ডানাবর্ত ও বামাবর্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কোন পোলারিমিটারে (সমবর্তনমাপক যন্ত্র) একটি রাসায়নিক যৌগের ডানাবর্ত প্রদর্শন। পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখানো, সমতলটি ডান দিকে (ঘড়ির কাঁটার দিকে) ঘোরানো।

রসায়নশাস্ত্রপদার্থবিজ্ঞানে, ডানাবর্ত (ইংরেজি: Dextrorotation) এবং বামাবর্ত (ইংরেজি: Levorotation/ Laevorotation)[১] পরিভাষা দুটি, সমতল-সমবর্তিত আলোকরশ্মির আলোকীয় আবর্তন নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, ডানাবর্ত বলতে ঘড়ির কাঁটার অভিমুখে বা ডানহাতি ঘূর্ণন, এবং বামাবর্ত বলতে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে বা বামহাতি ঘূর্ণন বোঝায়।[২][৩]

যে রাসায়নিক যৌগে ডানাবর্ত ঘটে, তাকে বলা হয় ডানাবর্তী (dextrorotatory বা dextrorotary); আর যে যৌগে বামাবর্ত ঘটে, তাকে বলা হয় বামাবর্তী (levorotatory বা levorotary)।[৪] এ ধরনের যৌগে অপ্রতিসম বা কাইরাল অণুর উপস্থিতি থাকে এবং এদের আলোক সক্রিয়তা বিদ্যমান রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। যদি কোন কাইরাল অণু ডানাবর্তী হয়, তাহলে এর ইন্যানশিওমার (enantiomer; জ্যামিতিক দর্পণ প্রতিবিম্ব) হবে বামাবর্তী, এবং বিপরীতক্রমেও তা সত্য। ইন্যানশিওমারসমূহ সমতল-সমবর্তিত আলোকে একই কোণে ঘুরিয়ে দেয়, তবে বিপরীত দিকে।

কাইরালত্বে ব্যবহৃত উপসর্গসমূহ[সম্পাদনা]

(+)- ও (−)- ; d- ও l- ; এবং D- ও L-[সম্পাদনা]

D-গ্লিসার‍্যালডিহাইড ( (R)-২,৩-ডাই হাইড্রক্সিপ্রপান্যাল) এর দ্বিমাত্রিক ফিশার অভিক্ষেপ

ডানাবর্তী যৌগকে অনেক সময় “” অথবা “” উপসর্গযোগে প্রকাশ করা হয়। একইভাবে, বামাবর্তী যৌগকে অনেক সময় “” অথবা “” উপসর্গ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ছোট হাতের “” ও “” উপসর্গ আর বড় হাতের “” ও “” এর মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রাণরসায়ন শাস্ত্রে কাইরাল জৈব যৌগকে আলাদা করে বোঝাতে বড় হাতের অক্ষর ব্যবহৃত হয় এবং সেগুলো (+)–গ্লিসার‍্যালডিহাইড (; যা সংজ্ঞানুসারে গঠনের) এর সাপেক্ষে যৌগগুলোর পরম রূপবিন্যাসের (absolute configuration) ভিত্তিতে গঠিত। পরম রূপবিন্যাস নির্দেশক উপসর্গ আর একই মৌলের আলোকীয় ঘূর্ণন বোঝাতে ব্যবহৃত উপসর্গ পরস্পর সম্পর্কিত না–ও হতে পারে।[৫] উদাহরণস্বরূপ, প্রোটিনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত উনিশ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড এর মধ্যে নয়টি অ্যাসিড উপসর্গযুক্ত হলেও, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ডানাবর্তী (তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৫৮৯ ন্যানোমিটার), আবার বামাবর্তী বলে ফ্রুক্টোজকে অনেক সময় “লেভুলোজ” বলা হয়ে থাকে।

(R)- এবং (S)-[সম্পাদনা]

কান–ইনগোল্ড–প্রেলগ অগ্রাধিকার নিয়মাবলি অনুসারে প্রাপ্ত এবং উপসর্গের সাথে ওপরের নিয়মের সাথে পার্থক্য এখানে যে, দ্বারা সমগ্র পরমাণুর জন্য নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট স্টেরিওকেন্দ্রের পরম রূপবিন্যাস বোঝায়। কোন পরমাণুর একটিমাত্র স্টেরিওকেন্দ্র থাকলে তাকে বা দ্বারা প্রকাশ করা যায়, কিন্তু একাধিক স্টেরিওকেন্দ্র থাকলে তার একাধিক লেবেল প্রয়োজন হয়, যেমন

