বিষয়বস্তুতে চলুন

দুর্জয়-শ্রেণীর টহল জাহাজ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শ্রেণি'র সারাংশ
নির্মাতা:
ব্যবহারকারী:  বাংলাদেশ নৌবাহিনী
উপশ্রেণী: কেরিস-শ্রেণীর জাহাজ
নির্মিত: ২০১১-২০১৭
অনুমোদন লাভ: ২০১৩-বর্তমান
পরিকল্পিত: ৮টি
সম্পন্ন: ৪টি
সক্রিয়: ৪টি
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
প্রকার: টহল জাহাজ
ওজন: ৬৪৮ টন
দৈর্ঘ্য: ৬৪.২ মিটার (২১১ ফু)
প্রস্থ: ৯ মিটার (৩০ ফু)
গভীরতা: ৪ মিটার (১৩ ফু)
প্রচালনশক্তি:
  • ২ x এসইএমটি পিয়েলস্টিক ১৬পিএ৬ভি-২৮০এসটিসি ডিজেল ইঞ্জিন (গণচীন)
  • ২ x শ্যাফট
গতিবেগ: ২৮ নট (৫২ কিমি/ঘ; ৩২ মা/ঘ)
সীমা: ২,৫০০ নটিক্যাল মাইল (২,৯০০ মা; ৪,৬০০ কিমি)
সহনশীলতা: ১৫ দিন
লোকবল: ৬০ জন
সেন্সর এবং
কার্যপদ্ধতি:
  • টাইপ ৩৬০ (এসআর৬০) সার্ফেস সার্চ র‍্যাডার, ই/এফ ব্যান্ড
  • এমআর ১২৩-০২/৭৬ (৭৬.২) মিমি কামানের ফায়ার কন্ট্রোল র‍্যাডার
  • টাইপ ৩৫২ (স্কয়ার টাই) জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ র‍্যাডার, আই ব্যান্ড
  • টাইপ ৩৪৭জি (রাইস বোল) ২০মিমি কামানের ফায়ার কন্ট্রোল র‍্যাডার, আই-ব্যান্ড
  • ইএসএস-৩ সোনার
  • ভিশন মাস্টার চার্ট র‍্যাডার
  • জেএমএ ৩৩৩৬ নেভিগেশন র‍্যাডার, এক্স-ব্যান্ড
  • এসআর৪৭এজি সার্ফেস এন্ড এয়ার সার্চ র‍্যাডার
  • টিআর৪৭সি অনুসরণ র‍্যাডার
  • ইএসএস-২বি সোনার
রণসজ্জা:
  • জাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণ:
    • ১ × এইচ/পিজে-২৬ ৭৬.২ মিমি কামান
    • ২ × ২ সি-৭০৪ জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র
    • ২ × ওয়েরলিকন ২০ মিমি কামান
    • ২ × ৬-টিউব ইডিএস-২৫এ ২৫০ মিমি ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী রকেট লঞ্চার
  • ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণ:
    • ১ x এনজি ১৬-১ ৭৬.২ মিমি কামান
    • ১ x সিএস/এএন২ ৩০ মিমি কামান
    • ২ x ৩ ইটি ৫২সি টর্পেডো

দুর্জয়-শ্রেণী হচ্ছে গণচীন এবং বাংলাদেশে নির্মিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর টহল জাহাজের একটি শ্রেণী। টর্পেডো ও ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত এই জাহাজসমূহ শত্রু জাহাজ ও সাবমেরিনে আক্রমণ করতে সক্ষম। এছাড়াও, শত্রু জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং বিশেষ যুদ্ধকালীন দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম। পাশাপাশি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ক্ষেত্র সমূহের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশের সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও প্রতিটি জাহাজ উপকূলবর্তী অঞ্চল ও গভীর সমুদ্রে টহল প্রদান, উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধ, জলদস্যূতা দমন, মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

