোনও অর্থেই মহাযানের থেকে হীন নয়।”[১০]

উৎস[সম্পাদনা]

জঁ নটিয়ার মনে করেন, ‘হীনযান’ শব্দটির উদ্ভব সম্ভবত ‘মহাযান’ শব্দের উৎপত্তির পরে ঘটেছিল এবং বোধিসত্ত্বযানশ্রাবকযান মতাদর্শের সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে প্রচলিত হয়েছিল। সর্বাগ্রে ‘বোধিসত্ত্বযান’ শব্দটির প্রচলন ঘটে। পরবর্তীকালে বোধিসত্ত্বযানকেই ‘মহাযান’ আখ্যা দেওয়া হয়। এই সময় বৌদ্ধধর্মের মধ্যে বোধিসত্ত্বযান শিক্ষা যখন বেশি করে সমালোচিত হতে শুরু করে, তখনই লব্ধপ্রতিষ্ঠ ‘মহাযান’ শব্দটির বিপরীতার্থক ও হীনতর শব্দ হিসেবে ‘হীনযান’ শব্দটির প্রচলন ঘটে।[১১] প্রাচীনতম বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে ‘মহাযান’ শব্দটিকে ‘বোধিসত্ত্বযান’ শব্দটির সমার্থক শব্দ রূপে ব্যবহার করা হলেও, এই গ্রন্থগুলিতে ‘হীনযান’ শব্দটির ব্যবহার তুলনামূলকভাবে দুর্লভ। প্রাচীনতম অনুবাদ গ্রন্থগুলিতেও সাধারণত এই শব্দটি দেখা যায় না। তাই ‘মহাযান’ ও ‘হীনযান’ শব্দদুটির মধ্যে যে বিরোধের ধারণা প্রচলিত রয়েছে, তা ভ্রান্ত। একই যুগে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে এই শব্দদুটির প্রচলন ঘটেনি।[১২]

পল উইলিয়ামসের মতে, “[মহাযান] চিরকালই হীনযানের কঠোর সমালোচক ছিল, এই মূলগত ভ্রান্ত ধারণাটিকে আমাদের গ্রন্থগুলি সমর্থন করে না।”[১৩] উইলিয়ামস আরও বলেছেন যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উভয় মতের মধ্যে পার্থক্যের প্রমাণ পাওয়া গেলেও এও প্রমাণিত হয়েছে যে, দুই মতবাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল।[১৩]

আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায়গুলিতে মহাযান সদস্যবর্গ[সম্পাদনা]

আধুনিক যুগে ১৮-২০টি আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে কখনও কখনও বিক্ষিপ্তভাবে ‘হীনযান’ মতবাদের অনুগামী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে এই ধরনের শ্রেণিবিন্যাস যথার্থ নয়। মহাযান মতবাদকে যে বৌদ্ধধর্মের একটি পৃথক স্বীকৃত সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত করা হত, তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। এটি ছিল নির্দিষ্ট কিছু আদর্শের সমষ্টি, যা পরবর্তীকালে একটি মতবাদের রূপ নেয়।[১৪] পল উইলিয়ামসও বলেছেন যে, মহাযানের কখনই একটি পৃথক বিনয় ছিল না বা এই মতবাদ কখনই একটি পৃথক বিনয় গ্রহণ করার চেষ্টা করেনি। আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায় থেকে পৃথক কোনও ধর্মীয় পরম্পরাও এই মতবাদের ছিল না। তাই মহাযান মতের অনুসারী ভিক্ষুভিক্ষুণীরা একটি প্রাচীন সম্প্রদায়ের বিনয় অনুসরণ করতেন। বর্তমানে পূর্ব এশিয়ায় এটি হল ধর্মগুপ্তক ধর্মীয় পরম্পরা এবং তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে মূলসর্বাস্তিবাদ ধর্মীয় পরম্পরা। আদি সম্প্রদায়গুলির মধ্যে মহাযান কখনই একটি পৃথক সম্প্রদায় ছিল না।[১৫] ভারত-পর্যটনকারী চীনা ভিক্ষুদের রচনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, ভারতে মহাযান ও অ-মহাযান ভিক্ষুরা প্রায়শই একই মঠে সহাবস্থান করতেন।[১৬]

চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষু ও তীর্থযাত্রী ই ৎসিং বিভিন্ন প্রকার ‘যান’ ও ভারতের আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায়গুলির পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন, “পশ্চিমে (চীনের পশ্চিমে অবস্থিত দেশ অর্থাৎ ভারত) [বৌদ্ধ] সম্প্রদায়গুলির অসংখ্য উপবিভাগ রয়েছে। এগুলির উৎস ভিন্ন ভিন্ন। তবে চারটি মাত্র প্রধান সম্প্রদায়ের প্রথাগত ধারাবাহিকতা রয়েছে।” এই চারটি সম্প্রদায় হল মহাসাংঘিক নিকায়, স্থবির নিকায়, মূলস্থবির নিকায় ও সংমিতীয় নিকায়।[১৭] এই মতবাদগুলি সম্পর্কে ই ৎসিং লিখেছেন, “এই চারটি সম্প্রদায়ের কোনটি মহাযান এবং কোনটি হীনযান, তা নির্দিষ্ট নয়।” সাধারণভাবে বলা যায় যে, একটি বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও তার সদস্যেরা ‘হীনযান’ বা ‘মহাযান’ শিক্ষা গ্রহণ করবে কিনা, তার কোনও নির্দিষ্ট বিধান ছিল না।[১৮]

শুধুমাত্র শ্রাবক ও প্রত্যক্ষবুদ্ধেরা নন, মহাযান মতে পূজিত বোধিসত্ত্বদেরও যে মতবাদ সম্মান করে, তাকে পুরোপুরি ‘হীনযান’ মত বলে চিহ্নিত করা মহাযান মতানুগামী ও নিজের মতকে আক্রমণ করার সামিল। ই ৎসিং বলেছেন, ‘হীনযান’ হল এমন একটি শব্দ যা মতবাদ-সংক্রান্ত পার্থক্যের ভিত্তিতে ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।[৩]

শ্রাবকযান রূপে হীনযান[সম্পাদনা]

গবেষক ইসাবেল ওনিয়ানসের মতে, “আদি বৌদ্ধধর্মে মহাযান মতকে কখনও কখনও হীনযান বা হীনতর পথ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও [...] দ্বিতীয় স্তরের সাহিত্যে আগে থেকেই এই শব্দটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তা ভারতীয় ধর্মগ্রন্থগুলিতে এই শব্দটির উপস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।” তার মতে মহাযানপন্থীরা যে ‘শ্রাবকযান’ শব্দটি ব্যবহার করতেন, তা-ই “রাজনৈতিকভাবে অধিকতর যথাযথ এবং অধিকতর প্রামাণ্য” শব্দ।[১৯] জোনাথান সিল্ক মনে করেন যে, ‘হীনযান’ শব্দটি যেকোনো ক্ষেত্রেই সমালোচকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। এটির দ্বারা বৌদ্ধধর্মের কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে বোঝায় না।[২০]

হীনযান ও থেরবাদ[সম্পাদনা]

চীনা তীর্থযাত্রীদের মত[সম্পাদনা]

খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষু হিউয়েন সাং শ্রীলঙ্কায় মহাবিহারঅভয়গিরি বিহারের সহাবস্থানের বিবরণ দিয়েছেন। তিনি মহাবিহারের ভিক্ষুদের ‘হীনযান স্থবির’ এবং অভয়গিরি বিহারের ভিক্ষুদের ‘মহাযান স্থবির’ নামে উল্লেখ করেন।[২১] হিউয়েন সাং আরও লিখেছেন যে, “মহাবিহারবাসীরা মহাযান মতকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং হীনযান অনুশীলন করতেন। অন্যদিকে অভয়গিরিবিহারবাসীরা হীনযান ও মহাযান উভয় মতই শিক্ষা করতেন এবং ত্রিপিটক প্রচার করতেন।”[২২]

দার্শনিক পার্থক্য[সম্পাদনা]

