দিনাজপুর জেলার বধ্যভূমির তালিকা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

দিনাজপুর বাংলাদেশের উত্তরাংশে অবস্থিত একটি জেলা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের হত্যাযজ্ঞের কারণে এই অঞ্চলের বেশ কিছু স্থান বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সূত্র মোতাবেক এ জেলায় মোট ৫৬টি বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ৪টি, চিরিরবন্দরে ৬টি, পার্বতীপুরে ১২টি, হাকিমপুরে ৩টি, ফুলবাড়ীতে ৩টি, বিরলে ৫টি, খানসামায় ৩টি, বিরামপুরে ৪টি, ঘোড়াঘাটে ৬টি, নবাবগঞ্জে ৪টি, বীরগঞ্জে ৪টি ও সেতাবগঞ্জে ২টি বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে। [১]

বিবরণ[সম্পাদনা]

চড়ার হাট বধ্যভূমি

দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৭২৬টি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। ৩২টি বধ্যভূমি ও ৩৪টি গণকবর রয়েছে। [১] তথ্যমতে দিনাজপুর সদরে ৫০৫টি, বিরলে ১৫৬টি, কাহারোলে ৮টি, বোচাগঞ্জে ৮৯টি, বীরগঞ্জে ১৯টি, খানসামায় ১৩টি, চিরিরবন্দরে ১১৭টি, ফুলবাড়িতে ৮৮টি, পার্বতীপুরে ৫২৬টি, বিরামপুরে ১৭৭টি, নবাবগঞ্জে ১২টি, হাকিমপুরে ৩০টি ও ঘোড়াঘাটে ১২৭টি গণহত্যা, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্র ছিল।[২][৩]

তালিকা[সম্পাদনা]

পার্বতীপুর উপজেলা[সম্পাদনা]

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও দোসরদের সহযোগিতায় আশপাশের নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে পার্বতীপুরের রেলইঞ্জিনের উত্তপ্ত বয়লারে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারা হতো। এখানে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। [১] অন্যান্য বধ্যভূমিগুলো হল-

  • হোম সিগন্যাল বধ্যভূমি

১৯৭১ সালে পার্বতীপুর রেলস্টেশনের উত্তরে হোম সিগন্যালের কাছে এ জেলার সবচেয়ে বড় গণকবরটি অবস্থিত। এখানে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানি সেনারা গ্রামাঞ্চল থেকে প্রতিদিন স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালি নারী-পুরুষকে ধরে এনে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া হতো। এখানে হানাদাররা হত্যা করে বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সতীশ সরকার ওরফে মনুদাসহ অনেক প্রকৌশলী ও চিকিৎসককে হত্যা করে।

  • স্টেশন এলাকা বধ্যভূমি

পার্বতীপুরের স্টেশন এলাকায় বধ্যভূমিতে প্রায় ২০ হাজার বাঙালিকে হত্যা করে।

  • সেতাবগঞ্জ থানা বধ্যভূমি

পাকিস্তান বাহিনীর আক্রোশ ছিল সেতাবগঞ্জের চিনিকলের ওপর। তারা চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় বাঙালিদের ধরে এনে নির্যাতনের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ছাড়া বিরল, কাহারোল ও বীরগঞ্জ থেকে সন্দেহভাজন বাঙালিদের ধরে এনে সেতাবগঞ্জ থানা উন্নয়ন কেন্দ্রের সামনে ও সেতাবগঞ্জ–দিনাজপুর রোডের এক মাইল এলাকাজুড়ে প্রতিনিয়ত অগণিত নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা হতো।

ফুলবাড়ী উপজেলা[সম্পাদনা]

  • বাড়াই আখিরা গ্রাম বধ্যভূমি

ফুলবাড়ী উপজেলার বাড়াই আখিরা গ্রামে পাওয়া যায় মানুষের দেহাবশেষ, গণহত্যার চিহ্ন। আখিরা বধ্যভূমিতে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বেলা ১১টায় শতাধিক নিরস্ত্র মানুষকে নির্মমভাবে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হামলার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নবাবগঞ্জ, বিরামপুর ও ফুলবাড়ী এলাকার মানুষ ভয়ে গ্রাম ছেড়ে ভারতের দিকে পালানোর সময় এ ঘটনা ঘটে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা[সম্পাদনা]