দুর্জয় শ্রেণির নকশা করা হয়েছে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে নৌবাহিনীর দীর্ঘসময়ব্যাপী টহল ও নজরদারির প্রয়োজন মেটানোর জন্য। এই শ্রেণির জাহাজগুলো গভীর সাগরেও সীমিত আকারে কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। দুইটি সংস্করণে এই শ্রেণির জাহাজ নির্মিত হয়েছে- জাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণ ও ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণ। দুইটি সংস্করণের জাহাজের কাঠামোগত বৈশিষ্ঠ এক হলেও তাদের অস্ত্রব্যবস্থা ও ইলেক্ট্রনিক্স-এ পার্থক্য রয়েছে।

২০০৯ সালে দুইটি জাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণের জাহাজ তৈরির জন্য চীনের উচ্যাং শিপইয়ার্ডের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট প্রথম জাহাজ, বানৌজা দুর্জয়কে পানিতে ভাসানো হয়। দ্বিতীয় জাহাজ, বানৌজা নির্মূলকে পানিতে ভাসানো হয় ২০১২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাহাজদুটি বাংলাদেশে পৌছে।[] ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট জাহাজদুটি আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবহরে যুক্ত হয়।[]

২০১৪ সালের ৩০ জুন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরবর্তী দুটি জাহাজের জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে চুক্তি করে। ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণের এই দুটি জাহাজ চীন থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের আওতায় বাংলাদেশ নির্মিত হয়।২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এই জাহাজদুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।[] ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর এই দুইটি জাহাজ, বানৌজা দুর্গমবানৌজা নিশানকে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবহরে যুক্ত করা হয়।[]

বৈশিষ্ট্য ও যান্ত্রিক কাঠামো

[সম্পাদনা]

দুর্জয় শ্রেণির প্রতিটি জাহাজ দৈর্ঘ্য ৬৪.২ মিটার (২১১ ফু), প্রস্থ ৯ মিটার (৩০ ফু), গভীরতা ৪ মিটার (১৩ ফু) এবং ওজন ৬৪৮ টন। জাহাজের গলুই স্ফীতাকার হওয়ার কারণে এটি উত্তাল সমুদ্রেও স্থিতিশীল থাকতে পারে। জাহাজগুলোতে চলাচলের জন্য দুইটি শ্যাফট যুক্ত ২টি এসইএমটি পিয়েলস্টিক ১২পিএ৬ ডিজেল ইঞ্জিন রয়েছে। এ পর্যন্ত এই শ্রেনির জাহাজ দুইটি সংস্করণে নির্মিত হয়েছে-

  • জাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণ;
  • ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণ

জাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণের সর্বোচ্চ গতিবেগ: ২৮ নট (৫২ কিমি/ঘ; ৩২ মা/ঘ) এবং সর্বোচ্চ পাল্লা ২,৫০০ নটিক্যাল মাইল (৪,৬০০ কিমি; ২,৯০০ মা)।

ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণে সর্বোচ্চ গতিবেগ: ২৭ নট (৫০ কিমি/ঘ; ৩১ মা/ঘ) এবং পাল্লা ২,০০০ নটিক্যাল মাইল (৩,৭০০ কিমি; ২,৩০০ মা)।

জাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণটি পরিচালনার জন্য ৬০ জন নাবিক ও কর্মকর্তা প্রয়োজন, ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণে প্রয়োজন ৭০ জন। এই শ্রেণির জাহাজ একটানা ১৫ দিন সমুদ্রে অবস্থান করে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম। প্রতিটি জাহাজ ১টি রিজিড হাল ইনফ্ল্যাটেবল বোট বহন করে থাকে।

ইলেক্ট্রনিক্স

[সম্পাদনা]

জাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণ:

