দেশী সজারু
দেশী শজারু বা ভারতীয় শজারু | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | Mammalia |
বর্গ: | Rodentia |
পরিবার: | Hystricidae |
গণ: | Hystrix |
উপগণ: | Hystrix |
প্রজাতি: | H. indica |
দ্বিপদী নাম | |
Hystrix indica কের, ১৭৯২ |
দেশী সজারু বা ভারতীয় সজারু বা ঝুঁটিধর সজারু[২] (ইংরেজি: Indian Crested Porcupine; বৈজ্ঞানিক নাম: Hystrix indica) তীক্ষ্ণ দন্তবিশিষ্ট ইঁদুরজাতীয় প্রাণী হিসেবে হিস্ট্রিসিডে পরিবারভূক্ত সদস্য। কখনো কখনো এটিকে তীক্ষ্ণ দন্তবিশিষ্ট ইঁদুর হিসেবে গণ্য করা হয়। মূলতঃ দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা; পশ্চিম ও মধ্য এশিয়াসহ আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে এজাতীয় সজারুকে দেখতে পাওয়া যায়। পাহাড়-পর্বত, উষ্ণমণ্ডলীয় এবং নাতিষীতোষ্ণমণ্ডলীয় এলাকার সমতলভূমি ও সংশ্লিষ্ট বনাঞ্চলে দেশী সজারুকে দেখা যায়। হিমালয় পবর্তমালার ২,৪০০ মিটার উচ্চতায়ও দেশী সজারুর সন্ধান পাওয়া গেছে।[৩]
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২]
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]বৃহৎ ইঁদুরজাতীয় প্রাণী হিসেবে দেশী সজারুর দেহ ০.৯ মিটার (৩ ফুট) বা তদূর্ধ্ব হতে পারে এবং দৈহিক ওজন ১৪.৫ কিলোগ্রাম (৩২ পাউন্ড) হয়ে থাকে।[৪] দেহের বহিরাবরণের পশমগুলো মোটা। এতে কয়েক স্তরবিশিষ্ট শক্তিশালী, ধারালো ও তীক্ষ্ণ ধরনের কাঁটা রয়েছে। দীর্ঘতম কাঁটাটি কাঁধের দিকে জন্মায় যা প্রাণীর দেহের এক-তৃতীয়াংশ হয়। এর লেজও ছোট কাঁটার আবরণে পূর্ণ যা আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করে ও বিচ্ছুরণ ঘটায়। এর বিস্তৃত পা এবং লম্বা থাবা রয়েছে। যখন দেশী সজারু আক্রমণের শিকার হয় তখন তার দেহস্থিত কাঁটাগুলো সক্রিয় হয় ও লেজ থেকে খসে গিয়ে শিকারের দিকে বিচ্ছুরিত করে শিকারীকে দূরে সরাতে বাধ্য করে। যদি কোন কারণে এই বিষাক্ত কাঁটা শিকারীর গায়ে বিদ্ধ হয়, তাহলে মৃত্যু কিংবা গুরুতর আহত হবার ঘটনা ঘটতে পারে।
গড়পড়তা স্ত্রীজাতীয় দেশী সজারুর যৌবনপ্রাপ্তি ঘটে ২৫ মাস বয়সে। এর বিপরীতে পুরুষ প্রজাতিটির সময় লাগে প্রায় ২৯ মাস। নিশাচর প্রাণী হিসেবে দেশী সজারু মাটির নিচে আশ্রয় নেয়। স্ত্রী সজারুটি ২১০ দিন সময় পর্যন্ত গর্ভধারন করে। বছরে এরা ১ থেকে সর্বোচ্চ ৪টি শাবক প্রসব করে।[৪]
খাদ্যাভ্যাস
[সম্পাদনা]নিরামিষভোজী জীব হিসেবে এটি পাতা, ঘাস, ছোট ছোট গাছপালা খেয়ে জীবনধারন করে। গায়ের রঙ কালো প্রকৃতির হয়। মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বাসস্থানের উপযোগী পরিবেশ গড়ে। এদের জীবনকালের সঠিক সময়কাল পাওয়া যায়নি। খাবার সংগ্রহের জন্য এরা বিভিন্ন ধরনের গাছপালার পাশাপাশি ফলমূল, শস্য, গাছের শিকড় পর্যন্ত এরা খেয়ে ফেলে। ভারতের কিছু অংশে কৃষকের উৎপাদিত ফসল খেয়ে অনিষ্টকারী প্রাণী হিসেবে এরা পরিচিতি পেয়েছে।[৫]
জিম করবেট এবং কেনেথ এন্ডারসনের ন্যায় অনেক প্রকৃতিবিদ তাদের বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন যে, অনেক বাঘ-চিতাবাঘ সজারুদের সাথে যুদ্ধ করে পরাস্ত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েই মূলতঃ মানুষখেকো প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমেই দেশী সজারুদের আত্মরক্ষা ও বন্য পরিবেশে শিকারী প্রাণীদের সাথে তাদের সক্ষমতা বোঝা যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে ধরা পড়ে যে, কর্ণাটকের দক্ষিণে গুম্মালপুরের চিতাবাঘটির ডান পায়ে দুইটি বিষাক্ত সজারু কাঁটা ফুঁটেছিল। এর ফলশ্রুতিতেই চিতাবাঘটি খেপাটে হয়ে ১৯৫৪ সালে ৪২ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছিল।[৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Amori, G., Hutterer, R., Kryštufek, B., Yigit, N., Mitsain, G. & Muñoz, L. J. P. (2008). Hystrix indica. 2008 IUCN Red List of Threatened Species. IUCN 2008. Retrieved on 5 January 2009.
- ↑ ক খ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৯২
- ↑ Amori, G., Hutterer, R., Kryštufek, B., Yigit, N., Mitsain, G. & Muñoz, L.J.P. (2008). Hystrix indica. 2008IUCN 2008. Retrieved on 18 February 2012.Database entry includes justification for why this species is least concern[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ Porcupine
- ↑ Chakravarthy, A. K.; Girish, A. C.; Shakunthata Sridhara (2006) Pest status of the Indian crested porcupine, Hystrix indica. Authors in Vertebrate pests in agriculture: the Indian scenario (editor Shakunthala Sridhara Book). pages. 287-300 আইএসবিএন ৮১-৭২৩৩-৪৩৬-২
- ↑ The Spotted Devil of Gummalapur, Nine Man-Eaters and one Rogue, Kenneth Anderson, Allen & Unwin Ltd, 1954