যদি একজোড়া এমন ইন্যানশিওমার থাকে, যাদের প্রত্যেকের একটি করে স্টেরিওকেন্দ্র আছে; তাহলে একটি ইন্যানশিওমার হচ্ছে  এবং আরেকটি ইন্যানশিওমার হচ্ছে ; আর তাদের একটি বামাবর্তী এবং অপরটি ডানাবর্তী হয়। তা সত্বেও, এই দুই লেবেলের মধ্যে কোন পারস্পরিক সাধারণ সম্পর্ক নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে, ইন্যানশিওমার হচ্ছে ডানাবর্তী ইন্যানশিওমার, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ইন্যানশিওমার হচ্ছে বামাবর্তী ইন্যানশিওমার। কেবলমাত্র পরীক্ষামূলক পরিমাপ কিংবা বিস্তারিত কম্পিউটার মডেলিং এর ভিত্তিতেই এই সম্পর্ক নির্ণয় করা সম্ভব।[৬]

নির্দিষ্ট ঘূর্ণন[সম্পাদনা]

কোন যৌগ কোন মাত্রায় ডানাবর্তী অথবা বামাবর্তী, তা পরিমাপের একটি প্রমিত পদ্ধতি হচ্ছে নামক একটি রাশি, যা নির্দিষ্ট ঘূর্ণন (specific rotation) নামে পরিচিত। ডানাবর্তী যৌগের নির্দিষ্ট ঘূর্ণন ধনাত্মক এবং বামাবর্তী যৌগের নির্দিষ্ট ঘূর্ণন ঋণাত্মক হয়। যে কোন এক জোড়া ইন্যানশিওমারের নির্দিষ্ট ঘূর্ণন সমান, কিন্তু বিপরীত দিকবর্তী হয়। নির্দিষ্ট ঘূর্ণন, নির্ণয়ের সূত্র হচ্ছে:

যেখানে,

পর্যবেক্ষণকৃত ঘূর্ণন (ডিগ্রি এককে),

ইন্যানশিওমার দ্রবণের ঘনমাত্রা (গ্রাম/মিলিলিটার এককে), এবং

পোলারিমিটার নলের দৈর্ঘ্য (ডেসিমিটার এককে)।

পোলারিমিটার এর নলের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হওয়ার সময়, তল-সমবর্তিত আলো কতগুলো কাইরাল পরমাণুর মুখোমুখি হয়, তার ওপর এর ঘূর্ণনের মাত্রা নির্ভর করে (এজন্যই সূত্রে নলের দৈর্ঘ্য এবং ইন্যানশিওমারের ঘনমাত্রা'র প্রয়োজন পড়ে)। অনেক ক্ষেত্রেই, তাপমাত্রা এবং ব্যবহৃত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপরও তা নির্ভরশীল হয়ে থাকে।

অন্যান্য পরিভাষা[সম্পাদনা]

ফরাসি ভাষায়, ডানাবর্ত এবং বামাবর্ত পরিভাষা দুটির সমতুল্য প্রতিশব্দ যথাক্রমে dextrogyre (দেক্সত্রোজিয়ার) এবং levogyre (লেভোজিয়ার)। শদ দুটি ইংরেজিতে কদাচিৎ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[৭]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. The first word component dextro- comes from the Latin word dexter, meaning "right" (as opposed to left). Laevo- or levo- comes from the Latin laevus, meaning "left side".
  2. LibreTexts Chemistry – Polarimetry
  3. "Determination of optical rotation and specific rotation" (পিডিএফ)The International Pharmacopoeia। World Health Organization। ২০১৭। আইএসবিএন 9789241550031 
  4. Solomons, T.W. Graham; Fryhle, Graig B. (২০০৪)। Organic Chemistry (8th সংস্করণ)। Hoboken: John Wiley & Sons, Inc. 
  5. "Chirality - Chemistry Encyclopedia - structure, examples, number, salt, property, molecule, atom"www.chemistryexplained.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২১Naturally occurring (+)-glyceraldehyde [HOCH 2 CH(OH)CHO] was usually used as the point of reference. Whatever its actual three-dimensional geometry, natural (+)-glyceraldehyde was assigned the designation (D), which stood for the configuration of dextrorotatory glyceraldehyde, and not for its optical rotation, which was designated as d- or (+). 
  6. See, for example,Stephens, P. J.; Devlin, F. J.; Cheeseman, J. R.; Frisch, M. J.; Bortolini, O.; Besse, P. (২০০৩)। "Determination of absolute configuration using calculation of optical rotation"। Chirality15: S57–64। ডিওআই:10.1002/chir.10270পিএমআইডি 12884375 
  7. For example: Sebti; Hamilton, সম্পাদকগণ (২০০১)। Farnesyltransferase inhibitors in cancer therapy। পৃষ্ঠা 126। আইএসবিএন 9780896036291। ২০১৩-০৬-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-১৮