জাহাজের প্রধান র‍্যাডার হিসেবে আছে একটি টাইপ ৩৬০ (এসআর৬০) ই/এফ ব্যান্ড সমুদ্রপৃষ্ঠ অনুসন্ধান র‍্যাডার। ৭৬ মিমি কামানের গোলাবর্ষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে একটি রাশিয়ার তৈরি এমআর-১২৩-০২/৭৬ র‍্যাডার। দুইটি ২০ মিমি কামানের জন্য রয়েছে দুইটি টাইপ ৩৪৭জি (রাইস বোল) আই ব্যান্ড গোলাবর্ষণ নিয়ন্ত্রণ র‍্যাডার। সি-৭০৪ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে টাইপ ৩৫২ (স্কয়ার টাই) আই ব্যান্ড র‍্যাডার। এই র‍্যাডার সমুদ্রপৃষ্ঠ অনুসন্ধানের কাজেও ব্যবহার করা যায়। জাহাজে সম্মুখভাগে বসানো একটি ইএসএস-৩ সোনার রয়েছে যার পাল্লা ৮,০০০ মিটার (২৬,০০০ ফু)। এই জাহাজগুলোতে আরো রয়েছে জেআরসিএসএস যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি।

ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণ:

জাহাজের প্রধান র‍্যাডার হিসেবে আছে একটি জাপানি জেএমএ ৩৩৩৬ এক্স-ব্যান্ড নৌচালনা র‍্যাডার এবং একটি চীনা এসআর৪৭এজি সমুদ্রপৃষ্ঠ এবং আকাশ অনুসন্ধান র‍্যাডার। নেভিগেশন র‍্যাডারটিকে সাহায্য করার জন্য রয়েছে ভিশন মাস্টার সামুদ্রিক মানচিত্র প্রস্তুতকারী র‍্যাডার। জাহাজগুলো একটি টিআর৪৭সি রাডার বহন করে যা অনুসরণ র‍্যাডার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডুবোজাহাজ সনাক্তকরণের জন্য জাহাজগুলোতে একটি ৮,০০০ মিটার (২৬,০০০ ফু) পাল্লার ইএসএস-২বি সোনার রয়েছে।[]

রণসজ্জা

[সম্পাদনা]

জাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণ: এই জাহাজে রয়েছে একটি এইচ/পিজে-২৬ ৭৬ মিমি কামান এবং চারটি সি-৭০৪ জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে রয়েছে দুইটি ওয়েরলিকন ২০ মিমি কামান। এছারাও জাহাজটিতে রয়েছে ১২টি ইডিএস-২৫এ ২৫০ মিমি ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী রকেট লঞ্চার এবং ডিকয়।

ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণ: এই জাহাজগুলোতে প্রধান অস্ত্র হিসেবে রয়েছে একটি এনজি ১৬-১ ৭৬ মিমি কামান। এছাড়াও এই জাহাজ একটি সিএস/এএন২ ৩০ মিমি কামান বহন করে যা বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে রয়েছে ছয়টি ইটি ৫২সি ৩২৪ মিমি টর্পেডো।[]

জাহাজসমূহ

[সম্পাদনা]
 নাম   পরিচিতি সংখ্যা   নির্মাতা   নির্মাণাদেশ   পানিতে ভাসানো   হস্তান্তর   কমিশন   অবস্থা 
বানৌজা দুর্জয় পি৮১১ উচ্যাং শিপইয়ার্ড ২০০৯ ২৬ আগস্ট, ২০১২ ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩[] ২৯ আগস্ট, ২০১৩[] সক্রিয়
বানৌজা নির্মূল পি৮১৩ ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩[] সক্রিয়
বানৌজা দুর্গম পি৮১৪ খুলনা শিপইয়ার্ড ৩০ জুন, ২০১৪ ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ৮ নভেম্বর, ২০১৭[] সক্রিয়
বানৌজা নিশান পি৮১৫ ১৫ মার্চ, ২০১৭ সক্রিয়

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "LARGE PATROL CRAFT – Khulna Shipyard Ltd" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২৭ 
  2. "China-built warship for Navy arrives in Ctg"daily sun। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ২৪ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  3. [১]
  4. "Keel Laying of two new warships at Khulna."BSSNews। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫। ১৫ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  5. "President Hamid commissions four new naval ships"। The Dhaka Tribune। ৮ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১৭ 
  6. "2*Large Patrol Craft"। Khulna Shipyard। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