প্রথম দিকে মহাযানপন্থীরা সর্বাস্তিবাদের বৈভাষিক শাখার দার্শনিক বস্তুবাদের অনুগামী ছিলেন। এই শাখাটি নিশ্চিতভাবেই নিকায় শাখাগুলির “মতবাদ-সংক্রান্ত পদ্ধতিগুলির [সর্বাপেক্ষা অধিক] বোধগম্য কাঠামো” ছিল।[২৩] এই কথা মাথায় রেখে কখনও কখনও বলা হয় যে, মহাযানপন্থীরা থেরবাদকে একটি ‘হীনযান’ সম্প্রদায় মনে করতেন না। কারণ, অধুনা-অবলুপ্ত সর্বাস্তিবাদ সম্প্রদায়টি ছিল মহাযান সমালোচনার প্রাথমিক বিষয় এবং এই সম্প্রদায় ধর্মগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব দাবি করলেও থেরবাদ সম্প্রদায় তা করে না। এক্ষেত্রে থেরবাদ আদি বৌদ্ধধর্মের মনোভাব পোষণ করে। বোধিসত্ত্ব যথাসম্ভব দ্রুত বোধিলাভে সাহায্য করেন না, বরং বোধিলাভের পথ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করেন – এই ধারণা থেরবাদ ধর্মগ্রন্থ বা সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে স্থান পায়নি। অতীতেও পায়নি, এখনও পায় না। থেরবাদ সম্প্রদায় ভৌগোলিক দিক থেকে মহাযানের থেকে দূরে অবস্থান করে। এছাড়াও হীনযান সম্প্রদায়ের কিছু কিছু দৃষ্টিভঙ্গি ও রীতিনীতি মহাযান সম্প্রদায়েও লক্ষিত হয়। এগুলির দিক থেকেও থেরবাদ ও হীনযানের পার্থক্য দৃষ্ট হয়। থেরবাদ ও মহাযান উভয় সম্প্রদায়ই দুঃখের অন্ত ঘটানোর জন্য ব্যক্তির নিজস্ব বোধিলাভের উপর জোর দেয়।[২৪][২৫][২৬] কয়েকজন থেরবাদী ব্যক্তিত্ব প্রজ্ঞাপারমিতাহৃদয়মূলমধ্যমককারিকা গ্রন্থে প্রাপ্ত মহাযান দর্শনের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন।[২৭][২৮]

মহাযানপন্থীদের চিন্তার কারণ ছিল সর্বাস্তিবাদী ও সৌত্রান্তিকদের অস্তিত্ববাদী ধারণা। ডেভিড কালুপাহন মনে করেন যে, শূন্যতা মতবাদের উপর গুরুত্ব আরোপ করে মহাযানীরা প্রাচীন শিক্ষাকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছিল।[২৯] থেরবাদীরাও সর্বাস্তিবাদী ও সৌত্রান্তিকদের মতবাদকে (এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের অনুগামীদের) প্রত্যাখ্যান করে। তারা মনে করতেন, এঁদের তত্ত্ব মূল ধর্মশাস্ত্রের অনস্তিত্ববাদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই বিষয়ে থেরবাদীদের বক্তব্য কথাবট্ঠু গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে।[৩০]

গবেষকদের মত[সম্পাদনা]