  • নবাবগঞ্জ বধ্যভূমি

নবাবগঞ্জ উপজেলার চকদুলু ছিল গণকবর-বধ্যভূমি। এখানে প্রায় ২৫০ জন মানুষের গণকবর রয়েছে।

চড়ারহাট বধ্যভূমি বা চড়ারহাট গণকবর দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার পুটিমারা ইউনিয়নে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে এই পুটিমারা ইউনিয়নের প্রাণকৃষ্ণপুর, আন্দোলগ্রাম, সারাইপাড়া ও খয়েরগুনি এই ৪ টি গ্রামের শতাধিক যুবককে চড়ারহাট বাজারে হত্যা করা হয়। বর্তমানে এটি চড়ারহাট বধ্যভূমি নামে পরিচিত এবং সেখানে একটি স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিরল উপজেলা[সম্পাদনা]

  • বেহালা গণকবর

জেলার বিরল উপজেলার বেহালা গ্রামে ১৫০ জন শহীদের একটি গণকবর রয়েছে।

চিরিরবন্দর উপজেলা[সম্পাদনা]

  • চিরিরবন্দর বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের বালুপাড়া গ্রামের বহু মানুষকে হত্যা করে কাঁকড়া নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় চিরিরবন্দরের বিভিন্ন পুকুর, খাল ও নদীর পাড়কে বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

হাকিমপুর উপজেলা[সম্পাদনা]

  • হিলি বধ্যভূমি

১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হিলি দখল করে চারদিকে অগ্নিসংযোগ এবং ব্যাপক হারে গণহত্যা চালায়। ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও বিহারিরা হিলির পালপাড়া গ্রামে আক্রমণ করে প্রথমে গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং পরে গুলি করে হত্যা করে।

  • পালপাড়া গ্রাম গণহত্যা

দিনাজপুরের হাকিমপুরে বাংলা হিলির পালপাড়া গ্রামে ১৯৭১ সালে ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিহারি ও রাজাকারদের সহযোগিতায় বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে নির্বিচারে সাতজনকে হত্যা করে। এখানে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

দিনাজপুর সদর উপজেলা[সম্পাদনা]

  • রামসাগর বধ্যভূমি

দিনাজপুর সদরের রামসাগর গ্রামে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ জনের গণকবর পাওয়া যায়।

  • গোদাগাড়ী বধ্যভূমি

দিনাজপুর সদরের গোদাগাড়ী গ্রামে ১৫০ শহীদের গণকবর পাওয়া যায়।

  • টেলিফোন ভবন গণহত্যা

দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ নামে তিনতলা একটি ভবন ছিল এখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের ধরে নিয়ে হত্যা করত। এখানে বেশি ভাগেই শিশু ও নারীদের হত্যা করা হয়।

  • টিকরামপুর গণহত্যা

১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল, বেলা দুইটায় এখানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অনেক মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

  • কাঞ্চন নদের বধ্যভূমি

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও দোসররা মিলে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে দিনাজপুরের কাঞ্চন নদে ফেলে দেয়। নদের কয়েকটি নালায় লাশে ভরে গিয়েছিল। নদের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ছিল লাশের ভিড়। অনেকের মতে, এখানে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।

  • দেবীগঞ্জ বধ্যভূমি

ঘোড়াঘাট উপজেলা[সম্পাদনা]

  • ঘোড়াঘাট বধ্যভূমি

খানসামা উপজেলা[সম্পাদনা]

  • খানসামা বধ্যভূমি

এছাড়া দিনাজপুর সদরের রামসাগর, বিরল উপজেলার কামদেবপুর, পাড়িপুকুর, সেতাবগঞ্জ উপজেলার বাঁশতলা ও ধনতলা, বীরগঞ্জ উপজেলার বালাডাঙ্গা পুকুরপাড়, ফুলবাড়ী উপজেলার আটপুকুর, বেজাইমোড়, বিরামপুর উপজেলার রহমান রাইসমিল ও ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাকবাংলোয় বধ্যভূমি ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। [১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দিনাজপুর ও নীলফামারীর গণহত্যা, বধ্যভূমি ও গণকবর"উত্তর বঙ্গের বৃহত্তম উপজেলা (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১২-২৮। ২০২১-০৬-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৬ 
  2. বই-"গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ দিনাজপুর জেলা"
  3. "গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ দিনাজপুর জেলা :"www.71sangbad.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৬