অধিকাংশ পাশ্চাত্য গবেষকই থেরবাদ শাখাটিকে মহাযান সাহিত্যে উল্লিখিত অন্যতম হীনযান সম্প্রদায় মনে করেন অথবা হীনযান শব্দটিকে থেরবাদের সমার্থক মনে করেন।[৩১][৩২][৩৩][৩৪][৩৫] এই গবেষকদের মতে, হীনযান শব্দটির মাধ্যমে বৌদ্ধধর্মের সেই সব শাখাকে বোঝায় যেগুলি বুদ্ধের প্রকৃত শিক্ষা হিসেবে মহাযান সূত্রগুলিকে গ্রহণ করে না।[৩২][৩৪] সেই সঙ্গে গবেষকরা হীনযান শব্দটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহারের বিরোধিতা করেন। কোনও কোনও গবেষক এই শব্দটিকে কোনও সম্প্রদায় বোঝানোর জন্য ব্যবহারই করেন না।[৩৬]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. Kalu Rinpoche (1995) Profound Buddhism From Hinayana To Vajrayana: p. 15
  2. Kalu Rinpoche (1995) Profound Buddhism From Hinayana To Vajrayana: p. 16
  3. Williams, Paul (2008) Mahāyāna Buddhism: The Doctrinal Foundations: p. 5
  4. Monier-Williams Sanskrit-English Dictionary (Oxford, 1899), Proper Noun: "simpler or lesser vehicle. Name of the earliest system of Buddhist doctrine (opposite to the later Mahayana; see Yana)."
  5. "Sanskrit Dictionary for Spoken Sanskrit"। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-২৯ 
  6. "Sanskrit Dictionary for Spoken Sanskrit"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৫ 
  7. "It is also certain that Buddhist groups and individuals in China (including Tibet), Korea, Vietnam, and Japan have in the past, as in the very recent present, identified themselves as Mahayana Buddhists, even if the polemical or value claim embedded in that term was only dimly felt, if at all.", Macmillan Encyclopedia of Buddhism, 2004, page 492
  8. "Rangjung Yeshe Wiki - Dharma Dictionary:theg chung"Rangjung Yeshe Wiki। Tsadra Foundation। 
  9. "Rangjung Yeshe Wiki - Dharma Dictionary:theg dman"Rangjung Yeshe Wiki। Tsadra Foundation। 
  10. Khenchen Thrangu Rinpoche. Distinguishing Dharma and Dharmata. 1999. p. 113
  11. Nattier, Jan (2003), A few good men: the Bodhisattva path according to the Inquiry of Ugra: p. 174
  12. Nattier, Jan (2003), A few good men: the Bodhisattva path according to the Inquiry of Ugra: p. 172
  13. Williams, Jane, and Williams, Paul. Buddhism: Critical Concepts in Religious Studies, Volume 3. 2004. p. 43
  14. Nattier, Jan (2003), A few good men: the Bodhisattva path according to the Inquiry of Ugra: p. 193-194
  15. Williams, Paul (2008) Mahayana Buddhism: The Doctrinal Foundations: p. 4-5
  16. Williams, Paul (2000) Buddhist Thought: A Complete Introduction to the Indian Tradition: p. 97
  17. Walser, Joseph (2005) Nagarjuna in Context: Mahayana Buddhism and Early Indian Culture: pp. 41
  18. Walser, Joseph (2005) Nagarjuna in Context: Mahayana Buddhism and Early Indian Culture: pp. 41-42
  19. Isabelle Onians, "Tantric Buddhist Apologetics, or Antinomianism as a Norm," D.Phil. dissertation, Oxford, Trinity Term 2001 pg 72
  20. Jonathan A Silk. What, if anything, is Mahayana Buddhism? Numen 49:4 (2002):335-405. Article reprinted in Williams, Buddhism, Vol III, Routledge, 2005
  21. Baruah, Bibhuti. Buddhist Sects and Sectarianism. 2008. p. 53
  22. Hirakawa, Akira. Groner, Paul. A History of Indian Buddhism: From Śākyamuni to Early Mahāyāna. 2007. p. 121
  23. ""one does not find anywhere else a body of doctrine as organized or as complete as theirs". . . "Indeed, no other competing schools have ever come close to building up such a comprehensive edifice of doctrinal systematics as the Vaibhāśika." The Sautrantika theory of seeds (bija) revisited: With special reference to the ideological continuity between Vasubandhu's theory of seeds and its Srilata/Darstantika precedents by Park, Changhwan, PhD, University of California, Berkeley, 2007 pg 2
  24. Frank J. Hoffman and Deegalle Mahinda, Pāli Buddhism. Routledge Press 1996, page 192.
  25. Richard King, Indian Philosophy: An Introduction to Hindu and Buddhist Thought. Edinburgh University Press, 1999, page 86.
  26. Nyanaponika, Nyaponika Thera, Nyanaponika, Bhikkhu Bodhi, Abhidhamma Studies: Buddhist Explorations of Consciousness and Time. Wisdom Publications, 1998, page 42.
  27. Donald S. Lopez and Dge-ʼdun-chos-ʼphel, The Madman's Middle Way: Reflections on Reality of the Tibetan Monk Gendun Chopel. University of Chicago Press 2006, page 24.
  28. Gil Fronsdal, in Tricycle, posted online on November 8, 2007[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  29. David Kalupahana, Mulamadhyamakakarika of Nagarjuna. Motilal Banarsidass, 2006, page 6.
  30. David Kalupahana, Mulamadhyamakakarika of Nagarjuna. Motilal Banarsidass, 2006, page 24.
  31. Monier-Williams, M. (১৮৮৯)। Buddhism in Its Connexion with Brāhmanism and Hindūism: And in Its Contrast with Christianity। John Murray। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৬-১৩ 
  32. Gombrich, Richard Francis. 1988. Theravāda Buddhism. P. 83
  33. Collins, Steven. 1990. Selfless Persons: Imagery and Thought in Theravāda Buddhism. P.21
  34. Gellner, David N. 2005. Rebuilding Buddhism. P. 14
  35. Swearer, Donald. 2006. Theravada Buddhist Societies. In: Mark Juergensmeyer (ed.) The Oxford Handbook of Global Religions. P. 83
  36. MacMillan Reference Library of Buddhism, 2004, page 328

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]